Skip to content

তরমুজের চমৎকার সব গুণ, জানুন স্বাস্থ্যগত উপকারিতা কি কি

তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা

বেশ মিষ্টি এবং অতিরিক্ত পরিমাণে ঠান্ডা ফল হিসাবে তরমুজ বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে সারা বছর তরমুজের চাষ করা হলেও বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে তোড়জোড় করে কোমড় বেঁধে তরমুজ চাষের ব্যবস্থা করা হয়। 

তরমুজ মূলত পানি এবং মিষ্টিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর একটি রসালো ফল। যা খুব কম ক্যালোরি প্রদান করে বলে ডায়েট করতে চাওয়া প্রতিটি ব্যাক্তির ক্ষেত্রে ডায়েট চার্টে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। 

বলে রাখা ভালো এই রসালো তরমুজের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। সেই সাথে বেশকিছু অপকারিতাও রয়েছে…যা আপনার জেনে রাখা উচিত। 

মূলত তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা, ব্যবহারসহ সকল বিষয় একসাথে উপস্থাপন করার উদ্দেশ্যেই সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের এই আর্টিকেল। সুতরাং সকল তথ্য জানতে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন। 

তরমুজ কি?

আসলে তরমুজকে নতুন করে পরিচিত করিয়ে দেবার মতো কোনো কারণ দেখছি না। কারণ এই ফল প্রায় প্রত্যেকেই চেনে। সকলেই জানে এই ফলটিকে রসালো ফলের কাতারে এবং একই সাথে রঙিন ফলের কাতারে ফেলা যায়। 

এই জনপ্রিয় এবং গ্রীষ্মকালীন ফলটিতে কিন্তু প্রচুর পরিমাণ পানি এবং সেই সাথে গ্লুকোজ রয়েছে। ফলে বেশিরভাগ বাচ্চারাই ফলটিকে অনেক বেশি পছন্দ করে থাকে। 

যাইহোক! সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে তরমুজের ফলন হয় দক্ষিণ আফ্রিকাতে। এছাড়াও বাংলাদেশের কথা যদি বলি তবে বলবো বাংলাদেশের তরমুজের উৎপাদনের পরিমাণ নেহায়েত কম নয়। তাছাড়া সারাবছরও চাইলে এটির খোঁজ মেলে। 

এই ফল অর্থ্যাৎ তরমুজ সাধারণ পাকা ফল হিসাবেই খেয়ে থাকে। দানা ফেলে দিলেও বর্তমানে তরমুজের খোসা খাওয়ার একটি প্রচলন শুরু হয়েছে। এই খোসা সবজি হিসাবে সাধারণত রান্না করে খাওয়া হয়ে থাকে। যদিও এভাবে তরমুজের খোসা রান্না করার বিষয়টি বাংলাদেশে এখনো নতুন। তবে এই সবজির স্বাদ কিছুটা রান্না করা কাঁচা পেঁপের মতো! তরমুজ সম্পর্কিত আরোকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো: 

  • বৈজ্ঞানিক নাম: Citrullus lanatus বা কার্ল পিটার থুনবার্গ
  • ক্যাটাগরি: এ জাতীয় ফল
  • প্রজাতি: C. lanatus
  • প্রকারভেদ:
  • উৎপত্তি: ৪০০০ বছর পূর্ব হতে
  • আদিভূমি: পশ্চিম আফ্রিকা
  • আধুনিক তরমুজের পূর্বপুরুষ: গুরুম
তরমুজ
তরমুজ (Photo by Canva)

তরমুজের পুষ্টিগুণ কি কি? 

আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আলোচনা করবো তরমুজের পুষ্টিমান সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য। চলুন তবে আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। 

মূলত ১০০ গ্রাম তরমুজের টুকরোতে আপনি পাবেন: 

নাম্বারউপাদানপরিমাণ
ক্যালোরি৩০ গ্রাম
পানি৯১%
প্রোটিন০.৬গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট৭.৬ গ্রাম
সুগার৬.২ গ্রাম
ফাইবার০.৪ গ্রাম
ফ্যাট০.২ গ্রাম
তরমুজের পুষ্টিগুণ

এছাড়াও যেকোনো তরমুজ খেলে যেসব পুষ্টি উপাদান পাবেন আপনিও, সে-সব পুষ্টি উপাদান হলো: 

  • গ্লুকোজ
  • ফ্রুক্টোজ
  • সুক্রোজ
  • ভিটামিন সি
  • পটাশিয়াম 
  • খনিজ 
  • ভিটামিন বি
  • ভিটামিন এ
  • ভিটামিন বি ৫ 

তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা

এবারে চলুন আলোচনার মূল অংশে যাওয়া যাক এবং জেনে নেওয়া যাক তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতাগুলি কি কি সে-সম্পর্কে। 

তরমুজের উপকারিতাগুলি কি কি? 

শুরুতেই চলুন জানা যাক কেনো আপনার উচিত নিয়মিত তরমুজ খাওয়া। দেখে নেওয়া যাক প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে তরমুজ খেলে আপনি কি কি কারণে উপকৃত হবেন: 

প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা

তরমুজ পুরুষের লিংগ উত্থান সমস্যার সমাধানে খুব কার্যকারী, এই জন্যে তরমুজকে বলা হয় প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা।

পুরুষদের মধ্যে লিংগ উত্থান সমস্যার প্রায়শই দেখা দেয়, পর্যাপ্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে এটি রক্তের মধ্যে Arginine বাড়াতে সাহায্য করে এবং যাদের Erectile Dysfunction ( লিংগ উত্থানের) সমস্যা রয়েছে তাদের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

দ্রুত হজমে সাহায্য করে

যারা নিয়মিত তরমুজ খান তাদের দ্রুত যেকোনো খাবার হজম হবে। কারণ তরমুজে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকলেও অল্প পরিমাণে ফাইবার থাকে, ফলে তা যেকোনো খাবার দ্রুত হজমে কাজ করে। ফাইবার সাধারণত মানবদেহ থেকে মল বেরিয়ে আনতে সাহায্য করে। অন্যদিকে পানি মানবদেহ থেকে সরাসরি বর্জ্য বের করতে সাহায্য করে।

রিলেটেডঃ হজমশক্তি বৃদ্ধির উপায়, কার্যকারী টিপস ২০২৩ 

হার্ট ভালো রাখে 

গবেষণা দেখায় যে লাইকোপেনযুক্ত খাবার খাওয়া মানেই দেহে স্বাস্থ্য ঠিক থাকার রসদ সরবরাহ করা। কারণ এই ধরণের খাবার আপনাকে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে করবে। 

আমেরিকান জার্নাল অফ হাইপারটেনশন-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় তরমুজের নির্যাস বা রস হার্টের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে পারে৷ তাছাড়া তরমুজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধমনীর কার্যকারিতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

তরমুজ গাছ
তরমুজ গাছ (Photo by Canva)

জ্বালাপোড়া কমায়

অনেকের শরীরের সবসময় অস্বস্তি কাজ করতে থাকে। বিশেষ করে অনেকের দেহে বিভিন্ন কারণে জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে তরমুজ ম্যাজিকের মতো কাজ করবে। প্রতিটি তরমুজে থাকা সমস্ত লাইকোপিন এবং ভিটামিন সি সহ বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি যেকোনো দেহে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে৷ 

সুতরাং যাদের দেহে ফোলা ফোলা ভাব রয়েছে, বিভিন্ন জ্বালাপোড়া-জাতীয় রোগ রয়েছে, ক্যান্সারের মতো জটিল কিন্তু ঘাঁ-জাতীয় রোগ রয়েছে তারা দ্রুত ফল পেতে তরমুজ খেতে পারেন। এছাড়াও যারা ইদানীং দেহে ব্যাথা অনুভব করছেন বা কোথাও কেটে গিয়েছেন, তারাও দ্রুত সেরে উঠতে তরমুজ বা তরমুজের জুস খেতে পারেন। 

ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা যায়

আপনি কি জানেন তরমুজকে ত্বকের যত্নেও ব্যবহার করা যায়? এই গুণবতী ফলটিকে আপনি আপনার ত্বককে নরম, মসৃণ এবং কোমল রাখতেও ব্যবহার করতে পারেন। তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি, ভিটামিন A, B6 এবং C। এসব প্রত্যেকটিই কিন্তু ত্বকের যত্নে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। 

মূলত ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকের রক্তপ্রবাহ পূর্বের চাইতে অনেক ভালোভাবে কাজ করার সুযোগ পায়। অন্যদিকে ভিটামিন এ ত্বকের বিভিন্ন কোষ মেরামত করার কাজে নেমে পড়ে। সেই সাথে এই ভিটামিন এ সাহায্য করে শুষ্ক, ফ্ল্যাকি ত্বক প্রতিরোধ করার কাজে। 

ওজন কমাতে সাহায্য করে

পূর্বেই বলেছি তরমুজে খুব অল্প পরিমাণে সুগার রয়েছে। এর পরবর্তীতে এই ফলে আপনি প্রচুর পরিমাণে পানি পাবেন। এই দু’টো বিষয়ই কিন্তু ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসাবে কাজ করে থাকে! 

যাইহোক! সুতরাং যারা বর্তমানে অতিরিক্ত ওজন বা ক্লিনিক্যালি স্থূলতায় ভুগছেন তারা ডায়েটে তরমুজ রাখতে পারেন। এতে করে ওজনও কমবে অন্যদিকে মুখের স্বাদটুকুও বজায় রাখা যাবে। 

হাইড্রেটেড থাকতে সাহায্য করে

মূলত একটি একটি তরমুজ গঠিত হয় ৯০% পানির সাহায্যে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এটি খেলে আপনার দেহ ঠিক কি পরিমাণ হাইড্রেটেড থাকবে। তাছাড়া এক্ষেত্রে তরমুজ সুষম খাবার হিসাবেও কাজ করবে। অর্থ্যাৎ তরমুজ খেলে আমাদের দেহের কেবল পানির ঘাটতিই মিটবে না, বরং সেই সাথে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদাও মিটে যাবে। 

আজকাল বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্করাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে চায় না। ফলে কিডনিসহ দেহের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে। মনে রাখবেন সবসময়ই বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে দেহে হাইড্রেশন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বেশি বেশি পানি পান করার পাশাপাশি তরমুজও খেতে পারেন। 

চোখের সুস্থতা নিশ্চিত করে

যারা নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট পরিমাণে তরমুজ খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন তারা একদিকে চোখের যত্নেও দেহে এর ব্যবহার পরিলক্ষিত করবেন। কারণ তরমুজ আমাদের চোখের সামগ্রিক স্বাস্থ্যকেই ঠিক রাখতে সাহায্য করে। 

এছাড়াও তরমুজ খেলে চোখে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। মূলত তরমুজে থাকা ভিটামিন এ এবং সি, সেইসাথে লাইকোপেন এবং লুটিন + জিক্সানথিনের কারণেই এমনটা হয়ে থাকে। 

তরমুজের বীজ
তরমুজের বীজ (Photo by Canva)

তরমুজের অপকারিতাগুলি কি কি? 

তরমুজের উপকারিতা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তো জানলেন! একজন স্বাস্থ্য সচেতন ব্যাক্তি হিসাবে এবারে আমাদের জেনে রাখা উচিত তরমুজ খেলে স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে আমরা কি কি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারি:

এলার্জির সমস্যা বেড়ে যায়

যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের উচিত নিয়মিত তরমুজ না খেয়ে অন্তত মাসে একবার তরমুজ খাওয়া। কারণ তরমুজ সাধারণত মুখের যেকোনো এলার্জিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। গলা, ঠোঁট, মুখ কিংবা জিহ্বা…. মুখের যেকোনো অংশের এলার্জিতে যারা ভুগছেন তাদের উচিত তরমুজকে পুরোপুরি না বলা। নতুবা এলার্জির অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে। 

হজমে সমস্যা হতে পারে

কিছুক্ষণ আগেই তরমুজের উপকারিতা সংক্রান্ত অংশে আমরা জানতে পেরেছি যে তরমুজ আমাদের হজমে সাহায্য করে। তবে আপনাকে এটিও মনে রাখতে হবে যে অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে তা হজমে সাহায্য করার পরিবর্তে ঠিকঠাকভাবে খাবার হজম হওয়ার ক্ষেত্রেই বাঁধা প্রদান করে। 

গর্ভকালীন সময়ে জটিলতা দেখা দেয়

গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকাংশে বেড়ে যায়। আর যাদের একই সাথে ডায়াবেটিস রোগ আছে তাদের তো তরমুজ খাওয়ার ফলে দেহে জটিলতা আরো বেড়ে যায়। 

এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভালো হয় ২/৩ মাসের জন্যে পুরোপুরি তরমুজ খাওয়া বন্ধ রাখা। নতুবা জটিলতা বেড়ে গর্ভকালীন সময়ে মৃত্যু কিংবা শিশুর চরম ক্ষতির আশংকা দেখা দিতে পারে। 

হাইপারক্যালেমিয়া দেখা দিতে পারে

হাইপারক্যালেমিয়া হলো মানবদেহের এমন একটি অবস্থা, যেখানে ক্যালসিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি থাকে। মনে রাখবেন যেকোনো পুষ্টি উপাদানই পরিমিত পরিমাণে দেহে থাকা ভালো। 

অন্যদিকে অতিরিক্ত পরিমাণে যেকোনো পুষ্টি উপাদান দেহের ক্ষতি সাধনে একাই একশো হিসাবে কাজ করে। আপনার মাঝে যদি অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে হাইপারক্যালেমিয়ার সমস্যা দেখা দেয় তবে আপনার হার্ট অনেক বেশি দূর্বল হয়ে যাবে এবং হার্টবিট অস্বাভাবিক হয়ে পড়বে। 

রিলেটেডঃ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার, উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

খুব ক্লান্তিবোধ হতে পারে 

তরমুজ ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সাহায্য করলেও অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়া মানেই শরীরে পানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। ফলে শারীরিক ক্লান্তিবোধ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া এটি যেহেতু দেহে রক্তের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় সেহেতু দেহ সবসময়ই নিস্তেজ অবস্থায় থাকে। ফলে সারাদিন কোনো কাজকর্মেই হাত দিতে ইচ্ছে করে না। 

তরমুজ খাওয়ার নিয়ম কি কি? 

তরমুজ সাধারণত বাংলাদেশে পাকা ফল হিসাবে খাওয়া হয়ে থাকে। তবে বিদেশে অনেকেই এটিকে কাঁচা থাকতেই সবজি হিসাবো রান্না করে খায়। যাইহোক! এবারে চলুন দেখে নেওয়া যাক এই রসালো ফলটিকে আপনি কোন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে তৃপ্তি সহকারে খেতে পারেন: 

তরমুজের বীজ 

তরমুজের বীজ খাওয়ার কথা হয়তো এই প্রথমবারের মতো শুনছেন! প্রথমবার শুনুন বা দ্বিতীয়বার…জীবনে একটিবারের জন্যে হলেও তরমুজের বীজ খাওয়া প্রয়োজন। কারণ তরমুজের বীজে রয়েছে ৪ গ্রামের মতো প্রোটিন। যদিও এটি উদ্ভিদ প্রোটিন। তবে মানবদেহে কিন্তু সাধারণ প্রোটিনের পাশাপাশি উদ্ভিদ প্রোটিনেরও মারাত্মক চাহিদা থাকে। 

তরমুজের সালাদ

গ্রীকবাসীরা এই তরমুজের সালাত কিন্তু অনেক বেশি পরিমাণে পছন্দ করে থাকে। এক্ষেত্রে শসা, টমেটো, একটা মাঝারি সাইজের মুরগির মাংসের পিস এবং কিউপ করা তরমুজ ছাড়া আর কোনো উপকরণেরই প্রয়োজন পড়ে না। শুধু তাই নয়! যারা ওজন কমাতে চান বা কঠোর ডায়েটে আছেন, তারা নিশ্চিন্ত মনেই এই সালাদা দিনে ১ বার খেতে পারেন। 

তরমুজের জুস

আস্ত বা হাফ তরমুজ কিউপ কিউপ করে কেটে ব্লেন্ডারে দিন। এবারে স্বাদমতো চিনি এবং পানি, প্রয়োজনমতো বরফ কুচি যোগ করে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। 

যারা ফ্রেশ জুস পছন্দ করেন তারা এর সাথে কয়েকটি পুদিনা পাতা যোগ করতে পারেন। আর যাদের পুদিনা পাতা পছন্দ না তারা এই উপকরণটি এড়িয়ে যেতে পারেন। এভাবে জুস বানিয়ে ডিপ ফ্রিজে রাখতে পারলে আপনি তা ১ মাস সময় পর্যন্ত খেতে পারবেন। 

তরমুজের জুস
তরমুজের জুস (Photo by Canva)

তরমুজের আইসক্রিম 

তরমুজ ফ্লেভারের আইসক্রিম কিন্তু আপনি চাইলে ঘরে বসেই খেতে পারেন। তরমুজকে কিউপ করে কেটে নিয়ে ব্লেন্ড করে ক্রিমি করে নিন। এবারে এই ক্রিমে সাথে হুইপড ক্রিম যোগ করে হালকা চিনির সাহায্যে আপনার ব্লেন্ড করে নিন। 

এবারে সামান্য কর্ণ ফ্লাওয়ারের সাহায্য ভালোভাবে জাল দিয়ে মিশ্রণটিকে ঘন করে নিন। সবশেষে নামিয়ে পছন্দের শেইপে বসিয়ে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দিন। এই আইসক্রিম ঠিক মতো বানাতে পারলে এর স্বাদের কোনো ভাগ হবে না। 

তরমুজের ব্যবহার কি কি? 

তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তো জানলেন! আপনি কি জানেন তরমুজকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করে দারুণ উপকার পাওয়া যায়? চলুন তবে আর কথা না বাড়িয়ে তরমুজের এমনকিছু ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক…যা হয়তো আপনি জানতেন না! 

উজ্জ্বল ত্বক পেতে ব্যবহার করতে পারেন

তরমুজ কিন্তু উজ্জ্বল ত্বক তৈরিতে দারুণ কাজ করে। এক্ষেত্রে একটি ফেইস প্যাক তৈরি করতে হবে। এই প্যাক তৈরি করতে কিছু তরমুজের টুকরা, দই এবং হালকা মধু একসাথে মিশিয়ে নিন এবং ত্বকে লাগিয়ে ১০/১২ মিনিট অপেক্ষা করুন। 

হালকা শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক পানির সাহায্যে ধুঁয়ে ফেলুন। এভাবে ১/২ মাসের মতো ত্বকের যত্ন নিতে পারলে দেখবেন ত্বক আগের চাইতে অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।

রিলেটেডঃ মেয়েদের মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় ২০২৩

ঠোঁটের যত্নে ব্যবহার করুন

ঠোঁটের যত্নে তরমুজকে কার্যকর স্ক্রাব হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ৩ চা চামচ চিনি, ১ চা চামচ অলিভ অয়েল, কিছু তরমুজের জুস, আর গোলাপি রং (খাবারের ব্যবহার করা রং) নিন। সবগুলি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন। সময়মতো ধুঁয়ে পরিষ্কার করে নিন। 

দেখবেন ঠোঁট আগের চাইতে বেশ কোমল, হাইড্রেটেড এবং গোলাপি হয়ে উঠছে। 

রিলেটেডঃ ঠোঁট গোলাপি করার উপায়: ঠোঁট গোলাপি করার প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় ২০২৩

চুল বৃদ্ধিতে মাস্ক হিসাবে ব্যবহার করুন

শুধুমাত্র অলিভ অয়েল এবং তরমুজের জুসের মাধ্যমে তৈরি করা যাবে এই চুলের মাস্ক। যা সহজেই সাধারণ মাস্কের মতো চুলে লাগিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে এভাবে অন্ততপক্ষে একবার চুলের যত্ন নিন। কারণ এই মাস্ক চুলকে দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

বাচ্চাদের কান্না থামাতে ব্যবহার করুন

অনেক সময় বাচ্চারা ফাস্টফুডের জন্য অনেক বেশি কান্নাকাটি করে। এক্ষেত্রে তাদের কান্নাতে থামাতে স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে তরমুজ ব্যবহার করতে পারেন। তরমুজকে জাল দিয়ে প্যাকের মতো মিশ্রণ তৈরি করে আগার আগার দিন। 

এরপর এটি নামিয়ে পছন্দমতো শেইপ-বক্সে ঢালুন। ঠান্ডা হলে বাচ্চাদের সামনে তা পরিবেশন করুন। তরমুজের জেলি বা পুডিং এর পাশাপাশি তরমুজের আইসক্রিম তৈরি করেও বাচ্চাদের সারপ্রাইজ দিতে পারেন। 

তরমুজের সম্পুর্ন নতুন একটি রেসিপি” মুখে দিলেই মিলিয়ে যাবে এতটাই মজা | Most Unique Watermelon Recipe

শেষ কথা

আসুন আমরা তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে তরমুজের গুরুত্বকে কাজে লাগাই। কারণ নিজেকে সুস্থ রাখতে প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করার কোনো বিকল্প নেই। 

যাদের ভালো ব্যবস্থা আছে তারা চাইলে তরমুজের চাষও করতে পারেন। খুব বেশি না! ৩/৪ টা লতা তুলতে পারলে এবং ভালোভাবে যত্ন নিতে পারলে তরমুজের অভাব বেশ ভালোভাবেই দূর করা যাবে। 

আর যারা ভাবছেন বাগান করে বা চারাগাছ তুলে তরমুজ খাওয়া সম্ভব না তারা বাজার থেকে কিনে খেতে পারেন। আর কাটাকাটির ভয় পাচ্ছেন যারা, তারা অনেকগুলি তরমুজ পাইকারি দামে কিনে এনে কেটেকুটে ডিপ ফ্রিজে রাখতে পারেন। এভাবে রাখলে অনেকদিন ধরে খেতে কোনো সমস্যাই হবে না। 

মনে রাখবেন তরমুজ কিন্তু প্রতিটি পুষ্টি উপাদানেরই বেশ ভালো উৎস। এতে যেমন রয়েছে ভিটামিন সি, ঠিক তেমনই রয়েছে পটাসিয়াম, খনিজ, ভিটামিন বি ৫ এবং ভিটামিন এ (বিটা ক্যারোটিন)। 

এছাড়াও তরমুজে তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে ফ্রুক্টোজ থাকে। সুতরাং এতসব পুষ্টি ভান্ডার একসাথে পেতে চাইলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফল হিসাবে কিছু তরমুজের টুকরা রাখা জরুরি। 

সচরাচর জিজ্ঞাসা

প্রতিদিন কি আমি তরমুজ খেতে পারবো? 

হ্যাঁ! আপনি প্রতিদিনই তরমুজ খেতে পারবেন। এক্ষেত্রে সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত ৮০/১০০ গ্রাম পরিমাণের তরমুজ খেতে পারেন। 

চাইলে এই পরিমাণ তরমুজ জুস বানিয়ে খেতে পারেন। আবার চাইলে অন্যান্য ফলের সাথেও খেতে পারেন৷ 

ডায়াবেটিস রোগীরা কি তরমুজ খেতে পারবে? 

পারবে। তবে সুস্থ মানুষের যতটুকু খাওয়া প্রয়োজন তার অর্ধেক পরিমাণ তরমুজই কেবল খেতে পারবে। কারণ তরমুজে যথেষ্ট পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। যা ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে খুব একটা ভালো প্রভাব ফেলে না। 

যারা নিয়মিত এবং অতিরিক্ত পরিমাণে যদি ডায়াবেটিস রোগীরা তরমুজ খেতে থাকে তবে তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে উঠানামা করবে। যা মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।

Leave a Reply