প্রসাবে জ্বালাপোড়া নারী ও পুরুষ উভয়ের একটি বহুল প্রচলিত সমস্যা। বিশেষ করে এই সমস্যাটিতে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি ভুগে। ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়।
অধিকাংশ মানুষই এ ব্যাপারটিকে অবহেলা করে প্রাথমিক পর্যায়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় না। যার ফলস্বরপ বড় কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে যায় এবং ভোগান্তির শিকার হয়। এতে অর্থ ও সময় দুইটাই অপচয় হয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ মেয়েই জীবনের কোন না কোন সময়ে UTI ইনফেকশনে ভুগে।
প্রায় সময়ই সিরিয়াস সমস্যা না হওয়া পর্যন্ত তারা বুঝতে পারে না। এতে করে অনেক সময় তাদের যৌনাঙ্গের ক্ষতি হয়। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের কারণে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যাটি তৈরি হয়।
প্রসাবে জ্বালাপোড়া দূর করার জন্য সহজ কিছু উপায় আছে। এসব উপায় মেনে চললে খুব সহজেই প্রসাবে জ্বালাপোড়া দূর করা যায়। তাহলে চলুন আজ আমরা জেনে নিই প্রসাবে জ্বালাপোড়া দূর করার উপায় গুলো সম্পর্কে:
প্রসাবে জ্বালাপোড়া
প্রসাব করা শেষে আমরা যে অসহ্যকর ব্যথা কিংবা জ্বালা অনুভব করি সেটাই হলো প্রসাবে জ্বালাপোড়া। প্রসাবে জ্বালাপোড়া মূলত জীবাণুর কারণে ঘটে। জীবনু ও ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে অবস্থান করে এবং রোগ প্রতিরোধে বাধা দেয়।
এরা কিডনির মূত্রাশয় এবং এর মধ্যবর্তী টিউবগুলিকে আক্রমণ করে থাকে। এর ফলে প্রসাব শেষে জ্বালাপোড়া হয়। এই ব্যাকটেরিয়া গুলো মাইক্রোস্কোপ ছাড়া দেখা যায় না।
প্রসাবে জ্বালাপোড়ার কারণ
আমাদের ত্বকে, মলদ্বারে ও যোনির চারিপাশে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে। অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া গুলো মূত্রনালীতে প্রবেশ করে ও মূত্রশায় চলে যায় এবং এই ব্যাকটেরিয়া গুলো প্রসাবে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে।
আমাদের শরীর এসব ব্যাকটেরিয়া গুলো মূত্রনালীতে প্রবেশ করার আগেই তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু অনেক সময় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আগেই ব্যাকটেরিয়া গুলো মূত্রনালীতে প্রবেশ করে ফেলে।
ওই সব ক্ষেত্রেই প্রসাবে জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রসাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার আরো কয়েকটি কারণ আছে চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিয়:
১) সাধারণত Escherichia coli (E.Coli) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা প্রসাবে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয়। যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (GI) ট্র্যাক্টে পাওয়া এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া।
২) যখন (GI) ব্যাকটেরিয়া মলদ্বার থেকে মূত্রনালীতে ছড়িয়ে পড়ে তখন প্রসাবে জ্বালাপোড়া করতে পারে। এছাড়া মহিলাদের মূত্রনালী যোনিপথের কাছাকাছি থাকায় যৌনবাহিত সংক্রমণ যেমন, গনোরিয়া, হারপিস, মাইকোপ্লাজমা, এবং ক্ল্যামইডিয়া ইত্যাদি রোগ মূত্রনালীতে হতে পারে।
৩) অধিকাংশ সময়ই এই রোগ ইউটিআই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্টি হয় তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছত্রাক ও ভাইরাসের দ্বারাও সৃষ্টি হতে পারে।
৪) পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মহিলারই প্রতিমাসে পিরিয়ড হয়ে থাকে আর এই পিরিয়ড হচ্ছে প্রসাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার অন্যতম কারণ।অনেক নারী পিরিয়ডের সময় ন্যাপকিন আবার অনেকে কাপড় ব্যবহার করে থাকে। এই কাপড় বা ন্যাপকিনের সাথে জীবাণু প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে সৃষ্টি হয় প্রসাবে জ্বালাপালা।
৫) প্রসাবে জ্বালাপোড়া আরেকটি অন্যতম কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা। পরিমাণে পানি পান না করলে শরীরে নানা রকম রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধে। পানি আমাদের শরীরের নানা রকম রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
যারা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে না তাদের দেহে পানির অভাব থাকে এর জন্য প্রসাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এই জন্য প্রসাবের জ্বালাপোড়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
৬) প্রসাবে জ্বালাপোড়া একটি কষ্টদায়ক রোগ। মেয়েদের ক্ষেত্রে মূত্রনালী পায়ুপথের খুব কাছাকাছি থাকে তাই পায়ু পথ দিয়ে নানা রকম ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং প্রসাবে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে।
প্রসাবে জ্বালাপোড়া লক্ষণ
সাধারণত প্রসাবে জ্বালাপোড়ার যেসব লক্ষণ দেখা যায় এবং যেসব লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার মূত্রনালীতে ইনফেকশন হয়েছে সেগুলো হল:
১) প্রসাব করার সময় মূত্রনালীতে জ্বালাপোড়া।
২) প্রস্রাবে বাজে গন্ধ হওয়া।
৩) ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, তবে প্রত্যেকবার খুব কম প্রস্রাব হওয়া।
৪) প্রসাবের মধ্যে রক্ত যাওয়া।
৫) চায়ের মত রঙের প্রস্রাব হওয়া।
৬) ময়লা রঙের প্রস্রাব হয়।
৭) প্রসাবের রং ধূসর হওয়া।
৮) মলদ্বারে ও মূত্রনালীতে ব্যাথা করা। ইত্যাদি
প্রসাবে জ্বালাপোড়া কিসের লক্ষণ?
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে প্রসাবে জ্বালাপোড়া কিসের লক্ষণ। এটা কি বড় কোন রোগের উপসর্গ। হ্যাঁ, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বড় কোন রোগের উপসর্গ হতে পারে। কারণ প্রসাবে জ্বালাপোড়ার সাথে কিডনির একটা গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র আছে।
কিডনি বিকল হওয়ার লক্ষণগুলো সাধারণত ৭০ থেকে ৮০% কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ার পূর্বে বোঝা যায় না। কিন্তু আমাদের শরীরের কিছু কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ কিডনি রোগের সংকেত বহন করে। যেমন, প্রসাব করার সময় জ্বালাপোড়া ,প্রস্রাব লাল হওয়া, প্রসাবে দুর্গন্ধ ,ঘন ঘন প্রস্রাব, কোমরের ও তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা ,শরীর ও মুখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি। এজন্যই প্রসাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে কিডনি বিকল হওয়ার একটি লক্ষণ।
তাই এই সমস্যাটি দেখা দিলে দিনের পর দিন এই সমস্যাটি নিয়ে চলাফেরা করা উচিত না। দেখা দেওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা করার মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়?
প্রসাবে জ্বালাপোড়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এক এক মানুষের ক্ষেত্রে একেক কারনে ইনফেকশনটি হয়। চলুন জেনে নেই মহিলাদের প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কেন হয় সেই সম্পর্কে:
১) প্রসাবে জ্বালাপোড়া হওয়া অন্যতম কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা। দেহের চাহিদার তুলনায় কম পানি পান করলে প্রসাবে জ্বালাপোড়া হয়। পানি আমাদের দেহের বেশিরভাগ রোগ নিরাময় করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এইজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে দেহের অভ্যন্তরে নানাবিধি রোগের সৃষ্টি হয়। শরীরের পর্যাপ্ত পানির অভাবে প্রসাবে জ্বালাপোড়া হয়। এই রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে না।
২) মহিলাদের ক্ষেত্রে এই রোগটি বেশ বেদনাদায়ক। মহিলাদের পায়ু পথের খুব কাছাকাছি মূত্রনালীর অবস্থান। যে কারণে পায়ু পথের মাধ্যমে খুব সহজেই ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে।
৩) মহিলাদের প্রসাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে পিরিয়ড। পৃথিবীর সব মহিলারই প্রত্যেক মাসে মাসিক হয়। এ সময়ের সবাই ন্যাপকিন বা কাপড় ব্যবহার করে। আর এই ন্যাপকিন বা কাপড় থেকে জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং সংক্রমনের সৃষ্টি করে।
৪) অনেক সময় শারীরিক মেলামেশার ফলেও প্রসাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই প্রসাবের জ্বালাপোড়া করার সঠিক কারণ বের করে এর প্রতিকার করা জরুরী।
মহিলাদের প্রসাবে জ্বালাপোড়ার ঘরোয়া চিকিৎসা
প্রসাবে জ্বালাপোড়ায় প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণ লক্ষণ গুলো দেখা দিলে ঘরে বসেই এর প্রতিকার করা সম্ভব। তো চলুন দেখে নেই প্রসাবে জ্বালাপোড়ার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে:
১) পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান:
ইউরিন ইনফেকশন বা প্রসাবে জ্বালাপোড়া রোধে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পানির কোন বিকল্প নেই। দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে বা তরল খাবার গ্রহণ করলে প্রসাবের মাত্রা বেড়ে যায়।
বারবার প্রসাব করার ফলে প্রসাবের সাথে দেহের ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস বের হয়ে যায়। এছাড়াও দেহের মধ্যে থাকা অন্যান্য জীবনসমূহ প্রসবের সাথে বের হয়ে যায়।
যার ফলস্বরূপ প্রসাবে জ্বালাপোরাও দূর হয়। দ্রুত প্রসাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে উষ্ণ গরম পানি পান করুন।
২) শাকসবজি খাওয়া:
প্রসাবে জ্বালাপোড়া রোগ দূর করতে শাক-সবজি খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। শাকসবজির মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের পানির অভাব পূরণ করতে সক্ষম। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমিষের পরিমাণ কমিয়ে শাক সবজির পরিমাণ বাড়াতে হবে।
কিছু কিছু শাক সবজি দেহের শর্করার চাহিদা ও মেটায়। তাই প্রসাবের জ্বালাপোড়া রোধে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে।
৩) গরম চাপ:
পেটে ব্যথা কমাতে ও ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে গরম চাপ। এর জন্য হট ওয়াটার ব্যাগে উষ্ণ গরম পানি ভরে বা কাপড় উষ্ণ গরম করে তলপেটে ও এর আশেপাশে লাগাতে পারেন। এতে করে ব্লাডারের উপরের অংশে অতিরিক্ত চাপ কমে যাবে এবং ব্যথাও অনেকখানি কমে যাবে।
এছাড়াও বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের হিটিং প্যাড পাওয়া যায় যা ব্যবহারের মাধ্যমে মাসিকের সময় তলপোটের ব্যথা দূর করা সম্ভব। হিটিং প্যাড ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয় না।
এইজন্য প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া রোগে আক্রান্ত মহিলারা পিরিয়ডের সময় হিটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে তলপেটের ব্যথা দূর হওয়ার পাশাপাশি প্রসাবে জ্বালাপোড়াও দূর হয়ে যাবে।
৪) দই:
প্রসাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে দই বেশ কার্যকরী খাবার। দই এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া। এই স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া গুলো দেহে বসবাস করা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এছাড়া নিয়মিত দই খেলে দেহের পিএইচ বৃদ্ধি হয়। এইজন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা এক থেকে দুই কাপ দই রাখুন।
৫) পানিশূন্যতা দূরীভূত:
শরীরের পানি শূন্যতা প্রসাবে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হওয়ার সবচাইতে বড় কারণ। দেহে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান না করলে খুব দ্রুত ইউরন ইনফেকশন হয়। তাই প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৭ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করলে খুব সহজে প্রসাবে জ্বালাপোড়া দূর করা সম্ভব। এছাড়াও যে সমস্ত ফলে পানি আছে যেমন, তরমুজ ,আপেল ,আঙ্গুর, নাশপাতি, আনার ,ডাব ইত্যাদি খেলে পানি শূন্যতা কমে যায়।
এছাড়া, নারকেলের পানি ,ফলের রস, খাবার স্যালাইন, ইত্যাদি খেলে প্রসাবে জ্বালাপোড়া অনেকটাই কমে।
৬) সঙ্গীর সঙ্গে মেলামেশা থেকে বিরত:
স্বামী স্ত্রীর শারীরিক মেলামেশার আগে একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার স্ত্রীর প্রসাবে জ্বালাপোড়ার সংক্রমণ আছে কিনা।
যদি প্রসাবে জ্বালাপোড়া সংক্রমণ থাকে তাহলে অবশ্যই মেলামেশা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এই সময় মেলামেশা করলে আপনারও এই রোগ হতে পারে।
৭) ভেষজ উদ্ভিদ:
ভেষজ উদ্ভিদ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রসাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে ভেষজ উদ্ভিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ভূমিকা পালন করে। যেমন, চিরতার রস, নিম পাতার রস, আদার রস ইত্যাদি। এছাড়াও উষ্ণ গরম পানিতে জিরা গুড়া মিশিয়ে পান করলে ইউরিন ইনফেকশন দূর হয়।
৮) ডাক্তারের পরামর্শ:
যদি ঘন ঘন প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া সংক্রমণ হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। সঠিক মেয়াদেও সঠিক মাত্রায় এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসাও হতে পারে।
পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়?
মূত্রনালী বা ব্লাডারে যদি প্রসাব জমে থাকে তাহলে তাতে জীবাণু বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। বয়স্কদের প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়ার কারণে এবং মূত্রনালীর নিচের দিকে টিউমার বা পাথর জাতীয় বাধা থাকার কারণে প্রসাব করার পরও বেশ কিছু প্রস্রাব মূত্রথলিতে থেকে যায়।
এক্ষেত্রে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। আর যদি প্রসাবের জন্য নল বা ক্যাথেটার করা থাকে তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। অস্বাস্থ্যকর যৌন অভ্যাসের জন্য প্রসাবের নালিতে সংক্রমণ হতে পারে। ডায়াবেটিসের অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাবের কারণে সংক্রমণ হয়।
মূত্রনালের সংক্রমণের দীর্ঘদিন পর্যন্ত যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে সংক্রমণ কিডনিতে পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। আবার কখনো কখনো রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়।
পুরুষের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে করণীয়
প্রাথমিক অবস্থায় যদি এই রোগ ধরা পড়ে তাহলে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ দূর করা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ দূর না করলে পরে কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। এই জন্য শুরুতেই এই রোগ দূর করতে হবে। চলুন দেখে নিই পুরুষের প্রসাব জ্বালাপোড়ার ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো:
১) প্রসাব আটকে না রাখা:
অনেকেই আছে যারা বাড়ির বাইরে মূত্র ত্যাগ করতে চান না। এইজন্য তারা দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখে কিন্তু প্রস্রাব আটকে রাখার কারণে ইউরিনারি ইনফেকশন হতে পারে। প্রসাব যদি মূত্রাশয় দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয় তাহলে এতে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে।
প্রত্যেক ২০ মিনিট অন্তর অন্তর প্রসাবে অবস্থিত ই.কলি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর ব্যাকটেরিয়া সংখ্যা যত বেশি ব্যথাও তত বেশি। এ কারণে এর জন্য ভালো উপায় হচ্ছে বেশি বেশি পানি পান করা ও বেশি বেশি মূত্র ত্যাগ এর মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া বের করে দেওয়া।
২) প্রচুর পানি পান করা:
শরীরের যে কোন রোগ প্রতিরোধ করতে হলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন। ইউরিনারি ইনফেকশন এর ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। অনেকে শুধু টয়লেটে গেলে জ্বালাপোড়া হয় বলে টয়লেটে যাওয়া কমিয়ে দেয় কিন্তু এর ফলাফল ভয়াবহ।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে মূত্রত্যাগের জ্বালাপোড়া কমে এর সাথে ইউরেনারি ইনফেকশনও দূর হয়।
৩) যৌন মিলনের আগে ও পরে মূত্র ত্যাগ :
অনেকেরই যৌন মিলনের পর প্রসাবে জ্বালাপোড়া দেখা দেয়। যৌন মিলনের আগেও পরে মূত্র ত্যাগ করা ইউরিনারি ইনফেকশন রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুরুষের চাইতে নারীদের ক্ষেত্রে এটা বেশি কার্যকর।
৪) ভিটামিন সি:
শরীরে ভিটামিন সি এর অভাবে ইউরিনার ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দিনে ১০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করলে শরীরের যে অম্ল উৎপন্ন হয় তাতে মূত্র ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বিস্তার হ্রাস পায়।
৫) গরম পানিতে গোসল:
ইনফেকশন এর ফলে সৃষ্ট ব্যথা দূর করতে কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন।
৬) স্বাস্থ্যবিধি পালন:
সুস্থ সবল থাকতে গেলে স্বাস্থ্যবিধি পালনের কোন বিকল্প নেই। সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস ব্যবহার করা, ডিলা পোশাক পরা ,নিয়মিত গোসল করা, সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি বেশ জরুরী।
৭) বেকিং সোডা পান করুন:
এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন সকালবেলা পান করুন এটা প্রসাবের জ্বালাপোড়া কমিয়ে দিবে।
৯) শশা খান:
শসা তে আছে প্রচুর পরিমাণ পানি। প্রতিদিন কমপক্ষে একটি শসা খাওয়ার চেষ্টা করুন।
১০) আরামদেব পোশাক পড়ুন:
স্যাতস্যাঁতে জায়গায় ব্যাকটেরিয়া বেশি জন্মায়। সুতির অন্তরবাস পড়লে ও ডিলাডালা পোশাক পরলে গোপনাঙ্গের ব্যাকটেরিয়ার রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সবশেষে
প্রসাবে জ্বালাপোড়া কোন ভয়ংকর রোগ নয়। তবে একবার অবহেলা করার মত কোন কিছু নয়। সঠিক সময় যদি এর চিকিৎসা না করা হয় তাহলে এই সংক্রমণ থেকে কিডনির সমস্যা হতে পারে।
তাই, প্রসাবে জ্বালাপোড়ার লক্ষনগুলো প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে এর সঠিক চিকিৎসার করা প্রয়োজন। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরতে পারলে উপরে উল্লেখ করা ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে খুব সহজেই এই সংক্রমণ দূর করা যায়।
আর যদি, ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে এ সংক্রমণ রোধ না করতে পারেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
তথ্যসুত্র: