Skip to content

শর্করা জাতীয় খাবার, শর্করা জাতীয় খাবারের উপকারিতা ও অপকারিতা | ২০২৪

শর্করা জাতীয় খাবার

শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট যে নামেই চিনি না কেনো, মানবদেহে এই পুষ্টি উপাদানের গুরুত্বে কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করা যাবে না। 

শরীরের কোষ, টিস্যু এবং বিভিন্ন অঙ্গে শক্তি উৎপাদন করার ক্ষেত্রে এই শর্করা জাতীয় খাবার ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

সুতরাং নিজেকে ঠিক রাখতে দৈনিক খাদ্যের উপর ভিত্তি করে আপনাকে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। মাথায় রাখতে হবে স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে আপনার এই দৈনিক শর্করার পরিমাণ খানিকটা বেশি বা কমও হতে পারে।

চলুন আজ শর্করা জাতীয় খাবার কি কি, শর্করা জাতীয় খাবারের উপকারিতা এবং শর্করা জাতীয় খাবারের অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা যাক। 

শর্করা জাতীয় খাবার কি?

শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকায় মূলত শস্যজাতীয় খাবার এবং মিষ্টি খাবারের পরিমাণ বেশি থাকে। চিনি, মিষ্টান্ন, প্রক্রিয়াজাত খাবার কিংবা সোডা সাধারণত এই শর্করা জাতীয় খাবারের অংশ। পাশাপাশি এই পুষ্টি উপাদান বিভিন্ন ফল, শাকসবজি এবং দুধে প্রাকৃতিকভাবেও পাওয়া যায়। 

শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করার পর এই উপাদানটুকু কিন্তু সরাসরি শারীরিক উন্নতির ক্ষেত্রে কাজ করে না। এটি মূলত প্রথমে গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং গ্লুকোজ হিসাবেই তা দেহের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। 

শর্করা জাতীয় খাবার কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার নামেও পরিচিত, তাই আপনি যে নামেই এই খাবারকে খোজেন না কেনো এই লেখাতে আমরা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় কিংবা শর্কারা জাতীয় খাবারের বিস্তারিত একটা লিস্ট দিয়ে দিবো।

শর্করা জাতীয় খাবার কি কি? 

সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবারকেই শর্করা জাতীয় খাবার ধরে নেওয়া হতো। আর ভাবা হতো শর্করা জাতীয় খাবার মানেই ওজন বৃদ্ধির হাতিয়ার, শরীরে নানান রোগ সৃষ্টির পথে হাঁটা। তবে শর্করার অপকারিতা ছাড়াও যে এর বেশকিছু উপকারিতা বিদ্যমান, তা হয়তো আমরা কখনো ভেবেই দেখিনি। চলুন শর্করার উপকারিতা ভোগ করতে ঠিক কোন কোন খাবার গ্রহণ করা উচিত সে-সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। 

১। প্যাকেটজাত ফলের রস বা জুস

শর্করা জাতীয় খাবার কিংবা পানীয় হিসাবে বিভিন্ন প্রকার জুস বা প্যাকেটজাত ফলের রসের ব্যাপারে বলা যেতে পারে। মূলত এই ধরণের ফলের রসে ফাইবার, মিনারেল এবং ভিটামিন কম থাকে। থাকার মাঝে থাকে চিনি এবং কৃত্রিম স্বাদ। যদিও এই পানীয় শারীরের কোনো উন্নতিতে খুব একটা কাজে আসে না! 

তবে ওই যে বললাম হালকা ভিটামিন কিংবা ফাইবার…সেটুকু নিশ্চিত পাওয়া যায়। এই ধরণের জুসগুলিতে পরিমাণ অনুযায়ী ১১ গ্রামের মতো চিনি থাকে। সেই সাথে থাকে ১৫০ গ্রামের মতো ক্যালোরি। আর এই ক্যালোরির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে জুসে ব্যবহার করা সোডাতে। 

২। বারবিকিউ সস 

আমরা সকলেই জানি বারবিকিউ সস সাধারণত মাংস এবং সবজি মেরিনেট করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটিও শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকাতে পড়ে। বলে রাখা ভালো দুই টেবিল চামচ BBQ সসে মোট ১৬ গ্রাম যোগ করা চিনি থাকতে পারে। যা থেকেই আপনি আপনার দেহের প্রয়োজনীয় ক্যালোরি পেয়ে যাবেন। 

আর হ্যাঁ আপনাকে মনে রাখতে হবে এই ধরনের সস কেনার আগে লেবেল পড়ে নেওয়া উচিত। এক্সপায়ার ডেট ঠিক আছে কিনা, চিনির পরিমাণ কতটুকু আছে তা দেখে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ অনেক সময় এসব প্রোডাক্টের মেয়াদ চলে যাওয়ার কারণে এতে থাকা পুষ্টিমান নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে পরবর্তীতে তা দেহের উপকার নিশ্চিতকরণের পরিবর্তে দেহে ক্ষতি সাধন করে বসে। 

৩। দই

মূলত চিনি জাতীয় বিভিন্ন খাবারকে আমরা শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকাতে ফেলতে পারি। এক্ষেত্রে দইয়ের কথাও চলে আসে। সাধারণত কম চর্বিযুক্ত দইকে শর্করা জাতীয় খাবার বলা হয়। বিভিন্ন শপে গিয়ে আপনি যদি লো ফ্যাট দইয়ের নাম বলেন, সেক্ষেত্রে তারা এই বিশেষ দইটি আপনাকে দেবে।

৪। বিভিন্ন ফ্লেভারের কফি 

সাধারণ কফি ছাড়া অনেকেই ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরণের কফি বানিয়ে থাকে। যেখানে থাকে বিভিন্ন রকমের ফ্লেভার। এই ধরণের কফিকেও শর্করা জাতীয় পানীয় হিসাবে ধরা হয়। বিশেষ করে কফিতে বাড়তি চিনি এবং ক্রিম যোগ করলে তা হয়ে যাবে শর্করা জাতীয় পানীয়ের বেশ উন্নত পর্যায়ের উৎস। 

৫। বিস্কুট

আরেকটি শর্করা জাতীয় খাবার হলো বিস্কুট। এই বিস্কুট কিন্তু আমরা নিয়মিত খেয়ে থাকি। যদি এসব বিস্কুটে বাড়তি চিনি যোগ করা হয় অথবা যোগ করা হয় বাড়তি ক্রিম সেক্ষেত্রেও এটি হয়ে উঠবে শর্করা জাতীয় খাবারের বেশ গুরুত্বপূর্ণ উৎস। 

৬। ড্রাই ফ্রুটস 

আজকাল বাংলাদেশেও ড্রাই ফ্রুটসের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বেড়ে চলেছে। হুটহাট কেক তৈরিতে ব্যবহার করার জন্যে কিংবা বিভিন্ন ডেজার্টে যোগ করার ক্ষেত্রে অথবা শুকনো মুখে ২/১ টি গুঁজে দিতে এই ড্রাই ফ্রুটসই যেনো পুষ্টিকর খাবারের শেষ ভরসা। মনে রাখবেন পুষ্টিকর খাবার হিসাবে এই খাবার আপনাকে দেবে দৈহিকভাবে শর্করার অভাব রোধ করার সুযোগ। মেটাবে দেহের শর্করার ঘাটতি। 

৭। কেক, পেস্ট্রি এবং ডোনাট

বাড়িতে কিছু বানিয়ে খেতে মন না চাইলে আপনি কি সরাসরি ফুডপান্ডাতে কেক, পেস্ট্রি এবং ডোনাট অর্ডার দিয়ে বসেন? যদি এমনটা করে থাকেন তবে বলবো আপনিও দেহের শর্করা জাতীয় খাবারের যোগান দিচ্ছেন ঠিকঠাকমতো। উচ্চ চর্বিযুক্ত উপাদান দিয়ে তৈরি হয় এই খাবার। যদিও এটির উপকারিতা পেতে হলে এর উচ্চ চর্বিযুক্ত উপাদানকে পরিমিত পরিমাণে নিয়ে আসতে হবে। 

যাইহোক! শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ শর্করার নিশ্চিতকরণে সবসময় এসব খাবার বাড়িতে বেক করার চেষ্টা করুন এবং তৈরি করার সময় এতে যথাসম্ভব কম চিনি ব্যবহার করুন। পাশাপাশি এসব খাবারে ক্রিমের পরিমাণটুকু কম ব্যবহার করে বিভিন্ন ফ্রুটস কিংবা প্রাকৃতিক খাবারের অংশ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। যেমন কিসমিস, বাদাম অথবা মধু। 

৮। বিভিন্ন ফ্লেভারের গ্রিন টি 

গ্রিন টিও কিন্তু বিভিন্ন ফ্লেভার যুক্ত করে তৈরি করা যায়। আপনি যদি গ্রিন টি তৈরি করার সময় তাতে বাড়তি কিন্তু পরিমিত পরিমানে চিনি এবং ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন সেক্ষেত্রে এই গ্রিনটি হয়ে উঠতে পারে আপনার দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান শর্করা জাতীয় খাবার তালিকার সেরা উৎস। 

৯। আইসড টি 

টিকটকে বিভিন্ন খাবারের রেসিপির ভিডিও দেখা পাঠকেরা অবশ্যই এই আইসড টির নাম শুনেছেন। অনেকেই হয়তো বেশ কয়েকবার ট্রাইও করে ফেলেছেন। এই আইসড টিতে বাড়তি চিনি মেশানোর কারণে তা হয়ে উঠে শর্করা জাতীয় পানীয়ের বেশ গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। অর্থ্যাৎ এটিতে উচ্চ ক্যালোরি রয়েছে এবং এই ক্যালোরির গুরুত্বপূর্ণ অংশ শর্করা রয়েছে। 

১০। রুটি 

বাঙালী রুটি-খাদক হবে না এমনটা কখনো হতেই পারে না। যারা নিয়মিত রুটি খান তারা কিন্তু কখনোই শর্করার অনুপস্থিতি দেহে খুঁজে পাবেন না। কারণ রুটি খেলে দেহের শর্করার উপাদানের অভাব পূরন হয় সহজেই। তবে সবসময় মাথায় রাখা উচিত, অনেক বেশি পরিমাণে রুটির স্লাইস বা আস্ত রুটি খাওয়ার ফলে রক্তে গ্লুকোজ এবং ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যা ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে বেশ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। 

১১। রেডিমেড স্যুপ

যেহেতু এখন আমরা অনেক বেশি ব্যস্ত থাকি সেহেতু প্রয়োজনে রেডিমেড খাবারের প্রতি আমাদের দূর্বল থাকতে হয়। তেমনই একটি রেডিমেড খাবার হলো স্যুপ। এই ধরণের প্যাকেটজাত স্যুপেও থাকে শর্করার পরিমাণ। 

তাছাড়া যেকোনো প্রয়োজনে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত স্যুপগুলি বেশ সুবিধাজনক। আর হ্যাঁ! আরো একটি ইনফরমেশন যোগ করি, মূলত ঘন বা ক্রিম-ভিত্তিক স্যুপে ভুট্টার আটা থাকে এবং এতে ক্যালোরির পরিমাণ খানিকটা বেশি থাকে। 

১২। রেডিমেড পিজ্জা

বড় বড় সাইজের পিজ্জার দাম প্রিয় রেস্টুরেন্টে ৯৯৯ টাকায় বিক্রি করলেও আমরা আমাদের লোভ সামলাতে পারি না। আর যদি বাজেট কম থাকে কিংবা সময় থাকে হাতে সেক্ষেত্রে রেডিমেড পিজ্জা বাড়িতে নিজের মতো করে খেতে ভালোবাসি অনেকেই। 

এই ভালোবাসার খাবারটুকুও কিন্তু শর্করা জাতীয় খাবারের বেশ ভালো উৎস। যা হয়তো আমরা পূর্বে জানতামই না। যদিও একথাও ঠিক যে পিজ্জা পরিশোধিত ময়দা দিয়ে তৈরি করা খাবার। যার ফলে এই খাবার মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন দ্বিগুণ হারে বেড়ে যেতে পারে৷ 

১৩। স্প্যাগেটি সস

যারা পাস্তা খান তারাই কেবল এই স্প্যাগেটি সসকে বেশ ভালোভাবেই চিনবেন। যেহেতু চাহিদা বেড়েছে সেহেতু আজকাল যেকোনো সুপার শপে এই সস কিনতে পাওয়া যায়। এতে ব্যবহার করা চিনির কারণে এই সস কিন্তু শর্করা জাতীয় খাবার তালিকার অন্তর্ভুক্ত একটি খাবার হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। যারা এই সস কিনতে চাচ্ছেন তারা কিন্তু যেকোনো শপে পাস্তা সস হিসাবেও চাইলে পেয়ে যাবেন আশা করি৷ 

শর্করা জাতীয় খাবারের উপকারিতা

ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া, দাঁতের ক্ষয় এবং স্থূলতার মতো বিভিন্ন সমস্যার কারণে শর্করাকে অনেকেই দেহের শত্রু বলে মনে করেন। অথচ একথা কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করা যাবে না, এতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ মৌল উপাদান আমাদের দেহের এক একটি অংশের সুস্থতার ক্ষেত্রে কতটুকু জরুরি! যাইহোক এর গুরুত্ব বুঝতে চলুন শর্করা জাতীয় খাবারের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা যাক। 

১। ত্বকের যত্নে কাজ করে

শুধুমাত্র শর্করা জাতীয় খাবার কিংবা মিষ্টি জাতীয় খাবারই নয়, বরং চিনির স্ক্রাব ব্যবহারেও ত্বকের উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই ত্বকের টোন ঠিক রাখতে এবং কনুইসহ দেহের বিভিন্ন অংশের সৌন্দর্য বজায় রাখতে নিয়মিত শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন এবং সম্ভব হলে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ত্বকে চিনির স্ক্রাব ব্যবহার করুন। 

২। মেজাজের ইতিবাচক পরিবর্তন করে 

শর্করা আছে এমন খাবার খেলে আমদের মস্তিষ্ক বেশ সুখ অনুভব করে। কারণ শর্করা জাতীয় খাবার আমাদের মস্তিষ্কের আনন্দ বিষয়ক হরমোন তৈরি করে বা সৃষ্টি করে। সুতরাং কখনো মন খারাপ হলে বা খারাপ লাগলে খানিকটা চিনি মেশানো চা, কোনো মিষ্টান্ন বা অন্য কোনো শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারেন। 

৩। চিন্তাশক্তি উন্নত করে

প্রাকৃতিক চিনি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপাদানের উৎস হিসাবে শর্করা জাতীয় খাবার আপনার চিন্তাশক্তিকে বাড়িয়ে দেবে। কারণ এতে রয়েছে কোকো ফ্ল্যাভানল সহ বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আবার গবেষণার তথ্য অনুযায়ী কোকো ফ্ল্যাভানল আমাদের জ্ঞানীয় কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করতে করে। 

তাছাড়া কোকো ফ্ল্যাভানল আমাদের মস্তিষ্কের কোষকে বিভিন্ন ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং এসব কোষকে মস্তিষ্কের মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে। বলা বাহুল্য সর্বোচ্চ মাত্রায় কোকো ফ্ল্যাভানল থাকে এমন খাবার যারা খেতে চান তারা নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন। 

৪। শক্তি উৎপাদন করে

তাৎক্ষণিকভাবে আপনার যদি নিজেকে দূর্বল মনে হয় এবং শরীরে যদি কোনো শক্তি না পান সেক্ষেত্রে দ্রুত শক্তি বাড়াতে বা নিজের শক্তির বুষ্ট করতে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারেন। কারণ বিভিন্ন খাবারে থাকা চিনির ভাঙ্গনের ফলে দেহে গ্লুকোজ উৎপাদন হয়। যা শরীরের জন্য শক্তির প্রাথমিক উৎস হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। 

৪। শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে

আপনি যখন শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করবেন কিংবা চিনি রয়েছে এমন খাবার গ্রহণ করবেন তখন আপনার শরীর গ্লাইকোজেনেসিস নামে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু গ্লুকোজ সংরক্ষণ করবে। যা আপনাকে অনেক সময় ধরে না খেয়ে থাকতে সাহায্য করবে। 

৫। নিম্ন রক্তচাপ রোধ করে

আপনি কি নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন? যদি এই সমস্যা আপনার থাকে তবে চিনিকে মেইন ঔষধ হিসাবে গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে মেইন ঔষধ বলতে সীমিত পরিমাণে নিয়মিত নির্দিষ্ট হারে গ্রহণের কথা বুঝিয়েছি কিন্তু। কারণ চিনি মানে শর্করা জাতীয় এই উপাদান দ্রুত নিম্ন রক্তচাপ দূর করতে সাহায্য করে। 

শর্করা জাতীয় খাবারের অপকারিতা

বাড়তি কোনোকিছুই যেখানে ভালো না সেখানে শরীরের যত্নে তো এর গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বলার অপেক্ষাই রাখে না। শর্করার কারণে দেহকে বাড়তি ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে চলুন জেনে নিই শর্করা জাতীয় খাবারের অপকারিতাগুলি কি কি সে-সম্পর্কে। 

১। ওজন বৃদ্ধি করে

রকেট গতিতে ওজন বেড়ে যাওয়ার কোনো উপায় যদি থাকে সেক্ষেত্রে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণের কথা বলা যেতে পারে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যাদের বাড়তি ওজনের সমস্যা রয়েছে তাদের কি করতে হবে! খাবারের রুটিন হতে শর্করা জাতীয় খাবারের পরিমাণকে একেবারে পরিমিত পরিমাণে নিয়ে আসতে হবে। 

২। হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে

হাই সুগারের বিভিন্ন খাবার হৃদরোগ সহ অনেক রোগ সৃষ্টির ঝুঁকির সাথে যুক্ত। যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর এক নম্বর কারণ। সেই সাথে ২৫,৮৭৭ জনেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের উপর করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে যারা অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করেন তাদের হৃদরোগ এবং করোনারি জটিলতা হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। 

৩। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়

যেকোনো ব্যাক্তির ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিস মৃত্যুহার এবং আয়ু হ্রাসের একটি প্রধান কারণ হিসাবে কাজ করে। শুধু তাই নয়! একটি গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে গত ৩০ বছরে এর ব্যাপকতা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। এর পেছনে কাজ করছে অত্যধিক চিনির ব্যবহার। মূলত প্রচুর পরিমাণে চিনি খাওয়ার বিষয়টি ওজন বৃদ্ধি এবং শরীরের চর্বি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বলেই ব্যাক্তির মাঝে এই ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়। 

৪। ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়

অনেক বেশি পরিমাণে শর্করা জাতীয় খাবারের উপর যারা নির্ভরশীল তাদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের বাড়তি ঝুঁকি কাজ করতে পারে। এর পেছনে এই জাতীয় খাবারের শরীরে প্রদাহ বাড়ানো এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ করার বিষয়টি দায়ী৷ এদিকে উভয়ই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। 

৫। ব্রণের সমস্যা তৈরি করে

আপনি যদি দেখেন আপনার মুখে অনেক বেশি পরিমাণে ব্রণের সৃষ্টি হচ্ছে সেক্ষেত্রে শর্করা জাতীয় খাবারের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন। কারণ এই ক্যাটাগরির খাবার ত্বকের যত্নে ভুমিকা রাখলেও অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের ফলে এটি ব্রণ সৃষ্টিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

বিষয়টি যদি আরেকটু খোলাসা করে বলি সেক্ষেত্রে বলবো, শর্করা জাতীয খাবার খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করা এবং ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। যার ফলে ত্বকে এন্ড্রোজেন নিঃসরণ, বাড়তি তেল উৎপাদন এবং জ্বালাপোড়া বৃদ্ধি পায়। আর এসব সমস্যায় ব্রণ বাবাজিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ত্বকে ঠাঁই দেয়। 

শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়ার নিয়ম

যেহেতু অতিরিক্ত পরিমাণে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করার ফলে শারীরিকভাবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে সেহেতু আমাদের উচিত এই ধরণের খাবার গ্রহণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা। তাছাড়া শর্করার অভাবেও আমাদের শরীরে নানানরকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সবমিলিয়ে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণে প্রয়োজন নিয়মতান্ত্রিক রুটিন বা টিপস। চলুন বিস্তারিত জানা যাক। 

  • পুষ্টি ছাড়াই ক্যালোরি সরবরাহ করে এমন শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। 
  • দেহে শর্করার ঘাটতি মেটাতে মিষ্টি ফলমূল বা প্রাকৃতিক খাবারগুলি বেশি বেশি গ্রহণ করার চেষ্টা করুন৷ 
  • যোগ করা বাড়তি শর্করা জাতীয় খাবার যেমন আইসক্রিম, কোকাকোলা বা যেকোনো কোমল প্রানীয়, ক্যান্ডি ইত্যাদি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। 
  • অতিরিক্ত পরিমাণে মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। 
  • পরিমিত পরিমাণে চিনি মিশিয়ে চা পান করুন।
  • দিনে অনেক বেশি পরিমাণ মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ করাকে না বলুন। 
  • ডায়াবেটিস রোগীরা শর্করা জাতীয় খাবারের ব্যাপারে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 

শেষ কথা

কেবল শর্করা জাতীয় খাবার কি কি এবং শর্করার কাজ কি কি এসম্পর্কে জানলেই হবে না। নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। 

চিনিতে শর্করা থাকলেও প্রচুর চিনি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কারণ এই ধরণের খাবারে ক্যালোরি থাকতে পারে তবে খুব বেশি পুষ্টি নেই। 

সেই সাথে যারা প্যাকেটজাত খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত তারা অবশ্যই খাবার গ্রহণের পূর্বে এর পুষ্টির তথ্যের লেবেল চেক করে নেবেন। 

আশা করি এখন থেকে নিজের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে আপনার বয়স, লিঙ্গ, স্বাস্থ্য এবং আপনি ওজন কমাতে চাচ্ছেন নাকি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তার উপর নির্ভর করে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করবেন। 

Leave a Reply