Skip to content

আজকের নামাজের নিষিদ্ধ সময় ২০২৪, নামাজের নিষিদ্ধ সময় কত মিনিট?

নামাজের নিষিদ্ধ সময়

আসসালামুয়ালাইকুম সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ। আশা করি সবাই ভালো আছেন। প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য সালাত বা নামাজ একটি ফরজ ইবাদত। নামাজ বরাবরই উত্তম এবং আল্লাহ তায়ালাকে কাছে পাওয়ার বড় মাধ্যম। 

ইমানের পর ইসলামের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আমল হলো নামাজ। ইসলামী শরীয়তে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ এবং নফল নামাজ আদায় করার বিধান রয়েছে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেমন প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয় তেমনি এই নামাজের কিছু নিয়ম-নীতি ও আদেশ-নিষেধ আছে যেগুলো আমাদের পালন করা জরুরী।

সকল মুসলমানের জন্য নামাজ আদায় করা অত্যাবশ্যকীয়। এমনকি কেউ অসুস্থ হলেও তার নামাজ আদায়ের আলাদা নিয়ম রয়েছে। 

তাই নামাজ থেকে দূরে থাকার কোনো সুযোগ নেই। তবে এমন কিছু সময় আছে, যেসব সময়ে ফরজ, ওয়াজিব, নফল কোনো ধরনের নামাজ আদায় করা জায়েয নেই। এমনকি কাজা নামাজও আদায় করা যাবে না। এই সময়কে নামাজের নিষিদ্ধ সময় বলে আখ্যায়িত করা হয়।

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের নামাজের নিষিদ্ধ সময় সম্পর্কে জানা দরকার। নাহলে আমাদের ইবাদতে ভুল হবার আশঙ্কা থেকে যাবে।

নামাজের নিষিদ্ধ সময় কি কি এবং কখন হয়–  সে সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস ও তথ্যাবলি সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত জানবো।  

নামাজের নিষিদ্ধ সময়: 

নামাজের প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো নামাজের সময়সূচী। আমাদেরকে নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করার হুকুম দেয়া হয়েছে। আর ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী এমন কিছু সময়ও আছে যখন নামাজ আদায় করা যায় না। সে সময়গুলো নামাজের নিষিদ্ধ সময় নামে পরিচিত। 

নামাজের নিষিদ্ধ সময় তিনটি। এই তিন সময়ে ফরজ, নফল, কাযা সব ধরনের নামাজ পড়া নিষেধ। এমনকি এ সময় জানাজা এবং তিলাওয়াতে সিজদাহ করাও নিষিদ্ধ।

ইসলামের বিধান অনুযায়ী এই তিন সময়ে যেকোনো ধরনের নামাজ ও ইবাদত থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

নিম্নে নামাজের তিনটি নিষিদ্ধ সময় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো–

১. সূর্যোদয়ের সময়: 

সূর্য ওঠার পর থেকে এর হলুদ আলো পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত নামাজ পড়া নিষেধ। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, সূর্য ওঠার সময় যে হলুদ আভা থাকে তা সম্পূর্ণ মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সময় হলো নামাজের নিষিদ্ধ সময়। সূর্য সম্পূর্ণ উদিত হতে বা এই হলুদ আভা দূর হতে প্রায় বারো মিনিট সময় লাগে তবে একে পনের থেকে বিশ মিনিট ধরে নেয়া ভালো। 

আর এই সময়ের মধ্যে কোনো ধরনের নামাজ আদায় করা যাবে না। 

সূর্যোদয়ের সময় বিধর্মীরা সূর্য পূজা করে এবং সে সূর্য পূজা শয়তানের উদ্দেশ্যে করা হয়। সেজন্য তাদের সাথে আমাদের যেন সাদৃশ্য না হয় তাই সূর্যোদয়ের সময় নামাজ আদায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নামাজ আদায়
ফটোঃ নামাজ আদায় (Photo By Canva.com)

২. সূর্য মধ্য আকাশে অবস্থানের সময়: 

সূর্য যখন মধ্য আকাশে থাকে অর্থাৎ মাথার উপরে খাড়া অবস্থায় থাকে সেসময়ে নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ। ইসলামী পরিভাষায় এই সময়কে ‘জাওয়াল’ বলা হয়। 

এই জাওয়াল নামক সময়টিতে একজন মুসলিমকে সব ধরনের নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

এই সময় শুরু হয় সূর্য মাথার উপরে থাকার পাঁচ মিনিট আগে থেকে এবং তার পাঁচ মিনিট পর পর্যন্ত। এই সময়কেই নামাজের নিষিদ্ধ সময় বলে গণ্য করা হয়। 

রিলেটেডঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজিলত

৩. সূর্যাস্তের সময়: 

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে পশ্চিম আকাশে যে লাল আভা দেখা যায় তখন থেকে শুরু করে সূর্য পুরোপুরি অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত নামাজের নিষিদ্ধ সময় থাকে। সূর্য সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেলে এই নিষিদ্ধ সময় শেষ হয়। 

সূর্যাস্তের পর থেকে আবার নামাজ আদায় করা যায়। সূর্যাস্তের ১২ মিনিট পূর্ব থেকে এই নিষিদ্ধ সময় শুরু হয় এবং সূর্য সম্পূর্ণ অস্ত যাওয়া পর্যন্ত বজায় থাকে। 

ইসলামী নির্দেশ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির যদি কোনো কারণবশত আসরের নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে দেরি হয়ে যায় তবে সেই লাল আভা দৃশ্যমান হওয়ার আগেই তাকে নামাজ শেষ করতে হবে। 

ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক, উল্লিখিত তিন সময়ে সব ধরনের নামাজ আদায় করা নিষেধ। সেটা ফরজ হোক কিংবা নফল, ওয়াজিব হোক বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এসময়ে জানাজার নামাজ এবং তিলাওয়াতের সিজদাহও করা জায়েজ নয়। 

রিলেটেডঃ ইস্তেখারার নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজিলত

নামাজের নিষিদ্ধ সময় সম্পর্কে হাদীস: 

তিনটি নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ আদায় করা নিষেধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে জ্ঞানীরা বলেন– সূর্যোদয়, সূর্য যখন মাথার ওপর ওঠে এবং সূর্যাস্ত- এই তিন সময়ে সূর্য পূজারিরা সূর্যকে সেজদাহ করে। 

তখন কেউ যদি নামাজ পড়ে তাহলে তাকেও সূর্য পূজারি মনে হতে পারে। সেজন্য এই তিন সময়ে সব ধরনের নামাজ পড়া এবং সেজদাহ করা ইসলামী শরিয়তে মাকরুহে তাহরিমি তথা নিষেধ বলে গণ্য করা হয়।

নামাজ পড়ার নিষিদ্ধ সময় শায়খ আহমাদুল্লাহ প্রশ্ন উত্তর । sheikh ahmadullah

হাদীসে নামাজের নিষিদ্ধ সময় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে। নিম্নে সেই সব হাদীস সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো–

★ উকবা বিন আমের জুহানী রাযি. বলেন,

 ” তিনটি সময়ে রাসুল (সা.) আমাদেরকে নামাজ আদায় করতে এবং মৃতের দাফন করতে নিষেধ করতেন। 

সূর্য উদয়ের সময়; যতোক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত এবং যখন সূর্য অস্ত যায়।(সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৫৫১ এবং মুসলিম, হাদিস নং ১১৮৫)

উক্ত হাদীসের মাধ্যমে বোঝা যায়, নামাজ আদায়ের তিনটি নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ আদায়ে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি মৃতের দাফন করার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। 

অন্য এক হাদিস হতে,

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

” আমি রাসুল (সা.) -কে বলতে শুনেছি, ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই। আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই। ”  (বুখারী ৫৫১) 

এই হাদীসের মাধ্যমে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়ের কথা বোঝানো হয়েছে। উক্ত দুই সময়ে নামাজ আদায় করা নিষেধ। 

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ 

” আল্লাহর রসূল (সা.) বলেছেন,  যে ব্যক্তি সূর্য উঠার পূর্বে ফজরের সালাতের এক রাক‘আত পায়, সে ফজরের সালাত পেল। আর যে ব্যক্তি সূর্য ডোবার পূর্বে  আসরের সালাতের এক রাক‘আত পেলো সে আসরের সালাত পেলো। ” (সহীহ আল বুখারী, হাদিস নং ৫৭৯)

অর্থাৎ কোন ব্যক্তি নিষিদ্ধ সময় শুরু হওয়ার আগেই নামাজের এক রাক’আত পেলেও তা আদায় করে নিতে পারলে তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তাই নির্ধারিত উভয় ওয়াক্তের নামাজের সময় ফরজ নামাজ শেষ মুহূর্তেও আদায় করা যাবে।

★ নিষিদ্ধ সময়ে জানাজার নামাজ আদায় সম্পর্কে এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, 

” নামাজের নিষিদ্ধ সময়ে জানাজা এলে তা আদায় করতে পারবে। কিন্তু তা মাকরুহ হবে। সেরূপ কোনো ব্যক্তি এ সময় আয়াতে সিজদাহ পাঠ করলে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে পারবে। কিন্তু সেটাও মাকরুহ বলে গণ্য হবে। “ (তিরমিজি, হাদিস: ১৫৬, সহিহ বুখারি, হাদিস:১২৩১, মুসলিম: ১৩৭৩, সুরা মুহাম্মদ :৩৩)

যেহেতু নিষিদ্ধ সময়ে জানাজার নামাজ এবং তিলাওয়াতের সিজদাহ‌‌‌ আদায় করা মাকরুহ বলে গণ্য হয়। তাই সেসময়ে উক্ত নামাজ ও সিজদাহ না করাই ভালো। 

আবার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নামাজ আদায় না করা কবিরা গুনাহ। এ সম্পর্কে 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

” অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজির, যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে বে-খবর। ” (সুরা মাউন, আয়াত : ৪-৫) 

এর দ্বারা বোঝা যায়, নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর তা না করলে গুনাহের ভাগীদার হতে হবে। 

এজন্য কোরআন ও হাদীসে সময়ের নামাজ সময়ে আদায় করার কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে।

রিলেটেডঃ জানাজার নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজিলত

পরিশেষে: 

উপরোক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা নামাজের নিষিদ্ধ সময় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। 

প্রত্যেকটি মুসলমানের উচিত নামাজের সঠিক নিয়ম মেনে নামাজ আদায় করা। কারণ, ইবাদতের মধ্যে নামাজ হলো প্রধান ইবাদত। 

আর নামাজের প্রধান নিয়মগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নামাজের সময়সূচী। নামাজ হলো জান্নাতের চাবিকাঠি। তাই সঠিক নিয়ম ও সঠিক সময়ে প্রতিটি ফরজ নামাজ ও বিশেষ বিশেষ নামাজ আদায় করা উচিত।

মহান আল্লাহ তায়ালা যেন প্রত্যেক মুসলমান ভাইবোনদের সঠিক সময়ে ও সঠিক নিয়মে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করেন। আমিন।

সচরাচর জিজ্ঞাসা:

দিনের যেসব সময়ে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ সে সময়ে কি কোরআন তিলাওয়াত করা যাবে?

নামাজের নিষিদ্ধ সময়ে কোরআন তিলাওয়াত করতে কোনো ধরনের বাধা নেই। কোরআন তিলাওয়াত করতে পারবেন। রাসূল (সা.) সেই সময়ে কেবল নামাজের নিষেধাজ্ঞার কথাই বলেছেন, কোরআন তিলাওয়াত সম্পর্কে নয়। তাই কোরআন তিলাওয়াত করতে কোনো অসুবিধা নেই।

সূর্যোদয়ের সময় কি ফজরের নামাজ আদায় করা যাবে?

তবে কেউ যদি সূর্যোদয়ের আগে ফজরের নামাজ শুরু করে এক রাক’আত পড়ে ফেলে এবং তার মধ্যে সূর্যোদয় শুরু হয় তাহলে বাকি নামাজ সূর্যোদয়ের সময় আদায় করে নেয়া যাবে।

সূর্য অস্ত যাওয়ার কতক্ষণ আগে বা পরে নামাজ আদায় করা যাবে?

সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ওই দিনের আসরের নামাজ আদায় করা যাবে। কিন্তু সূর্য ডুবে যাচ্ছে এমন সময়ে নামাজ আদায় করা যাবে না। 

সুতরাং, সূর্য ডুবে যাওয়ার আগে বা পরে যেকোনো ধরনের নামাজ আদায় করা জায়েজ রয়েছে।

Leave a Reply