Skip to content

পিউলি খাওয়ার নিয়ম, দাম, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া | ২০২৪

পিউলি খাওয়ার নিয়ম

বর্তমান জনজীবনে কর্মব্যস্ততা ও সতর্কতার জন্য নতুন দম্পতিরা খুব সহজেই বাচ্চা নিতে চান না। সঠিক সময়ের অপেক্ষা করার জন্য সবাই স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। 

অনিয়ন্ত্রিত গর্ভধারণ রোধ করার জন্য ব্যবহার করেন বিভিন্ন ধরনের জন্মনিরোধক ট্যাবলেট, কনডম বা নানা চিকিৎসা ব্যবস্থা। তার মধ্যে বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ রোধক পিলের ব্যবহারের জনপ্রিয়তা হয়তো তুলনামূলক বেশি। 

জনপ্রিয়তার দিক থেকে পিউলি পিল সবচেয়ে এগিয়ে। জনসাধারণ মানুষের মাঝে এর ব্যবহার আসলেই চোখে পড়ার মতো।এর কারণ হতে পারে একদিকে যেমন সহজলভ্যতা, অন্যদিকে দামেও সাশ্রয়।

চলুন অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ রোধ করার জন্য পিউলি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। 

পিউলি কি?

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ রোধ করার জন্য, পিউলি জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহার উপযোগী এক ধরনের গর্ভনিরোধক পিল। অন্যান্য যেকোনো গর্ভনিরোধক পিল থেকে পিউলি ৩০ মি.গ্রা তুলনামূলক নিরাপদ ও কার্যকর। কোনো ব্যবস্থাবিহীন যৌন মিলনের পরবর্তী ৫ ঘন্টা থেকে ১২০ ঘন্টার মধ্যে পিউলি পিল গ্রহণ করলে খুব সহজেই গর্ভধারণ রোধ করা যায়। পিউলি ৩০ মি.গ্রা এমন একটি ওষুধ যা প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের ফাইব্রয়েডের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

পিউলি খাওয়ার নিয়ম

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহিলারা পিউলি পিল খাওয়ার নিয়ম না জেনেই পিল সেবন করা শুরু করে। এতে করে শুধু তার প্রজনন স্বাস্থ্যের অবনতি নয়,অন্যান্য শারীরিক অবস্থারও বিপর্যয় ঘটে।সেজন্য চলুন পিউলি পিল খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে নেই-

  • অসুরক্ষিত দৈহিক মিলনের পর যত দ্রুত সময়ে পিউলি পিল খাওয়া উচিত। পিউলি ৩০ মি.গ্রা খালি বা ভরা পেটে সেবন করতে হবে।
  • খাওয়ার পর ৩ ঘন্টার মধ্যে যদি বমি হয়, তাহলে ঔষধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে নতুন করে আবার পিল গ্রহণ করতে হবে।
  • পিউলি পিল শরীরে প্রায় ৫দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে। তাই কেউ যদি দৈহিক মিলনের পরবর্তী ৫ দিনের মধ্যে পিল খায়,তাহলেও তা গর্ভধারণ রোধ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। 

তবে গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে নিয়মিত পিউলি পিল খাওয়া অনুচিত,কারণ এটি নানাভাবে দেহের ক্ষতি করে। এই ইমার্জেন্সি পিল এড়াতে সহবাসের সময় অবশ্যই প্রটেকশন ব্যবহার করা উচিত।

পিউলি ইমার্জেন্সি পিল
পিউলি ইমার্জেন্সি পিল (Photo by Peuli)

পিউলি খাওয়ার উপকারিতা

ইমার্জেন্সি পিল গর্ভনিরোধক বা মর্নিং-আফটার পিল নামেও পরিচিত, এটি একধরণের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি যা অরক্ষিত যৌন মিলন বা গর্ভনিরোধক ব্যর্থতার পরেও গর্ভধারণ প্রতিরোধ করার জন্য নেওয়া যেতে পারে। পিউলি পিল খাওয়ার মধ্যে নানা উপকারিতা রয়েছে,যেমন-

গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ: 

পিউলি পিলের প্রাথমিক সুবিধা হল অরক্ষিত যৌন মিলনের পরে গর্ভধারণের ঝুঁকি কমানোর ক্ষমতা। এটি সবচেয়ে কার্যকর যখন সহবাসের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রহণ করা হয় তবে তারপরেও ৫ ঘন্টা (বা এমনকি ১২০ ঘন্টা) পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

সহজলভ্যতা:

পিউলি পিল এমন পরিস্থিতিতে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করার জন্য একটি সুবিধাজনক এবং সহজলভ্য বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে নিয়মিত গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়নি বা ব্যর্থ হয়েছে। এটি আমাদের দেশে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওভার-দ্য-কাউন্টারে পাওয়া যেতে পারে, এটি সময়মত ব্যবহারের জন্য আরও অ্যাক্সেসযোগ্য করে তোলে।

মানসিক স্বস্তি:

অরক্ষিত যৌন মিলন বা গর্ভনিরোধক ব্যর্থতা উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে এবং একটি অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারে। পিউলি পিল খাওয়ার পরে গর্ভধারণের সম্ভাবনা হ্রাস করে মানসিক শান্তি প্রদান করতে পারে, যদিও এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এটি ১০০% কার্যকর নয়।

কম কষ্টদায়ক পদ্ধতি :

জরুরী গর্ভনিরোধক অ-আক্রমণকারী, যার অর্থ এটির জন্য কোনও চিকিৎসা পদ্ধতি বা শরীরে ডিভাইস প্রবেশের প্রয়োজন হয় না। এটি সাধারণত বড়ি হিসেবে গ্রহণ করে, যা গর্ভনিরোধের তুলনামূলকভাবে সহজ পদ্ধতি।

কোন দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নেই:

 পিউলি পিল খাওয়ার সাথে ভবিষ্যতের গর্ভধারণের উপর কোন দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নেই। এটি একজন ব্যক্তির গর্ভধারণের ক্ষমতার কোনোরূপ হ্রাস করে না। 

এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে পিউলি পিল খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে, নিয়মিত গর্ভনিরোধক হিসাবে ব্যবহার করার জন্য নয়। আপনি যদি গর্ভনিরোধের আরও নির্ভরযোগ্য এবং স্থায়ী উপায় খোজে থাকেন, তাহলে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের নির্দেশনা নিয়ে অন্যান্য গর্ভনিরোধক বিকল্প পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে পারেন। 

পিউলি পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া –

কথায় আছে, যে ঔষধ যত দ্রুত কাজ করে,তার সাইড ইফেক্টও বেশি।এটি পিউলি পিলের ক্ষেত্রে অনেকাংশে কার্যকর। যেহেতু এটি ৫ দিনের মতো কার্যকর থাকে,তাই এটি কতটুকু শক্তিশালী হতে পারে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকার কথাও না।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে-

  • মাথা ঘুরানো
  • শারীরিক দুর্বলতা 
  • অনিয়মিত মাসিক
  • পেট ব্যথা
  • স্তনে অস্বাভাবিক ব্যথা
  • মাসিক ছাড়াও রক্তপাত হওয়া 

আপনি যদি দীর্ঘ সময় এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সমুখ্খীন হোন,তবে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।

রিলেটেডঃ mm কিট খাওয়ার নিয়ম

পিউলি পিল খাওয়ার সতর্কতা

পিউলি খাওয়ার নিয়ম সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম লক্ষ্য রেখে পিল খেতে হবে,না হয় দেখা যাবে হিতে বিপরীত হয়ে যাচ্ছে। যেমন ধরুন-

  • পিউলি পিল নিয়মিত খেলে তার কার্যকারিতা অনেকাংশে কমে যায়। এমনকি শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হয়।মহিলাদের নিয়মিত মাসিক চক্রেও বিরূপ প্রভাব দেখা যায়।মাসিক নির্দিষ্ট সময়ের আগে ও পরে হতে দেখা যায়,মাসিকের দীর্ঘ সময় ধরে ব্যথা ও রক্তপাতের মতো জটিলতা তৈরি হয়।
  • পিল খাওয়ার পর বিলম্বিত মাসিক চক্র অনেকটা চিন্তার বিষয়।বিশেষ করে ৫ দিনের বেশি দেরি হলে, অবশ্যই প্রেগন্যান্সির টেস্ট করিয়ে নেওয়া ভালো।
  • যৌনবাহিত রোগ সংক্রমণের অন্যতম কারণ হলো যেকোনো ধরনের জন্মনিরোধক পিল।এ ধরনের ইমার্জেন্সি পিল যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই পিউলি পিল খাওয়ার সময় এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
  • পিউলি পিল খাওয়ার ২ ঘন্টার মধ্যে যদি বমি হয়,তবে মনে রাখতে হবে এর কোনো কার্যকারিতা নেই।পুনরায় আবার পিল খেতে হবে।

রিলেটেডঃ নোরিক্স ১ পিল খাওয়ার নিয়ম, সাইড ইফেক্ট ও কার্যকারিতা

অন্যান্য ঔষধের সাথে পিউলির মিথস্ক্রিয়া 

এক উপাদানের সাথে অন্য উপাদানের বিক্রিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুফল বয়ে আনে না। সেজন্য একটি নির্দিষ্ট মেডিসিন গ্রহণ করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে এর সাথে অন্য কোনো ঔষধ কিরুপ প্রতিক্রিয়া দেয়। 

পিউলি লিভোনরজেস্ট্রেল বা এর অন্যান্য উপাদানের সাথে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেয়। এছাড়া বিভিন্ন খিচুনিরোধক ঔষধ যেমন: (প্রিমিডন,ফেনোবারবিটন ফেনাইটইন,কারবামাজেপিন), এছাড়া রিফামপিসিন এবং গ্রাইসোফুলভিন জন্মনিয়ন্ত্রণ রোধ করতে পারে এমন কিছু সংখ্যক ঔষধের সাথে পিউলি পিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া করে। 

তাই এসব ঔষধের সাথে পিল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। পিউলি খাওয়ার নিয়ম জেনেই অন্যান্য ঔষধের সাথে এটি খাওয়ার সিধান্ত নিবেন।

পিউলি পিল এর দাম কত?

২০২৩ সালে ১ প্যাকেট পিউলি পিলের দাম হল ১৯৫ টাকা। এতে রয়েছে ৩০ মিঃ গ্রামের পিউলি পিল।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

পিউলি ৩০ মি.গ্রা পিলের পার্শ্বপতিক্রিয়া কি?

সবকিছুর ভালোর সাথে কিছু মন্দ দিক থাকবে,পিউলি পিলও এর ব্যতিক্রম নয়। নিয়মিত পিউলি খাওয়ার কারণে বমিভাব,মাথা ঘোরা,ক্ষুদামন্দা,ক্লান্তির মতো নানা লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

পিউলি ৩০ কীভাবে ব্যবহার করবো?

পিউলি খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে পানির সাথে পুরো পিলটা গিলে ফেলা।খাবারের সাথে বা খাবার গ্রহণ করার পরও এটি খাওয়া যায়।তবে প্রতিদিন একই সময়ে পিল খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।

পিউলি পিল কি মাসিক বন্ধ করতে ভূমিকা রাখে?

পিউলি পিল মাসিক বন্ধ করে না তবে মাসিক বন্ধ অনিয়মিত বা বিলম্বিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে। যদি এরকম হয়,তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

পিউলির পিলের সাথে আমার কি নিয়মিত জননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে?

পিউলি নিয়মিত ব্যবহারে তা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই পিউলি নিয়মিত ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অবলম্বন করা উচিত যেমন: কনডম। আপনার নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবাপ্রদানকারীর সাথে এ নিয়ে পরামর্শ নিন।

শেষ কথা 

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বা আধুনিকতার সংস্পর্শে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে মোটামুটি সবাই সচেতন।আর হবে না বা কেন? বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যা এদেশে বোঝা ছাড়া আসলে কিছুই না। তাইতো জন্মনিয়ন্ত্রণ রোধ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতার অবকাশ নেই। সহজলভ্যতার বা দামের দিক বিবেচনায় পিউলি জনসমাজে জ্নম নিয়ন্ত্রক পিল হিসেবে বেশ কার্যকর ও জনপ্রিয়ও।

পিউলি খাওয়ার নিয়ম খুবই স্বল্প যা মেনে চলা আহামরি কোনো কঠিন কিছু নয়।অল্প একটু সাবধানতা আপনার দাম্পত্য জীবনকে আরো সুখী ও সুপরিকল্পিত করে তুলতে পারে। তাই পিউলি খাওয়ার নিয়ম গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জেনে পিল গ্রহণ করুন।

তথ্যসুত্রঃ

Leave a Reply