সময়ের সাথে সাথে আমরা বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান হারাতে চলেছি। এসব আয়ুর্বেদ-সহকারী উপকরণের মাঝে তোকমার কথা না বললেই নয়।
গুরুজনেরা যে দানার সাহায্যে তৈরি করা পানীয় পান করতে জোর করতেন, যে পানীয়ের অসংখ্য পুষ্টি ক্ষমতা রয়েছে সে-সম্পর্কেও আমাদের জেনে রাখা উচিত।
পাশাপাশি এটিও জেনে রাখা উচিত যে ভিজিয়ে রাখা তোকমা দানা জেলি টাইপের পানীয় হয়ে যাওয়ার কারণে শ্বাসযন্ত্রের ক্ষেত্রে তা কতটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
১ টেবিল চামচ পরিমাণ তোকমা দানা পানিতে মিশিয়ে যে পানীয় তৈরি করা হয় তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে।
শুধু তাই নয়! সাথে থাকবে তোকমার উপকারিতা ও অপকারিতা, ব্যবহার এবং বিভিন্ন রেসিপি। চলুন মূল আলোচনা যাওয়া যাক।
তোকমা দানা কি?
তোকমা দানা হলো তুর্কমারিয়া উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত ছোট ছোট বীজ। যা সাধারণত সাদা কিংবা কালো এবং কখনো কখনো বাদামি একরঙের হতে পারে। তোকমাকে মানবদেহের শক্তি এবং পুষ্টি উৎপাদনকারী বীজ হিসেবে আমরা ব্যবহার করতে পারি।
সারাবিশ্বে এই তোকমা দানা সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়ে থাকে মেক্সিকো এবং গুয়াতেমালা নামক স্থানে। আমাদের বাংলাদেশেও কিন্তু এই তোকমা দানা উৎপাদনের হার মোটেও কম নয়। এমনকি বর্তমানে বাংলাদেশের অনেকেই সুষম খাদ্যের অংশ হিসাবে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে এই তোকমা দানা বা চীয়া বীজ খেয়ে থাকে।
ও হ্যাঁ! এটি কিভাবে খেতে হয় সে-সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। তবে তার পূর্বে চলুন জেনে নিই তোকমা দানা সম্পর্কিত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- পরিচিতি: তুর্কমারিয়া বা বাসিল (Basil) বীজ
- রং: সাদা এবং কালো ও বাদামি
- প্রকারভেদ: ২
- বৈশিষ্ট্য: পানিতে ভেজালে দ্বিগুণ হয়
- ব্যবহার: খাবার এবং পানীয় হিসাবে
- গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র: ভারত, চীন ও মেক্সিকো
ফুটনোটঃ
তোকমা দানার পুষ্টিগুণগুলি কি কি?
তোকমা দানার পরিচিতি সম্পর্কে তো জানা গেলো। আপনি কি জানেন, তোকমা হলো অল্প ক্যালোরিতে অনেক পুষ্টির উৎস? এই তোকমা হলো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সেই খাবার যা আপনি বিভিন্ন খাবারে সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। এবারে চলুন তোকমা দানার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। যা আপনাকে তোকমা দানা খাওয়ার প্রতি আরো বেশি আগ্রহী করে তুলবে। তোকমাতে রয়েছে:
- ক্যালোরি: ০.৬
- ভিটামিন এ: ৩%
- ভিটামিন কে: ১৩%
- ক্যালসিয়াম: ০.৫%
- আয়রন: ০.৫%
- ম্যাঙ্গাজিন: ১.৫%
তোকমা দানার উপকারিতা ও অপকারিতা
তোকমা দানা প্রতিদিন যেমন নির্দিষ্ট পরিমাণে খেলে স্বাস্থ্যের উন্নতি নিশ্চিত হতে থাকে, ঠিক তেমনই এই দানা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে দেহের এর নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কেনো বলছি? কারণ জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
তোকমা দানার উপকারিতা
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আলোচনা করবো তোকমা দানার উপকারিতা সম্পর্কে। এক্ষেত্রে এমনকিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করবো যা সম্পর্কে হয়তো আপনি পূর্ব থেকে জানতেনই না। চলুন শুরু করা যাক।
টেস্টোস্টেরন বাড়াতে সাহায্য করে
তোকমা দানা পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়াতে প্রাকৃতিভাবে সাহায্য করে। ফলে পুরুষের কামশক্তি পূর্বের তুলনায় অনেকাংশে বেড়ে যায়। পাশাপাশি এতে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিডগুলিও পুরুষের যৌনস্বাস্থ্য সঠিকভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও তোকমা দানা খেলে যৌন ড্রাইভের অনুভূতিরও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে থাকে।
টেস্টোস্টেরন হরমোন জানতে আমাদের টেস্টোস্টেরন হরমোন নিয়ে বিস্তারিত লেখাটিঃ “টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায়” পড়তে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে
যারা অনেকদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো জটিল রোগে ভুগছেন এবং কোনো ঔষধেই যাদের কাজ হচ্ছে না তারা তোকমা দানা খেতে পারেন। তোকমা দানায় যেহেতু ফাইবার, বিশেষ করে অদ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে সেহেতু এটি পানির সংস্পর্শে আসলেই একধরণের জেলে পরিণত হয়।
এই জেল মলত্যাগের সময় মলকে অনেকটা নরম করে তোলায় ব্যাক্তির কষ্ট অনেকটাই লাঘব হয়। সুতরাং যারা অনেকদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো জটিল রোগে ভুগছেন, তারা নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে তোকমা দানা খেতে পারেন। আশা করি এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটাই নির্মুল হয়ে যাবে।
শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে
চলছে গরমকাল। এই সময়টাতে দেহের বাড়তি তাপ যেনো কোনোভাবেই সহ্য করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে সমাধান হিসাবে পানীয়ের তালিকায় রাখা যেতে পারে এই তোকমাকে।
সারারাত ভিজিয়ে রেখে দিনের শুরুতে তোকমা দানার সাথে একটু লেবুর রস এবং চিনি মিশিয়ে পান করে ফেলুন। দেখবেন সারাদিন দেহে অন্যরকম এই প্রশান্তি কাজ করছে এবং পূর্বের ন্যায় গরমে হাসফাস ভাবটা আর মালুম হচ্ছে না।
দেহে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
তোকমা দানাতে রয়েছে হজম শক্তি এবং দৈহিক শক্তির বাড়িয়ে তোলার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণের পুষ্টিমান। আপনি যদি মনে করেন আপনার ঠিকঠাকমতো কোনো খাবার হজম হচ্ছে না দিন দিন শরীর অনেক বেশি দূর্বল মনে হচ্ছে, তবে সেক্ষেত্রে তোকমা দানার জুস খেতে পারেন।
এছাড়া অনেক সময় কঠিন ব্যায়াম রুটিন অনুসরণ করার পর অনেক খারাপ লাগে। পাশাপাশি অনেক দূর্বলও লাগে।
এক্ষেত্রেও তোকমা দানা গ্রহণ করা যেতে পারে। আর বিভিন্ন স্মুদিতেও এটি যোগ করে পান করা যাবে। তোকমা দানার রেসিপি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
রিলেটেডঃ হজমশক্তি বৃদ্ধির উপায়, কার্যকারী টিপস ২০২৩
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস হিসাবে কাজ করে
আমরা সবাই জানি আমাদের দেহের জন্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই তোকমা দানাতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
যা আমাদের কোষ এবং ত্বক সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি আপনার দাঁতকে বিভিন্ন ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
আর আপনি এটি জেনেও অনেক খুশি হবেন যে তোকমা দানাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি মানবদেহের ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
হাড় এবং দাঁত সুস্থ রাখে
ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার হিসাবে তোকমা দানার গুরুত্ব প্রায় দেখার মতো। আর আমরা তো পূর্ব থেকেই জানি ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁতের সুস্থতার জন্যে ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ! ক্যালসিয়াম ছাড়াও তোকমা দানা ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার হিসাবে বেশ জনপ্রিয় খাবার। শক্তিশালী হাড় এবং দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।
রিলেটেডঃ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার, উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
তোকমা দানার অপকারিতাগুলি কি কি?
তোকমা দানা নিয়মিত খেতে পারবেন। তবে নিয়মিত খেতে গিয়ে যদি পরিমাণ বেশি খেয়ে ফেলেন সেক্ষেত্রে তা দেহের জন্যে মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে।
মনে রাখবেন, মানুষের শরীরকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে করে এটি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
এক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার দেহের পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন না থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ তোকমা দানা খেয়ে ফেলেন তবে আপনার এর পরিবর্তে নির্দিষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও সম্মুখীন হতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক তোকমা দানা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কি কি নির্দিষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়:
গর্ভবতী নারীর ক্ষতি করে
তোকমা দানা কখনোই গর্ভবতী নারীর উপযোগী খাবার নয়। অনেকেই হয়তো ভেবে বসে আছেন যে, যেহেতু তোকমা দানা কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে রাখে, সেহেতু এটি বুঝি গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজেও আসবে! যারা এমনটা ভাবছেন তারা পুরোপুরি ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে ক্ষতি ডেকে আনছেন।
মনে রাখবেন, যেসব গর্ভবতী নারীর শরীর উচ্চ-মানের ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে উঠতে পারে না, সেসব নারী কোনোভাবেই তোকমা দানার পুষ্টিমান বজায় রাখতে পারবে না বা এটি তাদের কোনো সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার কাজে আসবে না। উল্টো ক্ষতি সাধন করবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, কি করতে হবে!
আর হ্যাঁ! যারা নিজের শরীর সম্পর্কে আঁচ করতে পারছেন না মানে উচ্চ-মানের ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত কিনা বুঝতে পারছেন না, তারা তোকমা দানা খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। নতুবা এটি পুরোপুরি এড়িয়ে যাবে।
এলার্জি বেড়ে যেতে পারে
যাদের এলার্জি রয়েছে তারা তোকমা দানাকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলার চেষ্টা না করলেও কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ যাদের ইতিমধ্যেই এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা তোকমা দানা খেয়ে এলার্জির সমস্যাকে অতিরিক্ত পরিমাণে বাড়িয়ে দিতে পারেন। মনে রাখবেন যেক’টি দানা বা বীজজাতীয় খাবার এলার্জির সাথে দা-কুমড়া সম্পর্কে জড়িত, সেক’টি বীজ বা দানার মাঝে তোকমা দানা একটি।
আবার যাদের একইসাথে কোলেস্টেরল এবং এলার্জি রয়েছে তারাও তোকমা দানা খেতে পারবেন না। এ’কথা বলার কারণ হলো অনেকেই কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে তোকমা দানা খাওয়াকে কার্যকর সমাধান মনে করেন। এক্ষেত্রে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আসলেও এলার্জির সমস্যা বহুগুণ বেড়ে গিয়ে আপনাকে প্রচন্ড কষ্টে পড়তে হবে।
অতিরিক্ত রক্তপাতের ঝুঁকি তৈরি করে
শুরুতেই বলেছি ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস হিসাবে কাজ করে এই তোকমা বীজ। যা মানবদেহে নির্দিষ্ট হৃদরোগ বা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করলেও দেহে অতিরিক্ত রক্তপাতের ঝুঁকি তৈরি করে। সুতরাং যাদের রক্ত পাতলা তারা তোকমা দানাকে পুরোপুরি না বলুন।
বিশেষ করে ইতিমধ্যেই যারা রক্ত পাতলা করার ঔষুধ খাচ্ছেন বা যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে তারা তোকমা দানা এড়িয়ে চলুন। আর যদি নিতান্তই খেতে হয়, সেক্ষেত্রে শুরুতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়
অতিরিক্ত পরিমাণে তোকমা দানা খেলে তা বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। আরেকটু বিস্তারিতভাবে বললে তোকমা দানায় থাকা বাড়তি ফাইবার দেহে এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভুমিকা পালন করে।
তবে এক্ষেত্রে যারা অনেক বেশি ফাইবারজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারেন বা যাদের এই অভ্যাস রয়েছে, তাদের এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় পড়তে হবে না।
ওজন বাড়িয়ে দেয়
তোকমা দানা কেউ যদি ১০০ গ্রাম খায় তবে সে ৩০ গ্রাম ফ্যাট উপাদান গ্রহণ করবে। এ-থেকে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন তোকমা দানা বেশ চর্বিযুক্ত খাবার।
সুতরাং অতিরিক্ত পরিমাণে তোকমা দানা খেলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ভালো হয় যারা ডায়েট করেন তারা কোনো ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে তোকমা দানা খেতে পারলে।
তোকমা দানার খাওয়ার নিয়মগুলি কি কি?
তোকমা দানা খাওয়ার আলাদা কোনো নিয়ম নেই। তবে অনুরোধ থাকবে কখনোই শুকনা তোকমা দানা না খাওয়ার। কারণ এতে উপকার হওয়ার চাইতে অপকারই বেশি হবে। তবে প্রতিটি খাবারেরই কিছু নির্দিষ্ট রেসিপি থাকে।
আপনি চাইলে এসব রেসিপি তৈরি করে সহজেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারেন। চলুন তোকমা দানার খাওয়ার নিয়ম কিংবা বিভিন্ন রেসিপি তৈরির নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
তোকমা প্রোটিন বার
তোকমার রেসিপি হিসাবে এই বারটি দেশে-বিদেশে বেশ জনপ্রিয়। এতে বাড়তি ফাইবারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান পাওয়া যাবে। এতে প্রয়োজন পড়বে:
- তোকমা দানা
- ভ্যানিলা আইসক্রিম বা ভ্যানিলা ফ্লেভার
- একটু নারকেল
- ফল হিসাবে খেজুর
- ডার্ক চকোলেট
সমস্ত উপকরণ একসাথে মিশিয়ে সারারাত বা ২/৩ ঘন্টা রেখে দিন। সবশেষে তা স্মুদি হিসাবে খেয়ে ফেলতে পারবেন। এটি প্রতিদিন সকালে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
তোকমা জুস
রেসিপির নাম দেখে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এটি একটি জুস টাইপের রেসিপি। তবে অন্যান্য জুসের মতো এটি বার বার পান করা যাবে না। প্রতিদিন ১ বার পান করতে পারলেই যথেষ্ট! এই তোকমা জুস বানাতে যেসব উপকরণের প্রয়োজন পড়বে:
- ২/৩ টেবিল চামচ তোকমা দানা
- ২ কাপ পরিমাণ সাধারণ এবং ফ্রেশ পানি
- ১ কাপ পছন্দের ফলের রস
- পছন্দের যেকোনো তাজা ফল
উপরের সমস্ত উপকরণ ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে পান করার ৪/৫ ঘন্টা আগে উপরে তোকমা দানা ছিটিয়ে দিন। এবারে পরিবেশনের সময় অর্থ্যাৎ পান করার পূর্বে সব ভালোভাবে মিশিয়ে পান করে ফেলুন। আর হ্যাঁ! একই রেসিপিতে লেবুর রস মিশিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন মেক্সিকান লেমনেড”। এতে বাড়তি উপকরণ হিসাবে কেবল লেবুর জুস মেশালেই হবে।
ব্রেড ক্রাম্বস হিসাবে ব্যবহার করুন
যারা ব্রেড ক্রাম্বস চেনেন না তাদের বলে রাখা ভালো এটি বিভিন্ন খাবার ভাজার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যেমন রোল, চিকেন ফ্রাই কিংবা স্টেক। এসব খাবার ভাজা সময় ব্রেড ক্রাম্বস হিসাবে তোকমা ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে যেমন খাবার আরো সুস্বাদু হয়ে উঠবে, ঠিক তেমনই খাবার হয়ে উঠবে আরো স্বাস্থ্যসম্মত।
ব্রেড ক্রাম্বস হিসাবে তোকমাকে ব্যবহার করতে তোকমা ধুঁয়ে নিন। পরবর্তীতে খাবারকে হালকা ডিমে বা পানিতে চুবিয়ে ধুঁয়ে রাখার তোকমায় নেড়েচেড়ে ভেজে ফেলুন। দেখবেন এই স্বাদ কখনোই ভোলা যাচ্ছে না।
তোকমা জ্যাম
বাইরের দেশগুলিতে তোকমার জ্যাম বেশ জনপ্রিয় খাবার। তবে আজকাল বাংলাদেশের অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠাই তোকমা জেলের জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সাধারণত বিভিন্ন সুপার শপে এই তোকমার জ্যাম কিনতে পাওয়া যায়। তবে আপনি চাইলে ঘরে বসেই এই জ্যাম বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তোকমা জ্যাম বানাতে নিচের উপকরণগুলিকে কাজে লাগাতে পারেন:
- প্রয়োজনমতো তোকমা
- মধু বা পরিমাণমতো চিনি
- খানিকটা লবণ
- যেকোনো তাজা ফল
এবারে সকল উপকরণ চুলায় রেখে ১০ মিনিটের মতো জাল দিয়ে নিন। যারা অনেকবেশি ঘন জেলি টাইপের জ্যাম পছন্দ করেন তারা তোকমা দানা দেওয়ার পূর্বে পছন্দের তাজা ফলকে হালকা পানি দিয়ে ঘন ডো করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে এটিকে চুলায় ৫ মিনিটের মতো রাখার প্রয়োজন পড়তে পারে।
তোকমা দানার ব্যবহারগুলি কি কি?
তোকমা দানাকে আপনি চাইলে বিভিন্ন খাবার তৈরিতে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন:
- আইসক্রিম পরিবেশনে ডেকোরেশনের অংশ হিসাবে তোকমা ব্যবহার করুন
- বিভিন্ন জুস কিংবা স্মুদিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে উপরে কিছু তোকমা ছিটিয়ে দিন
- বিভিন্ন বেকিং রেসিপি যেমন, তালের কেক, সাধারণ ব্রেড, চিতই পিঠা ইত্যাদির উপর ছিটিয়ে দিতে পারেন
- চাইলে তোকমাকে পুডিং বানিয়ে বা পুডিংয়ের সাথে যোগ করে খেতে পারেন
- সালাদে মধু বা ভিনেগারের পাশাপাশি কিছু তোকমা ছিটিয়ে দিন
শেষ কথা
মনে রাখবেন যেকোনো রোগ প্রতিরোধ এমনকি যেকোনো রোগ প্রতিকারের ক্ষেত্রে প্রয়োজন প্রকৃতি হতে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির উৎসগুলিকে কাজে লাগানো। এক্ষেত্রে তোকমা দানাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি-উৎস।
সুতরাং সতর্কতা অবলম্বন করে পরিমিত পরিমাণে প্রতিদিনই তোকমা দানা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আশা করি বেশ কয়েকমাস পর থেকেই এর ফল ভোগ করা শুরু করবেন।
তাছাড়া ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এই দানা বাংলাদেশে বেশ প্রচলিত একটি খাবার। ফলস্বরূপ এটি খুব একটা ব্যয়বহুলও নয়।
আসুন আমরা নিজেদের দেহে বাড়তি শক্তি উৎপন্ন করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে এই তোকমা দানার সাহায্য নিই। প্রাকৃতিক এই ঔষধকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের নিরাপদভাবে সুস্থ রাখার ব্যবস্থা গড়ে তুলি।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
তোকমা দানা কি প্রতিদিন খাওয়া যাবে?
হ্যাঁ! প্রতিদিন তোকমা দানা খাওয়া যাবে। তবে এর পরিমাণের দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। কোনোভাবেই অতিরিক্ত তোকমা দানা খাওয়া যাবে না বা এর অভ্যাস গড়ে তোলা যাবে না।
কারণ অতিরিক্ত তোকমা দানা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় পড়ে ব্যাক্তির করুণ পরিস্থিতি পর্যন্ত সৃষ্টি হতে পারে।
তোকমা দানা কি কোনো ঔষধ গ্রহণে খারাপ প্রভাব ফেলে?
হ্যাঁ! তোকমা দানা বিভিন্ন রক্ত পাতলাকারী ঔষধের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। বিশেষ করে কাউমাডিন এবং ওয়ারফারিনের মতো ঔষধগুলির কথা একেবারে উল্লেখ না করলেই নয়!
যাইহোক! যারা এসব ঔষধ সেবন করছেন এবং যারা রক্তচাপের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা আপাতত তোকমা দানা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। আর যদি গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে তবে তার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তোকমা বেশি খেলে কি হয়?
তোকমা বেশি খেলে রক্তপাত ঘটে ব্যাক্তি মৃত্যুবরণ পর্যন্ত করতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য প্বার্শপ্রতিক্রিয়া তো রয়েছেই!
তোকমা দানা ও চিয়া সিড কি এক?
না, এটি সমজাতীয় ও দেখতে এক হলেও চিয়া সিড ভিন্ন। অনেকেই এটিকে এক ভেবে ভুল করে থাকেন।