আমাদের দক্ষিণ এশিয়াতে আদা চিনেনা এমন মানুষ পাওয়াটা মোটামুটি মুশকিল হবে, চিনবেই বা না কেনো? আদার ইতিহাস ও ব্যাবহার অনেক পুরানো, ধারণা করা হয় চীনারা ও ভারতীয়রা প্রায় ৫০০০ বছর ধরে আদা মশলা কিংবা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করে আসছে।
আমাদের দৈনন্দিন রান্নার কাজে আমরা আদা ব্যবহার করে থাকি। প্রায় সব দেশেই আদা একটি পরিচিত মসলা। এটি একটি সহজলভ্য ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন উদ্ভিজ্জ।
আদার অনেক ভেষজ উপকারিতা ও গুণাগুণ রয়েছে। অনেক পরিচিত অসুখের ঘরোয়া সমাধানও করে থাকে আদা। সর্দি কাশি নিরাময়ে আদার ব্যবহার কারো অজানা নয়।
এসব ছাড়াও আদাতে রয়েছে আরো অনেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ গুনাগুণ। এসব নিয়েই আজকের এই আর্টিকেল, এর মাধ্যমে আমরা আদার উপকারিতা ও অপকারিতা, আদার খাওয়ার নিয়ম, সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
আদা:
প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর আদা (Ginger) প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি বিশেষ করে তরকারি বা মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে আদা কাঁচা কিংবা চা এর সাথে যুক্ত করেও খাওয়া যায়।
আদা এক ধরনের উদ্ভিদ মূল। আদার মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, সিলিকন, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক, কপারসহ আরো অনেক ধরনের খনিজ উপাদান। এর পাশাপাশি শক্তি, ফাইবার, ভিটামিন ও প্রোটিনের একটি ভালো উৎস এটি।
এসকল উপাদান দেহের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা শরীরের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম আদাতে রয়েছে –
- ৮০ ক্যালরি এনার্জি,
- ০.৭৫ গ্রাম ফ্যাট
- ১৭.৮৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
- ১.৮ গ্রাম প্রোটিন
- ২ গ্রাম ফাইবার
- ৩৩ গ্রাম পটাসিয়াম
- ১.১৫ গ্রাম আয়রন
- ৩৪ মিলিগ্রাম ফসফরাস
- ১৪ মিলিগ্রাম সোডিয়াম
- ভিটামিন বি-৬ ১০%
- ভিটামিন সি ৮%
- আয়রন ৩%
- ক্যালসিয়াম ১%
- ম্যাগনেশিয়াম ১০%
এছাড়াও আদাতে রয়েছে জিনজেরল কম্পাউন্ড, যা আদার স্বাদ ও গন্ধের জন্য দায়ী। এই জিনজেরলে আছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি প্রপার্টি, যা দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করে।
আদার উপকারিতা
সুপরিচিত এই ভেষজ উপাদান আদাতে রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্য আদা যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আদা খেলে নিম্নোক্ত উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়:–
সাধারণ সর্দি-কাশি ও কফ দূর করে:
আদা খেলে ঠান্ডা জনিত কাশি এবং সর্দি দূর হয়। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা দেহে প্রবেশ করা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে।
উদ্ভিদের মূলের একটি গুণ হচ্ছে শরীর গরম করা। আদা ও যেহেতু একটি মূল তাই সর্দি কাশি হলে আদা খেলে শরীর গরম হয় এবং শরীর থেকে ঠান্ডাজনিত সংক্রমণ ও কফ দূর হয়।
প্রতিদিন এক চামচ করে আদার রস খেলে অথবা গরম গরম আদা চা পান করলে কাশি ও কফ দূর হয়। সেই সাথে গলা ব্যথা থাকলেও তা ঠিক হয়ে যায়।
বদহজমের সমস্যা সমাধান করে:
দীর্ঘদিন বদহজমের কারণে অনেকের পেটে ব্যথা, গ্যাসের সমস্যা, ক্ষুধামন্দা, মুখে টক ভাব ইত্যাদি হয়ে থাকে। আদা খেলে এসব সমস্যা দূর হয়। আদা প্রদাহ কমায়, হজমে সাহায্য করে এবং পেটের আম্লিকভাব কমায়, যার ফলে বদহজমের সমস্যা দূর হয়।
এক্ষেত্রে নিয়মিত সকালে খালি পেটে অথবা খাবার খাওয়ার আগে এক টুকরো আদা খেয়ে নিলে উপকার পাওয়া যাবে।
রিলেটেডঃ হজমশক্তি বৃদ্ধির উপায়, কার্যকারী টিপস ২০২৩
মল-মুত্র জনিত সমস্যা দূরীকরণে সহায়ক:
আদাতে থাকে ভিটামিন বি ৬, যা মল-মূত্র জনিত সমস্যা সমাধানে কাজ করে। তাই যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত আদা রস সেবন করতে পারেন।
অ্যাসিডিটি দূর করে:
অ্যাসিডিটি হলে বুকে ও গলায় জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয় যা কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
আদা অ্যাসিডিটি বা বুকে জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। আদা অতিরিক্ত অ্যাসিডের উৎপাদন কমিয়ে পেটকে আরাম দেয়। বুকের ও গলার জ্বালাপোড়াও দূর করে। এছাড়াও এটি পাকস্থলীতে আলসার হওয়ার সম্ভাবনাও দূর করে।
রোগ প্রতিরোধে কার্যকর:
আদাতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট থাকায় এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি করে। ফলে সহজেই কোনো রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে:
আদা রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনে। এতে উচ্চ রক্তচাপ হয় না এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও কমে যায়। এতে আরো থাকে ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক যা শরীরের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
হৃদপিন্ড ভালো রাখে:
আদাতে শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল LDL ( Low Density Lipoprotein ) এর পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এই LDL বেড়ে গেলে হার্টের করোনারি আর্টারিতে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস নামক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এভাবে আদা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে সহায়তা করে। এছাড়াও এতে থাকে পটাশিয়াম, যা হৃদপিন্ডের জন্য খুবই উপকারী হয়ে থাকে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
আদাতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণাবলী। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফেনোলিক ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান জিনজেরল (Gingerol) দেহের ক্যন্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম। এভাবে আদা বিভিন্ন রকম ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা কমায়, যেমন– গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং লিভার ক্যান্সার।
ওজন কমাতে সহায়তা করে:
আদার শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ওজন কমাতে সাহায্য করে। আদাতে থাকা ফাইবারের কারণে নিয়মিত আদা খেলে শরীরের ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে থাকে জিনজেরল নামক উপাদান, যা সঠিক বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে। ফলে অতিরিক্ত ওজন কমে যায়।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে:
আদার গুনাগুন ও উপকারিতা অনেক, তার মধ্যে অন্যতম হল আদার আন্টি অক্সিডেন্ট এবং বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান, যা মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। মস্তিষ্কে বয়স ও প্রদাহজনিত কারণে যেসব সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো নিরাময়ে সাহায্য করে আদা।
অত্যাধিক চিন্তার কারণে অনেকের মাথা ব্যথা এবং এলজাইমার সমস্যা হয়ে থাকে। মস্তিষ্কে অপ্রয়োজনীয় অ্যামিলয়েড প্রোটিন জমা হওয়ার মাধ্যমে এই রোগের সৃষ্টি হয়। নিয়মিত আদা খেলে এ জাতীয় সমস্যা হওয়ার প্রবণতাও কমে যায়।
আদা চা মাইগ্রেন এবং সাইনাসের ব্যথাও দূর করতে সাহায্য করে।
ফুসফুস ভালো রাখে:
আদাতে থাকা বিশেষ পুষ্টিগুণ এজমা, হাঁপানি এবং ফুসফুস সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা দূর করতে সক্ষম। যাদের শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে তাদের নিয়মিত আদার রস খেলে এই সমস্যা কমে যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে:
আদা শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এবং রক্তের চিনির মাত্রা হ্রাস করে। আদার নির্যাস শরীরের কোষে গ্লুকোজের শোষণক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে।
বাতের ব্যথা দূর করে:
আদাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী করে। ফলে বাতজনিত সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও আদা শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা বিশেষ করে অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস উপশমের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী।
পিরিয়ড/ মাসিকের ব্যথা কমায়:
মাসিকের সময় অনেক মেয়েদের পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। আদা খেলে এই ব্যথা দূর হয়। জার্নাল অফ অল্টারনেটিভ অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাসিকের সময়ের ব্যাথা উপশমের ক্ষেত্রে আদা ইবুপ্রোফেন নামক ব্যথানাশক ওষুধের মতোই কার্যকর।
রিলেটেডঃ পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় ২০২৩
চুলের জন্য উপকারী:
আদার মধ্যে থাকা জিনজেরল নামক উপাদানটি স্কাল্পের ভেতরে প্রবেশ করার পর চুলের গোড়ায় রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন ই এবং সি চুল পড়া রোধ করে চুলের গোড়া মজবুত করে।
রিলেটেডঃ মাথার খুশকি দূর করার উপায়, ১ সপ্তাহে দেখুন ম্যাজিক
দাঁত ব্যথা কমায়:
দাঁতে ব্যথা হলে এক টুকরো আদা চিবিয়ে খেলে দাঁতের ব্যথা কমে যায়। এটি দাঁতের ফাঁকে থাকা জীবাণু ধ্বংস করে। এর পাশাপাশি মুখের দুর্গন্ধও দূর করে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য উপকারী:
গর্ভবতী মায়েদের বমি বমি ভাব এবং অস্বস্তি হলে সামান্য আদা কুচি খেলে উপকার পাওয়া যাবে। অনেক সময় সকালে বমি বমি ভাব বা মর্নিং সিকনেস হলে খালি পেটে আদা খাওয়া যেতে পারে। তবে আদা খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পরিমিত পরিমাণে আদা খাওয়ার মাধ্যমে আমরা এসব উপকারিতা গুলো পেতে পারি।
আদার অপকারিতা
আদার অনেক ঔষধী গুণ রয়েছে, যা অবশ্যই আমাদের শরীরের জন্য ভালো। তবে অতিরিক্ত আদা খেলে কিন্তু হীতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত আদা খেলে শরীরে কিছু ক্ষতিও হতে পারে। চলুন দেখে নেই আদার ক্ষতিকর দিক কি কি!
অতিরিক্ত আদা খাওয়ার ফলে কি কি সমস্যা হতে পারে সেগুলো জেনে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নিই আদার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে –
- আদা নিয়ম করে খেতে হয়। অতিরিক্ত পরিমাণে আদা খেয়ে ফেললে বুকে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।
- বেশি আদা খেলে ঠোঁট ফুলে ওঠা, গলায় অস্বস্তির মতো সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত আদা সেবন গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। গর্ভকালীন অবস্থায় বেশি আদা খেলে তা পেশীর সংকোচন ঘটিয়ে প্রিটার্ম লেবারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
তাই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত আদা খাওয়া যাবে না।
- অতিরিক্ত আদা সেবনে ডায়রিয়া হতে পারে। কারণ আদা খাবারকে দ্রুত হজম করে বা বর্জ্য পদার্থে রূপান্তর করে।
- কারো হিমোফিলিয়ার সমস্যা থাকলে আদা না খাওয়াই ভালো। কারণ, হিমোফিলিয়ার ওষুধের সঙ্গে আদা খেলে তা ওষুধের প্রভাবে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
- যারা হাইপারটেনশন বা ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করেন তাদের আদা না খাওয়াই ভালো। আদা এসব ঔষধের প্রভাব কমিয়ে ফেলতে পারে।
- আদা চা বেশি খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা আরো বাড়তে পারে।
- যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তাদের আদা খাওয়া এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। নাহলে শরীরে চুলকানি দেখা দিতে পারে।
- যাদের ওজন অনেক কম তাদের আদা খেলে ওজন আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- অতিরিক্ত আদা খেলে অনেক সময় ওরাল এলার্জি সিন্ড্রোম হয়ে থাকে।
- বেশি আদা চা খেলে অনিদ্রাজনিত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- বেশি আদা খেলে পাচনতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত আদা সেবনে হৃদপিন্ডের গতি বেড়ে যায়। যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত আদা খেলে ত্বকেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের আদা খাওয়া উচিত নয়।
সঠিক পদ্ধতিতে আদা না খেলে উপরোক্ত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।
আদা খাওয়ার নিয়ম:
সঠিক নিয়মে আদা খেলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচা সম্ভব। শুধু আদা-ই নয় যেকোনো ভেষজ উপাদান বা ঔষধ সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। চলুন আদা খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিই –
- আদা চা আমাদের সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ঠান্ডা লাগলে বা সর্দি-কাশি হলে আমরা সবাই আদা চা খেয়ে থাকি। চায়ের মধ্যে আদা কুচি বা আদার রস দিয়ে পান করলে তা অনেক উপকারে আসে।
- প্রতিদিন রান্নায় আমরা যে পরিমাণ আদা দিয়ে থাকি তাতে সামান্য পরিমাণ উপকারিতা পাওয়া গেলেও কাঁচা আদা খেলে এর ঔষধি গুণ বেশি পাওয়া যায়।
- সকালে খালি পেটে বা প্রতিবেলা খাওয়ার পর এক টুকরো কাঁচা আদা লবন দিয়ে চিবিয়ে খেলে হজমে উপকার পাওয়া যায় এবং মুখের রুচি বৃদ্ধি পায়।
- প্রতিদিন ২ বেলা ১ চামচ করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মত করে খাওয়া যায়।
- আদা দিয়ে স্যুপ বানিয়েও খাওয়া যায়।
- দৈনিক ৫ গ্রাম পর্যন্ত আদা খাওয়া যাবে। এর বেশি খেলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়,
আদার উপকারিতা এবং অপকারিতা উভয়ই বিদ্যমান রয়েছে। আদা যেমন একটি খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট, তেমনি শরীরের জন্যও অনেক ভালো। তাই সঠিক পরিমাণে এই ভেষজ উপাদানটি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা এর উপকারিতা লাভ করতে পারবো।
তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকের লেখা আদার উপকারিতা ও অপকারিতা, যদি বিস্তারিত লেখাটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না, আজকের মতো এখানেই বিদায়! দেখা হবে আগামী লেখাতে।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
শীতের সময়ে কিভাবে আদা খাওয়া উচিত?
শীতের মৌসুমে আদা চা, স্যুপ অথবা আদার রস লেবু ও মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
গরমকালে আদা খেলে কি কি হতে পারে?
আদা শরীর গরম করে এবং শরীরে ঘাম উৎপাদন করে। তাই গরমকালে আদা সামান্য পরিমাণেই খাওয়া উচিত।
পেটের মেদ কমাতে আদা কিভাবে খাওয়া যায়?
পেটের মেদ কমানোর জন্য আদা ও লেবু দিয়ে চা খাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে এটা পান করা যায়।
আদা কিভাবে সংরক্ষণ করবো?
আদা কেনার পর ধুয়ে সেটিকে ভালোমতো শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর সেটিকে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যাবে। এভাবে দীর্ঘদিন ভালো থাকবে আদা।
তথ্যসুত্রঃ
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Ginger
৩। https://www.healthline.com/nutrition/11-proven-benefits-of-ginger
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/Journal_of_Alternative_and_Complementary_Medicine
৫। https://www.hopkinsmedicine.org/health/wellness-and-prevention/ginger-benefits