বর্তমান সময়ে প্রায় মানুষের মধ্যে একটি সমস্যা দেখা যায় তা হল শরীরে অধিকতর চর্বি জনিত সমস্যা। আর এই সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে পেটে। অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষই অত্যাধিক পরিমাণে পেটে চর্বি জনিত সমস্যায় ভোগে। কিন্তু সবচাইতে ভয়ানক ব্যাপার হলো তাদের অনেকেই এটাকে গুরুত্বের সাথে তো দেখেই না বরং এটা নিয়ে ন্যূনতম চিন্তাও করে না।
পেটের অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি একটি মানুষের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয় সেই সাথে বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য পেটের মেদ বা চর্বি কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। পেটের মেদ কমানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এরমধ্যে জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি হচ্ছে ডায়েট করা। কিন্তু অতিরিক্ত ডায়েট করলে ফলাফল বিপরীত হতে পারে এবং স্বাস্থ্যেরও ঝুঁকি থাকে।
তাই আমাদের উচিত পেটের মেদ কমানোর কিছু সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত উপায় সম্পর্কে জানা। আজ আমরা পেটের মেদ কমানোর এমন কিছু কার্যকর উপায় সম্পর্কে জানব যা সম্পূর্ণ নিরাপদ। এগুলোর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বা কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকিও নেই। এই পদ্ধতি গুলো সম্পূর্ণ ঘরোয়া। তাহলে চলুন পেটের মেদ কমানোর উপায় গুলো সম্পর্কে জেনে নিই:
কি কি কারণে পেটে মেদ বা চর্বি জমে?
দ্রুত চর্বি বা পেট কমানোর উপায় সম্পর্কে জানার আগে জানতে হবে কি কি কারনে শরীরে মেদ বা চর্বি জমে। মেদ জমার বেশ কিছু কারণ আছে চলুন এগুলো জেনে নিন:
১) মিষ্টি জাতীয় অথবা চিনি জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করা
২) অতিরিক্ত মদ্যপান করা
৩) ডুবো তেলে ভাজা খাবার খাওয়া।
৪) নিয়মিত লাল মাংস খাওয়া
৫) অতিরিক্ত কোমল পানীয় পান করা।
৬) বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
৭) স্যাচুরেটেড চর্বি গ্রহণ করা
৮) অলস লাইফস্টাইলে থাকা
৯) শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া
১০) বসে থাকার কাজ বেশি করা
১১) ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকা
পেটের মেদ কমানোর উপায়
পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর জন্য আমাদের চেষ্টার কোন শেষ নেই। কিন্তু যে পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করলে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যাবে সে বিষয়ে অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা খুবই কম। তাহলে চলুন পেটের মেদ কমানোর উপায় গুলো জেনে নিন:
১) প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে:
ফাইবার জাতীয় খাবার হজম হতে একটু বেশি সময় লাগে এগুলো ধীরে ধীরে পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে প্রবেশ করে। এই খাবারগুলো দেরিতে হজম হওয়ার কারণে ক্ষুধাও কম লাগে।
একটি গবেষণাতে দেখা গেছে, ফাইবার জাতীয় খাবার গুলো গ্রহণ করার কারণে পাঁচ বছরের মধ্যে ৩.৭% পেটের চর্বি কমে যায়। শাকসবজি ও বিভিন্ন ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। শাকসবজি যেমন, কুমড়া লাউ, খোসা সহ আলু, ইত্যাদি খেতে পারেন।
অন্যদিকে ফল যেমন, পেয়ারা আপেল ইত্যাদি ফল খোসা সহ খেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়। এছাড়াও, সিম ,শালগম, এভোকাডো ,আলসি বীজ এগুলোও ফাইবার জাতীয় খাবার।
২) ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন:
সয়াবিন তেলে থাকা অসম্পৃক্ত চর্বিকে আমাদের শরীরে থাকা হাইড্রোজেন পাম করে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি করে। এই ফ্যাট গুলো এতটাই ক্ষতিকারক যে, হৃদরোগ, প্রদাহ, ইনসুলিন প্রতিরোধ,ও পেটের চর্বি বাড়ানোর জন্য দায়ী।
গবেষণায় প্রমাণিত যারা প্রতিদিন ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ করে তাদের পেটের মেদ বাড়ার সম্ভাবনা ৩৩% বেশি অন্যদের তুলনায় ।
তাই দ্রুত পেট কমানোর জন্য ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩) উচ্চ আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন:
পেটের চর্বি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রোটিন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে বেশি পরিমাণে peptide YY(PYY) হরমোন উৎপন্ন হয় এই হরমোন ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।
যারা বেশি প্রোটিন যুক্ত খাবার খায় তাদের তুলনায় যারা কম প্রোটিন যুক্ত খাবার খায় তাদের পেটের মেদ বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। উচ্চ প্রোটিন জাতীয় খাবার গুলো হলো, মাছ, মাংস ,ডিম ,দুধ ,মটরশুটি ইত্যাদি।
৪) মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন:
অ্যালকোহল পান করলে শরীরের তো কোনো উপকার হয়ই না বরং ক্ষতি হয়। মদ পান করার কারণে পেটের চারপাশে অতিরিক্ত মেদ জমে। যারা অ্যালকোহল পান করে তাদের পেটে চর্বি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই অতি দ্রুত মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে।
৫) চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন:
চিনিতে আছে ফ্রুক্টোজ যা অতিরিক্ত খেলে পেটের চর্বি সহ দীর্ঘস্থায়ী রোগ হয়। যেমন, ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার ডিসিজ,হৃদরোগ ইত্যাদি। শুধুমাত্র চিনি খেলে যে পেটের চর্বি বাড়ে এমনটা নয় চিনি যুক্ত খাবার যেমন মিষ্টি, বা চিনি দিয়ে তৈরি যেকোনো খাবার এগুলো খেলে পেটের মেদ বাড়ে।
৬) মানসিক চাপমুক্ত থাকুন:
অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি বেশি পরিমাণে কর্টিসল হরমোন উৎপাদন করে। কর্টিসল হরমোন ক্ষুধা বাড়ায় এবং পেটের চর্বি বাড়াতে সাহায্য করে। এই কারণে পেটের চর্বি কমাতে আনন্দদায়ক কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকুন আপনার মানসিক চাপ কমাবে। প্রয়োজনে নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করুন।
৭) কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার কম গ্রহণ করুন:
প্রতিদিন ৫০ গ্রামের কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খেলে পেটের মেদ কমে। এছাড়াও, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবারের তুলনায় শস্য দানা বেশি খায় তাদের মেদ হওয়ার সম্ভাবনা ১৭% কমে যায়।
৮) অ্যারোবিক বা কার্ডিও ব্যায়াম করুন:
আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি ও ক্যালোরি বার্ন করতে অ্যারোবিক ব্যায়াম কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। পেটের চর্বি কমানোর ব্যায়ামগুলোর মধ্যে সবচাইতে কার্যকরী ব্যায়াম হচ্ছে কার্ডিও ব্যায়াম।
এই ব্যায়ামের কার্যকারিতা নির্ভর করে আপনি প্রতিদিন কতটুকু সময় ব্যায়াম করছেন। পেটের চর্বি কমাতে হলে প্রতি সপ্তাহে সর্বনিম্ন ৩০০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে।
৯) ওজন উত্তোলনের অভ্যাস করুন:
ওজন উত্তোলন পেশিকে শক্তিশালী করার একটি ব্যায়াম। এই ব্যায়াম পেশিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পেটের চর্বি কমাতে ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে, অ্যারোবিক ব্যায়াম ও ওজন উত্তোলন একসাথে করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
১০) সয়াবিন তেলের পরবর্তিতে নারকেল তেল ব্যবহার করুন:
পেটের মেদ কমানোর অন্যতম একটি উপায় হল রান্নায় নারকেল তেল ব্যবহার করা। নারকেল তেল স্বাস্থ্যকর চর্বি গুলোর মধ্যে একটি এই তেল আপনি নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। নারকেল তেলে আছে মিডিয়াম চেইন ফ্যাট যা বিপাক শক্তি বাড়ায় এবং শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে বাধা দেয়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে পেটে মেদ চর্বি আছে এমন লোকজন যদি তাদের খাদ্য তালিকার পরিবর্তন না করে টানা ১২ সপ্তাহ নারকেল তেল দিয়ে রান্না করা খাবার খায় তাহলে আশানুরূপভাবে তাদের পেটের চর্বি ও মেদ কমতে থাকে।
১১) পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান:
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমায় না তাদের ওজন বেশি হয়। ১৬ হাজারেরও বেশি মহিলাদের নিয়ে ১৬ বছর ধরে দীর্ঘ একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্রতিদিন রাতে ৫ ঘন্টার কম ঘুমায় তাদের ওজন বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা অনেক বেশি।
একজন সুস্থ মানুষের কমপক্ষে রাতে ৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
১২) সফট ড্রিংস এড়িয়ে চলুন:
অধিকাংশ কোমল পানীয় গুলো তরল ফ্রুক্টোস দিয়ে তৈরি যা আপনার পেটের চর্বি বাড়ায়। এটা গবেষণায় প্রমাণিত যে সফট ড্রিংকসে থাকা তরল ফ্রুক্টোস দেহের চর্বি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও সফট ড্রিংসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে যা পরবর্তীতে ফ্যাটে রুপান্তরিত হয়।
১৩) চর্বিযুক্ত মাছ খান:
চর্বিযুক্ত মাছ স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্য উপাদান। চর্বিযুক্ত মাছে আছে ওমেগা ৩ ফ্যাট ও উচ্চমানের প্রোটিন যা আপনাকে রোগ থেকে রক্ষা করে। একটি গবেষণা দেখা গেছে,ওমেগা ৩ ফ্যাট লিভার ও পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। চর্বিযুক্ত মাছগুলো হল, হেরিং, স্যালমন, সার্ডিন, ম্যাকেরেল।
১৪) ফলের জুস খাবেন না:
ফলের জুসে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকলেও এতে আছে সোডা এবং অন্যান্য মিষ্টি পানীয়র মতো উচ্চমাত্রার চিনি। ২৪০ মিলি আপেল জুসে ২৪ গ্রাম সুগার থাকে যার অধিকাংশটাই ফ্রুকটস। এজন্য পেটের অতিরিক্ত মেদ কমাতে ফলের জুস খাওয়া বন্ধ করুন।
১৫) অ্যাপেল সিডার ভিনেগার:
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার শরীরে শর্করার পরিমাণ কমায়। এতে আছে এসিডিক এসিড যা চর্বি কমাতে সাহায্য করে। টানা ১২ সপ্তাহ প্রতিদিন যদি এক চামচ করে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া যায় তাহলে আধা ইঞ্চি পরিমাণ পেটের চর্বি কমবে।
১৬) প্রোবায়োটিক খাবার খান:
প্রোবায়োটিক খাবার হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ খাবার। এগুলো উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা শরীরের কোন ক্ষতি করে না। এই খাবারগুলো দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ওজন নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এর পাশাপাশি পেটের চর্বি হ্রাস করতেও সাহায্য করে। এ খাবারগুলো হল, দই ,এপেল সিডার ভিনেগার, fermented বা গাজানো সবজি ইত্যাদি।
১৭) ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করুন:
বর্তমানে Intermittent Fasting ওজন কমানোর জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি অনেকটা রোজা রাখার মত একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হয়। এই পদ্ধতিতে সপ্তাহে দুই দিন অর্থাৎ ২৪ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হবে। একদিনে ১৬ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হবে।
এই পদ্ধতিতে ছয় মাসে ২%-৭% পর্যন্ত পেটের চর্বি কমানো যায়। এই পদ্ধতিটি মহিলাদের চাইতে পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। আপনার যদি এই পদ্ধতিতে কোন প্রকার সমস্যা বা অসুবিধা না থাকে তাহলে এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করতে পারেন।
১৮) গ্রিন টি পান করুন:
গ্রিনটিতে আছে ক্যাফেইন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এপিগালোকেটিচিন গ্যালেট। এটি পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত গ্রিন টি গ্রহণ করার পাশাপাশি ব্যায়াম করলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
১৯) লাইফস্টাইলের পরিবর্তন:
আপনি যদি ভালো ফলাফল পেতে চান তাহলে আপনাকে কয়েকটি পদ্ধতির সমন্বয় করতে হবে। এই পদ্ধতি গুলোর মধ্যে আছে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন। এতে দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনার জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনার পেটের অতিরিক্ত মেদ চর্বি কমিয়ে আনবে।
পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায়
পেটের মেদ কমানো নিয়ে এত দুশ্চিন্তা না করে কিছু ঘরোয়া উপার মাধ্যমে খুব সহজে পেটের মেদ কমাতে পারবেন। শারীরিক ব্যায়ামের পাশাপাশি এই ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। চলুন ঘরোয়া উপায়গুলো জেনে নিই:
১) লেবুর পানি:
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস লেবুর পানি খাওয়ার অভ্যাস করবেন। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চামচ লেবুর রস সহ এক চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। নিয়মিত এটি পান করুন পেটের মেদ কমাতে এটি বেশ কার্যকর।
২) আদা পানি:
আদা মেদ কমাতে বেশ কার্যকর। এজন্য নিয়মিত, এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে কয়েক টুকরা আদা ভালোভাবে মিশিয়ে সেই পানি পান করুন। নিয়মিত এটি পান করলে খুব তাড়াতাড়ি পেটের মেদ ও চর্বি কমে যায়।
৩) গ্রিন টি:
বর্তমানে গ্রিন টি মেদ কমাতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি পানীয়। গ্রিন টির মাধ্যমে অতি সহজে আপনি আপনার দেহের মেদ কমাতে পারবেন। এজন্য নিয়মিত প্রতিদিন সকালে উঠে ও ঘুমানোর আগে গ্রিন টি পান করুন।
৪) কফির পানি:
কফির পানি ওজন কমানোর জন্য একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া উপায়। এক গ্লাস গরম পানিতে দুই চামচ কফি পাউডার ও এক চামচ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়মিত পান করুন। শরীরের ওজন কমাতে এটি যাদুর মত কাজ করে।
পেটের মেদ কমানোর ব্যায়াম
পেটের অতিরিক্ত চর্বি আপনার স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এটি উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের মতো কিছু গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে।
এজন্য পেটের চর্বি কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেটের জন্যই কমানোর জন্য আপনি প্রতিদিন যে পরিমানে ক্যালরি গ্রহণ করেন হয় তা কম করতে হবে তা না হলে প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করেন তা খরচ বা ঝড়িয়ে ফেলতে হবে।
ক্যালোরি খরচ করার অন্যতম উপায় হল ব্যায়াম। ব্যায়ামের মাধ্যমে খুব সহজে পেটের চর্বি কমানো যায়। চলুন পেটের চর্বি কমানোর ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নিই:
১) নিয়মিত হাটা:
এটি খুব সহজ একটি ব্যায়াম যা আপনাকে সুস্থ থাকতে ও পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করবে। যদি আপনি অতিরিক্ত হারে ওজন কমাতে চান তাহলে নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন এবং নিয়মিত হাটুন।
প্রতিদিন সকালে উঠে ৩০ মিনিট হাঁটা পেটের চারিপাশের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আপনার বিপাকে ও হৃদস্পন্দনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। হাঁটাহাঁটি করার জন্য আপনার কোন সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই শুধু প্রয়োজন ইচ্ছে শক্তির।
২) সাইকেল চালানো:
সাইকেলিং পেটের চর্বি কমানোর একটি কার্যকরী ব্যায়াম। সাইকেলিং আপনার হার্ট রেট বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি উরু এবং কোমরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই চেষ্টা করুন একই স্থান থেকে অন্য স্থানে সাইকেল চালিয়ে যেতে।
৩) ক্রাঞ্চিং:
পেটের চর্বি কমানোর সবচাইতে কার্যকরী ব্যায়াম হলো ক্রাঞ্চিং। এটি পেটের ভুড়ি কমানোর জনপ্রিয় একটি ব্যায়াম। আপনার হাঁটু বাকিয়ে এবং মাটিতে পা রেখে সমতল মেঝেতে শুয়ে শুয়ে এ ব্যায়াম করতে পারেন।
প্রথমে আপনার হাত তুলে মাথার পিছনে রাখুন বুক ক্রস করেও রাখতে পারেন। এরপর আস্তে আস্তে শ্বাস নিন এবং সেই সাথে আপনার মাথা ও পিট বাকিয়ে পায়ের কাছে নিন। এভাবে সর্বনিম্ন ১০ বার করুন।
৪) অ্যারাবিক ব্যায়াম:
আপনি যদি জিমে না গিয়ে পেটের মেদ কমাতে চান তাহলে অ্যারাবিক ব্যায়াম করতে পারেন। এই ব্যায়ামটি পেটের চর্বি কমানোর জন্য অনেক কার্যকর।
৫) জুম্বা ব্যায়াম:
এই ব্যায়াম শুরু হয় মূলত কলম্বিয়ায়। গানের সাথে সাথে নিচে ব্যায়াম করার অভিনব উপায় এটি। এটি ভুড়ি কমানোর জন্য অতি কার্যকর একটি ব্যায়াম।
এটি কার্ডিওভাস্কোলার ফিটনেস ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং দ্রুত পেটের চর্বি কমায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে জুম্বা ব্যায়ামে গড়ে প্রতি মিনিটে ৯.৫ ক্যালোরি র্বান হয় যা অন্য ব্যায়ামের তুলনায় অনেক বেশি।
তাই এখন থেকেই নিয়মিত জুম্বা ব্যায়াম শুরু করুন।
চর্বি বা মেদ কমানোর খাবার
বিভিন্ন ধরনের খাবার খেলে পেটের মেদ কমতে পারে। এসব খাবার খেয়ে আপনি খুব সহজেই পেটের অতিরিক্ত চর্বি ও মেদ দূর করতে পারবেন। এ খাবারগুলি হলো:
১) সবুজ শাকসবজি
২) মটরশুটি
৩) তরমুজ
৪) লাল চাল
৫) কাজুবাদাম
৬) লাল আটার রুটি
৭) গরম পানি
৮) লেবু ও মধু
৯) শসা
১০) আদা পানি
১১) জিরা পানি
১৩) গ্রিন টি
১৪) জব
১৫) এভোকাডো
১৬) প্রিপারমেন্ট
১৭) আপেল
১৮) পানি, ইত্যাদি
পেটের মেদ কমানোর ঔষধ
সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া পেটের মেদ কমানোর ঔষধ খাওয়া একবারে উচিত নয়। তবে বাজারে মেদ কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পানীয় ও ঔষধ পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে:
১) হাল্যাক্স ট্যাবলেট
২) গ্রিন টি
৩) ইন্ডিয়ান স্লিম ফার্স্ট ঔষধ
৪) ফাইটোলাকা বেরি ট্যাবলেট
পরিশেষে
উপরে আলোচনা করা পেটের মেদ কমানোর উপায় গুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই পেটের মেদ কমাতে পারবেন। বাজারে কিনতে পাওয়া পেটের মেদ কমানোর বিভিন্ন ওষুধ ভুলেও খাবেন না এগুলোর অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে।
যদি পেটের মেদ কমাতে ওষুধ খেতে হয় তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। এছাড়া আপনি উপরে আলোচনা করা ঘরোয়া উপায় গুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই পেটের মেদ কমাতে পারবে।