আজ আমরা কথা বলবো বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এমনকিছু উপাদানে ভরপুর একটি মসলা নিয়ে।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যার ব্যবহার অনেক পুরোনো, যা প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দৈনিন্দন জীবনের নানান কাজে ব্যাবহার হয়ে আসছে, বলছিলাম দারুচিনির কথা।
চলুন তবে কথা না বাড়িয়ে দারুচিনির পরিচিতি এবং দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতাসহ অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।
দারুচিনি
দারুচিনি এক ধরণের মসলা। এই মসলা তৈরি করা হয় সরাসরি গাছের ছাল থেকে। আর এই গাছটিকেও আমরা দারুচিনি গাছ হিসাবেই চিনে থাকি। সারা পৃথিবীর মাঝে এটি ক্যারিবিয়ান, দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয়ে থাকে।
ধারণা করা হয় প্রাচীন মিশরে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকেই সাধারণ মানুষেরা দারুচিনির ব্যবহার জানতে শুরু করেছে। মধ্যযুগীয় সময়ে, ডাক্তাররা কাশি, বাতের ব্যাথা এবং গলা ব্যথার মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে শুরু করেছে এই দারুচিনিকে।
দারুচিনির জনপ্রিয়তার ব্যাপারে যদি বলে তবে বলবো দারুচিনি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে ব্ল্যাক পেপার্স বা কালো মরিচের পরে দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় মসলা হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মশলা হিসাবে, এই দারুচিনি গুঁড়া আকারে বা গোটা অর্থ্যাৎ ছালের টুকরো হিসাবে বাংলাদেশের যেকোনো মুদি দোকানে বা সুপার শপে কিনতে পাওয়া যায়।
দারুচিনি সাধারণত ২ ধরণের হয়ে থাকে। এর একটি হলো ক্যাসিয়া এবং অন্যাটি হলো সিলন। দু’টোই কিন্তু পুষ্টি উপাদান পুরোপুরি ভিন্ন। তবে উপকারিতার দিক দিয়ে এই ২ ধরণের দারুচিনি কিছুটা একই। যা নিয়ে আমরা ধীরে ধীরে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
দারুচিনির বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
দারুচিনি একটি মসলা জাতীয় খাবার যা বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এটি একটি গ্রীষ্মকালীন ফলন। বাকলের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Cinnamomum zeylanicum। যাইহোক চলুন দারুচিনি নিয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে আলোচনা করা যাক:
- বৈজ্ঞানিক নাম: Cinnamomum zeylanicum
- পূর্ব নাম: আমোমন
- অন্যান্য নাম: সত্যিকারের দারুচিনি, সিলন দারুচিনি
- বৃক্ষ পরিবার: Lauraceae
- প্রজাতি: Cinnamomum zeylanicum
- জনপ্রিয় চাষের স্থান: শ্রীলঙ্কা
- ব্যবহার: মসলা হিসাবে
দারুচিনির বাহ্যিক রূপ
সিনামোমাম গোত্রের অন্তর্গত এক প্রকারের গাছের ছাল হলো এই দারুচিনি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এটি দেখতে গাছের ছালের মতো। যা সরাসরি গাছ থেকে সংগ্রহ করে শুকিয়ে উৎপাদন করা হয়। গাছের ছাল থেকে সংগ্রহ করে এই দারুচিনিকে ছোট ছোট টুকরা করা হয়।
যদিও টুকরা করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো মাপঝোঁপের প্রয়োজন পড়ে না। এক্ষেত্রে কেজিতে বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি গুঁড়ো করেও এটি বিক্রি করা হয়।
দারুচিনি থাকা পুষ্টি উপাদান
আমাদের আজকের আর্টিকেলের গুরুত্বপূর্ণ অংশে আমরা আলোচনা করবো দারুচিনিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কিছু পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে। যা হয়তো নির্দিষ্ট পরিমাণে দারুচিনি খেতে এবং ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনাকে যথেষ্ট আগ্রহী করে তুলবে।
আমরা ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার ট্রাস্টেড সোর্সের উপর পুষ্টি উপাদানগুলিকে এক এক করে সাজিয়েছি। প্রতি ২ গ্রাম দারুচিনিতে আপনি পাবেন:
- ক্যালোরি: ৬.৪২ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ২.১ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ২৬.১ মিলিগ্রাম
- আয়রন: ০.২১ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম: ১.৫৬ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস: ১.৬৬ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম: ১১.২ মিলিগ্রাম
- এবং ভিটামিন এ: ০.৩৯ মাইক্রোগ্রাম
এছাড়াও দারুচিনিতে রয়েছে ভিটামিন বি এবং কে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলিন, বিটা-ক্যারোটিন, আলফা-ক্যারোটিন, বিটা-ক্রিপ্টোক্সানথিন, লাইকোপেন, লুটেইন এবং জেক্সানথিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু পুষ্টি উপাদান। যা প্রতিটি মানবদেহের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ!
দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা
বহু বছর পূর্বেই বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দারুচিনির কিছু সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতার প্রমাণ পেয়েছেন। এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে দারুচিনি খেলেও বেশকিছু অসুবিধা ভোগ করতে হয়।
চলুন তবে আর্টিকেলের এই অংশে বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসাবে দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক৷
দারুচিনির উপকারিতা
শুরুতেই চলুন দারুচিনির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। জেনে নেওয়া যাক ঠিক কোন কোন রোগ প্রতিরোধ ব্যবহার করা যাবে এই দারুচিনি!
এইচআইভি থেকে রক্ষা করে
আপনি কি জানেন, দারুচিনি খেলে এইচআইভি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়? ২০০০ সালে ভারতের একটি গবেষণা সংস্থা গবেষণা করে জানতে পেরেছে দারুচিনি এইচআইভি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে সক্ষম।
এই গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে সিনামোমাম ক্যাসিয়া বা দারুচিনির ছাল এবং কার্ডিওস্পারাম হেলিকাকাবাম বা দারুচিনির অঙ্কুর ও ফল মানবদেহে সরাসরি এইচআইভি প্রতিরোধে কাজ করে থাকে।
এছাড়াও ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে রীতিমতো ঔষধের মতো কাজ করে এই দারুচিনি। বিশেষ করে দারুচিনির সাহায্যে তৈরি করা একটি বিশেষ তেলের কথা একেবারে না বললেই নয়!
দারুচিনি এবং দারুচিনির তেল রক্তপ্রবাহকে সচল রাখে বলেই দেহে ভাইরাসজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। গবেষণা বলছে সাধারণত এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যের কারণেই এমনটা হয়ে থাকে।
রিলেটেডঃ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার, উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত সারাতে সাহায্য করে
যারা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত সারাতে পারছেন না এবং কিছুতেই কিছু হচ্ছে না তারা দারুচিনির উপকারিতাকে ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণ দারুচিনিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ থাকে।
যার ফলে এটি দ্রুত যেকোনো ক্ষত সারাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। যেখানে আপনার চোট লেগেছে এবং যেখানে এখনো ক্ষত সারেনি সেখানে দ্রুত দারুচিনি বসিয়ে ব্যান্ডেজ করে নিন। আশা করি কাজ হয়ে যাবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে
মনে রাখবেন কোনো রোগ নিরাময় না করে শুরুতে প্রতিরোধ করে ফেলাই উত্তম। ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের খপ্পরে পড়তে না চাইলে আজ থেকেই স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠুন। এক্ষেত্রে এই সচেতনতার অংশ হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন দারুচিনিকে।
বিজ্ঞানীরা বলছে দারুচিনিতে সিনামালডিহাইডের অ্যান্টিটিউমার এবং অ্যান্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্য থাকায় তা দ্রুত ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা শুরুতে চালানো হয়েছিলো ক্যান্সারে আক্রান্ত একটি ইঁদুরের উপর। যা শতভাগ সফল হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে দারুচিনি খেতে পারলে ক্যান্সারের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কোনো ভয় থাকবে না।
কোলেস্টেরল এবং ব্রণ নিয়ন্ত্রণে রাখে
আপনি জেনে খুশি হবেন যে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এই দারুচিনি। বিশেষ করে দারুচিনিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ যৌগগুলি এনজাইমের কার্যকলাপ সঠিকভাবে বজায় রাখে। যা পরবর্তীতে মানবদেহে যা কোলেস্টেরল ঠিক রাখে এবং এইভাবেই রক্তে ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ হ্রাস হতে থাকে।
এছাড়াও যাদের ত্বক ব্রণ-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত তারাও দারুচিনিকে কাজে লাগিয়ে দারুণ উপকৃত হতে পারে। যারা ব্রণ দূর করতে দারুচিনি ব্যবহার করতে চান তারা একটি বিশেষ ধরণের মাস্ক তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করুন:
১. ১ টেবিল পরিমাণ দারুচিনি গুঁড়ো করে নিন
২. এবারে ৩ টেবিল চামচ মধু নিন
৩. দারুচিনি গুঁড়ো এবং মধু মিশিয়ে ১০ মিনিটের মতো রেস্টে দিন
৪. এবার পেস্টটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন
৫. সবশেষে স্বাভাবিক পানির সাহায্যে মুখ ধুয়ে নিন
আশা করি এভাবে এই পেস্টটি মুখে সপ্তাহে ২/৩ বার লাগালে ব্রণের সমস্যা একেবারে ভ্যানিশ হয়ে যাবে। তবে সপ্তাহে ২/৩ বারের বেশি এই পেস্ট ব্যবহার করা যাবে না। যেহেতু এটি একটি মসলা সেহেতু এটি ত্বকে বারবার লাগালে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং স্যানিটাইজার হিসাবে কাজ করুন
আপনার শরীরে যদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে আপনার প্রতিটি কোষই ক্ষতির মুখে পড়বে। যা আপনাকে মৃত্যুর দিকে টেনে নিবে। এছাড়াও ডায়াবেটিসসহ প্রায় প্রতিটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের।
এদিকে আশ্চর্যজনকভাবে, দারুচিনির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা অনেক সুপরিচিত পুষ্টিমান সম্পন্ন খাবারের চাইতেও বেশি। সুতরাং পর্যাপ্ত পরিমাণে দেহের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চাহিদা মেটাতে নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে দারুচিনি গ্রহণ করুন।
আপনি কি জানেন দারুচিনিতে বা দারুচিনির তেলে রয়েছে স্ট্রেপ্টোকক্কাস, এমআরএসএ, স্ট্যাফিলোকক্কাস এবং ই. কোলির মতো সাধারণ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলার ক্ষমতা?
হ্যাঁ! এতে সাধারণ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলার ক্ষমতার পাশাপাশি এর রয়েছে হাতকে ঝকঝকে করে তোলার গুণ। যদিও এক্ষেত্রে দারুচিনির তেলের সাথে আপনাকে মিশিয়ে নিতে হবে থিভস অয়েল নামক একটি সুগন্ধযুক্ত মিশ্রণ। যা আপনি যেকোনি ফার্মেসীতেই খুঁজে পাবেন।
রিলেটেডঃ ঠোঁট গোলাপি করার উপায়: ঠোঁট গোলাপি করার প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় ২০২৩
চুলে যত্নে কাজ করে
দারুচিনি নিয়ে প্রতিটি গবেষণাতেই প্রমাণিত হয়েছে যে দারুচিনি চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। এটি চুলের ফলিকলগুলিতে রক্ত প্রবাহকে পূর্বের তুলনায় আরো সহজ করে তোলে। পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানও সরবরাহ করে থাকে এই দারুচিনি। চলুন জেনে নেওয়া যাক চুলের বাড়তি যত্নে কিভাবে ব্যবহার করবেন এই দারুচিনিকে:
- ১ টেবিল চামচ দারুচিনি নিন
- ১ টেবিল চামচ মধু নিন
- প্রায় ১ কাপ পরিমাণ নারিকেল তেল নিন
- এবারে সমস্ত উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন
- চুলে এই পেস্টটি ব্যবহার করার পর অন্তত ১০ মিনিট সময় ধরে অপেক্ষা করুন
- এবারে চুল ধুয়ে চুলে শ্যাম্পু করে নিন
- এবং সবশেষে চুলের আগায় নিয়ম মেনে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন
মুখের যত্নে কাজ করে
আপনি হয়তো জেনে খুশি হবেন যে বিজ্ঞানীদের মতে দারুচিনি হতে পারে মুখের যত্ন নেওয়ার সেরা উপাদান। কেনো বলছি? কারণ জানতে আমাদের পুরো আর্টিকেলের সাথেই থাকুন।
যাদের মুখ থেকে সবসময়ই বাজে গন্ধ বের হয় এবং এর কারণে সবসময় যারা অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়েন, তারা দারুচিনিকে কাজে লাগাতে পারেন। দারুচিনি মুখে থাকা সমস্ত ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে শ্বাস-প্রশ্বাসকে তাজা করে তোলে। এর ফলে মুখে থাকা বাজে গন্ধও পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যায়।
মুখের যত্নে দারুচিনিকে কাজে লাগাতে হলে খুব একটা কষ্টও করবার প্রয়োজন পড়বে না। সাধারণভাবে একটি দারুচিনি ধুঁয়ে মুখে রেখে দিন। এভাবে ৫/৬ মিনিট রাখতে পারলে মুখের ভেতরটা বেশ পরিষ্কার এবং ফ্রেশ হয়ে যাবে।
এছাড়াও দারুচিনি মুখে দিয়ে রাখতে না চাইলে বা খারাপ লাগলে দারুচিনি সিদ্ধ করা পানি ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে কুলি করতে পারেন। তবে গিলে ফেললেও কোনো সমস্যা নেই।
এভাবেই চাইলে দারুচিনির সাহায্যে আপনি আপনার নিজের মাউথওয়াশ তৈরি করুন। তারপর এটিকে আপনি নিয়মিত মাউথওয়াশের মতো ব্যবহার করুন! আশা করি মুখের বাজে গন্ধ চলে যাবে।
রিলেটেডঃ লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম এবং লবঙ্গের ব্যবহার
দারুচিনির অপকারিতা
দারুচিনির উপকারিতা সম্পর্কে তো জানা গেলো। এবার চলুন দারুচিনির অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত জানা যাক। অতিরিক্ত পরিমাণে বা নিয়ম না মেনে দারুচিনি খেলে যা হয়:
বিষাক্ততা তৈরি হয়
আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে দারুচিনি খান তাহলে কিন্তু তা শরীরে বিষাক্ত উপাদান হিসাবে জমা হতে শুরু করবে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ অনুযায়ী দারুচিনির প্রস্তাবিত ডোজ হলো সপ্তাহে মাত্র ৬ দিন। এখন যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে সপ্তাহে ৭ দিনই দারুচিনি খেতে থাকেন তবে তা শরীরের জন্যে মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে।
সবচেয়ে বেশি ভালো হয় সপ্তাহে মাত্র ৫ দিন দারুচিনি খেয়ে বাকি ২ দিন এর বিষাক্ততা কাটানোর সুযোগ তৈরি করতে পারলে।
ব্লাড সুগার কমে যায়
যাদের ব্লাড সুগার কমে যাওয়ার সমস্যা আছে তারা অতিরিক্ত পরিমাণে দারুচিনি খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন। কারণ সিলন দারুচিনিতে থাকা বার্ক অয়েলের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নাটকীয়ভাবে কমে যেতে পারে। যা শরীরে মারাত্মক পরিস্থিতি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।
এক্ষেত্রে কখনোই একসাথে ২ গ্রাম দারুচিনি খাওয়া যাবে না। তবে চাইলে ব্যবহার করতে পারবেন।
রক্ত পাতলা করে তোলে
বিশেষ করে ক্যাসিয়া দারুচিনি স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে বেশি খেলে রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে। তবে বিজ্ঞানীদের মতে এখনো পর্যন্ত সিলন দারুচিনিতে কোনো রক্ত পাতলাকারী উপাদান পাওয়া যায়নি। এই রক্ত পাতলা হওয়ার বিষয়টি কিন্তু হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের দেহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এলার্জি বেড়ে যায়
এলার্জির রোগীদের কিন্তু ভিন্ন খাদ্য তালিকা অনুসরণ করতে হয়। যেকোনো খাবারে বাড়তি সচেতনতা অবলম্বন করতে হয়। এক্ষেত্রে দারুচিনির কথা একেবারে না বললেই নয়। সাধারণত প্রায় সকল এলার্জি রোগীদের ক্ষেত্রে এই দারুচিনি ঝামেলা করে না।
তবে যাদের মাঝে দারুচিনি খাওয়ার পরে নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া বা চোখের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয় তাদের দারুচিনি খাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি বাদ দেওয়া উচিত।
হার্ট রেট বাড়িয়ে দেয়
উচ্চ মাত্রার হৃদরোগীদের কাছে যেনো এই হার্ট রেট বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি একটি আতঙ্কের নাম। সুতরাং যাদের হৃদরোগের সমস্যা আছে তারা দারুচিনি খাওয়ার পরিমাণ আজ থেকেই কমিয়ে দিন।
এছাড়াও অপরিশোধিত এবং অনিরাপদ দারুচিনির তেল বাচ্চাদের হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি করে বসে। সুতরাং এদিকটাও সচেতনতার সাথে মেনে চলতে হবে।
দারুচিনির ব্যবহারগুলি কি কি?
- খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা যায়
- স্বাস্থ্যসম্মত রং চা বানাতে প্রয়োজন এই দারুচিনির
- মুখের বাজে গন্ধ দূর করতে মাউথওয়াশ হিসাবে ব্যবহার করা যায়
- কোলন ক্যান্সারের ঔষধ হিসাবে কাজ করে
- ক্ষতস্থানে নিরাময়যোগ্য ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়
শেষ কথা
সেই প্রাচীনকাল পুষ্টির শ্রেষ্ঠ ভান্ডার এবং খাবারে স্বাত তৈরিকারী মসলা হিসাবে কাজ করে আসছে এই দারুচিনি। যার গুরুত্ব হয়তো আমাদের আজকের এই “দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা” শীর্ষক আর্টিকেলটি পড়ে কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন।
আশা করি সতর্কতা এবং পুষ্টিজ্ঞানটুকু মাথায় রেখে এই দারুচিনির উপকারিতা লুফে নিবেন আপনিও। ভালো থাকুন এবং পুষ্টিমান বজায় রেখে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন।
FAQs
ডায়েট করাকালীন সময়ে কি দারুচিনি খাওয়া যাবে?
ডায়েট করাকালীন সময়ে দারুচিনি খাওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তারা অবশ্যই ডায়েট করার সময় দারুচিনি খাওয়াটা উচিত হবে কিনা তা জেনে নিবেন।
এছাড়াও যারা বিভিন্ন রোগের কারণে অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট বা অন্যান্য ঔষধ গ্রহণ করেন তারাও দারুচিনি খাওয়ার ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবেন। নতুবা বাড়তি রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
কোন দারুচিনি তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী?
দারুচিনি সাধারণত ২ ধরণের হয়ে থাকে। একটির উৎপাদন হয় সরাসরি চীন থেকে এবং অন্যটি উৎপাদিত হয় সরাসরি শ্রীলঙ্কা থেকে।
গবেষণা বলছে শ্রীলঙ্কান দারুচিনিই স্বাস্থ্যের জন্যে বেশ উপকারী এবং এটি আসল দারুচিনি। বাংলাদেশের যেকোনো মুদি দেকানে গিয়ে সিলন দারুচিনি বা সিননামোমাম ভেরাম দারুচিনির খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন। তবে মাথায় রাখবেন এই দারুচিনির দাম কিন্তু কিছুটা বেশি।
এক কথায় দারুচিনি দেহের কোন কোন জটিল অবস্থা থেকে মুক্তি দেয়?
যাদের হজম সংক্রান্ত সমস্যা, ডায়াবেটিস, ক্ষুধা হ্রাসের সমস্যা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে তারা দারুচিনি খেয়ে বেশ উপকৃত হতে পারেন। এক্ষেত্রে দারুচিনির গুড়া মেশানো কুসুম গরম পানি বা দারুচিনি দিয়ে সিদ্ধ করা কুসুম গরম পানি বেশ কাজে দেয়।
দারুচিনির সঠিক চাষ পদ্ধতিগুলি কি কি?
আপনি যদি দোকান থেকে দারুচিনি না কিনে সরাসরি দারুচিনি চাষ করতে চান সেক্ষেত্রে জমিতে ছোট ছোট তালা করতে পারেন।
সেই তালাতে বা তৈরি করা টবের মাটিতে পঁচা গোবর, পঁচা সবজি দিয়ে ২-৪ সপ্তাহ রেখে দিন। এবারে দারুচিনি গাছ লাগিয়ে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দিন। আশা করি ৩/৪ মাসেই ভালো ফলন পাবেন।