আমরা আমাদের মা-চাচি কিংবা বাবা-চাচাদের দেখে এসেছি দূর্বলতা কাজ করলেই ইসবগুলের ভুসি খেতে। তবে এ-ব্যাপারে হয়তো আমাদের আগ্রহ খুব একটা ছিলো না।
তবে সময়ের সাথে সাথে সবকিছুর পরিবর্তন ঘটায় অগত্যা ইসবগুলের ভুসিকেও প্রতিদিনকার রুটিনে রাখতে হচ্ছে। তবে এই ইসবগুলের ভুসি কি আদৌ মানবশরীরে ইতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলে? নাকি এ-কেবল অভ্যাসে দাস হয়ে উঠার গল্প!
চলুন এই প্রশ্নের সকল উত্তর আজ খুঁজে বের করি। জেনে নিই ইসবগুলের ভুসি পরিচিতি, ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম, ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি।
ইসবগুলের ভুসি কি?
শুরুতেই চলুন ইসবগুলের ভুসির পরিচিতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। ইসবগুলের ভুসি প্লান্টাগো ওভাটা নামক একধরণের উদ্ভিদের বীজ থেকে সংগ্রহ করা হয় । আমাদের দেশে এটি ইসবগুলের ভুসি নামে বেশ পরিচিত হলেও বিদেশিরা এটিকে ইসপাঘুলা, ফ্লি-মাছি বা সাইলিয়াম Psyllium Husk নামে চিনে থাকে। ফ্লি-মাছি বলার অন্যতম কারণ হলো এটি দেখতে কিছুটা গ্রীক মাছির মতো।
ইসবগুলের ভুসি যে বীজ থেকে সংগ্রহ করা হয় সেই বীজগুলি দেখতে কিছুটা নৌকার মতো। এই ভুসির মূল উদ্ভিদে থাকা ফল দেখতে ৭-৮ মিলিমিটার লম্বা হয় এবং ফলে থাকা বীজ ৩ মিলিমিটার লম্বা হয়। দাম-গমের মতো এটি সাধারণত রবিশষ্য হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
এই ভুসি যখন খাবার উপযুক্ত হয় তখন তা ফাইবারের রূপ নেয়। যা সাধারণত একটি রেচক হিসাবে কাজ করে থাকে। বলে রাখা ভালো এই ইসবগুলের ভুসিকে বাল্ক-ফর্মিং ল্যাক্সেটিভও বলা হয়ে থাকে।
বাল্ক-ফর্মিং ল্যাক্সেটিভ হলো এমন একটি সিস্টেম যার সাহায্যে আপনার পেট সবসময় নরম থাকবে এবং মলত্যাগ অনেক সহজ হয়ে যাবে। যাইহোক! ইসবগুলের ভুসি সম্পর্কিত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা হলো:
- বৈজ্ঞানিক নাম: Plantago ovata
- ইংরেজি নাম: Blond Plantain
- উদ্ভিদ প্রজাতি: P. ovata
- গাছের উচ্চতা: ২ ফুট
- ফলের উচ্চতা: ৭/৮ মিলিমিটার
- বীজের উচ্চতা: ৩ মিলিমিটার
- আদি বাসভূমি: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল
- জনপ্রিয় বীজ: প্ল্যান্টাগো ইন্ডিকা
- চাষের পরিবেশ: আর্দ্রতাপূর্ণ স্থান
ইসবগুলের ভুসির পুষ্টিগুণগুলি কি কি?
এবার আসি ইসবগুলের ভুসির পুষ্ঠিগুণ বিষয়ে। ইসবগুলের ভুসি দেহের হজম সম্পর্কিত স্বাস্থ্যের সম্পূর্ণ দিকটা ভালো থাকার জন্যে কাজ করে থাকে৷ এছাড়া এর আরো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।
অনেকেই ইতিমধ্যেই ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম নামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আবার অনেকেরই এটি প্রতিরোধ করার প্রয়োজন পড়ে। আর যারা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম সম্পর্কে এখনো জানেন না তাদের বলে রাখা ভালো, এই রোগটি কিডনি বিষয়ক রোগ।
ইসবগুলের ভুসি এই ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম দূর করতে রীতিমতো সক্রিয়াভাবে কাজ করে। এছাড়াও ইসবগুলের আরো কিছু ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। যা আমাদের দেহের সুস্থতার জন্যে অত্যন্ত উপকারী। এ-সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলের “ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা” শীর্ষক অংশে চোখ রাখুন।
১ চা চামচ বা ১৬ গ্রাম ইসবগুলের ভুসিতে আপনি পাবেন:
- ক্যালোরি: ৩৫%
- ফ্যাট: ০.৭ গ্রাম
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ০.১ গ্রাম
- পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ০.৪ গ্রাম
- মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ০.১ গ্রাম
- সোডিয়াম: ০.৩ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ১০ গ্রাম
- সুগার: ০.১ গ্রাম
- প্রোটিন ২.৫ গ্রাম
- আয়রন: ১.৭ মিলিগ্রাম
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার আলাদা কোনো নিয়ম নেই। তবে বেশ কিছু টিপস ফলে করে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের ইসবগুলের ভুসির রেসিপি খাওয়া যেতে পারে। চলুন আর্টিকেলের এই অংশে বিভিন্ন ধরণের উপকারিতা পেতে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক:
গ্যাস্ট্রিক কমাতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম কি?
অনেকেই দীর্ঘদিন ঘরে গ্যাস্ট্রিকে সমস্যায় ভুগছেন। বিভিন্ন ঔষধপত্র খেয়েও যাদের কোনো কাজ হচ্ছে না তারা এবার ইসবগুলের ভুসিকে কাজে লাগাতে পারেন। এই ইসবগুলের ভুসি একইসাথে আপনাকে গ্যাস্ট্রিকসহ পেটের বিভিন্ন সমস্যা এবং মলত্যাগজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
কারণ নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস পেটের ভিতরের দিকে প্রতিরক্ষামূলক একটি আস্তরণ সৃষ্টি করে। যা পরবর্তীতে মানবদেহের হাইপার অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।
তাছাড়া গ্যাস্ট্রিকের পাশাপাশি এটি ডায়রিয়ার সমস্যাও দূর করে থাকে। চলুন দেখে নেওয়া যাক ঠিক কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে গ্যাস্ট্রিক কমাতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে সে-বিষয়ে আলোচনা করা যাক:
- ইসবগুলের ভুসি নিন ২/১ চা চামচ
- এক বাটি বিশেষ করে মিনি বাটিতে দই নিন
- এবারে ইসবগুলের ভুসি এবং দই ২/৩ ঘন্টার জন্যে রেখে দিন
- রাতের খাবার, দুপুরের খাবার বা ভারী যেকোনো খাবার গ্রহণে পূর্বে এই রেসিপিটি খেয়ে নিন।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম কি?
ইসবগুলের ভুসি যদি আপনি নিয়ম মেনে এবং সঠিকভাবে তা রেসিপি-আকারে তৈরি করে খেতে পারেন, সেক্ষেত্রে এই খাবার আপনাকে হজম শক্তির সমস্যা থেকে পুরোপুরি ছুটি দেবে। অনেকেই হজম শক্তির সমস্যার কারণে সঠিকভাবে মলত্যাগ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে।
এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নিয়ম অনুসরণ করে ইসবগুলের ভুসি খেলে দেখবেন তা আপনার মলের বাড়তি তরল বর্জ্যটুকু শোষণ করে মলত্যাগের অভ্যন্তরীণ রাস্তাটি পরিষ্কার করর দিয়েছে।
যা আপনাকে টয়লেটে বাড়তি সময় লাগার সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে। হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ইসবগুলের ভুসি খেতে চান তারা এটি তৈরি এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন:
- ইসবগুলের ভুসি বা এর পাউডার ১/২ চা চামচ নিন।
- গ্লাসে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে ভালোভাবে মেশান
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে এটি পান করে ফেলুন
এই খাবার-রুটিন নিয়মিত অনুসরণ করতে পারলে খুব দ্রুত সময়ে আপনার হজম শক্তি অনেকগুণ বেড়ে যাবে। সেই সাথে পুরো শরীর বেশ হালকা হয়ে যাবে এবং সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে।
বাচ্চাদের ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম কি?
চাইলে বাচ্চাদেরও ইসবগুলের ভুসি খাওয়ানো যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখা জরুরি। যেখানে প্রাপ্তবয়স্করা দৈনিক ৭/৮ গ্রাম ভুসি খেতে পারবে, সেখানে এর ৩ গুন কম পরিমাণ ভুসি দিনে ৩ বার শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।
তবে যাদের বয়স এখনো ৬ মাস হয়নি তারা মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোনো খাবার, এমনকি পানিও পান করতে পারবে না। সুতরাং বাচ্চাকে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ানোর নিয়ম সম্পর্কে জানার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার বাচ্চার বয়স ৬ মাস প্লাস হয়েছে কিনা।
এবার আসি বাচ্চাদের ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়মের ব্যাপারে। চাইলে বিভিন্নভাবে বাচ্চাদের এটি খাওয়ানো যেতে পারেন। যেমন:
- দুধের সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন
- ভিজিয়ে রেখে আইসক্রিমের সাথে দিন
- দই কিংবা যেকোনো ডেজার্টের সাথে দিন
- চিনি এবং পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে দিন
- বিভিন্ন ধরণের রসালো ফলের উপর ছিটিয়ে দিন (এক্ষেত্রে পূর্বে ভিজিয়ে নিতে হবে)
ওজন কমাতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম কি?
পূর্বেই আলোচনা করেছি যে ইসবগুলের ভুসির বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। এসব উপকারিতার মাঝে নিশ্চয় ওজন কমানোর বিষয়টিও লক্ষ্য করেছেন। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট রেসিপি তৈরি করে তা ওজন কমানো উদ্দেশ্যে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সম্পূর্ণ নিরাপদ। চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই নিয়মগুলি কি কি:
- ইসবগুলের ভুসি নিন ২/৩ চামচ
- লেবুর রস নিন ৭/৮ চা চামচ
- এবারে হালকা চিনি এবং পানি মিশিয়ে গুলিয়ে নিন
- ৩০/৪০ মিনিট রেস্টে রেখে পান করে নিন
আবার এভাবেও তৈরি করতে পারেন:
- সাধারণ পানি নিন
- চিনি নিন সাধমতো
- এবারে ইসবগুলের ভুসিসহ সকল উপকরণ মিশিয়ে নিন
- যতক্ষণ না ভুসিগুলি ফলে দানার মতো না হচ্ছে ততক্ষণে তা রেস্টে রাখুন
- সবশেষে ভুসি ফুলে গেলে পান করে নিন
এখানে ভুসি ফোলার জন্যে অপেক্ষা করতে বলার মূল কারণ হলো, শুকনো ভুসি আপনার স্বাস্থ্যহানী ঘটাতে পারে। বিশেষ করে অল্পসময়ে দেখা দেওয়া প্রতিক্রিয়া হিসাবে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আর হ্যাঁ, যেসব রেসিপিতে চিনি যোগ করা করার কথা বলা হয়েছে তারা নিজেদের শরীরের অবস্থা (বিশেষ করে ডায়াবেটিস আছে কিনা) বুঝে পরিমাণটুকু ঠিক করে নিবেন।
রিলেটেডঃ চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, পুষ্টিগুণ
ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা ও অপকারিতা
ইসবগুলের ভুসি একদিকে যেমন আপনার ওজন কমাতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে, ঠিক তেমনই এর প্রভাবে দেহে নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে।
সুতরাং ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা সম্পর্কে যেমন আমাদের বিস্তারিত জেনে রাখা প্রয়োজন, ঠিক তেমনই এর পাশাপাশি এই ভুসির অপকারিতা সম্পর্কেও জ্ঞান রাখা উচিত। নতুবা সঠিক তথ্য না জানার কারণে মৃত্যুর মতো করুণ অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার আশংকা পারে। চলুন এ-নিয়ে বিস্তারিত জানা যাক।
ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা
ইসবগুলের স্বাস্থ্য উপাকারিতা নিয়ে আলোচনা করলে তা হয়তো আর কখনোই শেষ হবে না। তবে আমাদের আজকের আর্টিকেলে বেছে বেছে এমনকিছু উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো, যা হয়তো আপনি পূর্ব থেকেই জানতেন না এবং জানলে নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস করতেন। চলুন তবে আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক:
উচ্চ ফাইবার রয়েছে
ইসবগুলের ভুসির উপকারিতাগুলি মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো এতে থাকা ফাইবারের কাজ। আর আমরা সকলেই তো জানি ফাইবার আমাদের দেহে কতটক গুরুত্বপূর্ণ। মূলত এই ফাইবার মানবদেহের হজমশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।
তাছাড়া আমাদের দেহে হজমকারী বেশকিছু ভালো ব্যাকটেরি রয়েছে। যার পরিমাণ দিনে দিনে শরীরে বাড়াতে পারলে তা স্বাস্থ্যের উপকারে আসে। এক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি এসব ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ফলে হজম বেশ ভালো হয় এবং কিডনির সমস্যা দ্রুত কমে যায়।
পাশাপাশি যাদের মাঝে বিভিন্ন সময়ে হজমজনিত সমস্যা দেখা দেয়, বিশেষ করে ডায়রিয়া দেখা দেয় তারা ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। বিশেষ করে ডায়রিয়ার সমস্যা ইতিমধ্যেই দেখা দিলে এটির প্রতিকারে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। আশা করি ঔষধের চাইতেও ওই ভুসি দারুণ কাজ করবে।
ওজন কমাতে কাজ করে
যারা খুব কম সময়ে ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন৷ কারণ ইসবগুলের ভুসিতে থাকা ফাইবার আপনার খিদে অনেকক্ষণ দমিয়ে রাখতে পারবে।
যার ফলে আপনাকে বারবার খাবার গ্রহণ করতে হবে না এবং করলেও অতি অল্প খাবারে আপনার খিদে মরে যাবে। সেই সাথে খাবার না খেলেও দেহে শক্তির পরিমাণ সর্বদাই ঠিক থাকবে।
ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করে
যারা কোনোভাবেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না তারা নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। কারণ নির্দিষ্ট পরিমাণের ইসবগুলে ভুসি রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এই ইসবগুলের ভুসি।
কোলেস্টেরল ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ নার্স প্র্যাকটিশনারদের জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ইসবগুলের ভুসি ব্যবহার করা যাবে। এটি কোলেস্টেরল-রোগীদের জন্যে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, ডাক্তারেরা এটিকে প্রেসক্রিপশনেও লিখে দেন। কারণ ইসবগুলের ভুসিতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণের ফাইবারের ঘনত্ব।
কোলেস্টেরলের পাশাপাশি ইসবগুলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সাহায্য করে। কারণ প্রতিটি মানবদেহের ইসবগুলে ভুসি কাজ করে রেচক হিসাবে। এটি অন্ত্রে প্রবেশ করে এতে থাকা তরল পদার্থ শোষণ করে দেয়। এমনটা হওয়ার ফলে অন্ত্র ফুলে যায় এবং মলত্যাগের বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে যায়।
রিলেটেডঃ ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা, এবং খাওয়ার নিয়ম ২০২৩
ইসবগুলের ভুসির অপকারিতা
কেবলমাত্র উপকারিতা সম্পর্কে না জেনে এর পাশাপাশি আমাদের ইসবগুলের ভুসির অপকারিতাগুলি কি কি সে-সম্পর্কেও জানতে হবে।
যদি কারো মাঝে এমন কোনো কারণ দেখা দেয় যেসব কারণের প্রেক্ষিতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া ঠিক নয়, সেক্ষেত্রে পুরোপুরিভাবে ইসবগুলের ভুসিকে “না” বলতে হবে।
চলুন দেখে নেওয়া যাক এসব কারণের মাঝে ঠিক কোন কোন পয়েন্টগুলি পড়ে:
এলার্জির সমস্যা বেড়ে যায়
যারা অনেক বেশি বা গুরুতর এলার্জির সমস্যায় ভুগছেন তাদের উচিত ইসবগুলের ভুসি না খাওয়া। তবে একান্তই যদি খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে বেশ অল্প পরিমাণে ২/১ দিন পরপর খেতে পারেন। যারা ইতিমধ্যেই চরম পরিমাণের এলার্জিতে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এই ইসবগুলের ভুসি।
এলার্জি ছাড়াও যাদের মাঝে বিভিন্ন চুলকানির সমস্যা রয়েছে, ফুসকুড়ি রয়েছে…বিশেষ করে মুখ, গলা বা জিহ্বাতে এসব সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত আপাতত ইসবগুলের ভুসি না খাওয়া।
গ্যাস্ট্রিক বেড়ে যায়
যারা অনেক বেশি পরিমাণে ইসবগুলের ভুসি খান বা যারা এই ভুসি প্রতিদিন খান তাদের মাঝে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
বিশেষ করে ইতিমধ্যেই যারা গ্যাস্ট্রিক-রোগী তাদের ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আর যদি ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সময় নিয়মিত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে সরাসরি ডাক্তার বা ফার্সাসিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
অন্ননালীর সমস্যা দেখা দেয়
ইসবগুলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত আর্টিকেল কখনোই সম্পূর্ণ হবে না…যদি না এতে এই অপকারিতাটুকু তুলে ধরা না হয়! ইসবগুলের ভুসির মতো জেলি-টাইপ পানীয় অনেক বেশি পরিমাণে পান করলে আপনার গলা ফুলে অন্ননালী ব্লক হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি পেট ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা তো আছেই!
শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হতে পারে
ইসবগুলের ভুসি শুকনো, ভাজা অবস্থায় কিংবা কম পানি বা তরল উপকরণ দিয়ে খেলে তা শ্বাসযন্ত্রে আটকে গিয়ে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। ফলে এই জটিলতা ব্যাক্তিরে দুয়ারে পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।
এছাড়াও বুকে ব্যাথা, গলাতে বিভিন্ন অসুবিধাসহ নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পর অনেক বেশি পরিমাণে জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ইসবগুলের ভুসির ব্যবহারগুলি কি কি?
ইসবগুলের ভুসি সাধারণত খাবারের সাথে মিশিয়েই খাওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে আপনি উপরোক্ত রেসিপিগুলি বানিয়ে দেখতে পারেন।
তাছাড়া সোজা বাংলায় ইসবগুলের ভুসিকে বিভিন্ন রসের সাথে, দইয়ের সাথে, আইসক্রিমের সাথে, জুসের সাথে এবং বিভিন্ন ডেজার্টের সাথে খাওয়া যেতে পারে। যদিও এর কোনো স্বাদ নেই। তবে এটি ব্যবহারে আপনার যেকোনো রেসিপি অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
আর হ্যাঁ! যারা ভাবছেন ইসবগুলের ভুসি একদিন ভেজে খাবেন বা শুকনো খেয়ে দেখবেন, তারা এমনটা করে নিজেদের বিপদ ডেকে আনবেন না। কারণ ইসবগুলের ভুসি শুকনো খেলে তা গলায় আটকে যেতে পারে এবং যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। চলুন এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ইসবগুলের ভুসির ব্যবহার:
যেকোনো পানীয়ের সাথে
যেকোনো পানীয়ের সাথেই কিন্তু ইসবগুলের ভুসি বেশ জমে যায়। বিশেষ করে উপরোক্ত অংশগুলিতে যেসব পানীয় নিয়ে আলোচনা করেছি সেসব পানীয়তে ইসবগুলের ভুসি ব্যবহার করতে পারেন।
যেকোনো ডেজার্টের সাথে
যেকোনো ডেজার্টে সহজেই যেমন তোকমা ব্যবহার করা যায়, ঠিক তেমনই এর সাথে পানিতে ভিজিয়ে রাখা ইসবগুলের ভুসিও ব্যবহার করা যায়। তবে ইসবগুলের ভুসি যেকোনো ডেজার্টের সাথে খেতে হলে ডেজার্টটি কোনোভাবেই শুকনো ডেজার্ট হওয়া যাবে না।
বিভিন্ন স্বাদের আইসক্রিমের সাথে
বিভিন্ন ফ্লেভারের বা স্বাদের আইসক্রিমের সাথেই খাওয়া যাবে এই ইসবগুলের ভুসি। ইসবগুলের ভুসিকে পানিতে মিশিয়ে সহজেই যেকোনো আইসক্রিমের সাথে খেয়ে দেখতে পারেন।
শেষ কথা
ইসবগুলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তো জানলেন। এবার এই খাবারের সঠিক ব্যবহারের পালা। প্রকৃতি থেকে আমরা যে ঔষধিগুণ পাই তা তথাকথিত মেডিসিনের চাইতে অনেকগুণ ভালো। সুতরাং ঔষধ খাওয়ার রোগ সৃষ্টি করতে না চাইলে নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে ইসবগুলের ভুসি খান।
আর হ্যাঁ! যাদের রুটিনের প্রতিদিন ঔষধ আছে, তারা ঔষধ খাওয়ার অন্তত পরবর্তী ৩ ঘন্টা পর্যন্ত কোনো ইসবগুলের রেসিপি বা পানীয় পান করবেন না। কারণে ঔষধ এবং ইসবগুলের ভুসি একই সাথে দেহে থাকলে তারা নিজেদের মাঝে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে না। ফলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
ইসবগুলের ভুসি কতদিন খাওয়া যায়?
প্রতিদিনই আপনি ইসবগুলের ভুসি খেতে পারবেন। তবে আপনাকে পরিমাণের দিকটুকু সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে ৭/৮ গ্রামের বেশি এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ০.৫/১ গ্রামের বেশি দেওয়া যাবে না।
এক্ষেত্রে কোনোভাবেই উক্ত পরিমাণ ভুসি ১৫০ মিলিগ্রামের বেশি পরিমাণ পানি বা তরল উপকরণের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যাবে না। নতুবা এর ব্যাতিক্রম হলে শরীরের এই খাবারের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়?
অবশ্যই খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান তার প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ভিজিয়ে রাখা ইসবগুলের ভুসি খেয়ে নিতে পারেন।
ইসবগুলের ভুসি কিভাবে খেতে হয়?
ইসবগুলের ভুসি কিভাবে খেতে হয় সে-সম্পর্কে ইতিমধ্যেই একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেকোনো ভালো এবং স্বাস্থ্যসম্মত পানীয় এবং ডেজার্টের সাথে খাওয়া যাবে এই ইসবগুলের ভুসি। তবে এই ভুসি কোনোভাবেই ঝাল কোনো খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যাবে না।
ইসবগুলের ভুসি কখন খেতে হয়?
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। দিনের যেকোনো সময়েই পরিমিত পরিমাণে এই ভুসি খাওয়া যাবে। তবে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া রাতে বিশেষ করে ঘুমানোর পূর্বেও ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন।
ইসবগুলের ভুসি কিভাবে তৈরি হয়?
ইসবগুল একটি প্রাকৃতিক পলিমার। আর এতে থাকা খাবার-উপযুক্ত এই ভুসিও পাওয়া যায় প্রকৃতি থেকে। তবে এটি একধরণের বীজ থেকে সংগ্রহ করে পরিষ্কার করে নেওয়া হয়।
যারা ইসবগুলের ভুসি নিজেরাই উৎপন্ন করতে চান তারা নার্সারি থেকে প্ল্যান্টাগো ইন্ডিকা বীজ এনে চারাগাছ তৈরি করতে পারেন এবং সংগ্রহ করতে পারেন হোমমেড ইসবগুলের ভুসি।
তথ্যসুত্রঃ
২। https://www.webmd.com/drugs/2/drug-56088/psyllium-husk-fibre-oral/details
৩। https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5413815/
৪। https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S096522991830133X?via%3Dihub
৫। https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/30239559/