মাথায় উকুন থাকা রীতিমতো এক গজবের মতোন। উকুন মাথায় নিয়ে কি পাব্লিক প্লেস আর কি ই বা প্রাইভেট প্লেস-মাথা থেকে তো হাত নামতেই চায় না। সারাক্ষন মাথার এইখানে ওইখানে চুলকাতেই থাকে। উকুনের কামড় এতোটাই মারাত্মক, দিগ্বিদিক কোন জ্ঞান ই আর কাজ করে না।
যাদের মাথায় আবার উকুন বেশী, দেখা যায় চুলের সাথে এমন ভাবে উকুনের ডিম লেগে থাকে, মাঝেমধ্যে পুরো মাথাতেই উকুন এমনভাবে ভেসে উঠে-খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি ফেস করা লাগে।
যাই হোক, উকুন দূর করার উপায় গুলো যদি জানা থাকে, তাহলে উকুনের অত্যাচার থেকে অনেকটাই শান্তিতে থাকা যায়।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের উকুন নামক পরজীবী ইনফেক্ট এর ভয়াবহ প্যারা থেকে মুক্তি দিতে আমাদের আজকের এই নিবন্ধন। যদি আপনি অথবা আপনার বাসায় কারো মাথায় উকুন থাকে, তবে আজকের নিবন্ধনটি আপনার জন্যই একেবারে প্রযোজ্য।
তো চলুন, বিস্তারিত আলোচনায় যাই এবার-
উকুন কি?
প্রথমেই জানি উকুন কি? সোজা বাংলায় যদি বলি এটা একটা পরজীবী।ডানাবিহীন একটা পরজীবী যেটার একমাত্র কাজ হচ্ছে প্রাণীদের রাতের ঘুম হারাম করা। যদিও এই উকুন দেখতে একেবারে ছোট, কিন্তু এটার আক্রমন খুবই মারাত্মক। কারন এরা বেচে থাকার জন্য রক্ত পান করে। আর এই রক্ত তারা পায় হোস্ট, তথা বাহকের শরীর থেকে।
এরা মানুষের মাথায় চুলের ভেতর বাসা বানায়, আর খাবার সংগ্রহ করে চামড়া থেকে। চামড়া তে কামড় দিয়ে এরা রক্ত শোষণ করে। এই রক্তই উকুনের খাবার।
উকুন কেন হয়?
উকুন হওয়ার একমাত্র কারন হচ্ছে কোনভাবে আক্রান্ত কারো কাছ থেকে উকুন বা উকুনের ডিম যদি আপনার মাথায় আসে তাহলে আপনার মাথায় ও উকুন হবে এবং ক্রমান্বয়ে তা ছড়িয়ে মেলা দুর যাবে।
- আক্রান্ত অন্য কোন ব্যাক্তির সাথে রাতে একই বিছানায় অথবা একই রুমে ঘুমানো।
- আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে কাপড়চোপড় শেয়ার করা, বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যাক্তির কাপড় ব্যবহার করা।
- আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে একই চিরুনি, টাওয়াল ব্যবহার করা।
- মাথা এবং চুল নোংরা রাখা, ঠিকঠাক পরিস্কার না রাখা।চুলে ঝট পরতে দেওয়া।
কীভাবে বুঝবেন আপনার মাথায় উকুন হয়েছে?
মাথা চুলকাচ্ছে তার মানে এই না মাথায় উকুন হয়েছে। অনেক কারনেই মাথায় পিলপিল অনুভুতি, চুলকানি ইত্যাদি হতে পারে। যাই হোক-উকুনের আকার খুবই ছোট। তাই কম সংখ্যক উকুন মাথায় থাকলে এটা বোঝা কঠিন আপনার উকুন হয়েছে।
তবে একটু খেয়াল করে বুঝবেন, মাথায় উকুন হলে মাথার তালুতে কিছু একটা হাটার অনুভুতি পাবেন।মাঝেমধ্যে আয়নায় তাকালে সামনের দিকের চুলে উকুনের ডিম দেখতে পাবেন। এছাড়াও যদি চিকন চিরুনি দিয়ে চুল আচড়ান, দু একটা উকুন চিরুনির সাথে লেগে বের হয়ে আসবে চুল থেকে।
- মাথার তালু চুলকাবে।
- চুলে উকুনের ডিম দেখতে পাবেন।
- চিরুনির সাথে উকুন বেরিয়ে আসবে।
উকুন দূর করার উপায়
সন্দেহ নেই উকুন দুর করার অনেক ঘরোয়া এবং কমার্শিয়াল প্রোডাক্ট এখন এভেইলেভেল। আমরা আজকে উকুন দুর করার জন্য সম্ভাব্য সকল উপায় নিয়েই আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
নিম পাতা পেস্ট:
নিম পাতার গুনাগুন কে না জানে! প্রাচীন আমল থেকেই নিম পাতা শরীরের বিভিন্ন খোস পাচড়া সাড়ানোর কাজে বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে।নিম পাতার পেস্ট এর রয়েছে এন্টিবায়োটিক এক্টিভিটিজ। এছাড়াও নিম এর এমন এক তীব্র গন্ধ রয়েছে, যাতে সহজেই এটাকে কীটনাশক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
নিম পাতার পেস্ট অথবা নিম তেল-দুটোই মাথার উকুন নাশ করতে পারে।
নিমের তীব্র গন্ধ যেমন উকুন কে নাশ করে, তেমনি নিমে থাকা অন্যান্ন কিছু ন্যাচারাল যৌগ পুরো মাথা থেকেই উকুন সরানোর পার্মানেন্ট ব্যবস্থা করে থাকে।
নিম তেল বা নিম পেস্ট কিভাবে ইউজ করবেন? যদি নিম তেল ইউজ করেন, তাহলে নারকেল তেল এর মত মাথায় এবং চুলে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন, চুল ভালোভাবে শ্যাম্পু করে নিবেন।
যদি নিম পেস্ট হয়, তাহলে গোছলের ১০ মিনিট আগে চুল এবং মাথায় নিম বাটা লাগাবেন।এরপর চুল ভালো করে শ্যাম্পু ধুয়ে নিবেন।এবারে, চুল শুকিয়ে একটা চিকন দাতের চিরুনি দিয়ে ভালো করে আচড়াবেন। এভাবে আধামরা উকুন গুলো সব মাথা থেকে বের হয়ে যাবে।
মেয়নেজ:
মেয়নেজ শুধু খাবারের স্বাদ বাড়াতে না, নিজের প্রয়োজনে চুলেও লাগাতে পারেন।মেয়নেজ এ এমন কিছু উপাদান আছে যা উকুন মারতে সাহায্য করে। পুরো মাথায় মেয়নেজ লাগান। সল্টেজ মেয়নেজ লাগাবেন।
মেয়নেজ মাথায় লাগিয়ে আধাঘন্টা বসে থাকবেন। অত:পর চুল ধুয়ে শুকিয়ে চুল ব্রাশ করে নিবেন।চিকন চিরুনি দিয়ে চুল আচড়াবেন, তাহলে উকুন, ডিম সব মাথা থেকে আলাদা হয়ে যাবে।
রসুন:
কাচা রসুনের তীব্র গন্ধ সহজেই পোকাদমন করতে পারে। এছাড়াও রসুনে থাকা এন্টিবায়োটিক এক্টিভিটিজ আরো সহজে উকুন নির্মুলে কাজ করে। কাচা রসুনের পেস্ট চুলে লাগালে এটা উকুনের দম বন্ধ করে দেয় এবং উকুন কে এভাবে মেরেও দেয়। যাই হোক, কাচা রসুন দিয়ে কিভাবে উকুন দুর করবেন?
আপনার চুলের ভলিউম অনুপাতে কাচা রসুনের কোয়া নিন।১০-১৫ টা কোয়া যথেষ্ট মোটামুটি ধরনের চুলের জন্য। এবার এই রসুন পাটায় বেটে নিন। রসুন বাটাতে মিশিয়ে নিন সামান্য পরিমান লেবুর রস। এইবার এই মিশ্রণ সুন্দর করে মাথায় লাগিয়ে নিন। বিশেষ করে তালু এবং চুলের গোড়ায় লাগাবেন। এবং ৩০ মিনিট অপেক্ষা করবেন। এরপর একটা ঝালি চিরুনি দিয়ে চুল আচড়ে আধামরা উকুন গুলো সব চুল থেকে ফেলে দিবেন।
রিলেটেডঃ লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম এবং লবঙ্গের ব্যবহার
ভিনেগার:
ভিনেগার বা এসেটিক এসিড দিয়েও উকুন দুর করা যায়।যদিও এটা ঘরোয়া পদ্ধতি, কিন্তু কাজ দেয় ভালো। আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে ফলাফল পাওয়া যায়। ভিনেগার এর তীব্র গন্ধ উকুন এর চেতনানাশক হিসেবে অনেকটাই কাজ করে। যাই হোক, একটা কাপে অর্ধেক কাপ আপেল সিডার ভিনেগার নিন।
বাকী অংশ পানি দিয়ে পুর্ন করুন। এবার এই ভিনেগার এর মিশ্রণ দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এরপরে আবার স্বাভাবিক পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। চুল শুকানোর পরে ঝালি চিরুনি দিয়ে চুল আচড়ে অর্ধমৃত উকুন গুলো সব চুলের বাইরে ফেলে দিন।
রিলেটেডঃ তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা
পেয়াজের রস:
চুল পরা রোধে আর চুলের বৃদ্ধিতে পেয়াজের রস কতটা কাজ করে এটা অনেকেই জানেন।তবে মঝার ব্যাপার হলো চুলে রয়েছে এন্টিবায়োটিক এবং এন্টিফাংগাল ফাংশন। এজন্য চুল থেকে উকুন এবং উকুনের ডিম দুর করতে পেয়াজের রস ভালো কাজ করে।
পেয়াজের রসে এছাড়াও রয়েছে বেশ ঝাঝালো গন্ধ, যেটার জন্য উকুন প্রায় অর্ধমৃত হয়ে যায়।
প্রথমেই পেয়াজ বেটে এর রস বের করে নিন। এবার এই পেয়াজের রসে মিশিয়ে নিন সামান্য লেবুর রস। মাথায় এবার এই রস লাগান, ২/৩ ঘন্টা মাথায় একটা টাওয়াল দিয়ে পেচিয়ে বসে থাকুন। এরপর ভালো করে গোছল করে চুল শুকিয়ে ফেলুন। চুল শুকানোর পরে চিরুনি দিয়ে আচড়িয়ে মাথায় থাকা উকুনের অর্ধমৃত লাশ সব বের করে দিন।
প্রতি সপ্তাহে দুবার এই পেয়াজের রস মাথায় লাগাবেন। মাথার উকুন দুর হবে, চুলের গ্রোথ ভালো হবে, চুল পড়া ও বন্ধ হবে।
উকুন নাশক শ্যম্পু ও সাবান:
বাজারে বিভিন্ন এন্টি লাইস সাবান এবং শ্যম্পু পাওয়া যায়। বিশেষ কিরে ডগ ফ্রি, পারমিথ্রিন মিক্সড করা উকুননাশক শ্যম্পু গুলো উকুন নাশ করতে অনেক সাহায্য করে। ভালো কোন ব্র্যান্ড এর এন্টি লাইস শ্যম্পু/ সাবান নিন-লিফলেট দেখে সে অনুযায়ী ইউজ করুন। উকুন চলে যাবে।
পরিশেষে,
একবার চিন্তা করেন আপনি আপনার কলিগদের সাথে কোন মিটিং এ আছেন, এমন সময় ধ্বপ করে আপনার মাথা থেকে কালো মোটা একটা উকুন আপনার বসের ফাইলে পরলো–কেমন হবে ব্যাপারটা!
খুবই লজ্জাজনক হবে তাই না? তাই এই লজ্জাজনক অবস্থায় যেন আপনাকে পরতে না হয় এজন্যই আমাদের আজকের আর্টিকেল উকুন দুর করার উপায় গুলো! আশা করি আমাদের দেওয়া উপায় গুলো ফলো করলে আপনি ভালো রেজাল্ট পাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
উকুন কী পরজীবী?
হ্যা, উকুন এক ক্ষুদ্র পরজীবী যা মানুষের ( অথবা প্রাণীর) রক্ত খেয়ে বেচে থাকে।উকুন খুব দ্রুতগতিতে বংশবিস্তার করে, এবং সহজেই এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে ছড়িয়ে পরে।
উকুন কি একেবারে দুর করা যায়?
এখানে একটা প্রবাদ বলা জরুরী। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। উকুন নাশ করার ব্যাপার টা ও এরকম।উকুন একেবারে দুর করা যায়। কিন্তু আপনি যদি সচেতন না হোন, আবার আপনার মাথায় উকুন হতে পারে।