দুনিয়াতে সন্তানের পিতা মাতা হওয়া খুব আনন্দের ও সুখের। কেউ কেউ বলেন সন্তান জন্মদানেই নারী জীবনের সার্থকত। তাই হয়তো সব নারীই চায় মা হতে। আমরা কমবেশি সবাই চাই নেক সন্তানের বাবা মা হতে, দুঃখের বিষয় অনেকেই বাচ্চা নিতে চেষ্টা করতেছেন এবং হতাশ হচ্ছেন।
তবে আল্লাহ তাওয়ালা বলেছেন “তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। (অর্থাৎ তোমরা আমার কাছে চাও, আমি দেব)।” -(সূরা মু’মিন: ৪০: ৬০)
তাই দয়ার সাগর মহান রাব্বুল আলামিনকে প্রতিনিয়ত দোয়ার মাধ্যমে ডাকতে হবে। আজ হোক বা কাল হোক তিনি দয়ার সাগর, আপনার আমার ডাকে সারা না দিয়ে থাকতে পারবেন না। তবে আল্লাহকে ডাকতে কিছু বিশেষ দোয়া আছে যেগুলো শুধু ঐ কাজেই ব্যবহার করা হয়। আপনি যদি নেক সন্তান চান তাহলে আপনাকে সন্তান লাভের দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহকে ডাকতে হবে।
আজকের লেখাতে আমরা জানবো নেক সন্তান লাভের দোয়া, পুত্র সন্তান লাভের দোয়া, মেয়ে সন্তান লাভের দোয়া ও বিভিন্ন আমলগুলি।
সন্তান লাভের দোয়া
বিয়ের পর নেক সন্তানের জন্যে নর-নারীরা যে দোয়া পড়ে সেটি হচ্ছে সন্তান লাভের দোয়া। সন্তান লাভের জন্যে নিচে কয়েকটি সন্তান লাভের পরীক্ষিত আমল ও দোয়া দেওয়া হল, বুঝার সুবিদার্থে সেগুলোর বাংলা উচ্চারণ, আরবী উচ্চারণ ও রেফারেন্স ফটোসহ দেওয়া হলো।
এই দোয়াগুলি বিভিন্ন নবী রাসুল নিজেরা পড়েছেন এবং আল্লাহ উনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তো খাস দিলে আপনি যদি আল্লাহর কাছে নেক সন্তান লাভের জন্যে দোয়া করেন তাহলে উনি নিরাশ করবেন না।
সন্তান লাভের পরীক্ষিত আমল – ১
বাংলা উচ্চারণঃ রব্বি লা তাযারনি ফারদাও ওয়া আনতা খইরুল ওয়ারিছি-ন।
আরবি উচ্চারণঃ رَبِّ لَا تَذَرْنِى فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْوَٰرِثِينَ
বাংলা অর্থঃ হে আমার রব! আমাকে নিঃসন্তান করে ছেড়ো না। আর তুমিই সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী । (সূরা আম্বিয়া : ৮৯)
সন্তান লাভের দোয়া ও আমল – ২
বাংলা উচ্চারণঃ রব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুররিয়্যাতান ত্বায়্যিবাতান ইন্নাকা সামীউদ দু’আ ৷
আরবী উচ্চারণঃ رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء
বাংলা অর্থঃ হে আমার রব! তোমার বিশেষ কুদরতে আমাকে একটি উত্তম পবিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয়ই তুমি দু’আ শ্রবণকারী । (সূরা আলে ইমরান : ৩৮)
ঘটনাঃ
প্ৰেক্ষাপট
হযরত ঈসা (আ)-এর মা ছিলেন মরিয়ম (আ)। মরিয়ম (আ) যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন তার মা আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী তাকে বায়তুল মুকাদ্দাসে আল- আকসা মসজিদের খেদমতের জন্য ওয়াকফ করে দেন।
কিন্তু নবজাতকের লালন-পালনের দায়িত কে নেবে তা নিয়ে মসজিদের ইমাম ও খাদেমদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। তারা প্রত্যেকে মরিয়মের প্রতিপালনের দায়িত্ব নেয়ার দাবিদার হয়। শেষ পর্যন্ত বিশেষ লটারির মাধ্যমে বিষয়টির ফয়সালা হয় এবং আল্লাহর নবী যাকারিয়া (আ) তার লালন-পালনের দায়িত্ব পান । তিনি ছিলেন নিঃসন্তান এবং সম্পর্কে মরিয়মের খালু।
যাকারিয়া (আ) তাকে মেহরাবে (হুজরায়) একাকি রেখে কাজে-কর্মে যেতেন। ফিরে এসে দেখতেন যে, বিনা মওসুমে মরিয়মের জন্য হরেক রকমের ফলমূল ও খাবার আনা হয়েছে। একদিন জিজ্ঞাসা করলেন: মরিয়ম! এগুলো তোমার জন্য কোত্থেকে এসেছে? মরিয়ম জবাব দিল, এসব আল্লাহর কাছ থেকে আসে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বে-হিসাব রিযিক দান করেন। আল্লাহর কুদরতের এ দৃশ্য দেখে আর শিশু মরিয়মের জবাব শুনে যাকারিয়া (আ)-এর মনের একটি সুপ্ত আশা জেগে উঠল। তিনি ভাবলেন, যে আল্লাহ আপন কুদরতে বিনা মওসুমে মরিয়মের জন্য ফলমূলের ব্যবস্থা করতে পারেন তিনি নিশ্চয়ই বৃদ্ধ বয়সে একটি সন্তানের আকাঙ্খা পূরণ করে আমাদের মনে সান্ত্বনা দিতে পারেন।
সেই মনোবল নিয়ে সেখানেই তিনি উপরোক্ত দোয়াটি আল্লাহর দরবারে পেশ করেন এবং সাথে সাথে তা কবুল হয়। সে দোয়ার বরকতে তাঁর ঘরে জন্ম নেন আল্লাহর নবী ইয়াহয়া (আ) । -(দ্র. সূরা আলে ইমরান: ৩ঃ ৩৬-৪০)
রিলেটেডঃ নরমাল ডেলিভারি হওয়ার দোয়া: প্রসব সহজে হওয়ার আমল ও তাবীজ ২০২৩
পুত্র সন্তান লাভের দোয়া ও আমল
পুত্র সন্তান লাভের লাভের জন্যে নিচের দোয়াটি নিয়মিত করতে হবে।
বাংলা উচ্চারণঃ রব্বি হাব লী মিনাস্ সালেহীন
আরবি উচ্চারণঃ رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
বাংলা অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এক সৎকর্মপরায়ণ সন্তান দান কর । -(সূরা সা’ফফাত: ৩৭ঃ ১০০)
ঘটনাঃ আল্লাহর নবী ইব্রাহীম (আ)-এর একটি মকবুল দোয়া। তিনি আল্লাহর দ্বীনের প্রচার করতে গিয়ে নানা পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার পর যখন বার্ধক্যে উপনীত, তখন এই দোয়া পেশ করেন আল্লাহর দরবারে। সেই দোয়া কবুল হয় এবং আল্লাহ পাক তাকে এমন একজন পুত্র-সন্তান দান করেন, যিনি সর্বাবস্থায় আল্লাহর পথে পিতার সাহায্যকারী হয়েছিলেন।
শৈশবে আল্লাহর আদেশ পাওয়ার পর পুত্রকে ডেকে যখন তিনি বললেন, হে প্রিয় বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবাই করছি।
তখনই ছেলে বললেন: হে • পিতা! আপনি যে জন্য আদিষ্ট হয়েছেন তা অতিসত্বর কার্যকর করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। এরপর ইব্রাহীম (আ) পুত্র ইসমাঈলকে কুরবানী দেয়ার উদ্দেশে তার গলায় ছুরি চালান; কিন্তু আল্লাহ পাক ইসমাঈলকে সরিয়ে কুরবানী হিসেবে জবাই করার জন্য একটি বেহেশতী দুম্বা পাঠিয়ে দেন।
পরবর্তীতে ইসমাঈলকে নিয়েই তিনি কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাজেই যে দোয়ার বরকতে তিনি এমন সুসন্তান পেয়েছিলেন, তা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সুসন্তান কামনার অবলম্বন হতে পারে।
পুত্র সন্তান হওয়ার আমল
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহু ইয়া’অলামু মা তামিলু কুল্লা উনছা ওয়ামা তাগীছুল আরহামা ওয়াতাযদাদু ওয়াকুল্লু শাইয়্যিন ‘ইন্দাহু বিমিক্কদারিন। ‘আলিমিল গাইবি ওয়াশ্ শাহাদাতিল কাবীরাল মুতা’আলি ইয়া যাকারিয়্যা আন্না নুবাশিরুকা বেগুলামিন ইসমুহু ইয়াহ্ইয়া লাম ইয়াজ‘আল ইলাহু মিন ক্বাবলি সামিয়্যা, বিহাক্কি মারইয়ামা ওয়াঈসা ইবনান ছালিহান ত্বাওয়ীলাল ‘উমরি ওয়াবিহাক্কি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামা।
আমল করার নিয়ম: যাদের কেবল মেয়ে সন্তান হয় তারা গর্ভস্থিত হবার পর গোলাপের পানি ও জাফরান দ্বারা একটুকরা কাগজে উক্ত তাবিজটি লিখে গর্ভিনীর গলায় বেঁধে দেবে, ইন্শাআল্লাহ্ ছেলে হবে। এছাড়া (ইয়া মাতীনু) পাঠ করে গর্ভিনীর পেটের
উপর দিয়ে গোল রেখা টেনে দেবে, ইনশাআল্লাহ শুভ ফল পাবে।
মেয়ে সন্তান লাভের দোয়া ও আমল
এবার আসুন দেখে নেই মেয়ে সন্তানের জন্যে যে দোয়াটি করতে হবে। আপনি যদি মেয়ে সন্তান চান নিয়ত করতে হবে, ঠিকমতো আল্লাহর ইবাদত করতে হবে, সেই সাথে নিচের দোয়াটি পড়তে হবে।
বাংলা উচ্চারণঃ হাসবুনাল্লাহু ওয়ানি’অমাল ওয়াকীলু ।
ফযীলতঃ সকল প্রকার মনের বাসনা পূর্ণ হওয়ার জন্য উল্লিখিত দোয়াটি তিনশত তেরবার করে পাঠ করবে। মামলা-মোকদ্দমার জন্য এ আমলটি অত্যন্ত ফলদায়ক ।
নিয়মঃ অত্যন্ত পাক-পবিত্র হয়ে একাগ্রতার সাথে উক্ত দোয়াটি তিনশত তেরবার পাঠ করে কয়েক মরতবা দরূদ শরীফ পাঠ করে মুনাজাতের পর দোয়া করলে যেকোন কাজে ইনশাআল্লাহ শুভ ফল লাভ হবে।
সন্তান লাভের দোয়া ও আমল
যাদের সন্তান হচ্ছে না তাদের জন্যে নিয়মিত নিচের আমলটি করা জরুরী।
বাংলা উচ্চারণঃ আও কাযুলুমাতিন ফী বালিলুজ্জিয়্যিই ইয়াগশাহু মাওজুম্ মিন্ ফাওক্কিহী মাওজুম মিন ফাওক্কিহী সাহাবুন যুলুমাতুন বা অদুহা ফাওক্কা বা’অদ্বিন, ইযা আখরাজা ইয়াদাহু লাম ইয়াকাদ ইয়ারাহা ওয়ামান লাম ইয়াজ’আলিল্লাহু লাহু নূরান ফামা লাহু মিন নূরীন।
আমলটি করার নিয়ম: ৪০টি লবঙ্গের মধ্যে প্রতি একটির ওপর সাতবার করে উক্ত দোয়া পাঠ করে ফুঁ দেবে, এভাবে ৪০টির ওপর ফুঁ দেবে। এরপর হায়েয হতে পবিত্ৰ হবার সাথে সাথে প্রতি রাতে শোয়ার সময় উক্ত লবঙ্গ একটি একটি করে পানি ছাড়া খেয়ে স্বামীর সাথে রাত যাপনের পর যথাসাধ্য স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য কাজ সমাধা করবে। এভাবে ৪০ রাতে খাওয়া শেষ হলে ইনশাআল্লাহ্ সন্তান লাভ হবে।
নেক সন্তানের জন্যে সহবাসের দোয়া
নেক সন্তানের জন্যে স্ত্রী সহবাসের আগে অবশ্যই স্ত্রী সহবাসের দোয়াটি পড়তে হবে। এ নিয়ে আমাদের ব্লগে বিস্তারিত একটি লেখা আছে সেটি উপরের লিংকে গিয়ে দেখতে পারেন। এছাড়াও সহবাসের ইসলামিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে।
বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ্ শাইত্বা-না ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বা-না মা রাঝাক্বতানা।
আরবী উচ্চারণ: بِسْمِ اللَّهِ ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
বাংলা অর্থ: ‘আল্লাহ্র নামে আরম্ভ করছি, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখ’। মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৩০৪ ।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলনের পূর্বে যদি উক্ত দো’আ বলে তারপর তাদের কিসমতে কোন সন্তান থাকলে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
তো এই ছিলো বন্ধুরা সন্তান লাভের দোয়া ও আমল, যদি লেখাটি ভালো লাগে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।