আজকের বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পিছনে রয়েছে বিষাদের ইতিহাস, রয়েছে অনেক তাজাপ্রাণ জরে যাওয়ার করুণ গল্প, সেই সাথে রয়েছে লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের চিহ্ন।
শুধু রক্ত দিয়েই এই স্বাধীনতা আসেনি, সেই সাথে পাক সেনারা করেছে অনেক নির্যাতন, শিশু থেকে শুরু করে মা-বোনরাও তা থেকে রক্ষা পায়নি, যুদ্ধের সেই সময়ের একটা অতর্কিত হামলা হয়েছিলো ২৫ মার্চ রাতে, যাকে অপারেশন সার্চলাইট বলা হয়, আর সেই অপারেশন সার্চলাইট নিয়েই আজকের লেখা।
তাহলে চলুন জেনে নেই সেদিন কি হয়েছিলো, এবং কেনইবা অই হামলাকে অপারেশন সার্চলাইট বলা হয়।
অপারেশন সার্চলাইট কাকে বলে? অপারেশন সার্চলাইট কি?
২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের বড় শহরগুলোতে যে গণহত্যা শুরু করে তাকেই অপারেশন সার্চলাইট বলে।
আরো সহজ করে বললে অপারেশন সার্চলাইট হল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালের ঘটা অতর্কিত হামলায় ও গণহত্যা।
অপারেশন সার্চলাইট
২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের বড় শহরগুলোতে গণহত্যা শুরু করে। তাদের পূর্বপরিকল্পিত এই গণহত্যাটি “অপারেশন সার্চলাইট” নামে পরিচিত। এ গণহত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগে থেকেই পাকিস্তান আর্মিতে কর্মরত সকল বাঙালি অফিসারদের হত্যা কিংবা গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হয়।
ঢাকার পিলখানায়, ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের ই বি আর সিসহ সারাদেশের সামরিক আধাসামরিক সৈন্যদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের কথা যেন বহির্বিশব না জানতে পারে সে জন্য আগেই সকল বিদেশি সাংবাদিকদের গতিবিধির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় এবং অনেককে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়।
তবে ওয়াশিংটন পোস্টের বিখ্যাত সাংবাদিক সাইমন ড্রিং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের রিপোর্ট প্রকাশ করেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব এই গণহত্যা সম্পর্কে অবগত হয়। আলোচনার নামে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কালক্ষেপণও এই গণহত্যা পরিকল্পনারই অংশ ছিল।
২৫ মার্চ রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পাকিস্তানিদের অপারেশনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ঢাকা বিশববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল এবং জগন্নাথ হলের ছাত্রদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়।
ঢাকা বিশববিদ্যালয় ও আশেপাশের বহু সংখ্যক শিক্ষক ও সাধারণ কর্মচারিদেরও হত্যা করা হয়। পুরোনো ঢাকার হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও চালানো হয় ব্যাপক গণহত্যা।
রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ করে হত্যা করা হয় পুলিশ বাহিনীর বহু সদস্যকে। পিলখানার ইপিআর-এর কেন্দ্রে আচমকা আক্রমণ চালিয়ে নির্বিচারে হত্যা করা হয় নিরস্ত্র সদস্যদের। কয়েকটি পত্রিকা অফিস ভস্মীভূত করা হয়।
দেশময় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বিচারে হত্যা করা হয় বিভিন্ন এলাকায় ঘুমন্ত নর-নারীকে। হত্যা করা হয় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদেরও।
ধারণা করা হয়, সেই রাত্রিতে একমাত্র ঢাকা ও তার আশে পাশের এলাকাতে প্রায় এক লক্ষ নিরীহ নর-নারীর জীবনাবসান ঘটে।
রিলেটেডঃ ইলুমিনাতি কি? ইলুমিনাতি ইতিহাস ২০২৩
পরিশেষে
তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকের লেখা অপারেশন সার্চলাইট কি, বা অপারেশন সার্চলাইট কাকে বলে, আমরা চেষ্টা করেছি এই লেখাতে অপারেশন সার্চলাইটের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে।
যদি এই লেখা নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না, দেখা হবে আগামী লেখাতে, আজকের মতো এখানেই বিদায়।