Skip to content

ওজু ভঙ্গের কারণ কি কি? ১ মিনিটে জানুন অজু ভঙ্গের কারণ সমূহ | ২০২৪

অজু ভঙ্গের কারণ সমূহ_ওজু ভঙ্গের কারণ কি কি_অজু ভঙ্গের কারণ

নামাজ জান্নাতের চাবি। আর এই নামাজ আদায় করার জন্য প্রয়োজন সঠিকভাবে পাক পবিত্র থাকা। আমরা নামাজ আদায়ের আগে পবিত্র হওয়ার জন্য অজু করে থাকি। মূলত নামাজ যেমন জান্নাতের চাবি, তেমনি অজু হলো নামাজের চাবি। 

অজু করার মাধ্যমে আমরা যেকোনো ইবাদতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে থাকি। আর অজু বিভিন্ন কারণে ভঙ্গ হয়ে যায়। কুরআন ও হাদীসে অজু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে কি বলা হয়েছে আসলে তা কি আমরা জানি? 

আমাদের মধ্যে অনেকেই অজু ভঙ্গের প্রধান কারণগুলো সম্পর্কে অবগত নন। আর অজু ভঙ্গের মূল কারণ গুলো সম্পর্কে না জানলে আমাদের অজান্তে যদি অজু ভঙ্গ হয়ে যায় তবে আমাদের ইবাদত কবুল হবে না।

তাই আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ওজু ভঙ্গের কারণ কি কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং সে বিষয়ে বিভিন্ন হাদীসের বাণী সম্পর্কেও জানবো। তাহলে দেরী না করে চলুন জেনে নেই অজু ভঙ্গের কারণ সমূহ।

অজু ভঙ্গের কারণ সমূহ

একাধিক কারণে অজু ভঙ্গ হয়ে থাকে। অজু ভঙ্গের প্রধান ও মূল কারণ ৮ টি। আটটি কারণে অজু ভেঙে যায় আবার কিছু কিছু কারণে অজু মাকরূহ হয়ে যায়। কারো অজু ভঙ্গ হয়ে গেলে সে কোনো ধরনের ইবাদত ,যেমন নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি করতে পারবে না।

অজু ভঙ্গের কারণ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হলো– 

১. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হলে 

প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে প্রস্রাব, পায়খানা, বায়ু, কৃমি, মযী, মনি এবং মেয়েদের হায়েয বা নিফাসের রক্ত বের হলে অজু ভঙ্গ হয়ে যায়। এটি যেমন মেয়েদের অজু ভঙ্গের কারণ তেমনি পুরেষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

অজু করার পর প্রস্রাব বা পায়খানার রাস্তা দিয়ে যদি প্রস্রাব, পায়খানা, বায়ু, বীর্য, কৃমি নির্গত হয় তবে অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। (হেদায়া, হাদিস : ১/৭)

 এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

‘শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়।’ 

     (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি, হাদিস : ৫৬৮)

এ থেকে বোঝা যায়, অজু করার পর কারো যদি প্রস্রাব বা পায়খানার রাস্তা হতে কিছু বের হয় এবং তা পরনের কাপড়ে লেগে যায় তবে তার অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। এছাড়াও পায়ুপথ হতে বায়ু নির্গত হলেও অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। 

অজু করা
অজু করা | Photo: Canva

২. শরীর থেকে রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া 

অজু করার পর শরীরের কোথাও কেটে গিয়ে রক্ত পড়লে, ক্ষতস্থান বা ফোড়া থেকে পুঁজ বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে।

আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.)-এর নাক দিয়ে যখন রক্ত ঝড়তো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন। 

    (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ১১০)

হযরত আব্বাস রাঃ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

‘শরীর থেকে যা কিছু বের হয় সে কারণে অজু ভঙ্গ হয়ে যায়, প্রবেশের দ্বারা ভঙ্গ হয় না।’ 

       (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫৬৮)

 তবে যদি অল্প পরিমাণে রক্ত, পুঁজ, অথবা পানি বের হয় তাহলে অজু ভঙ্গ হবে না। 

৩. মুখ ভরে বমি করা

যদি অজু করার পর মুখ ভর্তি বমি হয়ে যায় তবে অজু ভেঙে যাবে। এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, 

‘যদি কোনো কারণে মুখ ভরে বেশি পরিমাণে বমি হয় তাহলে অজু ভেঙ্গে যাবে।’

      (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২২১)

মুখ ভরে বমি করার অর্থ হল এত পরিমান বমি আসা যে মুখে সেটা আটকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়। তবে বমি যদি সামান্য পরিমাণে হয় তবে অজু ভঙ্গ হবে না। 

৪. হেলান দিয়ে ঘুমানো

অজু করার পর যদি কেউ কোনোকিছুতে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তবে তার অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, 

‘যদি কেউ কোথাও হেলান দিয়ে অথবা চিৎ কাত হয়ে চেয়ারে হোক আর দেওয়ালে হোক যদি সে কোথাও হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে যায় তাহলে তার অজু ভেঙ্গে যাবে।’

      (আবু দাউদ, হাদিস : ২০২)

অর্থাৎ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে কোথাও হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। 

৫. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া

কারো যদি অজু অবস্থায় থুথুর সঙ্গে রক্ত বের হয় আর রক্তের পরিমাণ যদি থুথুর চেয়ে বেশি হয় তবে তার অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, 

‘থুথুর সঙ্গে যদি রক্ত বের হয় সে রক্তের পরিমাণ যদি থুতুর সমান হয় অথবা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে অজু ভেঙ্গে যাবে।’ 

      (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১৩৩০)

এ থেকে বোঝা যায়, দাঁত দিয়ে বা মুখ হতে রক্ত নির্গত হলেও অজু ভঙ্গ হয়ে যায়। 

৬. পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে 

কোনো ব্যক্তি যদি অচেতন হয়ে যায় বা নিজস্ব জ্ঞান হারিয়ে ফেলে তবে তার অজু ভেঙে যায়। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, 

‘কোন ব্যক্তি যদি তার সাধারণ জ্ঞান শক্তি হারিয়ে ফেলে অর্থাৎ পাগল হয়ে যায় অথবা অধিক পরিমাণে নেশা করার কারণে মাতাল হয়ে যায় বা আঘাত পাওয়ার কারণে অচেতন হয়ে যায় তাহলে তার অজু ভেঙ্গে যাবে।’

    (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৪৯৩)

৭. নামাজের মধ্যে উচ্চস্বরে হাসলে 

নামাজ আদায়রত অবস্থায় উচ্চস্বরে হাসি দিলে অজু ভঙ্গ হয়ে যায়। এ সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত আছে, 

‘নামাজরত অবস্থায় যদি কেউ শব্দ করে হাসে অর্থাৎ উচ্চস্বরে হাসি দেয় তাহলে তো অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে।’ 

     (সুনানে দারা কুতনি, হাদিস : ৬১২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন, 

‘যে ব্যক্তি সালাতের মধ্যে হেসেছে, সে পুনরায় অজু করে সালাত আদায় করবে।’

      (সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৬০৪)

তবে নামাজের আগে যদি জোরে হাসা হয় তাহলে অজু ভেঙে যাবে না আর নামাজের মধ্যে জোরে হাসলে নামাজ এবং অজু উভয়ই নষ্ট হয়ে যাবে।

৮. উটের গোশত খেলে 

উটের গোশত খেলে অজু ভেঙ্গে যায়। এক্ষেত্রে পুনরায় নামাজ আদায় এবং কুরআন তিলাওয়াত করতে চাইলে অজু করে নিতে হবে। এ সম্পর্কে জাবের বিন সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, 

‘নবী করীম (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হলো, আমরা কি ছাগলের গোশত খেয়ে অজু করব? তিনি বললেন, যদি চাও তাহলে করতে পারো। পরবর্তীতে বলা হলো, আমরা উটের গোশত খেয়ে কি অজু করব? তিনি উত্তরে বললেন, “হ্যাঁ”।’

       (সহীহ মুসলিম)

সুতরাং, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ রয়েছে বিধায় উটের গোশত খেলে অজু ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ইবাদতের জন্য পুনরায় অজু করে নিতে হয়। 

যেসব কারণে অজু মাকরূহ হয় 

অজু ভঙ্গের কারণ ছাড়াও আরো কিছু কারণ রয়েছে যার কারণে অজু মাকরূহ হয়ে যায়। অজু মাকরূহ হওয়া বলতে বোঝায় অজু ভঙ্গ নয় তবে অজুর সওয়াব কমে যাওয়া। চলুন জেনে নিই কোন কাজগুলো করলে অজু মাকরূহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে– 

  • অপবিত্র স্থানে অজু করলে। 
  • অজু করার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ না বললে। 
  • অজু করার সময় প্রয়োজনের চেয়ে কম বা বেশি পানি ব্যয় করলে। 
  • অজু করার সময় মুখ বা অন্য কোনো অঙ্গে জোরে জোরে পানির ঝাপটা মারলে। 
  • অজুর সময় অঙ্গগুলো তিনবারের কম ধৌত করলে। 
  • বাম হাতের পরিবর্তে ডান হাত দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে। 
  • অজুর মধ্যে কোনো সুন্নত ইচ্ছাকৃত ভাবে ছেড়ে দিলে। 

তাই আমাদের অজু করার সময় কখনই এই কাজগুলো করা উচিত নয়। অজুর ফরজ ও সুন্নত সঠিকভাবে মেনে অজু করা উচিত।

যেসব কারণে অজু মাকরূহ হয় 
যেসব কারণে অজু মাকরূহ হয় | Photo: Canva

অযুর দোয়া

অজু করার শুরুতে, অজু করার সময় এবং শেষে ৪টি দোয়া পড়ার জন্য হাদিসের নির্দেশনা রয়েছে। এতে অনেক ফজিলত ঘোষণা করা হয়েছে। ফজিলতপূর্ণ দোয়াগুলো হলো-

অযুর শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা-

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم

বাংলা উচ্চারণঃ ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’

বাংলা অর্থঃ পরম করুনাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

অজু করার সময় নিচের দোয়া পড়তে থাকা

اَللَّخُمَّ اغْفِرْلِىْ ذَنْبِى وَ وَسِّعْلِىْ فِىْ دَارِىْ وَبَارِكْ لِىْ فِىْ رِزْقِىْ

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি, ওয়া ওয়াসসিলি ফি দারি, ওয়া বারিক লি ফি রিযক্বি। (নাসাঈ)

বাংলা অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আমার গোনাহ মাফ করে দাও। আমার জন্য আমার বাসস্থান প্রশস্ত করে দাও। এবং আমার রিযিক্বে বরকত দিয়ে দাও।’

অজুর শেষে কালেমার সাক্ষ্য ও উপকারিতা

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ 

বাংলা উচ্চারণঃ ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।’

বাংলা অর্থঃ  ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল।’ (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

এবং শেষ দোয়াটি

اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنْ التَّوَّابِينَ ، وَاجْعَلْنِي مِنْ الْمُتَطَهِّرِينَ

বাংলা উচ্চারণঃ  ‘আল্লাহুম্মাঝআলনি মিনাত তাউয়্যাবিনা ওয়াঝআলনি মিনাল মুতাত্বাহ্‌হিরিন।’

বাংলা অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত করুন এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের মধ্যে শামিল করে নিন।’ (তিরমিজি শরীফ, মিশকাত শরীফ)

পরিশেষে বলা যায়

প্রত্যেক মুসলিমের উচিত ইসলামের যাবতীয় বিধিনিষেধ শ্রদ্ধার সাথে পালন করা। আর ইসলামের সকল ইবাদতের পূর্বশর্ত হলো পবিত্রতা, যা অজু ও গোসলের মাধ্যমে অর্জিত হয়। 

অজু ভঙ্গের প্রধান ও মৌলিক কারণসমূহ জানার মাধ্যমে আমরা এ সম্পর্কে আরো সচেতন হতে পারবো। 

অজু ভঙ্গ এবং মাকরূহ হওয়ার সঠিক কারণ সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল ইবাদত সমূহ সঠিকভাবে আদায় করতে পারবো। আল্লাহ আমাদের সকলকে তার ইবাদত সমূহ সঠিকভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমীন।।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

উলঙ্গ হলে কি অজু ভঙ্গ হয়?

উলঙ্গ হওয়া অজু ভঙ্গের কারণগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই জামা কাপড় খুলে ফেললে অজুর কোনো ক্ষতি হবে না।

অজু করে মসজিদে যাওয়ার সময় খারাপ ছবিযুক্ত পোস্টার চোখে পড়লে কি অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে?

অজু করার পর খাবার খেলে অজুর কি কোনো সমস্যা হয়?

মৃত ব্যক্তিকে গোসল করালে কি অজু ভঙ্গ হবে?

মেয়েরা অজু করার পর যদি পরপুরুষ দেখে তবে কি অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে?

Leave a Reply