হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে যে কেউ ঘাবড়ে যান। অনেক মানুষকেই বলতে শুনা যায় যে, বুকের বাম পাশে চিন চিন ব্যাথা করে , বুক জ্যাম হয়ে আছে বলে মনে হয়।
আবার ডান পাশেও অনেকের ব্যথা হয়ে থাকে। যার আসল কারণ অনেকেই জানেন না। বিভিন্ন কারণে এমনটি হয়ে থাকে।
এই ব্যথা শরীরের মধ্যকার অনেক ধরনের সমস্যার উপসর্গ হতে পারে। তাই সঠিক কারণ নিরূপণ করে চিকিৎসা গ্রহণ করলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
বুকের এই ব্যথা কি হার্টের সমস্যার কারণে হয় নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো কারণ তা আমাদের সকলের জানা উচিত।
আজকে আমরা বুকের ডান পাশে ও বাম পাশে ব্যথা কেন হয় এবং হলে আমাদের করণীয় কী তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
বুকে ব্যথা:
বুকে ব্যথার প্রধান কারণ হল কার্ডিয়াক উৎপত্তি যাকে মেডিক্যাল ভাষায় ‘এনজিনা’ বলা হয়ে থাকে। যে কোনো বয়সের ব্যক্তি এনজিনাতে ভুগতে পারে, স্বল্প বা দীর্ঘ সময়ের জন্য এবং তা নির্ভর করে তার হৃদরোগের ধরনের উপর।
এই ক্ষেত্রে, বুকের ব্যথা কাঁধ অঞ্চলে অনুভূত হয় এবং এই ব্যথা হাত ও পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। হৃদরোগ ছাড়াও আরো অনেক কারণে বুকে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
তাই সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
বুকের বাম পাশে ব্যথা:
বুকের বাম পাশে ব্যথা সরাসরি হৃদপিন্ডের সাথে জড়িত। হার্টের কোনো অসুখ এবং হার্ট অ্যাটাকের লক্ষন হিসেবে বুকের বাম পাশে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
এটি হলো মূল কারণ, তবে এটি ছাড়াও আরো অনেক কারণে বুকের বাম পাশে ব্যথা হতে পারে। খাদ্যনালি, শ্বাসযন্ত্র, পাঁজরের হাড়ে সমস্যা ইত্যাদির কারণে বুকের বাম পাশে ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।
তবে যে কারণেই হোক বুকের বাম পাশে ব্যথা অনুভূত হলেই তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বুকের বাম পাশে ব্যথার কারণ:
বুকের বাম পাশে ব্যথা হলে আমরা প্রথমেই মায়োকার্ডিয়াল ইনফেকশনের (হৃদযন্ত্রের পেশির সমস্যা) কথা চিন্তা করি। তবে সব সময় হৃদরোগের জন্য বুকে ব্যথা হয় না। বুকের বাম পাশে ব্যথা নানা কারণে সৃষ্টি হতে পারে।
হৃদপিন্ডের পাশাপাশি দেহের আরো অংশের অসুস্থতার কারণে বুকের বাম পাশে ব্যথা হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেয়া যাক এর কারণ সম্পর্কে।
ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ:
সাধারণভাবে ইশকেমিক হার্ট ডিজিজকেই হার্টের সমস্যা বা হৃদরোগ বলা হয়ে থাকে।হার্টের রক্তনালীতে চর্বি জমার কারণে এই রোগ হয়। এক্ষেত্রে রক্তনালীতে চর্বি জমার ফলে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন ব্যহত হয় বা রক্ত সঞ্চালন কম হয়।
এটি মূলত উচ্চ রক্তচাপের কারণে হয়ে থাকে। যাদের বয়স ৪০ এর ওপরে তাদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি হয়ে থাকে। তাই এ বয়সী কারো বুকের বাম পাশে চিনচিন বা তীব্র ব্যথা হলে হার্ট এর সমস্যার কথা মাথায় রাখতে হবে এবং অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
হার্ট অ্যাটাক হলে:
অধিকাংশ সময় হার্ট অ্যাটাক হলেই বুকের বাম পাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। তখন অক্সিজেনযু্ক্ত রক্ত সরবরাহ ক্রমেই কমতে থাকে যার কারণে হার্টের পেশিগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এ সময়ে শ্বাস প্রশ্বাসেও সমস্যা হয় এবং বুকের বাম পাশে তীব্র ব্যথা হয়। এই লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই বুঝে নিতে হবে যে রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
খাদ্যনালিতে সমস্যা :
অনেক সময় খাদ্যনালীতে সমস্যা থাকলেও বুকের বাম পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। খাদ্যনালীতে সমস্যা বলতে বোঝায় গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা, যার সাথে আমরা সবাই পরিচিত।
খাদ্যনালীতে অতিরিক্ত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে খাদ্যনালী থেকে টক টক গন্ধ আসে এবং বুকে ব্যথা অনুভূত হয়,বমি বমি ভাব ও ঢেঁকুর আসে।
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা যে কোনো বয়সেই হতে পারে।অনেক সময় বেশি ঝাল, ভাজাপোড়া, তেলজাতীয় খাবার, ক্যাফেইন জাতীয় খাবার ইত্যাদি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়ে। তখন গ্যাস সৃষ্টি হয়ে বুকের বাম পাশে ব্যথা হয়।
রিলেটেডঃ হজমশক্তি বৃদ্ধির উপায়, কার্যকারী টিপস
ফুসফুসে সমস্যা:
আমাদের শ্বাসযন্ত্র বা ফুসফুসে সমস্যা সৃষ্টি হলেও বুকের বাম পাশে ব্যথা হতে পারে। এমন হলে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়,শ্বাস নিলে বুকে ব্যথা হয়, হাঁচি -কাশি দিলে ব্যথা হয়। ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন বা ক্যান্সারের সৃষ্টি হলে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
এছাড়া ‘পালমোনারি এম্বোলিজম’ একটি ফুসফুসের ব্যাধি যেখানে ফুসফুসের ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধে, ফুসফুসের টিস্যুতে রক্ত প্রবাহের বাধা সৃষ্টি করে এবং বুকে ব্যথা ঘটায়।
প্যানিক অ্যাটাকজনিত ব্যথা:
প্যানিক অ্যাটাক একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। সাধারণত ৪০ বছরের কম বয়সীদের প্যানিক অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে।
এক্ষেত্রে রোগীর আগে থেকে উচ্চ রক্তচাপ বা অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের সমস্যা নাও থাকতে পারে। তারা অতিমাত্রায় দুঃশ্চিতা কিংবা কোনও কিছু নিয়ে ভয়ে থাকলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
প্যানিক অ্যাটাকের কারণে মাংসপেশী শক্ত হয়ে যায়, তখন বুকে বা অন্যান্য স্থানেও ব্যথা দেখা দেয়,শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুক ধড়ফড় করে এবং হাতে-পায়ে কাঁপুনিও আসতে পারে। সাধারণত অতিরিক্ত উৎকন্ঠা, ভয় বা দুশ্চিন্তা থেকেই এমন হয়।
বাম পাঁজরের হাড়ে সমস্যা:
বুকের বাম পাঁজরের হাড়ে কোনো আঘাত বা হাড়ে ফাটলের কারণে বুকের বাম পাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
বিষন্নতার কারণে:
যখন কেউ বিষণ্নতায় থাকে তখন তার হৃদস্পন্দনের হার বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত রক্ত প্রবাহিত হয়,ধমনীতে রক্তচাপের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা ফুসফুসে রক্ত বহন করে। যার ফলে হঠাৎ বুক ব্যথা শুরু হয়।
ভয়ের কারণে:
ভয় বা আতঙ্ক থেকেও অনেকের বুকের বাম পাশে ব্যথা করতে পারে। তখন ঘন ঘন নিশ্বাস নেওয়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। প্রচণ্ড ঘাম হতে পারে ও বুক ধড়ফড় করতে পারে।
বাম কাত হয়ে শোয়ার কারণে:
অনেকে ঘুমানোর সময় বেশিক্ষণ ধরে বাম কাত হয়ে শুয়ে থাকলে বুকের বাম পাশে চাপ পড়ে ব্যথা হতে পারে।
এছাড়াও আরো অন্যান্য কারণে বুকের বাম পাশে ব্যথা হতে পারে।
বুকের ডান পাশে ব্যথা:
বুকের ডান পাশে ব্যথা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। আমাদের বুকের ডান দিকে থাকে ডান ফুসফুস,হৃদপিন্ডের ডান পাশ,পিত্তথলি এবং খাদ্যনালী।
এসব অঙ্গে কোনো সমস্যা দেখা দিলে বুকের ডান পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। বুকের ডান পাশে ব্যথা হার্টের সমস্যার জন্যও হতে পারে আবার অন্য কোনো গুরুতর সমস্যার জন্যও হতে পারে। তাই এই ব্যথাকে অবহেলা করা উচিত নয়।
রিলেটেডঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় ২০২৩
বুকের ডান পাশে ব্যথার কারণ:
বুকের ডান পাশে ব্যথা হওয়ার সঠিক কারণসমূহ সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে আপনি নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করতে পারবেন। এজন্য চলুন বিস্তারিত জেনে নেই বুকের ডান পাশে ব্যথা কেন হয়।
কোনো আঘাতের কারণে:
বুকের ডান পাশের হাড়ে কোনো আঘাত পেয়ে থাকলে সেখানে ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় আঘাত পাওয়ার কয়েকদিন পরও তীব্র ব্যথা দেখা দিতে পারে।
তখন অনেকে বুঝে উঠতে পারে না কেন ব্যথা হচ্ছে। পাঁজরে, পেশী বা বক্ষ প্রাচীরে আঘাত এ ধরনের ব্যথার কারণ হতে পারে।এই ধরনের ব্যথা সাধারণত অনেকদিন স্থায়ী হয়ে থাকে যা ওষুধের মাধ্যমে সরিয়ে তোলা যায়।
পিত্তথলির সমস্যা:
আমাদের বুকের ডান পাশে পিত্তথলি অবস্থিত। পিত্তথলিতে কোনো প্রদাহ বা পাথর সৃষ্টি হলে বুকের ডান পাশে নিচের অংশে চিনচিন ব্যথা হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা:
আমাদের বুকের ডান পাশেও পরিপাকতন্ত্রের কিছু অংশ অবস্থিত। তাই বদহজম ও গ্যাসের সমস্যা হলে বুকের ডান পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এ সময় বমি বমি ভাব ও টক ঢেকুরও আসতে পারে। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও তেলজাতীয় খাবার খাওয়া এর প্রধান কারণ।
বুক জ্বালা থেকে যে ধরনের বুকে ব্যথা দেখা দেয়, তা সাধারণত খাবার খাওয়ার পর দেখা দিতে পারে। এ ধরনের ব্যথা বেশ কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। পরে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়।
ডান পাঁজরের হাড়ে সমস্যা:
বুকের ডান পাঁজরের হাড়ে ফাটল বা কোনো আঘাতের কারণে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে।
ফুসফুসে সমস্যা:
ফুসফুসে সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে বুকের ডান দিকে ব্যথা হতে পারে। সেই সাথে শ্বাসকষ্ট এবং সর্দি কাশির সমস্যাও দেখা দেয় অথবা শ্বাস নিলে বুকে চাপ অনুভূত হতে পারে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সাধারণত নিউমোনিয়া,পালমোনারি এমবোলিজম বা প্লুরিসি হলে এ সমস্যা দেখা দেয়।
হার্টের সমস্যা:
বুকের ডান পাশে ব্যথা যদি চাপের মতো হয় তবে তা হার্টের সমস্যার কারণে হতে পারে। এই ব্যথা হলে শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়, অতিরিক্ত ঘাম হয়,শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ কারণে বুকের ডান পাশে ব্যথা হার্ট অ্যাটাকের গুরুতর একটি উপসর্গ হতে পারে।
অ্যাপেন্ডিক্স এর কারণে:
অ্যাপেন্ডিক্স এর সমস্যার কারনে সাধারণত অনেকের বুকের ডান পাশে পাঁজরের নিচে ব্যথা অনুভূত হয়। তাই এই বিষয়টি অবহেলা করা একদমই উচিত নয়।
কিডনির সমস্যা হলে:
অনেক সময় বুকের ডান পাশে পাঁজরের দিকে ব্যথা হতে পারে কিডনি জনিত কারণে। কিডনির অবস্থান প্রায় এর আশেপাশে এবং সেই অবস্থানের উপর ভিত্তি করে এখানে ব্যথা হতে পারে। তাই যারা কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের অনেক সময় এমন ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
এগুলো ছাড়াও আরো অন্য কোনো কারণে বুকের ডান পাশে ব্যথা হতে পারে যা হয়তো শরীরে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
বুকের বাম পাশে ব্যথা হলে করনীয়:
আমরা উপরের আলোচনা থেকে জানতে পেরেছি বুকের বাম ও ডান পাশে ব্যথা কি কি কারণে হতে পারে। এখন আমরা বুকের বাম বা ডান পাশে ব্যথা হলে করণীয় কি তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
- বুকে ব্যথা যদি মাঝে মাঝে হয় বা খুব কম হয় তবে খেয়াল রাখুন কোনো নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার কারণে এটি হচ্ছে কি না। খাবার খাওয়ার পর সেটার মাধ্যমে গ্যাস সৃষ্টি হলে এমন ব্যথা হতে পারে। এমন হলে সেটা খাওয়া বন্ধ করে দিলে হয়তো ব্যথা চলে যেতে পারে।
- অনেক বেশি পরিশ্রম করলেও বুকের ডান বা বাম পাশে ব্যথা হতে পারে। তাই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রেখে পরিশ্রম কম করার চেষ্টা করুন,কোনো ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।এর পাশাপাশি পরিমিত পরিমাণে বিশ্রাম নিন।
- কোনো কাজের চাপ বা দুশ্চিন্তা হলে যদি আপনার বুকের ডান বা বাম পাশে ব্যথা অনুভূত হয় তবে যথাসম্ভব শান্ত থাকার এবং নিজেকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়ার চেষ্টা করুন।
- বুকের ব্যথা বেড়ে যায় এমন কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- পরিশ্রমের সময় বুকে ব্যথা হলে ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, ইটিটি এবং অন্যান্য পরীক্ষা যেমন— করোনারি এনজিওগ্রাম করে দেখতে পারেন কোনো সমস্যা আছে কি না।
- বুকে ব্যথা হলে তা যদি না কমে বা এর সাথে যদি শ্বাসকষ্ট,ঘাম হওয়া বা দ্রুত হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে তা রোগীকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।তাই তাৎক্ষণিক চিকিৎসা জরুরি।
- হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে রোগীকে দ্রুত কাছের হাসপাতালে নিতে হবে এবং ইসিজি ও ট্রপোনিন আই পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি না।
- ডাক্তারের নির্দেশনা অনুসরণ করে ওষুধ সেবন ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। সঠিক সময়ে খাওয়া,ব্যয়াম করা, ঔষধ সেবন করা ইত্যাদি বিষয় অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে মেনে চলতে হবে।এসব বিষয়ে অবহেলা করলে তা শরীরে অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
রিলেটেডঃ চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, পুষ্টিগুণ
বুকের বাম পাশে ব্যথা দূর করার উপায়: ঘরোয়া চিকিৎসা
সাময়িকভাবে বুকের ডান বা বাম পাশের ব্যথা কমিয়ে আনতে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারেন। এর মাধ্যমে রোগী অল্প সময়ের জন্য আরাম পাবে কিন্তু পরবর্তীতে তাকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
শুয়ে বিশ্রাম নিতে হবে:
হঠাৎ বুকে ব্যথা শুরু হলে দাঁড়িয়ে না থেকে শুয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো কাজ করতে থাকলেও সেটা বাদ দিয়েই বিশ্রাম নিতে হবে। বিশ্রাম নিলে ব্যথা সাময়িকভাবে কমতে পারে।
রসুন:
রসুন আমাদের হৃদপিন্ডের জন্য খুবই উপকারী। রসুন হৃদপিন্ডের মধ্যে রক্তজমাট বাঁধলে তা নিরাময় করতে পারে। তাই দৈনিক খাবারের সাথে রসুন খেতে পারেন। এতে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমবে।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার:
অ্যাসিডিটির কারণে বুকে ব্যথা হলে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার হতে পারে একটি ভালো সমাধান।এটি খেলে গ্যাসের সমস্যাজনিত বুক ব্যথা সেরে যাবে।
অ্যালোভেরা:
অ্যালোভেরা একটি কার্যকর ঔষধি উদ্ভিদ, এর মাধ্যমে অনেক ধরনের রোগের চিকিৎসা করা হয়। অ্যালোভেরা হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যা ও বুকের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এজন্য এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে এক চা চামচ অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে খেলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে।
আদা:
আদা একটি প্রাচীন ঔষধি যা অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য যা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।এটি বুকের ব্যথার ভালো ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। এক্ষেত্রে নিয়মিত আদা চা খেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
বরফ ব্যবহার করা:
কোনো আঘাতজনিত কারণে যদি বুকের ডান বা বাম পাশে ব্যথা হয় তবে আক্রান্ত স্থানে বরফ ব্যবহার করতে পারেন। বরফ সাময়িকভাবে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
উপরোক্ত নিয়ম অনুসরণ করে বুকের ডান ও বাম পাশের ব্যথা কমিয়ে আনা যায়।তবে এর পাশাপাশি অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
পরিশেষে
সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। বুকের বাম পাশে যেহেতু আমাদের হৃদপিন্ডের অবস্থান, তাই বুকের বাম পাশে ব্যথা হলে দেরি না করে অবশ্যই ভালো ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
এর পাশাপাশি বুকের ডান পাশে ব্যথা হলেও সেটাকে অবহেলা না করে এর সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
তথ্যসুত্রঃ
1. https://www.webmd.com/heart-disease/treat-chest-pains-at-home (Can I Treat Chest Pain at Home?)
2. https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/chest-pain/diagnosis-treatment/drc-20370842 (Chest pain)
3. https://www.medicalnewstoday.com/articles/327375 (What causes chest pain on the left side?)
4. https://www.tuasaude.com/en/left-side-chest-pain/ (Left Side Chest Pain: 6 Common Causes & What to Do)
5. https://www.buoyhealth.com/learn/chest-pain (10 Causes of Right and Left Sided Chest Pain & Relief Options)