আমরা সবাই চাই আমাদের সন্তানের মেধা যেনো খুব তীক্ষ্ণ হয়, তবে দুর্ভাগ্যবশত সব বাচ্চাদের মেধা বা স্মরণশক্তি সমান হয় না। কারো স্মরণশক্তি খুব ভালো হয় আবার কারো হয় দুর্বল। তবে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন নিরাশ না হতে। পরিপূর্ণ আমলে আল্লাহ তায়ালাকে ডাকলে আল্লাহ তাওয়ালা সেই ডাক শুনে থাকেন।
আজকের লেখাতে আমরা জানবো স্মরণশক্তি বৃদ্ধির দোয়া, পড়া মনে রাখার দোয়া ও পরীক্ষা পাশের আমল সম্পর্কে। যে আমল ও দোয়া নিয়মিত করলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়, পড়াশোনা দীর্ঘদিন মনে থাকে, মেধা বাড়ে। তো বন্ধুরা দেরী না করে চলুন দেখে নেই পড়াশোনা মনে রাখার আমল ও দোয়া গুলি।
দোয়া সম্পর্কে সহীহ হাদিস
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এরশাদ করেন : আদ্ দুয়াউ মুখ্খুল ইবাদাতি । অর্থাৎ,“দোয়া হচ্ছে ইবাদতের সারবস্তু বা মগজ ৷”
অন্য এক হাদীসে আছে, “মুমিন বান্দাদের জন্য দোয়া হাতিয়ার স্বরূপ। অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে মানুষ যেমন শত্রুর আক্রমণ হতে আত্মরক্ষা করে শত্রুর উপর জয়ী হয়, ঠিক তেমনিভাবে দোয়ার মাধ্যমে সে প্রাকৃতিক বালা-মুছিবত হতে নিরাপদ হয়ে শয়তান ও নফসের উপর জয়ী হয়ে জীবনে সত্যিকার কামিয়াবী হাসিল করতে পারে।”
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, “যখন কোন মুসলমান কোন বিষয়ে দোয়া করে, তখন হয়তো সে যা চায় তাই পেয়ে থাকে, নতুবা তার উপর হতে কোন মুছিবত উঠায়ে দেয়া হয় অথবা তার দোয়া পরকালের জন্য জমা করে রাখা হয় । (আহমদ ও বায্যার)
আরেক হাদীসে বর্ণিত আছে, মুমিন বান্দাদের কোন কোন দোয়া দুনিয়ায় কবুল না হয়ে থাকলে এর পরিবর্তে পরকালে তারা এত বিপুল পরিমাণে নেক অর্জন করবে যে, নেকের আধিক্য দেখে তারা এ বলে আক্ষেপ করবে আহা! আমাদের কোন দোয়াই যদি দুনিয়ার জীবনে কবুল না হত, তবে না জানি কিরূপ নেকের অধিকারী হতে পারতাম আজ ।
স্মরণশক্তি বৃদ্ধির তদবীর
কারও স্মরণশক্তি কমে গেলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত নিম্নলিখিত আমল যথা নিয়মে পালন করলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
১। শনিবার খালি পেটে: ফাতা আলাল্লাহুল মালেকুল হাক্কক্কু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া রাব্বুল ‘আরশিল কারীম।
২ । রবিবার খালি পেটে: (কুল রাব্বি যিদনী ইলমান । )
৩। সোমবারে খালি পেটে: (সানুক্করিউকা ফালা তানছা।
৪ । মঙ্গলবার খালি পেটে: (লাতুহাররিকু বিহি লিসানিকা লিনাজ’আলা বিহী ।)
৫। বুধবার খালি পেটে: (ইন্না ‘আলাইনা জাম’আহু ওয়াক্কুরআনুহু।)
৬। বৃহস্পতিবার খালি পেটে: জাবতি ছেড়ে (ফাইযা ক্কারা’নাহু ফাত্তাবি’উ কুরআনাহু ।)
৭। শুক্রবার খালি পেটে: (ইন্নাহু ইয়া’অলামুল জাহরা ওয়ামা ইয়াখফা।)
নিয়ম : স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য ৭ দিনে ৭ টুকরা রুটির ওপর উল্লিখিত দোয়াসমূহ পর্যায়ক্রমে লিখে খালি পেটে খাওয়ালে ইনশাআল্লাহ্ স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে ৷
পুনশ্চঃ দোয়া কবুলের জন্যে আপনাকে অবশ্যই পাক পবিত্র অবস্থায় এই আমলগুলি করতে হবে।
পড়া মনে রাখার দোয়া ২
নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়া মনে রাখার দ্বিতীয় দোয়া।
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাফ্ফাহু আ’লা ফুতুহিল আরিফীনা বি-হিমাতিকা ওয়ানশুর আলা রাহমাতিকা ওয়া যাকিরনী মা নাহিতু ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম ।
স্বরণশক্তি বৃদ্ধির অন্য আমল ৩
বিছমিল্লাহ শরীফ ৭৮৬ বার পাঠ করে পানির উপর দম করবে। সেই পানি প্রত্যহ সূর্যোদয়ের পূর্বে ৭ দিন পর্যন্ত পান করাবে।
রিলেটেডঃ বড় ভাইয়ের জন্মদিনের শুভেচ্ছা
পড়া মনে রাখার দোয়া ৪
আরবীঃ رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا
বাংলা উচ্চারণঃ রাব্বি জিদনি ইলমা
বাংলা অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা! আমার জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করুন।
ঘটনাঃ
এই দোয়া সূরা তোয়াহা-এর ১১৪ নং আয়াতের একটি অংশ। আল্লাহ পাক এখানে স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দোয়াটি পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এর দ্বারা উম্মতের জন্য শিক্ষা হল, জ্ঞান আহরণের জন্য চেষ্টা ও সাধনার সাথে সাথে আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য চাইতে হবে। কেননা, তিনিই সকল জ্ঞানের আধার ।
দ্বিতীয়ত, জ্ঞান বিমুখ হয়ে থাকার কোন সুযোগ মুসলমানের জন্য নাই । কারণ, জ্ঞান ও পড়াশোনা মুসলমানদের রক্ত-মাংসের সাথে মিশ্রিত। তাদের ধর্মগ্রন্থ কুরআনের শাব্দিক অর্থ ‘পঠন’। জিব্রাঈল (আ) প্রথম যখন কুরআনের বাণী হযরতের কাছে অবতীর্ণ করেন, তখনকার প্রথম শব্দটি ছিল, ‘ইকরা’- ‘পড়ুন আপনার প্রভুর নামে’। ইসলামের বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগী সঠিকভাবে পালন করতে হলেও জ্ঞানের দরকার। এ জন্যেই জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলমান নরনারীর ওপর ফরয।
আরো লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, যে জ্ঞান মহান প্রভুর নামে, সে জ্ঞানই দামী। যে জ্ঞানের সম্পর্ক আপন প্রভুর সাথে বা জীবন ও জগৎ আর এই পৃথিবীতে আল্লাহর নির্দেশিত দায়িত্বের সাথে সম্পর্কিত হবে না, শেষ পরিণতির বিচারে সে জ্ঞানের কোন দাম নাই। বস্তুত সর্বাবস্থায় প্রতিটি মু’মিনের কামনা ও দোয়া হতে হবে ‘হে আমার রব (আল্লাহ)! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন। – (সূরা তোয়াহা: ১১৪ )
পড়া ও স্বরণশক্তি বৃদ্ধির দোয়া ৫
আরবীঃ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻻَ ﻋِﻠْﻢَ ﻟَﻨَﺎ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻋَﻠَّﻤْﺘَﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ
বাংলা উচ্চারণঃ সুবহানাকা লা ইলমা লানা ইল্লা মা আল্লামতানা, ইন্নাকা আনতাল আলিমুল হাকিম।বাংলা অর্থঃ (হে আল্লাহ) আপনি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে আপনি আমাদিগকে যা শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় আপনিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা। (২/৩২)
জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যে দোয়া
পড়া মনে রাখা, জ্ঞান বৃদ্ধি, মুখের জড়তা দূর হওয়ার জন্যে, মেধাবী হওয়ার জন্যে নিচের দোয়াটি নিয়মিত আমল করা যেতে পারে।
বাংলা উচ্চারণ: রব্বিশরাহ লী সাদরী ওয়া ইয়াসসির লী আমরী ওয়াহলুল উকদাতাম মিললিসানী ইয়াফকাহূ কাউলী ।
বাংলা অর্থ হে আমার রব! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও, আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও এবং আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও, যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে। (সূরা ত্বাহা : ২৫-২৮)
পরীক্ষা পাশের দোয়া ও আমল
যারা পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল নিয়ে অনেক চিন্তিত অথবা পরীক্ষায় পাশ কিভাবে করবেন তা জিয়ে বিচলিত তারা নিম্নোক্ত দোয়াটি পবিত্র অবস্থায় তসবি হিসাবে পড়তে পারেন। এই দোয়াটি চাকুরির জন্যেও প্রযোজ্য।
যারা চাকুরী নিয়ে খুব হতাশাগ্রস্ত, তাদের জন্যেও এই দোয়া উপযোগী।
- বাংলা উচ্চারণ: নাছরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন ক্কারীবুন ওয়া বাশিরিল মু’মিনীনা, হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’অমাল ওয়াকীলু নি‘অমাল মাওলা ওয়া নি‘অমান্নাছীরু । ওমাইঁ ইয়াতাওয়াক্কাল ‘আলাল্লাহি ফাহুয়া হাসবুহু, ওয়াল্লাহুল মুসতা’আনু ‘আলা মা তাছিফুনা ।
- ফযীলত ও নিয়মঃ পরীক্ষা পাস করার জন্য নিম্নের আয়াতটি লিখে টুপির ভেতর রেখে পরীক্ষা দিতে যাবে, ইনশাআল্লাহ পরীক্ষায় পাস করবে। এছাড়া উল্লেখিত দোয়াটি চাকরি লাভের জন্যও বিশেষ ফলপ্রদ।
কারো বিদ্যা বুদ্ধির জন্যে অপরের দোয়া
আপনি যদি আপনার পরিচিত অপরিচিত কারো জ্ঞান, বিদ্যা বুদ্ধি বৃদ্ধির জন্যে দোয়া করতে চান তাহলে নিচের দোয়াটি করতে পারেন।
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আল্লিমহুল হিকমাত ।
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি তাকে জ্ঞান দান করো। (সহীহ বুখারি, হা/৩৭৫৬, তিরমিজি, হা/৩৮২৪, ইবনে মাজাহ, হা/১৬৬)
পবিত্র কোরআনে দোয়ার আদেশ
মহান আল্লাহ্ তা’আলার অনুগত যারা তারা সব সময়ই একমাত্র আল্লাহ্ তাআলার দরবারেই মাথা নত করবে। বিপদাপদ ও বালা মছিবত হতে নিজের মুক্তি লাভের জন্য তাঁরই দরবারে প্রার্থনা করবে।
মান-সম্মান, ধন-দৌলত ও সন্তান-সন্তুতি সম্পৰ্কীয় সব ধরনের সৎ উদ্দেশ্য পূর্ণ হওয়ার জন্য তাঁরই দরবারে আবেদন-নিবেদন করিবে। বস্তুতঃ আল্লাহ্ তা’আলাও তাহাই চেয়ে থাকেন। বান্দা তাঁরই দরবারে পরে থাকা, সুখ-সমৃদ্ধির দিনে তাঁর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অপরদিকে দুঃখ-দৈন্যের দিনে তাঁরই দয়া ও করুণা ভিক্ষা চাওয়াই হচ্ছে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের প্রধান সোপান ।
দোয়া, ইস্তেগফার, ফরিয়াদ, মুনাজাত, আবেদন-নিবেদন তথা নিজের দীনতা-হীনতা প্রকাশ করে বান্দাগণ আল্লাহ্র রহমত লাভ করে, আর পাপীরা পাপ মুক্ত হয় এবং নেককারদের মরতবা ও মর্যাদা আরও উন্নত হয়।
মূলকথা, দোয়ার বরকতে মানুষ উভয় জাহানের কল্যাণ ও কামিয়াবী হাসি করে । রাহমানুর রাহীমও বান্দার দ্বীন-দুনিয়ার ভালই চেয়ে থাকেন। এই জন্য তিনি পবিত্র কোরআনে কালামের মাধ্যমে বান্দাগণকে তাঁহারই দরবারে দোয়া করিবার নির্দেশ দিয়াছেন ।
পক্ষান্তরে, যারা তাঁহার দয়া ও করুণা হতে নিরাশ হয় এবং তাঁহার দরবারে কিছু না চায়, তিনি তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট।
সুতরাং আল্লাহ্র দেয়া নিয়ামতসমূহের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য, অধিক নেয়ামত অর্জন করার জন্য, রোগ-ব্যধি ও বালা-মুছিবত হতে নিরাপদে থাকার জন্য আমাদের উচিত উঠা-বসায়, কথা-বার্তায়, পোশাকে, খাওয়া-দাওয়ায়, শয়নে-জাগরণে ইত্যাদি কাজে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ্ তাআলাকে স্মরণ রাখা । আর ভাল ভাল দোয়া পাঠ করে কার্যতঃ তাঁর বন্দেগী ও গোলামীর পরিচয় দেয়া ।
পবিত্র কোরআনে মজীদে এরশাদ হয়েছে, ফাক্কুরুনী আরকুম ওয়াশকুরূরী ওয়ালা তাক্কুরূন । অর্থাৎ, “হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আমাকে স্মরণ করিও, তাহলে আমি তোমাদিগকে স্মরণ করব । আর আমার নেয়ামতের শোকরিয়া আদায় করিও এবং (আমার দান ও অনুগ্রহের কথা ভুলে গিয়ে) আমার নাফরমানী করো না।”
অন্য এক আয়াতে আরও স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ হয়েছে যে,উদ্উনী আস্তাজিব লাকুম । অর্থাৎ, “তোমরা আমাকে ডাকিও; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব ।”
তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকের পড়া মনে রাখার দোয়া ও আমলগুলি। উপরের দোয়াগুলি মেধা, স্মরণশক্তি ও পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে খুব কার্যকরী। যদি খাস দিলে পাক পবিত্র অবস্থায় এই দোয়া ও আমালগুলি করতে পারেন তাহলে আল্লাহ তায়ালা আপনাদের কাউকেই খালি হাতে ফেরাবেন না।
আজকের জন্যে এখানেই বিদায়, যদি এই লেখাটি ভালো লাগে কমেন্ট করে জানাবেন, ও লেখাটি শেয়ার করে অন্যদের জানাতে সাহায্য করবেন।