মূলত কার্বোহাইড্রেট শব্দটি আক্ষরিক অর্থে “কার্বোহাইড্রেট” যৌগকে নির্দেশ করে থাকে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো গঠনের ভিত্তিতে কার্বোহাইড্রেট বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যা নিয়ে আমি আজ বিস্তারিত আলোচনা করবো। পাশাপাশি জানবো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার তালিকা, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের উপকারিতা এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের অপকারিতাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কি?
সহজ কথায় যেসব খাবারে কার্বোহাইড্রেট যৌগ রয়েছে সেসব খাবারকে সরাসরি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বলা হয়ে থাকে। কার্বোহাইড্রেটকে অনেকসময় কার্বনের হাইড্রেটও বলা হয়ে থাকে। গবেষকদের মতে শাকসবজি, ফল, বাদামী চাল, ড্রাই ফ্রুটস এবং মসুর ডালের মতো সব ভালো মানের খাবারই দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করতে পারে।
বলে রাখা ভালো কার্বোহাইড্রেট সাধারণত ৩ ধরণের হয়ে থাকে। এগুলি হলো স্টার্চ, শর্করা এবং ফাইবার। যেকোনো খাবারের রাসায়নিক গঠন, এবং আপনার শরীর কত দ্রুত তা হজম হয় তার উপর নির্ধারণ করেও কার্বোহাইড্রেট ২ ধরণের হতে পারে। এর একটি হলো জটিল কার্বোহাইড্রেট এবং অপরটি হলো সাধারণ কার্বোহাইড্রেট। তবে কার্বোহাইড্রেটের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় স্টার্চ, শর্করা এবং ফাইবার জাতীয় কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার।
কার্বোহাইড্রেট কত প্রকার?
ইতিমধ্যেই জেনেছেন খাবারের মান অনুযায়ী আমরা কার্বোহাইড্রেটকে ৩ টি ভাগে অর্থ্যাৎ স্টার্চ, শর্করা এবং ফাইবারে ভাগ করতে পারি। চলুন উক্ত ৩ টি প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
স্টার্চ
এটি মূলত একধরণের জটিল কার্বোহাইড্রেট। এই ধরণের কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার মানব শরীরে মূলত ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে থাকে। তাছাড়া এই ধরণের খাবার ভেঙে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছাতেও অনেক সময় লাগতে পারে। ফলস্বরূপ এই ধরণের খাবার গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে এবং শরীরে খাদ্যের পূর্ণতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। অর্থ্যাৎ খিদে কম লাগে।
মটরশুটি এবং শিম জাতীয় খাবারকে স্টার্চ জাতীয় খাবার বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও এ-জাতীয় খাবারের তালিকাতে রয়েছে আপেল, বেরি ফল, তরমুজ, গমের রুটি এবং পাস্তা, বাদামী চাল, আলু ইত্যাদি খাবার৷
শর্করা
চিনি জাতীয় সকল খাবারকে আমরা শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকাতে ফেলতে পারি। গবেষকদের মতে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া শর্করা জাতীয় খাবার আমাদের দৈহিক স্বাস্থ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ইতিবাচক ভুমিকা রাখে।
তবে আমাদের উচিত যতটুকু সম্ভব কৃত্রিম শর্করা জাতীয় কার্বোহাইড্রেট খাবার অর্থ্যাৎ বেকারি ফুড, ক্যান্ডি বার এবং আইসক্রিমের মতো ইগনোর করা। কারণ এসব খাবার গ্রহণে আমাদের দেহ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এসব খাবারের পরিবর্তে দেহে শর্করার ঘাটতি মেটাতে পরিমিত পরিমাণে মধু, গুড় এবং চিনি গ্রহণ করতে পারেন।
ফাইবার
ফাইবারকে একটি জটিল স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট বলা হয়ে থাকে। কারণ আমাদের শরীর সহজেই এই ফাইবার জাতীয় খাবারকে ভাঙতে পারে না। তবে ফাইবার জাতীয় খাবার মানবদেহে হজমশক্তিতে সাহায্য করে। ফাইবার রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
পাশাপাশি এটি কোলেস্টেরল কমায় এবং ব্যাক্তিকে সবসময় খাদ্যের দিক দিয়ে পূর্ণতা ফিল করায়। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রাপ্তবয়স্কদের উচিত নিয়মিত ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম শর্করা গ্রহণ করা। সাধারণত মটরশুটি, ছোলা, মসুর ডালের মতো খাবারে এই ফাইবার উপাদান পাওয়া যায়।
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার
বছরের পর বছর ধরে, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একটি খারাপ খ্যাতি নিয়ে পরিচিত হয়ে উঠেছে। অনেকেই ভাবেন এই জাতীয় খাবার গ্রহণ মানেই দেহে বাড়তি রোগের বাসা তৈরি করা। অথচ অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের পাশাপাশি আমাদের দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের চাহিদাও রয়েছে। সুস্থ থাকতে হলে এসব খাবার গ্রহণেও আমাদের মনোযোগী হতে হবে। চলুন কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের একটি লিষ্ট দেখে নিই।
১। ছোলা
ছোলাকে আমরা চনাবুট হিসাবেও অনেকেই চিনে থাকি। যে নামেই এই খাবারটিকেই আমরা চিনে থাকি না কেনো এটি কিন্তু কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের বেশ শক্তপোক্ত উদাহরণ। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলাতে আপনি পাবেন ২৭ গ্রামের মতো কার্বোহাইড্রেট। সেই সাথে উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনের ভালো উৎস হলো এই ছোলা।
২। ওটস
ইন্টারনেট কিংবা বিভিন্ন কারণের সুত্র ধরে বিদেশি খাবারগুলি আজকাল বেশ দ্রুত এই দেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তেমনই একটি বিদেশি খাবার হলো এই ওটস। ১ কাপ ওটসে ৮১ গ্রামের মতো কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। দুধ, চিনি কিংবা ক্রিম মেশালে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ আরো বেড়ে যেতে পারে। কার্বোহাইড্রেটের পাশাপাশি এই খাবারে আপনি পাবেন প্রোটিনের ঘাটতি মেটানোর সুযোগ।
৩। মিষ্টি আলু
আপনি যদি ১০০ গ্রাম মিষ্টি আলু গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে আপনার দেহ পাবে ২০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের সুযোগ৷ কার্বোহাইড্রেটের পাশাপাশি পুষ্টিবিদেরা এটিকে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং পটাসিয়ামেরও ভালো উৎস হিসাবে বিবেচনা করে থাকে।
তাছাড়া এই খাবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। সুতরাং যারা একইসাথে দেহে কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি মেটাতে চান তারা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের তালিকাতে নিয়মিত মিষ্টি আলু রাখুন।
৪। মসুর ডাল
ডাল, ভাত, ভর্তা পেলেই বাঙালি হিসাবে আমাদের খুশি প্রায় দেখার মতো ফুটে উঠে। আপনি কি জানেন এই ডালও কিন্তু কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের দারুণ উৎস হিসাবে কাজ করে? প্রতি ১ কাপ ডালে আপনি ৩৯ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাবেন৷ সেই সাথে পাবেন ফাইবার এবং প্রোটিনের বেশ ভালো জোগান।
৫। খেজুর
পৃথিবীতে অনেক রকমের খেজুর রয়েছে। প্রতিটি টাইপের খেজুরেই কার্বোহাইড্রেট পাবেন। কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণের দিক দিয়ে তারতম্য হলেও খেজুর আমাদের দেহের জন্যে বেশ উপকারী একটি খাবার৷ ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ এই খাবারে সর্বমোট ১৮ গ্রামের মতো কার্বোহাইড্রেট থাকে।
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় সবজি
কেবল বিভিন্ন প্রাকৃতিক ডেজার্ট জাতীয় খাবারই নয়, বরং আশেপাশে পড়ে থাকা সবজিতেও পাবেন কার্বোহাইড্রেট। হতে পারে অপছন্দের কোনো এক সবজিও আপনার দেহের কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন। কিভাবে? জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।
১। গাজর
এক কাপ গাজরে সর্বমোট ১২ গ্রামের মতো কার্বোহাইড্রেট পাবেন। স্বাস্থ্যকর, প্রোটিন-সমৃদ্ধ এই খাবার রান্না করে গ্রহণ করার চাইতে কাঁচা খেতে পারলে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করার সুযোগ পাবেন। সালাদে কিংবা সবজি হিসাবে নিয়মিত খাবার তালিকাতে গাজর রাখার চেষ্টা করুন।
২। ভুট্টা
বাটার দিয়ে ভুট্টা ভেজে আজকাল অনেকেই স্ট্রিট ফুড হিসাবে সেল করছে। এই খাবার খেতে গিয়েও পড়ছে উপচে পড়া ভীড়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই খাবারে আপনি প্রচুর কার্বোহাইড্রেট পাবেন। প্রতি ১ কাপ ভুট্টা খেতে পারলে আপনার দেহে ৩০ গ্রামের মতো কার্বোহাইড্রেটের যোগান হবে।
৩। লাল মরিচ
লাল মরিচ দিয়ে ভর্তা মাখানো কার না পছন্দ! এই বিশেষ মরিচেও থাকছে ৯ গ্রামের মতো কার্বোহাইড্রেট। একইভাবে কাঁচা মরিচেও আপনি প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট পাবেন।
সিদ্ধ কিংবা কোনো খাবারের সাথে চিবিয়ে খেলে এই কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ একই থাকবে। মটরশুটি, ভাত, মাংস ইত্যাদির খাবারের সাথে এই মরিচের কম্বিনেশন যেনো যেকোনো খাবারের স্বাদকে হার মানায়।
৪। পালং শাক
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার হিসাবে আমরা পালং শাকের কথা বলতে পারি। পালং শাক শুধুমাত্র ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি তে পরিপূর্ণ নয়, বরং এতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে কার্বোহাইড্রেটের উপস্থিতি। মূলত ১ কাপ রান্না করা পালং শাক খেতে পারলে আপনি পেয়ে যাবেন ১ গ্রাম কার্বোহাাইড্রেট প্রাপ্তির নিশ্চয়তা।
৫। শসা
আপনার ত্বক এবং শরীরের ক্ষেত্রে হাইড্রেট ফুড হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি এই সবজি কার্বোহাইড্রেটের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবেও
কাজ করবে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার ক্যান্সারের মতো অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা থেকে মানবদেহকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। প্রতি ১ কাপ শসাতে থাকে ১.৯ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট।
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় ফল
অনেকেই ভাবেন কার্বোহাইড্রেট জাতীয় ফল হয়তো বেশ দুর্লভ। অথবা কেনার সামর্থ্য নেই। যা পুরোপুরি ভুল ধারণা। চলুন এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে জেনে নিই বেশকিছু কমন ফল সম্পর্কিত তথ্য, যেসব ফলকে কার্বোহাইড্রেটের রিচ সোর্স হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
কমলালেবু
কমলা পানি দিয়ে তৈরি ফল হলেও প্রতি ১০০ গ্রাম কমলাতে আপনি ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাবেন। পাশাপাশি এই জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ফলটি ভিটামিন সি, পটাসিয়াম এবং বেশকিছু বি ভিটামিন দ্বারা সমৃদ্ধ। যারা নিজেদের হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি দেখতে চান তারা অবশ্যই নিয়মিত এই ফলকে খাবার তালিকাতে রাখার চেষ্টা করবেন।
আপেল
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের তালিকাতে আপেলও বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়। মিষ্টি জাতীয় এই ফল ১০০ গ্রাম খেতে পারলে তা থেকে আপনি শরীরে ১৪ থেকে ১৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট নিশ্চিত করার সুযোগ পাবেন। তাছাড়া আপেল কিন্তু ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং ফাইবারের বেশ ভালো উৎস হিসাবেও কাজ করে।
জাম্বুরা
একটি খাবার। কিন্তু একইসাথে মিষ্টি এবং টক স্বাদ পাওয়া যায়! বলছিলাম জাম্বুরার কথা। এটিতে প্রায় ৮℅ এর মতো কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। শুধু তাই নয়! বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস হিসাবেও কাজ করে জাম্বুরা। আর হ্যাঁ! যাদের হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত জাম্বুরা খেতে পারেন৷
আম
আমে ২৪ গ্রামের মতো কার্বোহাইড্রেট থাকে। বাংলাদেশে আম একটি মিষ্টি এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল হলেও সারা বছরই এটি পাওয়া যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কেবল কার্বোহাইড্রেটই নয়, বরং এর পাশাপাশি আমে ভিটামিন এ এবং সি, পটাসিয়াম এবং ফাইবারও বেশি পরিমাণে থাকে। একই সাথে সুস্বাদু এবং ভিটামিনে ভরপুর এই খাবারের পুষ্টিমান বজায় রাখতে এর নিরাপদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করুন৷
কলা
যেহেতু এক একটি মাঝারি সাইজের কলাতে ২৬ গ্রামের কাছাকাছি বা তার বেশি কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়, সেহেতু এই ফলকে আমরা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় ফলে বেশ ভালো উদাহরণ হিসাবেই ধরে নিতে পারি।
কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও এই ফলে যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম এবং ভিটামিন এ ও সি থাকে। হার্ট ভালো রাখতে এবং রক্তচাপ ঠিক রাখতে নিয়মিত কলা খেতে পারেন।
রিলেটেডঃ প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা, ফল, সবজি, মাছ ও মাংস
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের উপকারিতা
কার্বোহাইড্রেট একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট। যা ছাড়া দৈহিকভাবে আমরা বেশ দূর্বল হয়ে পড়বো এবং কোনো কাজই ঠিক মতো করতে পারবো। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আমাদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে কার্বোহাইড্রেট কি কি উপকার করে থাকে।
১। মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে
কার্বোহাইড্রেট সেরোটোনিন নামক হরমোনের উৎপাদনে সাহায্য করে৷ আর্কাইভস অফ ইন্টারনাল মেডিসিনের একটি গবেষণা থেকে জানা যায় এক বছরের জন্য খুব কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলে হতাশা বেড়ে যায়। যা মস্তিষ্কের জন্যে বেশ ক্ষতিকর।
২। ওজন বৃদ্ধিতে বাঁধা দেয়
কার্বোহাইড্রেট ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধে সাহায্য করতে কাজে লাগে। বিশেষ করে ফাইবার ওজন বৃদ্ধিতে বাঁধা দেয় এবং বেশ দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে৷ কারণ ফাইবার জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে অনেক সময় ধরে আপনার কোনো খিদে লাগবে না এবং শক্তির দিক দিয়ে আপনি নিজেকে সবসময়ই পূর্ণবোধ করবেন।
৩। হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
ডাল জাতীয় যেসমস্ত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার রয়েছে সেসমস্ত খাবার গ্রহণ করলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এছাড়াও শস্য জাতীয় খাবার গ্রহণেও হার্টের সুস্থতা নিশ্চিত হয়। যাদের বিভিন্ন হার্টের রোগ রয়েছে তারা নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারেন।
৪। পেটের চর্বি কমায়
ফুলকো পেট নিয়ে যাদের চিন্তার শেষ নেই, তারা প্রতিদিনকার খাবার টেবিলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার রাখতে পারেন। নিয়মিত ৩/৪ ধরণের খাবার খেলে আপনার দেহের ২/৩ শতাংশ পেটের চর্বি কমে যাবে।
৫। ভালো ঘুম নিশ্চিত করে
কম ফাইবার এবং উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার গ্রহণ করে ঘুমালে ঘুম বেশ ভালো হয়। এক্ষেত্রে চিনির কথা বলা যেতে পারে। লক্ষ্য করবেন কখনো শোবার আগে চিনি খেলে সেদিন বেশ ভালো ঘুম নিশ্চিত হয়ে থাকে।
শর্করার পাশাপাশি উদ্ভিদ ভিত্তিক খাদ্যের অংশ বা ফাইবারও ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে৷ যাদের রাতে ঘুম হয় না ঠিকমতো তারা ঘুমানোর পূর্বে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারেন৷
৬। রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগায়। কার্বোহাইড্রেট সরাসরি কোলেস্টেরল এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস কমানোতে কাজ করে।
তবে মাথায় রাখতে হবে সঠিক পরিমাণে ক্যালোরি গ্রহণ করা এবং হার্ট সম্পর্কিত রোগ প্রতিরোধ নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করাটা বেশ জরুরি।
৭। হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
ডায়েটে ফাইবার সমৃদ্ধ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার রাখাটা বেশ জরুরি। কারণ এই ধরণের আঁশযুক্ত খাবার হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। যাদের হজমের সমস্যা, খাবার পরিপাক হতে বাড়তি সময় লাগে তারা নিয়মিত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করুন৷ আশা করি হজমশক্তি পূর্বের চাইতে অনেকাংশেই বেড়ে যাবে।
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের অপকারিতা
আমরা মনে করি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার আমাদের মোটা করে ফেলে। ভাবি এই খাবার গ্রহণ করলেই কেবল আমাদের ওজন বেড়ে যাবে। অথচ কার্বোহাইড্রেট এর বাইরেও আমাদের দৈহিক ক্ষতিসাধনে কাজ করে থাকে। যেমন:
১। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি হতে পারে
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া মানেই আপনার শরীরে পানি জমে যাওয়া। বিশেষ করে চিনিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে এমনটা দেখা দিতে পারে। কোক, ফান্টা, বিভাব জুস সহজেই পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে।
বলে রাখা ভালো এই কৃত্রিম কার্বোহাইড্রেটকে ফার্মেন্টেবল অলিগোস্যাকারাইডস, ডিস্যাকারাইডস, মনোস্যাকারাইডস এবং পলিওলস কার্বোহাইড্রেটও বলা হয়। সুতরাং দোকান থেকে কিনে আনা কোমল পানীয় এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবারকে না বলুন।
২। ওজন বাড়িয়ে তোলে
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। চিপস, পিজ্জা, বার্গার, বিভিন্ন চকোলেট, ক্রিমযুক্ত কেক, কোমল পানীয় ইত্যাদি খাবারদাবার মানেই ওজন বাড়ানোর টনিক। অতএব যারা নিজেকে ফিট রাখতে চান তাদের উচিত অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারকে না বলা।
৩। মস্তিষ্ক অলস হয়ে যেতে পারে
মস্তিষ্কের শক্তির প্রাথমিক উৎস হলো গ্লুকোজ। যা কার্বোহাইড্রেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বা সাব ক্যাটাগরি। কিন্তু অত্যধিক কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলে গ্লুকোজ এবং ইনসুলিনের বিপাকের চক্করে পড়ে অকেজো হয়ে যেতে পারে মস্তিষ্ক। অকেজো না হলেও অনেকেই এর ফলে সারাদিন মানসিক দূর্বলতা অনুভব করে।
৪। মুখে ব্রণ দেখা দেয়
বেশি চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। আর বেশি চিনিযুক্ত খাবারকে আমরা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের তালিকাতে ফেলতে পারি।
যাদের ব্রণের সমস্যা একটু বেশি তারা প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকুন এবং প্রয়োজনে আঁশযুক্ত বা ফাইবার জাতীয় খাবার গ্রহণে মনোযোগ দিন৷
৫। দাঁতের ক্ষয় হতে পারে
কেবলমাত্র দোকান থেকে কেনা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণ করার ফলে অনেকেই দাঁতের সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে, দাঁতে ব্যাথার সাথে যুদ্ধ করছে এবং দাঁতের ক্ষয়জনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
ক্যান্ডি, চকোলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি চিনিযুক্ত খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারলে দাঁতের ক্ষয় রোধ করা সম্ভব হবে।
রিলেটেডঃ শর্করা জাতীয় খাবার, শর্করা জাতীয় খাবারের উপকারিতা ও অপকারিতা
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়ার নিয়ম
চিনি হলো কার্বোহাইড্রেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। তাছাড়া এই জাতীয় খাবারের দলে বিভিন্ন সবজি এবং ডাল জাতীয় খাবারকেও ফেলা যায়। চারপাশে থাকা সহজলভ্য খাবারকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে সঠিকরূপে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যায় সে নিয়ে চলুন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক:
- সুস্থ থাকতে আমাদের দিনে ৯০০/১০০০ ক্যালোরি গ্রহণ করা উচিত
- সুষম খাদ্যের অংশ হিসাবে ফাইবার সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিন
- নিয়মিত একটি করে হলেও চিনি ছাড়া সম্পূর্ণ তাজা ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন
- কম ক্যালোরিতে পূর্ণ বোধ করতে বাদামি চালের ভাত খেতে পারেন
- হালকা করে হলেও নিয়মিত খাবার তালিকাতে রাখুন দুধ, পনির, দই এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার
- মটরশুটি এবং মসুর ডাল বেশি করে খান
শেষ কথা
বিভিন্ন কেক, ড্রিংকস এবং রিচ ফুডকে কার্বোহাইড্রেটের উৎস ভেবে মনোযোগ না দিয়ে ফাইবার সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিন। এতে করে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
সেই সাথে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। যারা ডায়েট করছেন এবং ওজন কমাতে চাচ্ছেন তারা খাবারের টেবিলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার-দাবার তুলনামূলকভাবে কম রাখার চেষ্টা করুন।
আপনাকে কম ক্যালোরিতে পেট ভরে যাবে এমন খাবার বেছে নিতে পারেন। এতে করে স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে এবং একই সাথে নিজেকে ফিট রাখাটাও সহজ হবে। সর্বোপরি নিয়ম মেনে দেহের চাহিদা অনুযায়ী কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারে কতটুকু পুষ্টি থাকে?
মূলত কার্বোহাইড্রেটের পুষ্টির মান প্রতি গ্রামে কার্বোহাইড্রেট ৪ ক্যালরির মতো থাকে। অর্থ্যাৎ প্রতি ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলে আপনি তা থেকে ৪ ক্যালোরি শক্তি পাবেন।
দিনে কতটুকু কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা উচিত?
আমাদের দিনে ২০০০ ক্যালোরির আশেপাশে শক্তির প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে দিনে ২২৫ থেকে ৩০০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবাবার গ্রহণ করা উচিত। সেই সাথে মাথায় রাখা উচিত হৃদরোগ প্রতিরোধে এবং সুস্থ থাকার জন্য, বিভিন্ন তাজা ফল বা সবজি জাতীয় কার্বোহাইড্রেট খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
কার্বোহাইড্রেটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি কি কি?
অতিরিক্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক এবং কোলেস্টেরলের মতো জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। আবার দৈনিক খাবারের ৬৫% এর মতো খাবারে কার্বোহাইড্রেট না থাকলেও তা পরবর্তীতে দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ হতে পারে।
Reference
২। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় ফল সম্পর্কিত তথ্য: https://www.healthline.com/nutrition/12-healthy-high-carb-foods
৩। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় সবজি সম্পর্কিত তথ্য: https://www.webmd.com/diabetes/ss/slideshow-health-vegetable-carbs
৪। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের উপকারিতা সম্পর্কিত তথ্য: https://www.eatingwell.com/article/16138/6-reasons-you-should-be-eating-carbs/
৫। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের অপকারিতা সম্পর্কিত তথ্য:
https://www.eatthis.com/side-effects-of-eating-too-many-carbs/
৬। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণের নিয়ম সম্পর্কিত তথ্য: https://www.mayoclinic.org/healthy-lifestyle/nutrition-and-healthy-eating/in-depth/carbohydrates/art-20045705