আসসালামুয়ালাইকুম সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ। আশা করি সবাই ভাল আছেন। বর্তমানে আমরা সবাই স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক সচেতন।আর সুস্থ থাকতে হলে স্বাস্থ্যকর খাবারের কোনো বিকল্প নেই। তাই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের খাদ্য তালিকায় থাকে স্বাস্থ্যকর খাবার।
পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে বর্তমানে একটি বেশ জনপ্রিয় খাবার হলো চিয়া সিড। এর গুনাগুণ এর কারণে এটিকে সুপার ফুডও বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ যা আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারী।
সুস্থ থাকতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম এবং এর পুষ্টিগুণ, ও চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আজকের আর্টিকেলে জানতে পারবেন।
চিয়া সিড কি?
চিয়া সিড হলো একধরনের উদ্ভিদের বীজ, এজন্য বাংলায় একে চিয়া বীজও বলা হয়ে থাকে। এটি মূলত একটি শস্যজাতীয় খাবার। এই বীজ “সালভিয়া হিসপানিকা” নামক মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদের বীজ। মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকার মরুভূমি অঞ্চলে এর উৎপত্তি। চিয়া সিড মেক্সিকো, গুয়াতেমালার স্থানীয় ও মায়ানদের প্রাধান খাদ্যের মধ্যে অন্যতম ছিলো।
বর্তমানে বাংলাদেশেও এই বীজের চাষ হচ্ছে। এটি যেকোনো আবহাওয়ায় চাষ করা যায়। এবং এতে কোনোরূপ কীটনাশক দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
সাদা, কালো ও বাদামি রঙের চিয়া সিড আকারে খুবই ছোট হয় এবং অনেকটা তিলের মতো দেখায়। পানিতে ভেজালে এটি ফুলে ১২ গুণ পর্যন্ত বড় হতে পারে।
দেখতে একই রকম হওয়ায় চিয়া সিডকে অনেকে তোকমা মনে করে। কিন্তু এটি আসলে তোকমা নয়।এটি তোকমার চেয়ে আকারে অনেক ছোট হয়। চিয়া সিড পানিতে ভেজালে অনেক ফুলে ওঠে।
চিয়া সিড পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এবং অনেক লোক এটিকে “সুপারফুড” হিসাবে বিবেচনা করে। এগুলি ফাইবার, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং বিভিন্ন মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যেমন ক্যালসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজের একটি ভাল উৎস। চিয়া বীজ মসৃণ, ওটমিল, দই এবং সালাদ সহ বিভিন্ন খাবারে যোগ করা যেতে পারে এবং বেকিং রেসিপিগুলিতে ডিমের বিকল্প হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ:
যেহেতু এটিকে সুপার ফুড বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে তাহলে বোঝাই যাচ্ছে এর পুষ্টিগুণ কতো বেশি। চিয়া সিডে রয়েছে দুধের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি ক্যালসিয়াম। এছাড়াও আছে পালং শাকের চেয়ে তিনগুণ বেশি আয়রন এবং কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম।
এতে আরো রয়েছে ভিটামিন সি ,কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড,পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, প্রোটিন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রাচীনকাল থেকে চিয়া সিড মানুষের রসনা তৃপ্ত করে আসছে।প্রাচীন মায়া এবং অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড অন্তর্ভুক্ত ছিলো বলে জানা যায়।তারা একে সোনার থেকেও মূল্যবাণ মনে করতো। তারা বিশ্বাস করতো যে এটা তাদের শক্তি ও সাহস জোগাবে।
চলুন দেখে নেই প্রতি আউন্স (১ আউন্স = ২৮ গ্রাম) চিয়া সিডে কতটুকু পুষ্টিগুণ রয়েছে।
ক্যালোরি – Calories: 138
Total Fat: 8.7 grams
- Saturated Fat: 0.9 grams
- Polyunsaturated Fat: 6.7 grams
Monounsaturated Fat: 0.6 grams
Cholesterol: 0 milligrams
Sodium: 5 milligrams
Potassium: 115 milligrams
- Total Carbohydrates: 12.3 grams
- Dietary Fiber: 10.6 grams
Sugars: 0.3 grams
- Protein: 4.7 grams
Vitamins:
- Vitamin A: 0 international units
- Vitamin C: 0 milligrams
- Vitamin D: 0 international units
- Vitamin E: 0.1 milligrams
- Vitamin K: 3.3 micrograms
- Thiamin (Vitamin B1): 0.2 milligrams
- Riboflavin (Vitamin B2): 0.1 milligrams
- Niacin (Vitamin B3): 0.6 milligrams
- Vitamin B6: 0.1 milligrams
- Folate (Vitamin B9): 6 micrograms
Minerals:
- Calcium: 177 milligrams
- Iron: 1.6 milligrams
- Magnesium: 95 milligrams
- Phosphorus: 177 milligrams
- Potassium: 115 milligrams
- Zinc: 1.0 milligrams
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা
আগেই বলা হয়েছে চিয়া সিড শরীরের জন্যে খুব উপকারী প্রাকৃতিক ওষুধ, সঠিক নিয়মে এটি ব্যবহার করলে নানান সমস্যার ঘরোয়া সমাধান পাওয়াটা খুব সহজ, চলুন জেনে নেই চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা ও চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিডের উপকারিতা:
পুষ্টিকর এই চিয়া সিড আমাদের দেহের জন্য এতো বেশি উপকারী যা বলে শেষ করা যাবে না।
এর মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ দেহে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই এতো উপকার করে থাকে।তো চলুন জেনে নেয়া যাক এর উপকারিতা সম্পর্কে –
- প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
- চিয়া সিড হজমশক্তি বৃদ্ধি করার মাধ্যমে এসিডিটি দূর করে।
- এটি আমাদের শরীর থেকে টক্সিক বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং রক্তকে বিশুদ্ধ করে।
- এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি হাড়ের ক্ষয় রোধ ও হাড়ের সুস্থতায় বেশ ভালো কাজ করে।
- চিয়া সিড কোলন (মলাশয়) পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে কোলন ক্যান্সার রোধ করে।
- এটি রক্তের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে ফলে ডায়াবেটিকস এর ঝুঁকি কমে।
- এতে থাকা পুষ্টিগুণ দেহে কোনো রোগ সহজে বাসা বাঁধতে দেয় না।
- এতে থাকা ফাইবার বা আঁশ জাতীয় পদার্থ ওজন কমাতে সাহায্য করে।তাই যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি সবচেয়ে ভালো হবে।
- চিয়া সিড ভিজানো পানি খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং বার বার খাওয়ার প্রবণতাও কমে।
- চিয়া সিডের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
- চিয়া সিডের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ দাঁতের পাশাপাশি অস্থি শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
- এটি দেহের কোষ ও ত্বক হতে বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।
- চিয়া সিড পেট পরিষ্কার রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকায় এটি মাছ মাংসের পরিপূরক খাদ্য হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।আর যাদের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি রয়েছে তারা এটি সেবন করে প্রোটিনের অভাব দূর করতে পারেন।
- চিয়া সিড উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে হার্ট এর সুস্থতায় দারুন কাজ করে। এতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড হৃদপিন্ড ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- চিয়া সিড ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস। তাই যারা দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেতে পারে না তারা চিয়া সিড খেয়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
- চিয়া সিড শরীরের যেকোনো ধরনের ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে।
- এটি চুল, নখ ও ত্বককে সুন্দর করতে সাহায্য করে।
- স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য দরকার প্রয়োজনীয় প্রোটিন আর চিয়া সিড হলো প্রোটিনের একটি বিশাল উৎস। এতে বিদ্যমান ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড চুল পরা রোধে সহায়তা করে।
- চিয়া সিডে কমলার চেয়েও বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি খেলে দেহের ভিটামিন সি এর অভাব জনিত সমস্যা দূর হবে।
- যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য একটি বেশ ভালো ওষুধ হবে চিয়া সিড। এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের বেশি ঘুম আসতে সহায়তা করে।
- চিয়া সিড আয়রনের একটি ভালো উৎস হওয়ায় এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে একটি আদর্শ খাবার চিয়া সিড।
- চিয়া সিড অনিদ্রা ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- এতে এতো পুষ্টিগুণ থাকায় এটিকে সুষম খাদ্যের বিপরীত বলেও আখ্যায়িত করা যায়।
- এটি গৃহপালিত পশু পাখির খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এটি তাদের জন্যও অনেক উপকারী।
তাই আপনি নির্দ্বিধায় আপনার খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড রাখতে পারেন।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
চিয়া সিড যেমন অনেক উপকারী পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার,তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাব বা অপকারিতাও রয়েছে।কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে চিয়া সিড গ্রহন করার ফলে এটি আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে।
তাই সঠিকভাবে চিয়া সিড গ্রহন করার জন্য এর উপকারিতার পাশাপাশি আমাদেরকে এর অপকারিতা সম্পর্কেও জানতে হবে।
নিচে চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:-
- চিয়া সিড যেহেতু ওজন কমাতে সাহায্য করে তাই বেশি পরিমাণে চিয়া সিড গ্রহনে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে ওজন কমিয়ে দিতে পারে।এতে শরীরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
- চিয়া সিড খেলে অনেকের অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।তাই যাদের আগে থেকে অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের চিয়া সিড খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে অথবা চিয়া সিড খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
- এতে প্রচুর ফাইবার থাকার কারণে এটি পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সীমিত পরিমাণে চিয়া সিড গ্রহন করা উচিত।
- প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে চিয়া সিড গ্রহন করলে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
- এতে অতিরিক্ত প্রোটিন থাকার কারণে এটি ওজন বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- চিয়া সিড প্রোটেস্ট ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- প্রচুর পরিমাণে চিয়া সিড খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা, পেট ফাঁপা, গ্যাস এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
- চিয়া সিডে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে তাই তা কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
তাই যাদের কিডনির সমস্যা তাদের চিয়া সিড না খাওয়াই ভালো।
- চিয়া সিডের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রক্ত পাতলা করে দেয় যা রক্তপাতের আশঙ্কা বাড়ায়।
- চিয়া সিড বেশি খেলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই চিয়া সিড খাওয়ার সাথে অবশ্যই পরিমাণ মতো পানি পান করতে হবে।
- চিয়া সিড রক্ত পাতলাকারী এবং উচ্চ রক্তচাপের ওষুধসহ কিছু ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং তাদের কার্যকারিতা কমিয়ে ফেলতে পারে।তাই যারা এসব ঔষধ সেবন করে তাদের চিয়া সিড খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
এ থেকে বোঝা যায়, চিয়া সিড অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহন করা যাবে না। আর যাদের এটি খেলে সমস্যা দেখা দেয়, তাদের চিয়া সিড খাওয়া বন্ধ করে দেয়াই ভালো হবে।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে সহজেই খাওয়া যায়।কারণ এতে স্বাদ ও গন্ধ কিছুই নেই। এটি রান্না করে খাওয়ারও প্রয়োজন হয় না। অনেক ভাবে অনেক খাবারের সাথেই চিয়া সিড খাওয়া যায়।
✓ সালাদ ও ফলমূলের সাথে চিয়া সিড গ্রহন করা যায়। এক্ষেত্রে খাবারের ওপর সামান্য কিছু চিয়া সিড ছিটিয়ে দিয়ে দিতে হবে। রান্না করা খাবারের মধ্যেও চিয়া সিড ছিটিয়ে খেয়ে নেয়া যায়।
✓ চিয়া সিড স্মুথি বানিয়ে অনেকেই খেয়ে থাকে। চিয়া সিডের সাথে শশা, টকদই মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিয়ে খুব ভালো স্মুথি বানিয়ে নেয়া যায়। আবার বাদাম, কলা ও খেজুরের সাথেও চিয়া সিডের স্মুথি বানিয়ে খেয়ে নেয়া যায়।
✓ যেকোনো ফলের জুসের সাথে চিয়া সিড মিক্স করে খাওয়া যায়। নারকেল পানি অথবা অন্য কোনো ফলের জুসের সঙ্গে চিয়া সিড মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া লেবুর শরবতের সাথেও চিয়া সিড খাওয়া যায়।
✓ যেকোনো ধরনের স্যুপের সাথেও চিয়া সিড খাওয়া যায়।
✓ বাসায় তৈরি কেক, বিস্কুট,পরোটা,পুডিং,সিরিয়াল এসবের সাথেও চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়া যায়।
✓ ওটমিলের সাথেও চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়া যায়।
✓ সবচেয়ে সহজে খেতে চাইলে এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ চিয়া সিড আধাঘণ্টা বা একঘন্টা ভিজিয়ে রেখে সেটি সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করলে শরীরের অনেক উপকার হয়।
বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
বাচ্চাদেরকেও উপরোক্ত নিয়মে পানি বা কোনো খাবারের সাথে মিশিয়ে চিয়া সিড খাওয়ানো যেতে পারে।চিয়া সিড বাচ্চাদের মেধা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে বাচ্চাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টিগুণ উপস্থিত রয়েছে।
১ থেকে ১০ বছরের বাচ্চাদের প্রতিদিন ১/২ চা চামচ চিয়া সিড খাওয়ানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
চিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
এতো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবারটি সঠিক নিয়মে না খেলে হতে পারে নানাবিধ সমস্যা। তাই এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে তবেই খাওয়া উচিত।
কখনো শুকনো বা কাঁচা চিয়া সিড খাবেন না। এতে শরীরে অনেক ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত চিয়া সিড বা ফাইবার গ্রহন করলে পেটের ব্যথা, আলসার, ডায়রিয়া এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত চিয়া সিড গ্রহন করা থেকে বিরত থাকুন।
যাদের আলসারেটিভ কোলাইটিস বা ক্রোনের রোগ আছে তাদের ফাইবার সেবন সীমিত করতে হয়।
খাওয়ার আগে চিয়া সিড না ভিজিয়ে বা শুকনো খেলে এগুলো পেটের ভেতর প্রসারিত হয়ে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। চিয়া সিড ভেজানোর পর তা জেলের মতো রূপ নেয়,যা অন্ত্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম মেনে সেবন করলে সাধারণত কোন সমস্যা দেখা যায় না।তবে এটি খাওয়ার কারণে যদি পেটের সমস্যা বা অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয় তবে যত দ্রুত সম্ভব এটি খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
সবশেষে বলা যায়
বহু গুণাগুণ সমৃদ্ধ খাবার চিয়া সিড গ্রহন করতে হলে অবশ্যই এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা- অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তবেই এটি খাওয়া উচিত।
মনে রাখা জরুরী যে চিয়া বীজ সাধারণত বেশিরভাগ লোকের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়, তারপরো কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যেমন হজম সংক্রান্ত সমস্যা বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া।
সর্বোপরি, চিয়া সিড একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং বৈচিত্র্যময় খাদ্যের অংশ হিসাবে কিছু সুবিধা দিতে পারে, তবে আপনার খাদ্যে কোনও বড় পরিবর্তন করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
চিয়া সিড কোথায় পাওয়া যায়?
আমাদের দেশে চিয়া সিড তেমন একটা সহজলভ্য নয়। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বড় দোকান ও সুপারশপে চিয়া সিড পাওয়া যায়।
এর দাম প্রতি ১০০ গ্রাম ১০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন অনলাইন স্টোর থেকেও চিয়া সিড কিনে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই করে ভালো দেখে কেনার পরামর্শ রইল।
চিয়া সিড কখন খাবেন?
দিনের যেকোনো সময়েই চিয়া সিড খাওয়া যায়। তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চিয়া সিড গ্রহন করা যেতে পারে।
তবে এটি খাওয়ার আগে কমপক্ষে ২০-৩০ মিনিট এটি পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে যেন তা নরম হয়ে খাওয়ার উপযোগী হয়।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া কি নিরাপদ?
চিয়া সিড গর্ভাবস্থায় খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ,কারণ এটি প্রোটিনের একটি অন্যতম উৎস। আর গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রোটিনের চাহিদা থাকে।
তাই সীমিত পরিমাণে চিয়া সিড গর্ভবতী মায়েরাও গ্রহন করতে পারবেন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
চিয়া সিড আর তোকমা কি একি জিনিস, নাকি আলাদা?
চিয়া সিড ও তোকমা দেখতে একই হলে জিনিস দুইটা ভিন্ন ও তাদের পুষ্টিগুণ ও অনেক আলাদা। যেমন তোকমা খেতে হলে আপনাকে সেটি ভিজিয়ে রাখতে হয় এবং পরে সেটা সাধারণত খাওয়া হয়, অপরদিকে চিয়া সিড কাচা, না ভিজিয়ে, এর গুরা দই কিংবা সালাদের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।