তেতুল! অনেকের কাছেই এই ফলটি জিভে জল চলে আসার অন্যতম কারণ। যারা টক খেতে ভালোবাসে তাদের কাছে তেতুল মানেই স্বর্ণের টুকরো। যার ভাগ বা তুলনা অন্য কারো সাথে হয় না।
এসব বিশিষ্ট টকপ্রেমীদের মাঝে কি আপনিও আছেন? আপনার কাছেও কি অন্যান্য খাবারের চাইতে তেতুলের গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি?
যদি সকল প্রশ্নের উত্তর “হ্যাঁ” হয়ে থাকে তবে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি কেবল আপনার জন্যে৷ যার পুরোটা পড়ার পর আপনিও হয়তো তেতুলকে নিজের কাছে যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখবেন!
বলছিলাম তেতুলের পুষ্টিগুণ, তেতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহারের কথা। পাশাপাশি একজন স্বাস্থ্য সচেতন ব্যাক্তি হিসাবে আপনাকে জেনে রাখতে হবে তেতুলের কোনো অপকারিতা আছে কিনা এবং থাকলে সেগুলি কি! কথা আর বাড়ানোর কারণ দেখছি না। এবারে সরাসরি মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
তেতুল কি?
তেতুল সম্পর্কে আমরা কমবেশি সকলেই জানি। সাথে এটিও জানি যে এটি একটি টকজাতীয় বেশকিছু বীজের ফল। বলে রাখা ভাল, আমরা হয়তো এটিকে তেতুল হিসাবে চিনি। তবে এর ভালো নাম তিন্তিড়ী। যা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না।
Fabaceae পরিবারের ফল হিসেবে বাংলাদেশে তেতুলের জনপ্রিয় প্রায় দেখার মতো। বিশেষ করে এর সহজলভ্যতাও এটির জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তাছাড়া বাংলাদেশে কিন্তু তেতুল গাছ নিয়ে প্রচুর লৌকিকতা বা আজগুবি কথা প্রচলিত রয়েছে। সে-সমস্ত কারণেই সম্ভবত দেশে তেতুলের জনপ্রিয়তা খুব একটা কম নয়।
জানা যায় তেতুল চাষের শুরুটা করেছিলো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকার আদিবাসী। পরবর্তীতে তা ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে তেতুলের চাষ করা হয়।
বিশেষ করে সুদান, ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া, জাম্বিয়া এবং তানজানিয়ার মতো স্থানগুলির কথা না বললেই নয়। আর হ্যাঁ! এসব তথ্য থেকেই নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন তেতুল একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের ফল।
যারা তেতুলের চাষ করতে চান তাদের জন্যে বলে রাখি গ্রীষ্মকালের কয়েক মাস আগে থেকেই তেতুলের চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আর স্থান হিসাবে তেতুলের জন্যে পাহাড়ের সমুদ্রমুখী ঢালুই উত্তম। সঠিকভাবে যত্ন নিতে পারলে আশা করি এক একটি ২৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা গাছ থেকে ভালোই ফলন পাবেন।
তেতুলের বৈজ্ঞানিক পরিচয়
যেকোনো খাবার কিংবা বিষয়ের ক্ষেত্রে এর সঠিক পরিচিতিটুকু জেনে রাখা উচিত। ঠিক তেমনই তেতুলের পরিচয় বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক পরিচয় সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে যাদের অনিশ্চিয়তা রয়েছে তাদের জন্যেই সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই অংশটি। তেতুল সম্পর্কে বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে নিচের তথ্যগুলি লক্ষ্য করুন:
- বৈজ্ঞানিক নাম: Tamarindus indica
- ইংরেজি নাম: Melanesian papeda
- গাছ পরিবার: Fabaceae
- প্রজাতি: T. indica
- গাছের উচ্চতা: ২৪ মিটার
পুষ্টি উপাদান:
- অ্যাসিড
- চিনি
- ভিটামিন
- ক্যালসিয়াম
তেতুলের গুণাগুণ কি কি?
যেহেতু আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটিকে সাজানো হয়েছে তেতুল সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে, সেহেতু এতে তেতুলের গুণাগুণ সম্পর্কিত তথ্য থাকাটা যথেষ্ট জরুরি।
তেতুল গাছ যেমন দেখতে খুব সুন্দর, ঠিক তেমনই এর ফলের উপকারিতাও বর্ণনা করে শেষ করবার মতো নয়। তাছাড়া তেতুল কাঁচা বা পাকা দুইভাবেই খাওয়া যায়।
চলুন এবারে দেখে নেওয়া যাক প্রতিটি তেতুলে বা প্রতি ১০০ গ্রাম তেতুলে ঠিক কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে:
- ক্যালোরি: ২৩৯ kcal (১,০০০ কিজু)
- শর্করা: ৬২.৫ g
- চিনি: ৫৭.৪ গ্রাম
- খাদ্য আঁশ: ৫.১ g
- স্নেহ পদার্থ: ০.৬ g
- স্নেহ পদার্থ: ০.২৭২ g
- প্রোটিন: ২.৮ g
- ট্রিপ্টোফ্যান: ০.০১৮ g
- লাইসিন: ০.১৩৯ g
- মেথাইনিন: ০.০১৪ g
- ভিটামিন এ: ৩০ IU
- থায়ামিন (বি১): ৩৭% ০.৪২৮ মি. গ্রা.
- রিবোফ্লাভিন (বি২): ১৩% বা ০.১৫২ মিগ্রা
- নায়াসিন (বি৩): ১৩% বা ১.৯৩৮ মিগ্রা
- অ্যাসিড (বি৫): ৩% বা ০.১৪৩ মিগ্রা
- ভিটামিন বি৬: ৫% বা ০.০৬৬ মিগ্রা
- ফোলেট (বি৯): ৪% বা ১৪ μg
- কোলিন: ২% বা ৮.৬ মিগ্রা
- ভিটামিন সি: ৪% বা ৩.৫ মিগ্রা
- ভিটামিন ই: ১% বা ০.১ মিগ্রা
- ভিটামিন কে: ৩% বা ২.৮ μg
- ক্যালসিয়াম: ৭% বা ৭৪ মিগ্রা
- কপার: ৪৩% বা ০.৮৬ মিগ্রা
- লৌহ: ২২% বা ২.৮ মিগ্রা
- ম্যাগনেসিয়াম: ২৬% বা ৯২ মিগ্রা
- ফসফরাস: ১৬% বা ১১৩ মিগ্রা
- পটাসিয়াম: ১৩% বা ৬২৮ মিগ্রা
- জিংক: ১% বা ০.১ মিগ্রা
- পানি: ৩১.৪০ g
তেতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা
তেতুল গাছ তার সৌন্দর্য এবং ফলের জন্যে বিশ্বের প্রতিটি স্থানে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে এই উপমহাদেশের কথা একেবারে না বললেই নয়।
বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়াতে, হুটহাট শরীরের নাজুক অবস্থা দূর করতে কিংবা রুচি বাড়াতে কাজে লাগা এই তেতুলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে গিয়ে লেখা ফুরোবে না।
চলুন এবারে দৈনন্দিন জীবনে কাজে আসা কিংবা স্বাস্থ্যের কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকের বাড়তি যত্নে আসা এই তেতুলের বেশকিছু উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
তেতুলের উপকারিতাগুলি কি কি?
শুরুতেই আমরা আলোচনা করবো তেতুল আমাদের স্বাস্থ্যে কতটুকু ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। জানার চেষ্টা করবো তেতুল কি আদৌ আমাদের শারীরিক দূর্বলতা কিংবা রোগব্যাধি নির্মুলের সহায়ক উপাদান হিসাবে কাজ করছে কিনা:
ডায়াবেটিস রোগীদের সুস্থতা নিশ্চিত করে
তেতুল ডায়াবেটিস রোগীদের সুস্থতা নিশ্চিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। যদি আপনি নিয়ম মেনে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তেতুল খেতে পারেন তবে তা আপনার শরীরকে কার্বোহাইড্রেট শোষণ করতে সাহায্য করবে। যা একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা বা পয়েন্ট!
তাছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এই তেতুল। তেতুলে থাকা প্রসরানডিয়ালি নামক একটি উপাদান সাধারণত এই কাজ করে থাকে।
পাশাপাশি তেতুলের রস ডায়াবেটিস এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর জন্য বিশেষ পানীয় হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীরা তেতুল খেতে পারলে তা অগ্ন্যাশয়ের অক্সিডেটিভ ক্ষতি প্রতিরোধেও সাহায্য করবে।
ওজন কমাতে কাজ করে
আপনি যদি প্রতিনিয়ত নিজের ওজন কমানোর জন্যে যুদ্ধ করে থাকেন সেক্ষেত্রে যুদ্ধটিকে কিছুটা সহজ করতে তেতুলের সাহায্য নিতে পারেন। কারণ তেতুল মানবদেহের ওজন কমাতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।
তাছাড়া মানবদেহের মেটাবলিক সিনড্রোমের চিকিৎসার জন্যেও সুষম খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয় এই তেতুলকে।
হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখে
আপনি জেনে খুশি হবেন তেতুলের রসে কোলেস্টেরলের অক্সিডেশন প্রক্রিয়া প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে। যা আপনার ধমনীতে কোলেস্টেরল আটকে থাকা বা দেহের বিভিন্ন অংশে রক্ত ব্লক হয়ে থাকার বিষয়টি পুরোপুরিভাবে নির্মূল করে থাকে।
মোটকথা যারা নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে তেতুলের রস খেয়ে থাকেন তাদের দেহে করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি এবং রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখার ব্যাপারটি কিছুটা হলেও নিশ্চিত হয়ে থাকে।
রিলেটেডঃ বুকের বাম পাশে ব্যথা: বুকের বাম পাশে ব্যথা হলে করনীয়
ইমিউন সিস্টেম বজায় রাখে
মানবদেহের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া হলো এই ইমিউন সিস্টেম। যা সঠিকভাবে বজায় রাখা বেশ জরুরি। বলে রাখা ভালো তেতুলের রসে যথেষ্ট পরিমাণে এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
যা সরাসরি ইমিউন সিস্টেম বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া তেতুল সরাসরি সর্দি, কাশি, ফ্লু ইত্যাদির মতো মানবদেহকে দুর্বল করে দেওয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে কাজ করে থাকে।
পেট ভালো রাখতে সাহায্য করে
হুটহাট পেটে ব্যাথা করা বা পেটের অবস্থা সবসময়ই খারাপ থাকা ব্যাক্তিরা ঔষধের মতো নিরাপদ বিষ খেতে না চাইলে নিয়ম মেনে তেতুলের রস খেতে পারেন। কারণ তেতুল অন্ত্রে দেখা দেওয়া আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং ক্রোনের মতো রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
শুধু তাই নয়! আপনি চাইলে মধু, দুধ, লেবু এবং খেজুরের সাথে মিশিয়ে বদহজমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারেন এই তেতুলের রসকে।
বলে রাখা ভালো তেতুলে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা লিভার ঠিক রাখতে, কৃমির অত্যাচার সারাতে এবং পেটের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পেতে কাজ করে।
চোখের যত্নে কাজ করে
এযাবতকালে হয়তো কখনোই আপনি এই চোখের যত্নে তেতুলের উপকারিতা সম্পর্কে কোনো তথ্যই জানতেন না! জানলেও হয়তো আমলে নিতেন না! তবে এখন থেকে এ-ব্যাপারে সর্বোচ্চ সচেতন হতে হবে।
কারণ তেঁতুলের রস কনজাংটিভাইটিস রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যাদের চোখের ড্রপ ড্রাই আই সিন্ড্রোম রয়েছে তারাও তেতুলের রস বা তেতুল খেয়ে যথেষ্ট উপকৃত হতে পারেন।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন তেতুলে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে। তাছাড়া তেতুলে থাকা এই বৈশিষ্ট্যটুকু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত বাড়ায় বলে রোগীর ক্ষেত্রে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটা কিছুটা হলেও সহজ হয়ে উঠে।
তাছাড়া যারা ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি জীবাণুকে দেহে জায়গা দিতে চান না তারা নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট পরিমাণে তেতুল বা তেতুলের রস খেতে পারেন। আশা করি সর্বোচ্চ হারে উপকৃত হবেন।
তেতুলের অপকারিতাগুলি কি কি?
তেতুলের স্বাদ এবং পুষ্টির গুণগান তো অনেক হলো। এবারে একজন সচেতন ভোক্তা হিসাবে আমাদের সকলেই উচিত তেতুলের অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা এবং এই বিষয়টুকু মাথায় রেখেই তেতুল গ্রহণ করা। চলুন কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আলোচনায় যাওয়া যাক।
দেহে এসিড রিফ্লাক্স ঘটায়
দেহে অ্যাসিড রিফ্লাক্স ঘটানো মানে পুরো দেহে এসিড ছড়িয়ে দেওয়া। যেহেতু তেতুলে প্রচুর পরিমাণ এসিড রয়েছে সেহেতু কেউ যদি অতিরিক্ত পরিমাণে তেতুল খান তবে দেহে অস্বাভাবিকভাবে এসিড রিফ্লাক্স ঘটবে। ফলে এসিডিটি তৈরি হবে এবং উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিই সাধন হবে।
দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে
আমরা সকলেই জানি টক জাতীয় খাবার দাঁতে ঠিক কতটা শিরশিরভাব তৈরি করে। এ-থেকেই বোঝা যায় অতিরিক্ত তেতুল গ্রহণ দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। আপনি যদি অত্যধিক পরিমাণে তেতুল খান তবে আপনার দাঁতের এনামেল সরাসরি এসিড উপাদান দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হবে।
রিলেটেডঃ দাঁত সাদা করার উপায়: হলদেটে দাঁত সাদা করার ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায় ২০২৩
এলার্জি বাড়িয়ে দেয়
যাদের এলার্জি রয়েছে তারা তেতুল গ্রহণের কারণে খারাপভাবে প্রভাবিত হতে পারে। কারণ তেতুলের সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে একটি হলো দেহে এলার্জির পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া।
শুধু তাই নয়! অতিরিক্ত পরিমাণে তেতুল খেলে দেহে ফুসকুড়ি, চুলকানি, জ্বালাপোড়া, মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হওয়া, বমি হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া ইত্যাদির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দেহে ভাসোকনস্ট্রিকশন তৈরি করে
ভাসোকনস্ট্রিকশন হলো শরীরের এমন একটি অবস্থা যার কারণে দেহের রক্তনালীগুলি সংকুচিত হয়ে যায়, রক্ত প্রবাহ ধীর বা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। যাদের মাঝে ইতিমধ্যেই ভাসোকনস্ট্রিকশন রোগ রয়েছে এবং যারা ইতিমধ্যেই ভাসোকনস্ট্রিকশন রোগের ঔষধ সেবন করছেন তাদের উচিত পুরোপুরি তেতুল গ্রহণ এড়িয়ে চলা। কারণ তেতুল সরাসরি দেহে ভাসোকনস্ট্রিকশন তৈরিতে কাজ করে।
ওজন কমিয়ে ফেলে
ইতিমধ্যেই এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানিয়ে দিয়েছি যে তেতুল মানুষের ওজন কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং যাদের ওজন ইতিমধ্যেই অনেক কম এবং যাদের ওজন কমজনিত সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত পরিমাণে তেতুল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
এছাড়াও তেতুল খাওয়া যাদের বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তারা এর ফলে জন্ডিস, তীব্র জ্বর, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, পরিপাকের সমস্যা ও লিভারের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগের মুখোমুখি হতে পারে।
তেতুল খাওয়ার নিয়ম কি?
তেতুল কিন্তু বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। চাইলে এটিকে আপনি কাঁচা খেতে পারেন। আবার যারা অনেক বেশি টক খেতে পারেন না তারা তেতুল পাকিয়ে খেতে পারেন।
তেতুল কাঁচা খাওয়ার চাইতে পাকা তেতুল খাওয়াটাই অনেকেই অনেক বেশি পরিমাণে পছন্দ করে থাকে। যারা ভিন্ন উপায়ে তেতুল খেতে চান তারা নিচের উপায়গুলি অনুসরণ করতে পারেন:
তেতুলের বল
তেতুলের বল বানিয়ে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করে বানিয়ে নিন মজাদার এই টক-বল:
- ৪ কাপ তেতুল নিন
- ২ কাপের মতো পানি গরম করে নিন
- এবার এতে ১ চা চামচ লবণ দিন
- ৩ কাপ চিনি দিন (চিনির পরিমাণ নিজের পছন্দ-মতো দিতে পারেন)
- ২ চা চামচ মরিচের গুঁড়া বা কাঁচা মরিচ কুচি দিন
- সব মিশিয়ে ঠান্ডা হলেই বলের মতো শেইপ করে পরিবেশন করুন এই তেতুল বল
তেতুল-তরকারি
বিভিন্ন রান্নায় তেতুল ব্যবহার করা স্বাদ পরিবর্তন করে চমকে দিন সবাইকে। এভাবে যেকোনো তরকারির রেসিপি বানাতে হলে:
- পছন্দের তরকারি কেটে নিন
- পেঁয়াজ, রসুন এবং মসলা দিয়ে কষিয়ে দিন
- হালকা তেতুল-পানি দিয়ে কাটা তরকারি ছেড়ে দিন
- ভালোমতো আবারও কষিয়ে ঝোল দিন
- ব্যাস…হয়ে গেলো মজাদার তেতুল-তরকারি
তেতুলের টক
তেতুলের টক বানিয়েও তেতুল খেতে পারেন। তেতুল টক বানাতে হলে:
- প্রথমে ৩/৪টি তেতুল দানা ছাড়িয়ে পিষে নিন
- এবারে এতে হালকা পেঁয়াজ, সরিষার তেল এবং লেবুর রস দিন
- ভালোভাবে মিশিয়ে লবণ, মরিচ এবং চিনি দিন
- সব উপকরণ মিশিয়ে আধা কাপ পানি দিয়ে আবারও মিশিয়ে নিন
তেতুলের জুস
আপনি কি পূর্বে তেতুলের জুসের ব্যাপারে জানতেন? না জানলে জেনে নিন মজার এই জুস কিভাবে বানাতে হয়! শুরুতে:
- তেতুলের দানা ছাড়িয়ে পিষে নিন
- হালকা লবণ এবং পছন্দমতো চিনি মেশান
- সবকিছু মিশিয়ে পছন্দমতো পানি দিয়ে ছেকে নিন
এই জুস একবার খেলে কিন্তু স্বাদ আর ভুলবেন না! এভাবে জুস বানিয়ে তাতে খানিকটা ক্রিম ব্যবহার করে আইসক্রিমও তৈরি করা যায়।
তেতুলের ব্যবহারগুলি কি কি?
তেতুলের ব্যবহার সাধারণত বিভিন্নভাবে করা যেতে পারে। তবে যেসব ব্যবহার আপনার দৈনন্দিন জীবনকে আরো সহজ করে দিবে সে-সব ব্যবহার হলো:
- বিভিন্ন ঝাল রেসিপিতে বিশেষ করে বিভিন্ন কারিতে ব্যবহার করতে পারেন এই তেতুল। এতে করে রান্নার স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
- মাছ ভাজার পূর্বে মাছকে তেতুল পানিতে ৩০ মিনিটের মতো ভিজিয়ে রাখুন। দেখবেন ভাজার সময় মাছ আর ভাঙছে না।
- কেক তৈরি করার সময় তেতুল দানাকে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ তেতুল দানা কেকের বিভিন্ন অংশে ব্যবহার করলে খুব সুন্দর একটি ডিজাইন তৈরি হয়।
- যারা বাড়িতে বিভিন্ন ধরণের সস তৈরি করেন তারা সসে তেতুলের রস ব্যবহার করতে পারেন। কারণ সসে টক-জাতীয় উপকরণ হিসাবে তেতুল ব্যবহার করতে পারলে সসের স্বাদ বহুলাংশে বেড়ে যায়।
শেষ কথা
চেষ্টা করেছি তেতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা, তেতুল খাওয়ার নিয়ম, তেতুলের ব্যবহার এবং তেতুলের গুণাগুণসহ বিভিন্ন তথ্য কেবলমাত্র একটি আর্টিকেলের মাধ্যমেই তুলে ধরার! আশা করি শতভাগ সফল হয়েছি।
প্রকৃতিই আমাদের মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ। সুতরাং প্রকৃতি থেকে সহজে পাওয়া এই আশীর্বাদ পায়ে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশে তেতুল বেশ সহজলভ্য। সুতরাং তেতুলের কোনো উপকারিতা লাভ করাকে পায়ে ঠেলে দিতে না চাইলে নিয়মিত এবং নিয়ম মেনে তেতুল খান।
পাশাপাশি তেতুলের অপকারিতার বিষয়গুলিকেও মাথায় রাখুন। যাদের এলার্জি আছে, যাদের পিরিয়ড চলছে, যাদের ওজন কম এবং যারা গর্ভবতী তারা তুলনামূলকভাবে কম তেতুল খাওয়ার চেষ্টা করুন।
আর হ্যাঁ! দৈনন্দিন জীবনে তেতুলের ব্যবহার বাড়িয়ে দিন এবং দেখুন সকল কাজ কত্ত সহজ মনে হচ্ছে। বিশেষ করে রান্নাঘরে এর সঠিক ব্যবহার করতে পারলে আপনার শ্রেষ্ঠ গৃহিণী হয়ে উঠার পথটি আরো সহজ হয়ে উঠবে। ভালো থাকুন এবং তেতুলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রতিদিন তেতুলের রস পান করা কি স্বাস্থ্যসম্মত?
হ্যাঁ! আপনি চাইলে প্রতিদিনই নির্দিষ্ট পরিমাণে তেতুলের রস পান করতে পারেন। যা আপনাকে ত্বক, চুল এবং সৌন্দর্যের অন্যান্য দিকগুলি সঠিকভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
তাছাড়া প্রতিদিন তেতুলের রস পান করার বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত নেতিবাচক দিক তো রয়েছেই!
তেতুল কি চুলের বৃদ্ধিতে কাজ করে?
তেতুল চুলের বেড়ে উঠার কাজে কোনো ভুমিকা রাখে কিনা সে-সম্পর্কে এখনো বিজ্ঞানীরা শতভাগ নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে প্রাচীনকাল থেকে তেতুলকে চুল বেড়ে উঠার কাজে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান হিসাবে ব্যবহারের বিষয়টি মোটেও ফেলে দেবার মতো নয়।
তেতুলের রস গ্রহণে কি শরীর ঠান্ডা থাকে?
হ্যাঁ! কারণ তেতুল আমাদের দেহের সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। বলে রাখা ভালো তেতুলের শরীর ভালো রাখার এই পুরো প্রক্রিয়াকে বলে দেহে কুলিং এফেক্ট বজায় থাকা।
যাইহোক! গরমকালে কিন্তু একটু স্বস্তি পেতে নিয়মিত তেতুলের রস পান করতে পারেন। দেখবেন যথেষ্ট আরামবোধ করছেন!
একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন কতটুকু তেতুল খাওয়া প্রয়োজন?
নিজেকে সুস্থ রাখতে আপনি প্রতিদিন মোটামুটি ১০ গ্রামের মতো তেতুল খেতে পারেন। আর যারা তেতুলের রস খেতে চান তারা প্রতিদিন ওই ১০ গ্রাম তেতুলকে জুস বানিয়ে খেতে পারেন।