আয়রন হলো মানবদেহের বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। যা আপনাকে খাবার-দাবারের মাধ্যমে নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে।
আপনি জেনে খুশি হবেন যে আপনার দৈনন্দিন আয়রনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করার জন্য হাতের কাছেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। যা দামে সাশ্রয়ী, স্বাদে অতুলনীয় এবং পুষ্টিতে ভরপুর।
আপনি কি জানেন আয়রনের কাজ কি? আয়রনের কাজ হলো লোহিত রক্তকণিকার অংশ হিসাবে আপনার সারা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করা।
চলুন তবে আর দেরি না করে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা এবং আয়রন সমৃদ্ধ ফল এবং সবজি সম্পর্কে অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আলোচনা করবো কোন কোন খাবারগুলিতে তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে আয়রন থাকে।
খাবার উপযুক্ত কলিজা
যেসব প্রানীর কলিজা খাওয়া যায় বা খেলে কোনো সমস্যা হয় না সে-সব প্রানীর কলিজা খেতে পারেন। যেমন ধরুন মাছের কলিজা, মুরগির মাংসের কলিজা, হাঁসের মাংসের কলিজা, গরুর মাংসের কলিজা, ছাগলের মাংসের কলিজা।
এসব প্রানীর কলিজাতে থাকে প্রচুর আয়রন। যা দেহে আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সর্বোচ্চ কাজ করে থাকে। মোটকথা আয়রনের উৎস হিসাবে যেকোনো অর্গান মিট অত্যন্ত পুষ্টিকর। এই ধরণের খাবারে প্রতি ১০০ গ্রাম অংশে থাকে ৬ থেকে ৭ মিলিগ্রামের মতো আয়রন।
স্বাস্থ্যসম্মত ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেট হয়তো স্বাদের দিক দিয়ে খুব একটা মজার খাবার নয়। তবে পুষ্টির দিক দিয়ে এই খাবারের জুড়ি মেলা ভার৷ বলা হয়ে থাকে প্রতি ২৪ গ্রাম ডার্ক চকলেটে আপনি পেয়ে যাবেন ৩.৪ মিলিগ্রামের মতো আয়রন উপাদান।
এছাড়াও, এতে রয়েছে প্রিবায়োটিক ফাইবার। যা আপনার লিভারে জমে যাওয়া ব্যাকটেরিয়াকে নিঃশেষ করে লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আপনি জেনে অবাক হবেন, একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কোকো পাউডার এবং ডার্ক চকলেটে অ্যাকাই বেরি এবং ব্লুবেরিতে তৈরি করা কোকো পাউডার এবং জুসের চেয়ে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
যারা নিয়মিত ডার্ক চকলেট খেতে পারবেন তারা কিন্তু আয়রনের অভাব দূর করার পাশাপাশি কোলেস্টেরলকেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। যা আপনার হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
ডিম এবং ডিমের তৈরি খাবার
যেকোনো খাবারের যোগ্য ডিম হতে পারে আয়রনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে এক্ষেত্রে পোল্ট্রির মুরগির ডিমের চাইতে আমাদের দেশী মুরগির ডিমকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ দেশী মুরগির ডিমে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি পরিমাণে আয়রন থাকে। শুধু তাই নয়! এই ডিম আমাদের দেহে আয়রনের পাশাপাশি বি ভিটামিন এবং সেলেনিয়ামের মতো খনিজ উপাদানও সরবরাহ করে থাকে।
যারা টার্কির ডিম পছন্দ করেন তারা কিন্তু প্রতিটি ডিম খেলে পেয়ে যাচ্ছেন ১.২৩ মিলিগ্রাম আয়রন। সেই সাথে মুরগির এক একটি ডিমে থাকে ১.১৬ মিলিগ্রাম আয়রন।
আর যেকোনো ডিম যদি কেবল পানিতে সিদ্ধ করেই খান সেক্ষেত্রে পেয়ে যাবেন ১.১৯ মিলিগ্রাম সমপরিমাণ আয়রন। আশা করি এই তথ্যটুকু জানার পর থেকে দেশী মুরগির ডিমকে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
মটরশুটি এবং মসুর ডাল
বলে রাখা ভালো মটরশুটি এবং মসুর ডালে সাধারণত নন-হিম আয়রন থাকে। তাছাড়া এই মটরশুটি এবং মসুর ডাল কিন্তু উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট এবং অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস হিসাবে কাজ করে।
সাধারণত মটরশুটি এবং মসুর ডালে যেসব প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে তা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট হিসাবে বেশ পরিচিত।
এই ডাল-জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকলেও এতে থাকা অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট তা সঠিকভাবে শোষণ করার ক্ষমতা রাখে। আর আমরা তো জানিই….আমাদের দেহের জন্যে আয়রন সঠিকভাবে শোষণ করার বিষয়টি ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ!
প্রতি ১ কাপ মসুরের ডাল রান্না করলে আপনি এতে পেয়ে যাবেন ৬.৫৯ মিলিগ্রাম আয়রন। আর যদি শিমের বীজ রান্না করেন তাহলে সেক্ষেত্রে প্রতি ১ কাপ রান্না করা বীজে পেয়ে যাবেন ৫.২ মিলিগ্রাম আয়রন। তাছাড়া প্রতি ১ কাপ ছোলাতেও পাওয়া যায় ৪.৭৪ মিলিগ্রাম আয়রন।
মোটকথা যেকোনো ধরণের ডাল-জাতীয় খাবারে যথেষ্ট আয়রন থাকে। আর হ্যাঁ! এই আয়রনের পুষ্টিগুণকে শক্তিশালী করে তুলতে রান্নায় ২/৩ ফোঁটা লেবুর রস যোগ করার চেষ্টা করুন। দেখবেন পুষ্টিগুণ অনেকাংশে বেড়ে গেছে।
বিশুদ্ধ সয়া সস
আপনি যদি আয়রনের অভাবে ভুগে থাকেন সেক্ষেত্রে সয়া সসও খেতে পারেন। সয়া সসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকার পাশাপাশি বেশ প্রোটিনও রয়েছে। প্রতি কাপ সয়া সসে গ্রহণকারী পেয়ে যাবে ৩২.৫ মিলিগ্রামের মতো আয়রন।
এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন সুপার শপে আজকাল সয়া দুধও পাওয়া যায়। এটিও কিন্তু আয়রনের চমৎকার উৎস হিসাবে কাজ করে। বলে রাখা ভালো প্রতি ১ কাপ সয়া দুধে থাকা আয়রনের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২ মিলিগ্রামের মতো।
বিভিন্ন বাদাম এবং বীজ
শিম, বরবটি ইত্যাদির সবজির বীজ সারাবছর জমিয়ে তা পরিষ্কার করে বিভিন্ন সবজির সাথে রান্না করার প্রচলন কিন্তু এখনো বাংলাদেশে চোখে পড়ে। তাছাড়া মাছের মাথা দিয়ে শিমের বীজ রান্না করলে তো আর কোনো কথাই নেই!
আপনি জেনে খুশি হবেন যে এসব বীজেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়। পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়ার বীজ কিন্তু ভেজে খাওয়া যায়। চাইলে এই বীজও খেয়ে দেখতে পারেন।
প্রতি ২ টেবিল চামচ তিল বীজে রয়েছে ২.২৬ মিলিগ্রাম আয়রন, প্রতি ১ কাপ কুমড়ার বীজে রয়েছে ২.২৯ মিলিগ্রাম আয়রন এবং প্রতি আধা কাপ কাজু বাদামে রয়েছে ১.৮৯ মিলিগ্রাম আয়রন। যারা কাজু বাদাম পছন্দ করেন না তারা কাজু বাদামের পরিবর্তে অন্য যেকোনো বাদামও খেতে পারেন।
রিলেটেডঃ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার, উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
আয়রন সমৃদ্ধ সবজিগুলি কি কি?
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা হিসাবে বেশকিছু সবজি নিয়ে আলোচনা করবো। যা আমাদের চারপাশে বেশ সহজলভ্য এবং যাতে আয়রন ছাড়াও অন্যান্য ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।
পালং শাক: আয়রন সমৃদ্ধ শাক-সবজি
পালং শাক তুলনামূলকভাবে একসাথে অনেকগুলি পুষ্টি উপাদান উৎপাদন করতে পারলেও এতে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে আপনি পাবেন সর্বমোট ২.৭ মিলিগ্রাম আয়রন। বলে রাখা ভালো এই পালং শাকে থাকা আয়রনকে কিন্তু নন-হিম আয়রন বলে থাকে অনেকেই। কারণ এই ধরণের আয়রন দেহে ঠিকমতো শোষিত হয় না। বা শোষিত হতে অনেক বেশি সময় লাগে।
আয়রন সমৃদ্ধ এই খাবার কিন্তু একইসাথে ক্যারোটিনয়েড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ একটি খাবারও বটে। যা মানবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়ে কমিয়ে আনে বহুগুণে। পাশাপাশি পালং শাক খেলে পাওয়া যাবে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন সি নামক পুষ্টি উপাদান। তাছাড়া চোখের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাইলেও এই পালং শাক খেতে পারেন নিয়মিত।
ব্রোকলি: আয়রন সমৃদ্ধ সবজি
বাংলাদেশে কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন বিদেশী শাক-সবজি পাওয়া যায়। এসব বিদেশী শাক-সবজির মাঝে ব্রোকলির কথা না বললেই নয়। ১ কাপ বা ১৫৬ গ্রাম ব্রোকোলিতে আপনি পেয়ে যাবেন ১ মিলিগ্রাম আয়রন৷ তাছাড়া ব্রোকলিতে আয়রনের পাশাপাশি রয়েছে ভিটামিন সি। একইসাথে আয়রন এবং ভিটামিন সি থাকার ফলে এটিতে থাকা আয়রন দ্রুত মানবদেহে শোষিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে।
আপনি যদি এভাবে প্রতিদিন ১ কাপ বা ১৫৬/১৫৭ গ্রাম ব্রোকলি খেতে পারেন, তাহলে আপনি পেয়ে যাবেন ফোলেট। সেই সাথে এটি কিন্তু ৫ গ্রাম ফাইবারও প্রদান করে থাকে। বলে রাখা ভালো এই ধরণের ক্রুসিফেরাস শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ইনডোল, সালফোরাফেন এবং গ্লুকোসিনোলেট থাকে। যা ব্যাক্তিকে ক্যান্সার রোগ থেকেও রক্ষা করে বলে বিশ্বাস করা হয়।
সিদ্ধ আলু: আয়রন সমৃদ্ধ সবজি
আয়রন সমৃদ্ধ সবজি হিসাবে আমরা সিদ্ধ আলুর কথা বলতে পারি। আমরা যেহেতু একটি ভর্তাপ্রিয় জাতি সেহেতু আমরা কিন্তু সহজেই আমাদের সহজাত অভ্যাসের মাধ্যমে নিজেদের দেহে আয়রনের অভাব দূর করতে পারি।
কেবল সিদ্ধ আলু না খেয়ে আলুর খোসাটুকুকেও যদি খাওয়া যায় তবে পেয়ে যাবেন বাড়তি আয়রনের নিশ্চয়তা। গবেষকদের মতে প্রতিটি মিডিয়াম আলুতে থাকে ২ মিলিগ্রাম আয়রন। পাশাপাশি যদি খোসাসহ খাওয়া যায় সেক্ষেত্রে আরো বেশি পরিমাণে আয়রন প্রাপ্তির বিষয়টি সহজেই নিশ্চিত হবে।
মাশরুম: আয়রন সমৃদ্ধ সবজি
মাশরুমও কিন্তু আয়রনের বেশ গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এই মাশরুম আপনি বিভিন্নভাবে খেতে পারেন। সবজি হিসাবে অন্যান্য রান্নার সাথে, বিভিন্ন নাস্তার সাথে রান্না করলে কিন্তু খেতেও বেশ ভালো লাগবে। বলে রাখা ভালো প্রতি ১ কাপ কাঁচা মাশরুমে ২ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যাবে।
তবে রান্না পরবর্তী মাশরুমে এই আয়রনের পরিমাণে কিছুটা হেরফের হতে পারে। আয়রনের পাশাপাশি মাশরুমে রয়েছে প্রোটিন, বিভিন্ন ভিটামিন এবং বিভিন্ন খনিজ উপাদান। যা আমাদের দেহের জন্যে বেশ উপকারী পুষ্টি হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
সরিষার শাক: আয়রন সমৃদ্ধ শাক
সরিষার তেল তো প্রচুর খাওয়া হয়? কিন্তু কখনো কি সরিষার শাক খেয়ে দেখেছেন? যদিও কখনো এই শাক না খেয়ে থাকেন তবে জীবনে একটিবারের জন্যে হলেও খেয়ে দেখার চেষ্টা করবেন। এই শাক স্বাদে যেমন ভরপুর ঠিক তেমনই এতে থাকা আয়রনও মানবদেহে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।
আপনি যদি এক কাপের মতো সরিষার শাক হালকা ঝোল দিয়ে রান্না করতে পারেন বা তেলে ভেজে নিতে পারেন সেক্ষেত্রে তা থেকে ২.৫ মিলিগ্রামের মতো আয়রন পেয়ে যাবেন। সবুজ রঙের যেকোনো শাকই কিন্তু আয়রনের বেশ গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে কাজ করে থাকে।
টমেটো: আয়রন সমৃদ্ধ সবজি
খাবারের স্বাদ বহুগুণে বাড়াতে টমেটো ব্যবহার করতে পারেন। এটি একইসাথে আপনার খাবারকে মজাদার করে তুলবে এবং আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন গ্রহণের বিষয়টিও নিশ্চিত করবে। তবে এক্ষেত্রে শুকনো টমেটোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
যারা শুকনো টমেটো খেতে চান তারা টমেটোকে ৪ টুকরা করে রোদে শুকিয়ে তা অনেকদিন পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেন। বলে রাখা ভালো প্রতি ১ কাপ শুকনো টমেটো আপনাকে দেবে ৫ মিলিগ্রাম আয়রন-প্রাপ্তির নিশ্চয়তা।
মিষ্টি আলু: আয়রন সমৃদ্ধ সবজি
মিষ্টি আলুতে আয়রন থাকে। তবে কতটুকু থাকে বা থাকবে তা নির্ভর করবে রান্না করার উপায়ের উপর। মিষ্টি আলু রান্না করার সময় সিদ্ধ করলে বা তা সবজি হিসাবে রান্না করলে এটি থেকে তুলনামূলকভাবে কম আয়রন পাওয়া যাবে। তবে তা ভাপে দিলে বা বেইক করলে আয়রনের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যাবে।
এক্ষেত্রে মনে রাখবেন মিষ্টি আলু সিদ্ধ করা কিংবা ভাপে রান্না করা একই বিষয় না। ভাপে রান্না করা প্রতি ১ কাপ মিষ্টি আলুতে আয়রনের পরিমাণ থাকবে সর্বোচ্চ ১.৭ মিলিগ্রাম। যা একজন সুস্থ দেহের প্রতিদিনকার চাহিদা মেটাতো যথেষ্ট হবে৷
ফুলকপির পাতা: আয়রন সমৃদ্ধ সবজি
আপনার মা কি আপনাকে জোর করে ফুলকপির পাতা বা ফুলকপির ডাটা খাওয়ানোর চেষ্টা করতো? এখনো কি করে? যদি করে থাকে তবে বলবো আপনার মা আপনার জীবনে একজন চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করে আসছে। কারণ যেকোনো সচেতন চিকিৎসকের মতে ফুলকপির পাতা বা ফুলকপির ফেলে দেওয়া ডাটাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন।
সুতরাং আজ থেকে নিজিকে বোকা বানিয়ে রাখতে না চাইলে আয়রন এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ খাবার ফুলকপির ডাটা এবং পাতা খাওয়ার চেষ্টা করুন।
এসব খাবার ফেলে দিয়ে পুষ্টি উপাদান ফেলে দেবার কোনো মানেই হয় না! আপনি কিন্তু চাইলে এসব সবজি মাছের মাথা দিয়ে রান্না করতে পারেন। অথবা ভাজি করেও খেতে পারেন। অল্প হলুদ, মরিচ এবং পেঁয়াজ দিয়ে এসব ভাজি করতে পারলে কিন্তু পাতে আরকিছুরই দরকার পড়বে না।
রিলেটেডঃ দাঁত সাদা করার উপায়: হলদেটে দাঁত সাদা করার ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়
আয়রন সমৃদ্ধ ফলগুলি কি কি?
আপনি চাইলে বিভিন্ন ফলের মাধ্যমেও দেহের আয়রনের অভাব দূর করতে পারেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ফলগুলি খেলে আপনার দেহের আয়রনের অভাব দূর হবে:
তরমুজ: আয়রন সমৃদ্ধ ফল
আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় সেরা খাবারগুলোর মধ্যে একটি হলো তরমুজ। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন সি থাকে, যা আয়রন শোষণে সাহায্য করে। আপনার দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে নিয়মিত তরমুজের জুস বা তরমুজের আইসক্রিম খেতে পারেন।
আপেল: আয়রন সমৃদ্ধ ফল
আপেল একটি বিদেশী ফল হলেও এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আপেল গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসাবে কাজ করে থাকে। তাছাড়া ত্বকের সৌন্দর্য্য ধরে রাখতেও এই আপেল নিয়মিত খেতে পারেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভালো হয় প্রতিদিন অন্তত একটি করে আপেল খেতে পারলে।
স্ট্রবেরি: আয়রন সমৃদ্ধ ফল
স্ট্রবেরি কিন্তু বেশ সুস্বাদু একটি ফল। এই ফলটিতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন। থাকে। যদিও ফলটির দাম কিছুটা বেশি। তবে মাসে অন্তত ২/৩ বার এই ফল খাবার তালিকায় রাখা উচিত। এতে করে আপনার শরীর খুব দ্রুত আয়রনের অভাব কাটিয়ে উঠতে পারবে।
ডালিম: আয়রন সমৃদ্ধ ফল
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সবচেয়ে ভালো হতে পারে এই ডালিম। আয়রন ছাড়াও ডালিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন।
ভিটামিন এ, কে, ই, সি আয়রন, পটাসিয়াম, ফোলেট, ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান এই লাল রঙের, রসালো এবং সুস্বাদু বীজগুলিতে প্রচুর পরিমাণে থাকায় আশা করি এটি আপনার দেহে বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের অভাব দূর করতে সাহায্য করবে।
রিলেটেডঃ বুকের বাম পাশে ব্যথা: বুকের বাম পাশে ব্যথা হলে করনীয়
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের উপকারিতাগুলি কি কি?
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের উপকারিতা কতটুকু তা বুঝলে হলে এর গুরুত্ব বুঝতে হবে। আপনি জেনে অবাক হবেন, সারা পৃথিবীতে ১.৬ বিলিয়ন মানুষ আয়রনের অভাবে বিভিন্ন রোগে ভুগছে। মারাত্মক রোগগুলিই দেখা দিচ্ছে এই আয়রনের অভাবে।
বিশেষ করে আলসারেটিভ কোলাইটিস, ক্রোহন ডিজিজ এবং ক্যান্সারের মতো রোগের কথা না বললেই নয়! সবচেয়ে বড় কথা হলো উল্লেখিত রোগগুলি দেখা দিলেই আয়রনের অভাব পূরণ করাটা বা ব্যালেন্স করাটাই অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। চলুন জেনে নেওয়া যাক আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের উপকারিতাগুলি কি কি হতে পারে:
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলি আপনার ঘুম বাড়াতে সাহায্য করবে। যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে আশা করি তারা এই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে বাড়তি সুবিধা পাবেন।
- নোরপাইনফ্রাইন, ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারগুলিকে সঠিকভাবে নিমন্ত্রণ করবে এই আয়রন। যা আপনার মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখবে।
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে মানবদেহে থাকা ক্লান্তি এবং অবসাদ অনেকটা দূর হয়ে যায়।
- আয়রনের ঘাটতি শরীরে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমিয়ে রক্তাল্পতা সৃষ্টি করে। সুতরাং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে এই ধরণের সমস্যাও দূর হতে পারে।
সুতরাং আয়রনের অভাবে দেখা দেওয়া বিভিন্ন রোগ এবং সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। কোনো কারণে যদি মনে হয় আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন গ্রহণ করতে পারছেন না বা আয়রন শোষন হচ্ছে না তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আপনার দেহে আয়রনের ব্যালেন্স বজায় রাখাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং কোনোভাবেই এই ব্যাপারে হেলা করা যাবে না। যতটা সম্ভব সচেতন থাকতে হবে।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের অপকারিতাগুলি কি কি?
বলা হয়ে থাকে, “অতিরিক্ত কোনোকিছুই ভালো নয়”! আয়রন গ্রহণের বেলায়ও এই কথাটি প্রযোজ্য। মনেে রাখবেন অতিরিক্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করার ফলে আপনার শারীরিক অবস্থা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। দেখা দিতে পারে আয়রনের বিষাক্ততা। এক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং নানান ধরণের সমস্যা।
পাশাপাশি ধীরে ধীরে, অতিরিক্ত আয়রন দেহের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রগুলিতে জমা হলে মস্তিষ্ক এবং লিভারের সম্ভাব্য মারাত্মক ক্ষতি দেখা দেয়। সুতরাং অতিরিক্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ ফলে দেহের ক্যান্সার, লিভারের সমস্যা, ডায়াবেটিস এবং হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি বাড়াতে না চাইলে আজ থেকেই সচেতন হয়ে উঠুন।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার নিয়মগুলি কি কি?
একদিকে যেমন কিছু খাবার আপনার শরীরকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার থেকে আয়রন শোষণ করতে সাহায্য করবে ঠিক তেমনই কিছু কিছু খাবারও আপনার দেহকে আয়রন শোষনে বাঁধা প্রদান করবে। এক্ষেত্রে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ সময় ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন। সেই সাথে যেকোনো ধরণের জুস এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকুন।
ইতি কথা
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার এবং আয়রন সমৃদ্ধ ফল এবং সবজির পাশাপাশি আয়রন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে এই ছিলো আমাদের আজকের আলোচনা। আশা করি আপনার স্বাস্থ্যের সুস্থতা নিশ্চিত করতে এই আর্টিকেলটি কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
আপনাকে যেমন আপনার শরীর যে পরিমাণ আয়রন শোষণ করে সে পরিমাণ আয়রন গ্রহণ করার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে, ঠিক তেমনই মাথায় রাখতে হবে প্রয়োজনের বেশি বা অতিরিক্ত হারে আয়রন গ্রহণ করছেন কিনা। যদি করে থাকেন পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সচেতন থাকাটা জরুরি।
আপনার সর্বোচ্চ সুস্থতা কামনা করে আজকের আর্টিকেলটির ইতি টানছি। ধন্যবাদ সবাইকে।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
কখন আয়রন সমৃদ্ধ খাবার এবং আয়রন সমৃদ্ধ ফল এবং সবজি এড়িয়ে চলা উচিত?
চা, কফি এবং ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ পরবর্তী সময়ে অন্তত পক্ষে ২ ঘন্টা অপেক্ষা করা উচিত। নতুবা দেহ খাবারে থাকা সম্পূর্ণ আয়রন শোষন করতে সক্ষম হবে না।
কোন ধরণের খাবারের সাথে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত?
মূলত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করার সময় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। কারণ ভিটামিন সি দেহে যথেষ্ট পরিমাণে আয়রন শোষন করতে সাহায্য করে৷
কিভাবে দ্রুত দেহে আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়?
নিয়মিত মাংস এবং ডিম খেলে মানবদেহে দ্রুত আয়রনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই দুইটি খাবারকে অনেক সময় আয়রন বুস্টার খাবারও বলা হয়ে থাকে।