একজন উত্তম জীবন সঙ্গীনীর উপর জীবনের অনেক কিছু নির্ভর করে, তাই আল্লাহর দরবারে দ্বীনদার স্ত্রী পেতে সকাল সন্ধ্যা আল্লার যিকির ও দোয়া করতে হবে। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে অনেকবার বলেছেন দু হাত তুলে তার নিকট সাহায্য চাইতে।
এমনকি অসংখ্য হাদিস দ্বারা এটাও প্রমাণিত যে আল্লাহর কাছে সঠিক নিয়মে দোয়া চাইলে কাউকে খালি হাতে ফেরান না।
একজন আমলদার ও দ্বীনদার স্ত্রী দুনিয়াতে ও আখিরাতে এক অমূল্য সম্পদ, আর এই সম্পদ পেতে আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি নেককার স্ত্রী চাওয়াই উত্তম। এই লেখাতে থাকবে নেককার স্ত্রী পাওয়ার দোয়া, তার বাংলা অর্থ ও বিশেষ ঘটনা। তাহলে চলুন দেখে নেই নেককার স্ত্রী পাওয়ার দোয়াগুলি।
নেককার স্ত্রী পাওয়ার দোয়া
নিচে নেককার স্ত্রী ও উত্তম জীবনসঙ্গি পাওয়ার দোয়াগুলি হলোঃ
নেককার স্ত্রী পাওয়ার প্রথম দোয়া
আরবি উচ্চারণঃ রব্বি ইন্নী লিমা’ আন্যালতা ইলাইয়া মিন খায়রি ফক্বীর
বাংলা অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবে আমি তার কাঙাল, মুখাপেক্ষী।
প্ৰেক্ষাপট
হযরত মূসা (আ) বড় হয়েছিলেন ফেরাউনের ঘরে। ফেরাউন ছিল মিসরের সম্রাট। ক্ষমতার দম্ভে সে নিজেকে খোদা বলে দাবি করেছিল। ফেরাউন এবং তার রাজবংশ কিবতিরা মনে করত, মূসা (আ)-এর সম্প্রদায় বনি ইসরাঈল হল দাসজাতি।
তারা তাদের সাথে দাসসুলভ আচরণ করত। যেখানে সেখানে তাদেরকে হীন-তুচ্ছ অপদস্ত করত। শহরে ঘোরাঘুরির সময় মূসা একদিন দেখতে পান, বনি ইসরাঈল বংশীয় এক ব্যক্তির সাথে জনৈক কিবতি গায়ে পড়ে ঝগড়া করছে। তার সাথে উদ্ধত আচরণ করছে।
মূসা (আ) বনি ইসরাঈলীর সাহায্যে এগিয়ে গেলেন এবং রাগের বশে কিবতির গালে একটি চড় বসিয়ে দিলেন। অসাবধানতার কারণে সেই চড়ে কিবতি মারা গেল। মূসা (আ) অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাইলেন। আল্লাহ তাকে মাফ করে দিলেন।
সে কথা কুরআন মজীদে বর্ণিত। এই ঘটনায় সারা মিস তোলপাড় হয়ে গেল। প্রভুর বংশ কিবতিকে হত্যা করার স্পর্ধা কার হল। চারদিকে তল্লাশি চলতে লাগল। ঘটনার ক্লু খোঁজে পাচ্ছিল না কোথাও ৷
আরেক দিনের ঘটনা। বনি ইসরাঈলী সেই লোকটির সাথে আরেক কিবতির ঝগড়া লেগেছে রাস্তায়। মূসা এগিয়ে গেলেন। দেখলেন, বনি ইসরাঈলী লোকটিই আসলে ঝগড়াটে। বললেন, তুমি দেখছি বড় ঝগড়াটে লোক। বনি ইসরাঈলী আশংকা করল, এখন যদি মূসা আমাকেও চড় লাগায় তাহলে আমার মৃত্যু নির্ঘাত। তাই আত্মরক্ষার্থে সে আগাম বলে উঠল, মূসা তুমি কি আমাকেও হত্যা করতে চাও, যেভাবে সেদিন ঐ লোকটিকে হত্যা করেছ? তার এই মন্তব্যই সকল তথ্য ফাঁস করে দিল।
মূহুর্তে ফেরাউনের কাছে সংবাদ চলে গেল, সেদিনের কিবতির খুনি মহামান্য ফেরাউনের পালক পুত্র মূসা ছাড়া আর কেউ নয়। রাজপ্রাসাদে নিরাপত্তা রক্ষীদের বৈঠক বসল, সিদ্ধান্ত হল, দেশে শান্তি শৃঙ্খলার পক্ষে বড় হুমকি মূসাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। বৈঠকে এক লোক ছিল, যে গোপনে ঈমান লালন করত। তিনি দ্রুত এসে মূসাকে বললেন: দ্রুত কেটে পড়েন; ফেরাউন ও তার দলবল আপনাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করেছে।
তখনই মূসা মিসর ছেড়ে চলে আসলেন; তবে কোথায় যাবেন, সে গন্তব্য জানা নেই। তিনি একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিলেন একটি কূপের ধারে। লোকেরা পানি সংগ্রহ করছিল সেই কূপ থেকে। দেখলেন যে, দু’জন বালিকা পানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের পশুদেরকে আগলিয়ে রেখেছে। ভীড়ের মধ্যে লোকেরা তাদেরকে পানি ভর্তি করার সুযোগ দিচ্ছিল না। মূসা (আ) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কি অবস্থা? তারা বলল, লোকেরা তাদের পশুগুলোকে পানি পান করায়ে সরে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের পশুকে পানি পান করাতে পারব না, আর আমাদের পিতা তো বৃদ্ধ। মূসা তখন এগিয়ে গিয়ে বালিকাদ্বয়ের পশুকে পানি পান করালেন। অতঃপর তিনি একটি গাছের ছায়ার দিকে সরে গেলেন এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে ফরিয়াদ জানালেন:
“হে আমার পালনকর্তা তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তাঁর মুখাপেক্ষী।” -(সূরা কাসাস: ২৮ঃ ২৪)
পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ প্রমাণ দেয়, মূসা (আ)-এর সেই দোয়া কবুল হয়েছিল এবং ঐ দুই বালিকার একজনকে তাদের পিতা শোয়াইব (আ) মূসা (আ)- এর সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন।
রিলেটেডঃ সন্তান লাভের দোয়া: সন্তান লাভের দোয়া ও আমল
নেককার স্ত্রী পাওয়ার দ্বিতীয় দোয়া
আরবি উচ্চারণঃ ‘রাব্বানা হাব্লানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুর্রিয়াতিনা কুর্রাতা আইয়ুনিও ওয়াঝআলনা লিলমুত্তাক্বিনা ইমামা।’
বাংলা অর্থঃ ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন। যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে (পুরুষদেরকে) মুত্তাকি লোকদের নেতা বানিয়ে দাও।’ (সুরা ফুরক্বান : আয়াত ৭৪)
রিলেটেডঃ নারীরা স্বপ্নে সাপ দেখলে কি হয়
পরিশেষে
একজন আমলদার ও নেককার স্ত্রী দুনিয়াতে পাওয়া মানে দুনিয়াতে বেহেশতের একটা ছোট টুকরো পাওয়া, আর তাকে পাওয়ার জন্যে আল্লাহর দরবারে দোয়া, যিকির, চাওয়ার কোন বিকল্প নাই।
তো বন্ধুরা এই ছিলো নেককার স্ত্রী বা উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার দোয়া ও আমল, যদি লেখাটি ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। দেখা হবে আগামি লেখাতে, আজকের মতো এখানেই বিদায়।