Skip to content

কসর নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজিলত । ২০২৪

কসর নামাজের নিয়ম

আসসালামুয়ালাইকুম সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ। আশা করি সবাই ভালো আছেন। ইসলাম ধর্মে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আল্লাহর ইবাদত করা। যার মধ্যে বিশেষ ইবাদত হলো নামাজ। এজন্য এই নামাজকে কেন্দ্র করে রয়েছে অনেক বিধিবিধান। 

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি এমন কিছু নামাজ রয়েছে যা আল্লাহ তাআলা আমাদের আদায় করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে একটি হলো কসর নামাজ। আজ আমরা জানবো কসর নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য এবং এ সংক্রান্ত কিছু হাদিস। 

ভ্রমন আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবনে বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন কারণে আমরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমন করে থাকি।

আবার আমাদের মুসলিমদের অবশ্যই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়।আর আমাদের ভ্রমণের জন্য আল্লাহ তায়ালা আমাদের নামাজের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছেন। আর সেটি হলো ভ্রমনের সময়ে নামাজ সংক্ষিপ্ত করার বিধান। ইসলামী শরীয়তে এটিকে কসর এর নামাজ বলা হয়। আর এই নামাজ একমাত্র মুসাফিরদের জন্য প্রযোজ্য। 

মুসাফির কাকে বলে? 

মুসাফির আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো সফরকারী বা ভ্রমণকারী। সহজ কথায় যিনি ভ্রমণ করেন তিনিই মুসাফির।তবে সাধারণ ভ্রমণ করলেই মুসাফির হবে না ৷

এ সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত আছে,

“কোনো ব্যক্তি তার আবাসস্থল থেকে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার দূরে সফরের নিয়তে বের হয়ে তার এলাকা পেরিয়ে গেলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হয়ে যায় “(জাওয়াহিরুল ফিক্বহ,১/৪৩৬,আহসানুল ফাতওয়া ৪/১০৫) 

অপরদিকে,যে ব্যক্তি নিজ এলাকায় অবস্থান করছে বা নিজ এলাকা হতে ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে সফর করেছে তাকে শরীয়তের পরিভাষায় “মুকিম” বলা হয়।

এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,

“কোনো শহরের বাসিন্দা শহরের সীমানা এবং গ্রামের বাসিন্দা গ্রামের সীমানা ত্যাগ করার পর থেকে তিনি মুসাফির বলে গণ্য হবেন। এবং সফর থেকে ফেরার পথে নিজ শহর বা গ্রামের সীমানায় প্রবেশ করলে তিনি মুকিম হয়ে যাবেন।”(বাদায়েউস সানায়ে:১/২৬১,২৬৮-২৭০)

আবার সফর শেষে নিজ শহর বা গ্রামের সীমানায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যক্তি মুকিম বলে গণ্য হবেন।(রদ্দুল মুহতার, ২/১২৮)

আকাশপথে সফরের ক্ষেত্রে স্থলপথের দূরত্ব অনুযায়ী ব্যক্তির ওপর সফরের হুকুম আরোপিত হবে।(রদ্দুল মুহতার ১/৭৩৫)

আবার পাহাড়ি পথের ক্ষেত্রে সমতল ভূমির দূরত্ব অনুযায়ী হিসাব করতে হবে।(ফাতহুল ক্বাদীর ২/৩১,আল বাহরুর রায়েক ২/২২৯)

মুসাফির বা ভ্রমণকারীর জন্য মহান আল্লাহ তাআলা অনেক অনুদান ও সাদাকা ঘোষণা করেছেন। ইসলামের বিধি-বিধান পালনের ক্ষেত্রে তাদের জন্য অনেক কিছুকেই তিনি সহজ করে দিয়েছেন।তিনি বান্দার কষ্ট লাঘব করার জন্য নামাজকে সংক্ষিপ্ত করেছেন।

এছাড়াও মুসাফির অবস্থায় বান্দার জন্য রমজানের রোজা না রাখারও অনুমতি দিয়েছেন।সেই সাথে আল্লাহ তাআলা একজন মুসাফিরের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেন না।

নামাজ
Image by rawpixel.com

কসর নামাজ

আরবি “কসর” শব্দের অর্থ হলো- কম করা,কমানো বা সংক্ষিপ্ত করা। শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসাফিরদের জন্য ফরজ নামাজ সংক্ষেপে আদায় করার নিয়মকে “কসর নামাজ” বলা হয়। 

এই নামাজ সংক্ষেপ করার মধ্যে আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য কল্যাণ রেখেছেন।তাই মুসাফিরের জন্য ওয়াজিব হলো কসর নামাজ আদায়ের মাধ্যমে সেই কল্যাণ লাভ করা।

এ সম্পর্কে আল-কোরআনে বলা হয়েছে –‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করায় কোনো আপত্তি নেই।আর অবিশ্বাসীগণ তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০১)

গন্তব্যে পৌঁছানোর পর সেখানে ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত থাকলে কসর হবে না, পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে। 

আর ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে কসর নামাজ জায়েজ হবে। আবার গন্তব্য নিজ বাড়ি হলে তার ওপর কসরের বিধান আরোপিত হবে না।

কসর নামাজের নিয়ম

পথিমধ্যে থাকাকালীন সময়ে মুসাফির ব্যক্তি চার রাকআত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ (অর্থাৎ জোহর,আসর ও ঈশার ফরয নামাজ) দুই রাকআত পড়ার মাধ্যমে কসর নামাজ আদায় করবেন।

রিলেটেডঃ ইস্তেখারার নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজিলত

কসর নামাজ কত রাকাত? 

কসর এর নামাজ মূলত দুই রাকআত। জোহর,আসর ও ঈশার ফরয নামাজ চার রাকআত এর পরিবর্তে দুই রাকআত করে কসর নামাজ পড়তে হয়।

তবে তিন রাকআত বা দুই রাকআত বিশিষ্ট ফরয নামাজ,ওয়াজিব নামাজ এবং সুন্নত নামাজ পূর্ণ পড়তে হয়।

তবে মুসাফির ব্যক্তির ব্যস্ততা থাকলে ফজরের সুন্নত নামাজ ব্যতীত অন্যান্য সুন্নত নামাজ ছেড়ে দেয়া জায়েয আছে। মুসাফির অবস্থায় সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজগুলো মুকিম অবস্থার মতো আবশ্যকীয় থাকে না; সাধারণ সুন্নতের হুকুমে হয়ে যায়।

নামাজ আদায়
ফটোঃ নামাজ আদায় (Photo By Canva.com)

কসর নামাজের নিয়ত

কসর নামাজের বিশেষ কোনো আরবি নিয়ত নেই। শুধুমাত্র মনে মনে কসর নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে নিয়ত করলেই হবে। এমনকি কসর নামাজের বাংলা নিয়ত মনে মনে পড়ে নিলেই হবে।

কসর নামাজ আদায়ের জন্য সর্বপ্রথম ওজু বা তায়াম্মুম করে পবিত্রতা অর্জন করে ক্বিবলামুখি হয়ে দাঁড়িয়ে কসর নামাজের নিয়ত করতে হবে। শুধুমাত্র জোহর,আসর ও এশার নামাজের ওয়াক্তে ফরজ নামাজের সময় কসর নামাজের জন্য নিয়ত করতে হবে। যে ওয়াক্তের কসর নামাজ আদায় করবে সে ওয়াক্তের কথা উল্লেখ করে প্রত্যেক নামাজের নিয়ত সঠিকভাবে করতে হবে।

এরপর যেভাবে ফজরের ফরজ নামাজ আদায় করতে হয় সেভাবেই কসর নামাজ আদায় করে নিতে হবে।

রিলেটেডঃ মৃত ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখলে কি হয়?

কসর নামাজ সম্বন্ধে কিছু মাসআলা

মুসাফিরের কসর নামাজ আদায় সম্পর্কে বিশেষ কিছু মাসয়ালা রয়েছে:-

  • মুসাফির ব্যক্তি দুই ওয়াক্তের নামাজ একত্রে আদায় করতে পারবে।যেমন: জোহরের নামাজকে আসরের সময়ে আসর নামাজের সাথে একসাথে আদায় করে নেয়া যাবে। এক্ষেত্রে প্রথমে জোহর এবং পরে আসরের নামাজ আদায় করতে হবে।এভাবে মাগরিব ও এশার নামাজও একসাথে পড়া জায়েয আছে, তবে ফজর- জোহর বা আসর- মাগরিব এর নামাজ একসাথে পড়া জায়েয নয়। 
  • কোনো মুসাফির ব্যক্তির যদি বাড়িতে থাকা অবস্থায় কোনো কারণে নামাজ কাযা হয়ে যায় এবং সফরে চলে গেলে তবে তা পরবর্তীতে পূর্ণ নামাজ হিসেবেই আদায় করতে হবে। 
  • অনুরূপভাবে সফরে থাকাকালীন অবস্থায় নামাজ কাযা হলে বাড়িতে ফিরে গেলে কসর নামাজ হিসেবেই আদায় করতে হবে।
  • মুসাফির ব্যক্তিকে অবশ্যই মাগরিবের তিন রাকআত ফরজ নামাজ ও এশার তিন রাকআত বিতর নামাজ সঠিকভাবে আদায় করে নিতে হবে।
  • মুসাফির ব্যক্তি যদি মুকিম ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করে তবে তাকে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।ইমাম মুসলিম ইবনে ওমর বর্ণনা করেন–“মুসাফির ব্যক্তি ইমামের সাথে চার রাকআত পড়বে, আর একা পড়লে দুই রাকআত পড়বে।”
  • মুসাফির ব্যক্তি মুকিমের ইমাম হয়ে নামাজ আদায় করা জায়েয আছে। এক্ষেত্রে তিনি দুই রাকআত নামাজ পড়ে সালাম ফেরাবেন এবং তার পেছনের মুকিম একাকী বাকি দুই রাকআত নামাজ আদায় করবে। এজন্য মুসাফির ইমামের জন্য সালাম ফিরিয়ে মুক্তাদিকে বলা মুস্তাহাব হবে ‘আপনারা পূর্ণ নামাজ আদায় করুন,আমি মুসাফির’।
  • মুসাফির ব্যক্তি সফর অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে যদি চার রাকাত নামাজ আদায় করে তবে গুনাহ হবে (তবে মুকিম ইমামের পেছনে হলে সমস্যা নেই)। 
  • মুসাফির ব্যক্তি যদি ভুলক্রমে চার রাকাত নামাজ শুরু করে দেয় এবং প্রথম বৈঠক করে থাকে, তাহলে সিজদা সাহু করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে। আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে, তা হলে ফরজ নামাজ আদায় হবে না, আবারও আদায় করতে হবে।
দোয়া
ফটোঃ দোয়া। (Photo By Canva)

কসর নামাজের ফজিল

কসর নামাজ আদায়ের অনেক ফজিলত রয়েছে। এটি আদায় করার মাধ্যমে একটি বিশেষ শিক্ষা অর্জন করা যায় সেটি হলো যেকোনো পরিস্থিতিতে ফরজ ইবাদত পালন করা উচিত।কোনো অজুহাত দেখিয়ে তা বাদ দেয়া যাবে না। 

সফর অবস্থায় নামাজ কসর করা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। এসব হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে,রাসূলুল্লাহ (সা.) সফর অবস্থায় নিজে সর্বদা কসর নামাজ আদায় করেছেন এবং সকলকে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। 

কসরের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সফরের সময় নামাজকে কসর করো,কারণ এর মধ্যেই রয়েছে উত্তম প্রতিদান।’ (বায়হাকী)।

অর্থাৎ এখানে তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে কসর নামাজকে বিশেষ পুরস্কার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। 

আবু তাহির (রহঃ) ও হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

“আল্লাহ তায়ালা যখন সালাত ফরজ করেছিলেন, তখন দুই রাকআত ফরজ করেছিলেন। এরপর মুকিমের সালাত পুরো করেন (চার রাকআত) কিন্তু সফরের সালাত প্রথম অবস্থায়ই রাখা হয়।”(সহীহ মুসলিম) 

ইয়াহিয়া ইবনু ইযায়ীদ আল হুনাঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,

“আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর নিকট সালাত কসর করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরের উদ্দেশ্যে তিন মাইল অথবা (রাবী শুবার সন্দেহ) তিনি তিন ফারসাখ পথ অতিক্রম করতেন, তখন দুই রাকআত পড়তেন।” (সহীহ মুসলিম)

এখান থেকেই আমরা কসর নামাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি।

পূর্ণ নামাজের স্থলে অর্ধেক নামাজ পড়ার কারণে হয়তো কারো কারো মনে এরূপ ধারণা হতে পারে যে, নামাজ বোধহয় পূর্ণ হলো না;এই ধারণা ঠিক নয়। কারণ কসর নামাজও শরিয়তের নির্দেশ।আর এই নির্দেশ পালনে কোনো গুনাহ হয় না; বরং সওয়াব লাভ হয়।

এ সম্পর্কে ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ:) বলেন, ‘সফরে চার রাকাত নামাজকে দুই রাকাতই পড়তে হবে।’ কেননা আল্লাহ তায়ালা এ দুই রাকআত এর বিনিময়ে চার রাকআতের সওয়াব প্রদান করবেন। সুবহানাল্লাহ। 

কসরের নামাজের নিয়ম । গ্রামে শহরে কোথায় কখন কসর আর কখন পূর্ণ নামাজ পড়বেন?

কসর নামাজ বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমতের স্বরূপ। 

আর যে ব্যক্তি দুই রাকআত কসর নামাজের পরিবর্তে পূর্ণ নামাজ আদায় করে সে এই রহমত হতে বঞ্চিত হয়।যা একান্তই কাম্য নয়। 

সফরের সময় মুসাফিরদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আর এজন্যই কসর নামাজের উপকারিতা অনেক। 

মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রেখে সহজ এই বিধানটি দিয়েছেন। যেনো কোনোভাবে কারো অসুবিধা না হয়।

ইসলাম মানুষের মুক্তির ও কল্যানের সকল পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে।আর এভাবেই প্রমাণিত হয় ইসলাম কোনো কঠিন বা কঠোর ধর্ম নয়। এটি হলো শান্তির ধর্ম।

পরিশেষে বলা যায়, মহান আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মুসাফির অবস্থায় নামাজ ও রোজার হুকুম যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন।আমিন।

Tag: কসর নামাজ আদায়ের নিয়ম ও নিয়ত, যোহরের কসর নামাজের নিয়ত, কসর নামাজের আরবি নিয়ত

Leave a Reply