Skip to content

প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা, ফল, সবজি, মাছ ও মাংস | ২০২৪

প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা

সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। এ-কারণে আমাদের উচিত খাদ্য তালিকায় যথেষ্ট ডিম, বাদাম, চর্বিহীন মাংস, মাছ, দুগ্ধজাত খাবার এবং শস্য জাতীয় খাবারের ব্যবস্থা রাখা। এক্ষেত্রে প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা সম্পর্কে একটি সঠিক গাইডলাইন জানা দরকার। 

মূলত দেহের রাসায়নিক বিক্রিয়া, হরমোন সংশ্লেষণ, কোষের গঠন, ইমিউন ফাংশন ইত্যাদি সঠিকভাবে বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করে থাকে সঠিকভাবে সাজানো-গোছানো এক একটি প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা। এছাড়াও এই প্রোটিন মানবদেহের ক্ষুধার মাত্রা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও কাজ করে থাকে। 

প্রোটিন জাতীয় খাবার হোক কিংবা অন্যান্য পুষ্টির উৎস হোক, যেকোনো পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের আলাদা কিছু নিয়ম থাকে। যা জানা না থাকলে খাবারের পুষ্টিমান নষ্ট হতে পারে। ফলে বিপাকে পড়তে পড়ে শরীরের যেকোনো নির্দিষ্ট অংশ। 

চলুন এমন বাজে পরিস্থিতিতে না পড়ার ব্যবস্থা হিসেবে জেনে নিই প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা, প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা এবং প্রোটিন জাতীয় খাবারের অপকারিতা। 

প্রোটিন জাতীয় খাবার কি?

প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা নিয়ে আলোচনার পূর্বে আমরা জেনে নিবো প্রোটিনের সঠিক পরিচিতি। মূলত প্রোটিন হলো নির্দিষ্ট কিছু উপাদানের সাহায্যে তৈরি এক ধরণের জৈব অণু। যার প্রধান উপাদান হিসাবে কাজ করে অ্যামিনো এসিড। 

প্রোটিনের বাহ্যিক রূপ সম্পর্কে যদি জানতে চান সেক্ষেত্রে বলবো এটি দেখতে কিছুটা চেইনের মতো। এই চেইন তৈরি হওয়ার সময় এতে ২০-৩০ টিরও কম পরিমাণের অ্যামিনো অ্যাসিডের প্রয়োজন পড়ে। চিকিৎসাবিজ্ঞান কিন্তু এই উপাদানটিকে প্রোটিন বলার পাশাপাশি পেপটাইড বা অলিগোপেপটাইড নামেও অবিহিত করে থাকে। 

প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা

আপনার শরীরের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পরিমাণের প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। আর এই পরিমাণে প্রোটিন পেতে আপনাকে জানতে হবে সঠিক এবং সহজলভ্য খাবার আছে এমন প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত খাবারগুলিকে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। 

বাদাম

বাদাম হলো এমন একটি সহজলভ্য খাবার যা ফাইবার, ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে বেশ সমৃদ্ধ। একসাথে এতোগুলি পুষ্টি উপাদানের কারণে এগুলিতে উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনের পরিমাণও বেশি পাওয়া যায়। 

প্রতি ২৮.৩৫ গ্রাম বাদামে আপনি পাবেন ৬ গ্রামের মতো প্রোটিন৷ এক্ষেত্রে বলে রাখা উচিত বেশিরভাগ বাদামের ওজন হয়ে থাকে ২৮.৩৫ গ্রামের মতো। যদি সবচেয়ে বেশি প্রোটিন উপাদান পেতে চান সেক্ষেত্রে পেস্তা বাদাম খেতে পারেন। কারণ এতে অন্যান্য বাদামের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে প্রোটিন উপাদান থাকে। 

ঘন দই

যেকোনো ঘন দইয়ে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। মূলত দইয়ের ক্রিমি টেক্সচার যত বেশি ঘন হবে ততবেশি পরিমাণে প্রোটিন তা থেকে পাওয়া যাবে। প্রতি ২০০ গ্রাম ঘন দই খেলে আপনি পাবেন ১৯.৯ গ্রামের মতো প্রোটিন। 

প্রোটিনের পাশাপাশি ঘন দই খেলে দেহে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি এবং ১২, ভিটামিন এ, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্কের ঘাটতিও পূরণ হবে। 

ডিম

প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ কিংবা অ্যান্টিঅক্সিজেন্ট, কি নেই এই ডিমে! তাছাড়া ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়ার বিষয়টিও কিন্তু ফেলে দেবার মতো তথ্য নয়! 

সাধারণত এক একটি বড় ডিম হয়ে থাকে ৫০ গ্রামের মতো। আর এ-পরিমাণ ডিমে আপনি পাবেন ৬.৩ গ্রাম প্রোটিন-প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। সুতরাং এখন থেকে নিয়মিত প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকার অংশ হিসাবে ডিমের উপস্থিতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন। 

দুগ্ধজাত খাবার

দুগ্ধজাত খাবার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে প্রোটিনের ভালো উৎস হিসাবে চকোলেট মিল্কের কথা একেবারে না বললেই নয়! গবেষণা মতে এই চকোলেট মিল্কে হুই এবং কেসিন প্রোটিনের মিশ্রণ থাকে বেশি পরিমাণে। 

চকোলেট মিল্ক তৈরি করতে চাইলে বেশ সাধারণ উপায় অবলম্বন করে অর্থ্যাৎ দুধ এবং চকেলেট একসাথে ব্লেন্ড করে তা ইচ্ছেমতো পরিবেশন করতে পারেন। এই রেসিপি কিছুটা স্মুদি রেসিপির মতো। প্রতি ৮ আউন্স বা ২৩৬ মিলিগ্রাম চকোলেট মিল্কে আপনি পাবেন ৭ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের সুযোগ। 

বিভিন্ন ধরণের ডাল

একজন বাংলাদেশী হিসাবে আপনি যদি প্রোটিন জাতীয় খাবারের সস্তা কোনো উৎস খুঁজেন সেক্ষেত্রে মটরশুটি এবং ডাল জাতীয় খাবারকে প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকায় রাখতে পারেন৷ এই ধরণের প্রতি ১০০ গ্রাম ডাল জাতীয় খাবারে ৯ গ্রাম বা তার আশেপাশে প্রোটিন পাওয়া যায়। 

প্রোটিন জাতীয় সবজি

যেহেতু আমরা ভাত-পাগল বাঙালী সেহেতু প্রতিদিনকার প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকায় প্রোটিন জাতীয় সবজির উপস্থিতি থাকা চাই মানেই চাই! সবদিক বিবেচনা করে প্রোটিন জাতীয় সবজির একটি তালিকা শেয়ার করা হলো। 

মাশরুম

বিভিন্ন স্যুপ, তরকারি কিংবা ভাজিতে মাশরুমকে বেশ গুরুত্বের সাথেই ব্যবহার করা হয়। কারণ ১ কাপ মাশরুম মানবদেহে ৪ গ্রাম প্রোটিন সরবরাহ করে থাকে। তাছাড়া মাশরুমে বি ভিটামিনও রয়েছে। 

ব্রকোলি

প্রতি ১ কাপ রান্না করা ব্রকোলি সবজি আপনাকে দেবে ৩.৭ গ্রাম প্রোটিনপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই সবজি হাই প্রোটিন সবজি হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি, এটি নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। 

আবার আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের স্বাস্থ্যে সহায়তা করতে এবং ফোলেট, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের নিশ্চয়তা দিতেও এই ব্রকোলি বেশ দরকারী একটি সবজি হিসাবে বিবেচিত হবে। 

আলু

অনেকেই মনে করেন আলুতে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট থাকার কারণে এটি খুব একটা দেহের জন্যে উত্তম নয়। তবে সঠিক তথ্য হলো এই আলুকে আমরা প্রোটিনের ভালো উৎস হিসাবে নিয়মিত প্রোটিন জাতীয় সবজির তালিকাতে রাখতে পারি। 

কারণ প্রতি ১ কাপ অর্থ্যাৎ ১৬০ গ্রাম আলুতে রয়েছে ৩ গ্রাম প্রোটিনপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা। শুধুই কি প্রোটিন! আরো রয়েছে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। তবে আলু রান্না করার সময় তা স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু খাবারে পরিণত করার জন্য যা যা দরকার তা তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। 

পালং শাক

১ কাপ পালং শাক মোটামুটি ৬ গ্রাম প্রোটিন সরবরাহ করে থাকে। সবজি এবং শাকের মধ্যে এই পালং শাকই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন-সোর্স। প্রোটিন ছাড়াও এই শাক খেলে ব্যাক্তির দেহের ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের অভাব নিশ্চিত হবে। 

প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদানের কারণে হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে মানবদেহে ভালোই ইতিবাচক ভুমিকা পালন করে এই মজাদার শাকটি। সুতরাং নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানে পরিপূর্ণ এই শাক যোগ করতে ভুলবেন না কিন্তু। 

মটরশুঁটি

প্রোটিন জাতীয় সবজি হিসাবে মটরশুটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১ কাপ মটরশুঁটিতে ১৫ গ্রামেরও বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়। পাশাপাশি ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাসিয়ামের মতো পুষ্টিও সরবরাহ করে থাকে এই সবজি৷ মটরশুঁটি রেসিপি হিসাবে সালাদে, বিভিন্ন সবজিতে, ডাল জাতীয় রান্নাতে দেদারসে যোগ করা যেতে পারে। 

মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে শুধু শুধু খাওয়ার পাশাপাশি সবজি হিসাবেও এই খাবার বেশ জনপ্রিয়। রান্না করা ১ টি বড় মিষ্টি আলুতে সাধারণত ৫ গ্রামের বেশি পরিমাণ প্রোটিন থাকে। তাছাড়া এই সবজটিতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন থাকে। যা মানবদেহে ত্বক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে থাকে৷ 

যাইহোক। মিষ্টি আলু রান্না করতে হলে মিষ্টি কুমড়ার মতো করে রান্না করতে পারেন। আলু কষিয়ে হালকা পানির সাহায্যে মিডিয়াম আঁচে এই সবজি রান্না করতে পারলে খাবার টেবিলে অন্যকিছুরই প্রয়োজন পড়বে না৷ 

প্রোটিন জাতীয় ফল

প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকায় নিয়মিত প্রোটিন জাতীয় ফল রাখা উচিত। কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসহ দেহের সর্বসাকুল্যে উন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে ফল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। চলুন প্রোটিন জাতীয় ফল হিসাবে বেশকিছু কমন এবং গুরুত্বপূর্ণ ফল নিয়ে আলোচনা করা যাক। 

পেয়ারা

বাংলাদেশে পেয়ারা বেশ সহজলভ্য একটি ফল হিসাবে কাজ করে। খুব সহজে পাওয়া এই ফলটিকে আপনি প্রোটিনের ভালো উৎস হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারাতে পাওয়া যাবে ৩.৭ গ্রামের মতো প্রোটিন। আর বড়সড় এক একটি পেয়ারাতে পাওয়া যাবে ৪ গ্রামেরও বেশি প্রোটিন। 

প্রোটিনের পাশাপাশি এই ফলটি পটাসিয়াম, ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের একটি বড় উৎসের ভুমিকা পালন করে। এছাড়াও পেয়ারা মানবদেহের হজমশক্তিতেও ম্যাজিকের মতো কাজ করে থাকে৷ 

কলা

সুস্বাদু এই ফল কলাতে আপনি পাবেন ১.২ গ্রাম প্রোটিন। পাশাপাশি যদি কলার সাইজ আরো বড় হয় সেক্ষেত্রে থাকবে ১.৬ গ্রাম প্রোটিন। বিভিন্ন ফ্লেভারের স্মুদি কিংবা অন্য যেকোনো রেসিপির সাথে যুক্ত করে খেলেও এই ফলে থাকা প্রোটিনের মাত্রা একই থাকবে। প্রোটিনের পাশাপাশি কলায় পাবেন বাড়তি পটাশিয়াম। সেই সাথে পাওয়া যাবে ৩ গ্রাম ফাইবার। 

কমলালেবু

প্রোটিন জাতীয় ফল হিসাবে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কমন ফল হলো কমলালেবু। এক একটি মাঝারি সাইজের কমলালেবুতে ১.৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যাবে। প্রোটিনের পাশাপাশি কমলালেবু ভিটামিন এ এবং সি এর ভালো উৎস হিসাবে বেশ পরিচিত। পাশাপাশি এতে রয়েছে তিন গ্রাম ফাইবার এবং ক্যালসিয়াম। 

কাঁঠাল

আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালেও কিন্তু প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। সাধারণত গ্রীষ্মকালে এই ফল অনেক বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। তাছাড়া জাতীয় ফর হবার দরুন এই ফলের অভাববোধ আমাদের দেশে খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না। যার কারণে এই ফল ব্যবহার করে দেহের প্রোটিনের ঘাটতি মিটিয়ে নেওয়াটা বেশ সহজ হয়। 

এক কাপ কাঁঠাল আমাদের দেহে প্রায় ৩ গ্রামের মতো প্রোটিন সরবরাহ করতে পারে৷ এছাড়াও সমপরিমাণ কাঁঠালে আপনি পেয়ে যাচ্ছে ১১০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ভিটামিন এ এবং সি, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং রিবোফ্লাভিন। 

কিসমিস

যেহেতু আঙ্গুর থেকেই এই কিসমিসের সৃষ্টি সেহেতু আমরা এটিকে প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকায় প্রোটিন জাতীয় ফল হিসাবেই ধরে নিতে পারি৷ সাধারণত শুকনো ফলগুলিতে কাঁচা ফলের তুলনায় চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। যার কারণে কিসমিস মানেই বাড়তি প্রোটিনের ভালো উৎস। 

মোটামুটি ছোট ১ কাপ কিসমিস ১ গ্রামের মতো প্রোটিন পাওয়া যায়। তার পাশাপাশি শরীরের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আয়রন, ফাইবার এবং পটাসিয়ামও থাকে এই কিসমিসে। 

প্রোটিন জাতীয় মাংস ও মাছ 

অনেক তো প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা হিসাবে ফল এবং সবজি নিয়ে আলোচনা হলো। এবারে প্রোটিন জাতীয় মাংস ও মাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক। নতুবা হয়তো আমাদের কোনো পাতই সম্পূর্ণ হবে না। প্রোটিন জাতীয় মাংস ও মাছ হিসাবে আপনি চাইলে নিম্নোক্ত খাবারগুলি গ্রহণ করতে পারেন। 

টার্কির মাংস

যারা নিয়মিত খাবারের মেন্যুতে প্রোটিন জাতীয় মাংস রাখতে চান তারা টার্কির মাংসের ব্যবস্থা করতে পারেন। চর্বিযুক্ত এবং কম চর্বিযুক্ত উভয় ধরণের মাংস থেকেই আপনি যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন পাবেন। প্রতি ১ কাপ মাংস থেকে পাওয়া যাবে ২৭ গ্রাম প্রোটিন৷ 

সাথে থাকছে ভিটামিন বি ৬ এবং ১২ এর মতো নিশ্চিত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। আর হ্যাঁ। যারা রেডিমেড মাংস কিনে নেন তারা সোডিয়াম বা প্রিজারভেটিভে সিস্টেমের ব্যাপারেও সতর্ক থাকবেন। কারণ এই ধরণের সিস্টেমের কারণে মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ ঠিক থাকে না এবং কমে যায়। 

মুরগির মাংস

খাবারের তালিকায় টার্কির মাংস রাখতে না পারলেও আমরা কিন্তু মাঝেমধ্যে কিংবা নিয়মিত মুরগির মাংসের ব্যবস্থা করতে পারি। যাতে থাকে প্রচুর পরিমাণের প্রোটিন। বিশেষ করে মুরগির বুকের অংশটুকুতে অতিরিক্ত বেশ ভালোই প্রোটিন থাকে। 

প্রতি ১ কাপ মুরগির মাংসে আপনি পাবেন ২৫ গ্রামের মতো প্রোটিন। প্রোটিন ছাড়া মুরগির মাংস খেলে আমাদের দেহের বিভিন্ন ভিটামিন এবং নিয়াসিন এবং সেলেনিয়ামের মতো উপাদানেরও চাহিদা কমবে। 

হরিণের মাংস

আপনি যদি ১০০ গ্রাম কোনো মাংস থেকে ১২ কিংবা ২৩ গ্রাম সমপরিমাণ প্রোটিন পেতে চান সেক্ষেত্রে হরিণের মাংস খেতে পারেন৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো একিদকে হরিণের মাংসে চর্বির পরিমাণ যেমন অনেক কম তেমনি অন্যদিকে এটি খেতে পারলে দেহে আয়রন এবং ভিটামিন বি এর চাহিদাও পূরণ হবে৷ 

চিংড়ি মাছ

একই সাথে আমরা যদি প্রোটিন, ভিটামিন, ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং ওমেগা ৩, ফ্যাটি অ্যাসিডের নিশ্চয়তা চাই সেক্ষেত্রে মাছ হিসাবে চিংড়ির কোনো তুলনা হতে পারে না। চিংড়ি মাছে রয়েছে হাই প্রোটিন। 

আপনি যদি ১ কাপ চিংড়ি ঠিক মতো সিদ্ধ করে রান্না করতে পারেন সেক্ষেত্রে দেহ ২০ গ্রামেরও বেশি প্রোটিন পাবে। সুতরাং চর্বিহীন প্রোটিন সামুদ্রিক খাবার হিসাবে প্রতিদিনকার খাবারের মেন্যুতে রাখুন চিংড়িকে। 

তেলাপিয়া

বাজেটের অভারে যারা প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকায় মাছ রাখতে চান না তাদের ক্ষেত্রে তেলাপিয়া মাছ হতে পারে সেরা অপশন। কারণ যেকোনো বড় সাইজের তেলাপিয়া মাছে আছে ২৬ গ্রামের মতো প্রোটিন। 

এছাড়াও এই মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি ১২ এবং ওমেগা ৩। সুতরাং আশা করি আজ থেকে এই উচ্চ প্রোটিন এবং কম স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত মাছ নিয়মিত থাকবে আপনার খাদ্য তালিকায়। 

প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা

প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা সম্পর্কে তো জানা হলো। এবারে আমাদের সকলের উচিত প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতাগুলিকে একসাথে জেনে রাখা। এতে করে প্রোটিনের প্রতি আগ্রহের মাত্রাটা আমাদের বেড়ে যাবে। 

১. ক্ষুধার মাত্রা হ্রাস করে

ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট – চর্বি, কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন – আপনার শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে ক্ষুধার মাত্রা কমাতে সাহায্য করবে। কারণ হালকা প্রোটিন জাতীয় খাবারই আমাদের মানবদেহে থাকা ক্ষুধার হরমোন ঘেরলিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। যার ফলে মস্তিষ্ক সবসময় আমাদের পেটের পূর্নতা ভেবে বসে থাকে। 

২. ওজন কমাতে সাহায্য করে

যাদের ওজন বা পেটের চর্বি কমানোর প্রয়োজন তারা অল্প পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করতে পারেন। যেহেতু এটি ক্ষুধার মাত্রা হ্রাস করে সেহেতু ডায়েটের ক্ষেত্রে এই খাবার বেশ গুরুত্বের সাথেই বিবেচিত হয়। 

এমনকি আপনি জেনে অবাক হবেন যে, বর্তমানে বিভিন্ন সেলিব্রেটি ওজন কমিয়ে নিজেদের ঝরঝরে করতে এই প্রোটিনের সাহায্য নেওয়াটাকেই একইসাথে নিরাপদ এবং কার্যকর মনে করে। 

৩. পেশীর শক্তি বৃদ্ধি করে

পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া মানেই পেশীর শক্তি বৃদ্ধির ঔষধ সেবন করা। কারণ পেশী তৈরিতে কিংবা ঠিক রাখতে বিল্ডিং ব্লক হিসাবে প্রোটিনের গুরুত্ব অপরিসীম। 

সারাদিন ওজন উত্তোলন করে, ব্যায়াম করে শক্তি বাড়াতে গিয়েও যদি ঠিকমতো পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন না পান, সেক্ষেত্রে লাভের লাভ কিছুই হবে না। সুতরাং পেশীর শক্তি বৃদ্ধি করতে চাইলে প্রতিটা খাবারে প্রোটিন যোগ করুন। 

৪. হাড়ের সুস্থতা নিশ্চিত করে 

আমরা সকলেই জানি ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে এবং সুস্থতা নিশ্চিতকরণে কাজ করে। কিন্তু মানবদেহে ক্যালসিয়াম লিচিং করার ক্ষেত্রে যে পুষ্টি উপাদানটির গুরুত্ব উপেক্ষা করার মতো নয়, সেটি হলো এই প্রোটিন। যাদের দাঁতে ব্যাথা, হাড়ে ব্যাথা এবং কোমড়ে ব্যাথা আছে তারা নিয়মিত প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করবেন। 

৫. ব্যাক্তির মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে

মস্তিষ্কের সুস্থতার ক্ষেত্রেও প্রোটিনের অবদান দেখার মতো। কারণ জ্ঞানমূলক কার্যকারিতার সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে হাই প্রোটিন মানবদেহে ভিন্নরকম পরিবর্তন তৈরি করে। 

অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ মানবদেহে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তরায়। যার ফলে যারা প্রোটিন গ্রহণ করে তাদের বাড়তি খিদে অনুভূত না হওয়ার কারণে বেশ দ্রুত মস্তিষ্কের সুস্থতা নিশ্চিত হতে শুরু করে। 

৬. হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

যাদের নিয়মিত হজমের সমস্যার সাথে যুদ্ধ করতে হয় তারা প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণে মনোযোগী হতে পারেন। কারণ বলা হয়ে থাকে হজমশক্তি ঠিক রাখতে অন্ত্রের কোষগুলিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড গ্লুটামিন প্রয়োজন। যা আসে সরাসরি প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে। 

৭. ডায়েট ঠিক রাখে

প্রোটিনযুক্ত খাবারে ডায়েট মেন্যুতে রাখলেই একদিকে কম চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা হয়, অন্যদিকে প্রোটিনের চাহিদাও পূরণ হয়। যারা বেশ স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ তারা খুব কম ক্যালোরিযুক্ত ডায়েটের অংশ হিসাবে মোটামুটি পরিমাণের প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারেন৷ 

প্রোটিন জাতীয় খাবারের অপকারিতা

আপনার শরীরের ওজনের প্রতি কিলোগ্রামে ০.৮ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। আর প্রতিদিন শরীরের ওজনের প্রতি কিলোগ্রামে অন্তত পক্ষে ৩ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে তারতম্য দেখা দিলে তা ক্ষতি বয়ে আনবে। যার বিপরীতে আপনিও জেনে নিতে পারেন প্রোটিন জাতীয় খাবারের অপকারিতাগুলি কি কি সে-সম্পর্কিত তথ্য। 

১. ওজন বেড়ে যেতে পারে

হাই প্রোটিন গ্রহণ করলে ব্যাক্তির ওজন কিন্তু দ্রুত বেড়ে যায়। ওজন ঠিক রাখতে ডায়েটে যেমন চর্বি ছাড়া প্রোটিন খেলে খিদে কম লাগে, ঠিক তেমনই মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন খেলে ওজন হু হু করতে বাড়তে থাকে। কারণ বাড়তি প্রোটিনে আমাদের দেহে অ্যামিনো অ্যাসিড হিসাবে কাজ করে। যা ভেতরে ভেতরে ওজন জমাতে শুরু করে ভালোভাবেই! 

২. নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ তৈরি করে

প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন খাওয়ার ফলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে। বিশেষ করে প্রোটিন গ্রহণ করার সময় বা নিয়মিত যদি আপনি আপনার কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের মাত্রা সীমাবদ্ধ করে ফেলেন, সেক্ষেত্রেও এই সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। যাইহোক। একটি গবেষণা অনুযায়ী বাড়তি প্রোটিন গ্রহণকারীর ৪০ শতাংশ ব্যাক্তির এই সমস্যা দেখা দেয়। 

৩. কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে যায়

প্রোটিন জাতীয় খাবারে ফাইবার কিছুটা কম থাকে বলে এর অতিরিক্ত গ্রহণের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন নরম জাতীয় খাবার এবং পানি এই কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে কাজে লাগে। 

৪. ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে

শুরুতেই বলেছি, প্রোটিন জাতীয় খাবার হিসাবে দুগ্ধজাত খাবার বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুগ্ধজাত খাবার অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে ডায়েরিয়া দেখা দিতে পারে। 

তাছাড়া অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করার কারণে ফাইবারের অভাবেও ডায়রিয়া দেখা দেয়। ডায়রিয়া এড়াতে, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে পারেন এবং স্যালাইন খাওয়ার চেষ্টা করুন। 

৫. দেহে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়

অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ মানেই দেহে পানি শূন্যতা সৃষ্টি করা। তাছাড়া প্রোটিন জাতীয় খাবার দরহ হতে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন বের করে দেয়। ফলে পুরো শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। 

প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার নিয়ম

কেবল প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা সম্পর্কে জানলেই চলবে না। এক্ষেত্রে প্রোটিন জাতীয় খাবার কিভাবে খেলে এর পুষ্টিমান ঠিক থাকবে সে-সম্পর্কেও আমাদের জানতে হবে। চলুন একসাথে স্বাদ এবং পুষ্টিমান বজায় রেখে কিভাবে প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত সে-সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। 

  • মটর, চাল এবং বেশিরভাগ অন্যান্য উদ্ভিদ প্রোটিন ভালোভাবে সিদ্ধ করে রসুন এবং পেঁয়াজের সাহায্য তেলে ভেজে নিতে পারেন। খেতে ভালো লাগবে এবং পুষ্টিমানও ঠিক থাকবে। 
  • প্রোটিন জাতীয় শাক অর্থ্যাৎ পালং শাক তেলে ভেজে বা স্যুপ আকারে খাওয়া যেতে পারে। 
  • প্রোটিন জাতীয় খাবার একসাথে অনেক বেশি পরিমাণে গ্রহণ না করে ঘন ঘন খেতে বসুন। 
  • একসাথে ৩০ থেকে ৪০ গ্রামের বেশি পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করাটা খুব একটা নিরাপদ নয়। 
  • ভালোভাবে প্রোটিন হজম করার জন্য অন্যান্য ভিটামিনের প্রতিও গুরুত্ব দিন।

শেষ কথা

অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের কার্যকারিতার পাশাপাশি মানবদেহে প্রোটিন শোষণ, ভেঙে ফেলা, ব্যবহার, সংশ্লেষণ এবং পুনরায় ব্যবহার করার পুরো কার্যক্রমটি সক্রিয় থাকা উচিত। নতুবা শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা দেখে দিতে পারে। 

দেহে সঠিক পরিমাণে প্রোটিনের জোগান নিশ্চিত করতে প্রয়োজন প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা। যা আমরা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে প্রদান করার চেষ্টা করেছি। 

আসুন আমরা নিজেদের সুস্থ রাখতে, শক্ত রাখতে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিডের নিশ্চয়তা দিতে নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করার অভ্যাস তৈরি করি।

Leave a Reply