গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে ৩.৫ বিলিয়ন মানুষ ক্যালসিয়ামের অভাবে ভোগে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার কম খাওয়ার ফলে।
যারা হাঁড়ের ব্যাথা কিংবা দাঁতের ব্যাথায় ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে তারা হয়তো ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব বুঝতে পারেনি বা বুঝতে পারলেও সময় চলে গেছে।
যাইহোক! আপনিও যদি এভাবে ক্যালসিয়ামের অভাবে নিজের শান্তি নষ্ট না করতে চান তাহলে আপনাকে জানতে হবে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার কি কি, এসবের উপকারিতা কেমন, অপকারিতা কতটুকু, কতটুকু খেতে হবে, কিভাবে খেতে হবে এ-সমস্ত তথ্য।
যা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিত জেনে যাবেন। চলুন তবে আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার
আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতে প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে শুরুতেই জানতে হবে খাবারের মাঝে ঠিক কোন কোন খাবারগুলি আমাদের দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে।
আর হ্যাঁ! যারা ডায়েট রুটিন ফলো করেন তারাও কিন্তু ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার লিষ্টে রাখতে পারেন। এতে করে ডায়েটের কোনো সমস্যা হবে না। চলুন তবে এক পলকে দেখে নেওয়া যাক ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার পরিচিতি।
সবুজ শাকসবজি এবং ফলের রস
বলা হয়ে থাকে যে শাক-সবজি বা ফলমূল অনেক বেশি রঙিন হবে সেই শাক-সবজি বা ফলমূল অন্য খাবারের তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি নিশ্চিত করবে।
যাইহোক! মনে রাখবেন শাক এবং ব্রকলি ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস হিসাবে কাজ করে থাকে। অন্যদিকে বিভিন্ন ধরণের ফল ক্যালসিয়ামে খুব একটা সমৃদ্ধ হয় না। তবে বেশকিছু ফলের রস ক্যালসিয়ামের উপস্থিতির দিক দিয়ে অন্যান্য ফলের চাইতে বেশ শক্তিশালী হয়ে থাকে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
আপনার দেহে দৈনিক ক্যালসিয়ামের ডোজ সরবরাহ নিশ্চিত করতে খাবার তালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে মাছ, মাংস, ডিম কিংবা মটরশুঁটির মতো খাবারগুলিকে বেছে নেওয়া যেতে পারে। কারণ এসব খাবার একদিকে মানবদেহে প্রোটিনের যোগান দেয়। অন্যদিকে তা মানবদেহে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতেও কাজ করে থাকে।
বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারের তালিকায় বাদামের গুরুত্ব কিন্তু চোখে পড়ার মতো। তাছাড়া এই খাবার খুব একটা আয়োজন করে খেতে হয় না। অবসর সময়ে দুমুঠো বাদাম হাতের কাছে রাখতে পারলেই জমে যায়।
অন্যদিকে বীজ জাতীয় খাবারও আপনার ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে সাহায্য করতে পারে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সিমের বীজ, বরবটির বীজ, ভুটের ডাল ইত্যাদি খাবারের কথা বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। আর এসব খাবার কিন্তু আমাদের বাঙালিদের কাছে সবসময় হাতের নাগালেই থাকে এবং বিভিন্ন সবজি বা নাস্তার আয়োজনে সহজেই অতিরিক্ত খাবার হিসাবে তৈরি করে রাখা যায়।
শস্য জাতীয় খাবার
প্রিয় রিডার্স! আপনি কি জানেন নিয়মিত ভাত খেলেও আপনার ক্যালসিয়ামের চাহিদা কিছুটা হলেও কমবে? হ্যাঁ! ভাত হলো এক প্রকারের শস্য জাতীয় খাবার। এই খাবার সরাসরি ক্যালসিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে কাজ করে থাকে। তাছাড়া মনে রাখতে হবে ভাত কিন্তু যেকোনো সুষম খাদ্যের আয়োজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এছাড়াও যাদের ডায়াবেটিস সম্পর্কিত কোনো সমস্যা আছে বা যারা ওজন কমানোর জন্যে ডায়েট ফলো করেন তারা ভাতের পরিবর্তে রুটি খেতে পারেন। এতে করেও ক্যালসিয়ামের নিত্য চাহিদা কমে আসবে এবং হাঁড় ও দাঁতের সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে।
সয়াবিন তেল এবং এই তেলে তৈরি করা খাবার
অনেকেই দুধ খেতে পছন্দ করেন না বা দুধে এলার্জি থাকে। এক্ষেত্রে আপনারা চাইলে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতে দুধের পরিবর্তে সয়াবিন তেল খেতে পারেন। কেবল সয়াবিন না খেয়ে সয়াবিন তেলে তৈরি করা ভর্তা, তরকারি ইত্যাদি খেতে পারেন।
আমরা বাঙালীরা তো সয়াবিন তেলে তৈরি যেকোনো ভর্তার অনেক বড় ফ্যান। তবে যারা এই তেলে বানানো তারকারি পছন্দ করেন না, তারা এটিকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলতে পারলে খুব একটা সমস্যা হবে না।
তবে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতে গিয়ে কোনোভাবেই অস্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত হওয়া যাবে না। যেমন আটার সাহায্যে তৈরি করে তেল জাতীয় খাবার, প্রতিদিন বিরিয়ানির মতো অস্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়া….ইত্যাদি বদ অভ্যাস থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
রিলেটেডঃ ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা এবং অপকারিতা
ক্যালসিয়াম জাতীয় সবজির তালিকা
পূর্বে আমরা বাঙালীরা অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলিকেই সবচেয়ে প্রাধান্য দিতে চাইতাম। মাছ-মাংস ছাড়া যেনো কোনো ভোজের আয়োজনই হতো ঘরে ঘরে। তবে এখন সময় পাল্টেছে।
পরিস্থিতি কিছুটা হলেও পরিবর্তিত হয়েছে। এখন আমরা বিদেশি খাবার পরিবেশন এর নিয়ম ফলো করতে গিয়ে যথেষ্ট স্বাস্থ্যসম্মত খাবারে ফোকাস করছি। প্রতি বেলার খাবারে রাখার চেষ্টা করছি বিভিন্ন রঙিন এবং সিদ্ধ করা সবজি অথবা মুখরোচকভাবে রান্না করা বিভিন্ন সবজি রেসিপি।
এদিক দিয়ে আমরা কিছুটা হলেও ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করার সুযোগ পাচ্ছি। যাইহোক! এই স্বাস্থ্য-সচেতনতা বৃদ্ধির পথটুকুকে আরেকটু সুগম করতে এবারে আমরা আলোচনা করবো ক্যালসিয়াম জাতীয় সবজি সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা। আমাদের সাথেই থাকুন:
শালগমের শাক:
আপনি কি জানেন শালগমের শাক খাওয়া যায়? হ্যাঁ! এটিকে আপনি চাইলে পানি দিয়ে সিদ্ধ করেও খেতে পারেন! আবার চাইলে রসুন এবং পেঁয়াজ দিয়ে তেলে ভেজেও খেতে পারেন। সবচেয়ে বেশি ভালো হয় এই শাক সিদ্ধ করে সালাদের সাথে খেতে পারলে।
ক্যালসিয়াম আছে এমন শাক সবজির তালিকায় শালগমের শাককে রাখার মূল কারণ হলো প্রতি ১০০ গ্রাম শালগমের শাকে আছে ১৩৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। যা প্রতিবেলার জন্যে যথেষ্ট। যাইহোক! চেষ্টা করবেন প্রতি সপ্তাহের অন্তত ৩ + ৩ মোট ৬ বেলা করে এই শাক খাবারের তালিকায় রাখতে।
মিষ্টি আলু:
বাংলাদেশে এই সময়টাতে প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি আলু পাওয়া যায়। যদিও এটি একটি বারোমাসি সবজি! মিষ্টি আলু কিন্তু স্বাদের দিক দিয়ে সেরাদের কাতারের একটি সবজি হিসাবে পরিচিত।
তাছাড়া একইসাথে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান গ্রহণের অন্যতম কার্যকর উপায় হতে পারে এই মিষ্টি আলু গ্রহণের বিষয়টি। আপনি চাইলে মিষ্টি আলুকে সিদ্ধ করে খেতে পারেন। অথবা চাইলে ভেঁজে কিংবা পিঠা বানিয়ে খেতে পারেন। পাশাপাশি মিষ্টি আলু কিন্তু সবজি হিসেবেও খাওয়া যায়।
চাইলে আলুর তরকারিতে কয়েকটি মিষ্টি আলু কিউব করে দিতে পারেন। দেখবেন তরকারির স্বাদ অনেকগুণ বেড়ে গেছে। এই মিষ্টির আলুর প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণে রয়েছে প্রায় ৩০ মিলিগ্রামের মতো ক্যালসিয়াম।
পালং শাক:
আপনি কি জানেন, পালং শাক সবচেয়ে পুষ্টিকর শাক-সবজির মধ্যে একটি? তাছাড়া বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে পালং শাক কিনতে পাওয়া যায়।
এমনকি অনেকেই বাড়ির উঠোনে কিংবা ছাদ বাগানেও এই পালং শাকের চাষ করে থাকে। আপনি কিন্তু চাইলে এই পালং শাককে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন। বাংলাদেশে পালং শাক বিভিন্ন নিয়মে রান্না করা হয়।
যেমন ধরুন পেঁয়াজ রসুন দ্বারা ভেজে কিংবা পানি, লবণ, হলুদ, রসুন দিয়ে সিদ্ধ করে। মনে রাখবেন এভাবে সিদ্ধ করে রান্না করা পালং শাকের স্যুপ কিন্তু খেতে অনেক মজা এবং বেশ পুষ্টিকর। বলে রাখা ভালো প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে থাকে প্রায় ১৩৬ মিলিগ্রামের মতো ক্যালসিয়াম।
বাঁধাকপি:
বাঙালি নিয়মে বাঁধাকপি ভাজি যদি ভাতের আয়োজনে থাকে তাহলে যেনো আরকিছুই লাগে। আপনি কি জানেন এই বাঁধাকপি সবজিতেও থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামের নিশ্চয়তা?
গবেষণা বলছে প্রতি ১০০ গ্রাম বা ১ কাপ বাঁধাকপি সবজিতে থাকছে ১০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। শুধু ক্যালসিয়ামই নয়, এর পাশাপাশি এই সবজি রান্না করলে মিলছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালোরিসহ অন্যান্য বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান।
ব্রকলি:
বাংলাদেশে হয়তো পূর্বের বছরগুলিতে এই সবজি খুব একটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। তবে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ব্রকলি চাষ করার ফলে এটি বেশ জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য হয়ে উঠেছে।
আপনি যদপ ব্রকলিকে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখতে পারেন সেক্ষেত্রে প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রকলি রান্না করা সবজির জন্যে পাবেন সর্বমোট ১০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। মূলত ব্রকলিতে থাকা ক্যালসিয়ামের পরিমাণ এবং বাঁধাকপিতে থাকা ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সম্পূর্ণরূপেই একই।
সবুজ রঙের মটরশুঁটি:
যারা ডায়েট ফলো করেন এবং একইসাথে ক্যালসিয়ামের অভাবও দূর করতে চান তারা চাইলে সকালের নাস্তা হিসাবে সবুজ মটরশুঁটি সিদ্ধ করে বা পেঁয়াজ এবং হালকা মসলার সাহায্যে রান্না করে খেতে পারেন। বলে রাখা ভালো প্রতি ১ কাপ রান্না করা সবুজ মটরশুঁটিতে আপনি ১০০ মিলিগ্রামের মতো ক্যালসিয়াম পাবেন।
এটি এতোটাই রিচ ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার যে প্রতি গ্রাম মটরশুঁটির জন্যে রয়েছে ১ মিলিগ্রাম করে ক্যালসিয়াম উপাদান। যা হয়তো অন্য কোনো ফুডে খুঁজে পাবেন না। পেলেও হয়তো ডায়েট কিংবা অন্যান্য প্বার্শপ্রতিক্রিয়ার জন্যে ব্যাট-বলে মিলবে না।
রঙিন গাজর:
আপনি যদি নিজের খাবারের জন্যে শতভাগ বিশমুক্ত গাজর কালেক্ট করতে পারেন তাহলে এই সবজি থেকেও আপনি ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতে পারেন। ১ কাপ প্রতি ১০০ গ্রাম গাজর আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারলে আপনি পেয়ে যাচ্ছেন ৪৭ গ্রামের মতো পিওর ক্যালসিয়াম।
যা আপনার ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করার পাশাপাশি এর অভাবে দেখা দেওয়া রোগ থেকেও মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। আর হ্যাঁ! আপনি চাইলে রান্না করা ছাড়াই সালাদ হিসাবে গাজর খেতে পারেন।
আর তা যদি ভালো না লাগে সেক্ষেত্রে এর পরিবর্তে তা সিদ্ধ করে বা সবজি হিসাবে রান্না করেও খেতে পারেন।
রিলেটেডঃ চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, পুষ্টিগুণ
ক্যালসিয়াম জাতীয় ফলের তালিকা
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা এমনকিছু সুস্বাদু ফল নিয়ে আলোচনা করবো যা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এবং এতে রয়েছে অন্যান্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ভিটামিন।
এসব ভিটামিন কিন্তু প্রতিটি মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে আর দেরি করছি কেনো? চলুন দেখে নেওয়া যাক আজকের আর্টিকেলে ঠিক কোন কোন ফলগুলি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি!
কমলালেবু
বাংলাদেশের যেকোনো বাজারেই এখন কমলালেবু মোটামুটি দামে পাওয়া যায়। ফলস্বরূপ প্রতিটি ঘরেই এই ফলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আপনি চাইলে এই ফলটিকে কাজে লাগিয়েও নিজের দেহের ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতে পারেন।
আপনি যদি প্রতিদিন দুপুরে এবং রাতে ১০০ গ্রামের মতো কমলালেবু খেতে পারেন তবে আপনি এর বিপরীতে পাবেন ৪৫ থেকে ৫০ মিলিগ্রামের মতো ক্যালসিয়াম।
নাশপাতি:
বাংলাদেশের প্রচলিত ফল হিসাবে নাশপাতির জনপ্রিয়তা কিন্তু দেখার মতো। এই পুরোনো ফলটিও আপনার দেহে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করার সক্ষমতা রাখে।
গবেষণা বলছে এক একটি আস্ত নাশপাতিতে থাকে সর্বমোট ৫৮ মিলিগ্রামের মতো ক্যালসিয়াম। আর আপনি যদি এক কাপ কিউপ করে কাটা নাশপাতি খান সেক্ষে আপনি পাবেন প্রায় ৬০ গ্রামের মতো নাশপাতি।
এছাড়াও ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি নাশপাতিতে ফ্রিতে পেয়ে যাচ্ছেন ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন এবং অন্যান্য অনেক পুষ্টি উপাদান।
জাম্বুরা:
সুস্বাদু এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার হিসাবে জাম্বুরাকে খাবার লিষ্টে রাখতে পারেন। আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন এই জাম্বুরা মানবদেহের রক্তচাপ দূর করতে সাহায্য করে।
পাশাপাশি এটি ব্যাক্তির সুস্থ হার্ট বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্রতিটি জাম্বুরাতে আপনি পেয়ে যাবেন ৫০ মিলিগ্রামের মতো ক্যালসিয়াম।
যাদের জাম্বুরা খেতে ভালো লাগে না তারা চাইলে জাম্বুরার রস বের করে পান করতে পারেন। এতেও একই ভিটামিন বিদ্যমান থাকবে।
পেঁপে:
পাকা পেঁপে কার না ভালো লাগে। টুকটুকে লাল এই পাকা পেঁপে খেলেও আপনার দেহে ক্যালসিয়ামের অভাব কমে আসবে এবং হাঁড় ও দাঁতের ব্যাথা থেকে মিলবে চিরমুক্তি।
কারণ প্রতিটি পাকা পেঁপে থাকে প্রায় ২০ মিলিগ্রামের চাইতেও অনেক বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম। যাইহোক! মনে রাখবেন প্রতি ১০০ গ্রাম কিউপ করা পেঁপে আপনাকে দেবে ২০ মিলিগ্রামের কাছাকাছি ক্যালসিয়াম।
সুতরাং যাদের পেঁপে খাওয়াতে স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা নেই তারা চেষ্টা করবেন দৈনিক ১০০ গ্রামের বেশি পরিমাণ পেঁপে খেতে।
কলা:
হাতের কাছে সবসময় পাওয়া যায় এমন কোনো ফল যদি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস হয় সেক্ষেত্রে সেই ফলটিকে বন্ধু বানিয়ে নিন। কারণ স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে জীবনের কোনো সেক্টরই ভালোভাবে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ পায় না।
যাইহোক! আপনি যদি প্রতিদিন কেটে রাখা ১ কাপ কলা খেতে পারেন তবে তার বিপরীতে আপনি পেয়ে যাবেন সর্বমোট ৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। এছাড়াও এই কলা হজমশক্তি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করার ক্ষেত্রেই বেশ ভালোই কাজ করে থাকে।
স্ট্রবেরি:
লালচে-গোলাপী রঙের এই ফল বাংলাদেশে বেশ কয়েকবছর ধরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটিও কিন্তু ক্যালসিয়ামের বেশ ভালো উৎস হিসাবে কাজ করে।
গবেষণা বলছে প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণের স্ট্রবেরিতে থাকে প্রায় ১৬ মিলিগ্রামের মতো ক্যালসিয়াম। এছাড়াও আরো প্রমাণিত হয়েছে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতেও সাহায্য করে এই স্ট্রবেরি ফল।
রিলেটেডঃ ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা, এবং খাওয়ার নিয়ম ২০২৩
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারের উপকারিতা
সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। ক্যালসিয়াম হলো একটি অপরিহার্য পুষ্টি যা দুগ্ধজাত খাবার, গাঢ় সবুজ শাকসবজি, লেবু এবং বি়ভিন্ন সুরক্ষিত খাবারে পাওয়া যায়।
সবচেয়ে বড় কথা হলো শরীরে যে পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহন করা হয় তার অধিকাংশই জমা হয় দাঁতে এবং শরীরের বিভিন্ন হাড়ে। সেই সাথে বয়স বেড়ে গেলে ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তো থাকছেই।
মূলত এই কারণে, অনেকেই অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করেন। চলুন তবে এবারে কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহনের উপকারিতা।
গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার
গর্ভকালীন সময়ে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারের ভুমিকা অপরসীম, ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার নবজাতকের দাঁত ও হাড়ের বৃদ্ধি ঘঠায়। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ৭০০ মিঃ গ্রঃ থেকে ১২০০ মিঃ গ্রাঃ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারগুলি হল
- দুধ
- দই
- বাঁধাকপি
- ওয়াটারক্রেস
- পনির
- শুকনো ফল
- সার্ডিন ফিশ
- তিল বীজ
- কাজুবাদাম
হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়া
ক্যালসিয়ামের অন্যতম কাজ হলো মানব শরীরে বিভিন্ন হাড় গঠনে প্রত্যক্ষভাবে কাজকরা। মূলত এই ক্যালসিয়াম হাড় তৈরি করতে এবং পরবর্তীতে এই হাড়ের ক্ষয়রোধ করতে কাজ করে থাকে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন যাদের শরীরে হাড় সম্পর্কিত যেসব রোগ দেখা দিয়েছে বা দিচ্ছে তাদের জন্য এই ক্যালসিয়াম কতটা উপকারী! এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো চিকিৎসা জগতে অস্টিওপরোসিস নামে একটি রোগ রয়েছে। যা সাধারণত ছিদ্রযুক্ত এবং ভঙ্গুর হাড়ে দেখা দেয়।
এক্ষেত্রে বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ক্যালসিয়াম গ্রহনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
রিক্যাপ বজায় রাখা
শুরুতেই বলে রাখি শারীরিক অবস্থা সঠিকভাবে বজায় রাখাকে রিক্যাপ বলা হয়ে থাকে। ক্যালসিয়াম শরীরে রিক্যাপ বজায় রাখতে সর্বোচ্চ সাহায্য করে থাকে।
আপনি যদি টানা এক বছর সঠিকভাবে ক্যালসিয়াম গ্রহনের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন ঠিক পরের বছর থেকেই হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে শুরু করবেন।
দাঁতের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে
আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন মানবদেহে কেবলমাত্র ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন ডি-এর অভাবের ফলে দাঁত দুর্বল ও কম ঘন হতে পারে। যার ফলে দাঁত নষ্টও হতে পারে।
এক্ষেত্রে সমাধান হিসাবে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি যারা ইতিমধ্যেই সুস্থ আছেন তবে চোয়ালের হাড়কে আরো স্বাস্থ্যকর করতে চান তারাও চাইলে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারে ফোকাস করতে পারেন।
কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম বজায় রাখে
শুরুতেই বলে রাখি কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম বলতে রক্তের সঠিক সঞ্চালনকে বোঝানো হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন ক্যালসিয়াম গ্রহণের অন্যতম প্রধান সুবিধা। যাইহোক! শরীরের প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে রক্তনালীগুলিকে শক্ত ও শিথিল করতে আজ থেকেই খাবার তালিকায় অন্তত ৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম যোগ করুন।
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারের অপকারিতা
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারের গুরুত্ব এবং খাবার তালিকা সম্পর্কে তো জানলেন! এবারে চলুন এরকিছু অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
মানবদেহের জন্যে অতিরিক্ত কোনোকিছুই কখনো ভালো কিছু বয়ে না। উল্টো বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি করে। এর হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে চলুন জেনে নেওয়া যাক ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারের অপকারিতা সম্পর্কিত বিস্তারিত গাইডলাইন।
- মনে রাখবেন অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে গিয়ে আপনি যদি বেশি পরিমাণে দুগ্ধজাত খাবার খান সেক্ষেত্রে মারাত্মক স্বাস্থ্যহানী ঘটতে পারে
- যারা অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করছেন তাদের কিন্তু প্যারাথাইরয়েড সমস্যা এবং ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়
- মহিলাদের জন্যে ৫০ বছর পর্যন্ত এবং পুরুষদের জন্যে ৭০ বছর পর্যন্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণের ক্ষেত্রে ১০০০ মিলিগ্রাম সমপরিমাণ ক্যালসিয়ামকে ধরা হয়ে থাকে। সুতরাং কোনো কারণে এই পরিমাণ ছাড়িয়ে গেলে স্বাস্থহানী ঘটতে পারে।
- অনলাইনে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টে মুগ্ধ হয়ে তা কেনা থেকে বিরত থাকুন
- মনে রাখবেন অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে আরকিছু হোক বা না হোক কিডনিতে পাথর হবেই
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়ার নিয়ম
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়ার নিয়ম বলতে কোন বয়সে কতটুকু ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে তা বোঝানো হয়ে থাকে। চলুন দেখা যাক ক্যালসিয়াম গ্রহণের আলাদা নিয়মটি ঠিক কেমন:
- ০ থেকে ৬ মাস বয়সী বাচ্চারা গ্রহণ করবে ২০০ মিলিগ্রাম
- ৬ থেকে ১২ মাস বয়সী বাচ্চা গ্রহণ করবে ২৬০ মিলিগ্রাম
- ১ থেকে ৩ বছরের বাচ্চারা গ্রহণ করবে ৭০০ মিলিগ্রাম
- ৪ থেকে ৮ বছরের বাচ্চারা গ্রহণ করবে ১০০০ মিলিগ্রাম
- ৯ থেকে ১৮ বছরের বাচ্চারা গ্রহণ করবে ১৩০০ মিলিগ্রাম
- ১৯ থেকে ৭০ বছরের ব্যাক্তিরা গ্রহণ করবে ১০০০ মিলিগ্রাম
- যারা ইতিমধ্যেই ৭০+ বছরে পদার্পন করেছেন তারা ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করবেন
শেষ কথা
আশা করি ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার ঠিক কোনগুলি এবং কিভাবে খাবেন পাশাপাশি এ-সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন।
যেহেতু মানবশরীর শরীর ক্যালসিয়াম তৈরি করতে পারে না সেহেতু প্রতিটি সুস্থ ব্যাক্তিরই প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ করা।
আশা করি যারা ভবিষ্যতে নিজেদের সুস্থ দেখতে চান তারা আজ থেকেই ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠবেন। এমনটা আশা করি আজকের মতো আর্টিকেলের ইতি টানছি। ধন্যবাদ সবাইকে।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে ভালো হবে নাকি ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে ভালো হবে?
অবশ্যই খাবারে থাকা ক্যালসিয়াম সাধারণভাবেই গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া সরাসরি অনলাইন থেকে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট যাচাই-বাছাই ছাড়া কেনা উচিত নয়।
দিনের কোন সময় ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে ভালো হয়?
রাতের বেলা ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। কারণ এই সময়ে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে পারলে হাঁড়ের সমস্যা দ্রুত কমে আসে এবং হাঁড় বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে।
ক্যালসিয়াম দিনে কয়বার গ্রহণ করা উচিত?
মনে রাখবেন ক্যালসিয়াম কখনোই দিনে একবার গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ মানবদেহ দিনে গ্রহণ করা ১ বারের ক্যালসিয়ামে পুষ্টিমান বজায় রাখতে পারে না। সুতরাং দিনে ২ বার বা তার বেশি সময়ে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করুন।
ক্যালসিয়ামকে কি মেডিসিন হিসাবে গ্রহণ করা হয়?
হ্যাঁ যায়! ক্যালসিয়াম কার্বনেট অম্বল, অ্যাসিড বদহজম এবং পেট খারাপের মতো রোগের উপশম ঘটায়। যার কারণে এসব রোগ দেখা দিলে এক একটি ক্যালসিয়াম অ্যান্টাসিড হিসাবে ক্যালসিয়াম ভিটামিন ব্যবহৃত হয়।
তথ্যসুত্রঃ
২। https://www.hsph.harvard.edu/nutritionsource/calcium/
৩। https://www.myfooddata.com/articles/high-calcium-vegetables.php
৪। https://www.medicinenet.com/which_fruits_are_high_in_calcium/article.htm
৫। https://ods.od.nih.gov/factsheets/Calcium-Consumer/
৬। https://www.bupa.co.uk/dental/dental-care/services/parents-and-children/blog/nine-essential-calcium-rich-pregnancy-foods