প্রতিটা মেয়ের জীবনেই একটি বিশেষ মূহুর্ত হলো প্রেগন্যান্সির দশটি মাস। নিজের ভেতরে আরেকটা ছোট নিষ্পাপ মানুষ বেড়ে উঠার যে সুন্দর অনুভূতি সেটি হয়ত একজন মেয়েই বুঝবেন।
এই প্রেগন্যান্সির সময় অদ্ভুত সুন্দর এই ভালো লাগার সাথে থাকে অনেক অনেক কৌতূহল। জানতে ইচ্ছে করে গর্ভে থাকা মানুষটা কি ছেলে নাকি মেয়ে। এসব কৌতুহল থেকেই জন্ম নেই নানা কুসংস্কার। নানা ধরনের অযৌক্তিক ভিত্তিহীন ধারণার জন্ম হয় গর্ভবতী মায়ের এসব কৌতুহলকে কেন্দ্র করে।
গর্ভে থাকা বাচ্চাটি ছেলে নাকি মেয়ে অথবা ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ সমূহ নিয়েই আজকের লেখা, এই লেখাতে আমারা বিশেষ করে জানবো ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত, এছাড়াও থাকবে ছেলে সন্তান হওয়ার আমল ও দোয়া সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তাহলে চলুন শুরু করি।
ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ সমূহ
গর্ভকালীন সময়ে মায়ের মধ্যে কিছু লক্ষণের আবির্ভাব থেকেই অনুমান করা যেতে পারে ছেলে সন্তান হবে কিনা। সে লক্ষণগুলি হলো
১.গর্ভবতী মায়ের ত্বক এবং চুলের মধ্যে তেলতেলে ভাব, ব্রণ-র সমস্যার আবির্ভাব হলে ধরে নেওয়া হয় কন্যা সন্তান আসতে চলেছে। আর যদি গর্ভবতী মা দেখতে আরও বেশি সুন্দরী হয়ে যায়, তাহলে পুত্র সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে ধরণা করা হয়।
২. যদি গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে বেশি করে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে ইচ্ছে করে তাহলে তার অর্থ হল শরীরের ভেতর কন্যা সন্তান বেড়ে ওঠছে। আর যদি মায়ের খুব বেশি ঝাল অথবা টক খেতে ইচ্ছে করে তাহলে ছেলে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেবি বাম্প দেখেও ধারণা করা যায় সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে। যদি বেবি বাম্প নীচের দিকে ঝোলা থাকে তাহলে ছেলে সন্তান হবে বলেই মনে করা হয়। আবার অন্য দিকে, মেয়ে সন্তান থাকলে বেবি বাম্প থাকে পেটের মাঝামাঝি জায়গায় অথবা উঁচু হয় বেশি।
৪. যদি গর্ভবতী মায়ের মর্নিং সিকনেস (Morning Sickness) বেশি হয় তাহলে মেয়ে সন্তান হবে বলে ধারণা করা হয় । অর্থাৎ মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাবের মতো সমস্যা দেখা দেয়। আর ছেলে সন্তানের ক্ষেত্রে সাধারণত হবু মায়ের মধ্যে এই ধরণের কোন সমসম্যাই থাকে না।
৫. ধারণা করা হয় যদি গর্ভে মেয়ে সন্তান থাকে তাহলে নাকি গর্ভবতী মায়ের মুড সুইংসও বেশি হয়। কথায় কথায় শুধু রাগ এবং কান্না পায়। আর যদি ছেলে সন্তান হয় তাহলে ঠিক এর উল্টো ব্যাপারটি হয়ে থাকে।
৬.গর্ভবতী মায়ের শোওয়ার ধরন দেখেও আন্দাজ করা যায় ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে । ছেলে হলে সাধারণত হবু মায়েরা বাঁ দিক ফিরেই শুতে পছন্দ করে আর মেয়ে সন্তান হলে ডান দিক ফিরে শুতে নাকি মায়েদের বেশি ভালো লাগে।
৭. প্রচলিত আরেকটি ধারণা হলো গর্ভস্থ সন্তানের হৃদস্পন্দন হার যত বেশি হবে সেটি মেয়ে হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি।
৮. কালো দাগ যেটি নলিনিয়া নিগ্রা নামেও পরিচিত। এটি গর্ভবতী মায়ের তলপেটের নিচের দিক হতে নাভি অবধি যায়। যদি সেটি দেখা যায় তাহলে আপনার কন্যা সন্তান পেটে হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
আর যদি সেই দাগটি গর্ভাবস্থার একদম শেষের দিকে মিলিয়ে যায় সেক্ষেত্রে আশা করতে পারেন যে ছেলে সন্তান হতে চলেছে।অন্য আরেকটি মতামত আছে- যদি দাগটি একদম তলপেটের নিচের দিক থেকে শুরু করে পাঁজর অবধি আসে, তাহলে গর্ভে ছেলে সন্তানের সম্ভাবনা থাকে।
৯. পেটের জন্য পেন্ডুলাম কৌশল করেও জানতে পারেন আপনার সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে। যদি আপনি এই কৌশলটি করতে চান তাহলে আপনি যেকোনো একটি আংটি নিয়ে আসুন।
এতে আপনার একটি চুল জড়ান। তারপরে শুয়ে পড়ে আংটিটা পেটের ওপর দোলান।
যদি দেখেন আংটিটা গোল গোল হয়ে ঘুরতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবর এটা লক্ষণ আপনার ছেলে হওয়ার লক্ষণ ।যদি সেটি পেণ্ডুলামের মত দোলতে থাকে তাহলে বুঝবেন যে পেটে কন্যা সন্তান।
১০. এটি অনেকেই মানেন যদি গর্ভবতী মায়ের পেটে বাচ্চা নড়াচড়া কম করে তাহলে পেটে ছেলে সন্তান থাকে। কিন্তু যদি মেয়ে হয় তাহলে সে পেটের মধ্যে অনেক বেশি ঘোরে। যার ফলে মায়ের পেটটা কখনো কখনো বেশ সুন্দর কখনো কখনো অদ্ভূত দেখতে লাগে।
আবার অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের পেটের শেইপ দেখেও ছেলে নাকি মেয়ে সেটি ধারণা করা যায়৷ যদি মায়ের পেট বাস্কেটবলের মত দেখায় তাহলে সেটা হলো ছেলে সন্তানের লক্ষণ। কিন্তু যদি সেটি তরমুজের মত দেখায়, তাহলে সেটা কন্যা।
১১. গর্ভবতী মা যদি গর্ভের সন্তানের ওজনটা সামনের দিকে অনুভব করেন, তাহলে সেটি ছেলে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর যদি সেটি সম্পূর্ণ পেটেে মাঝখানের মনে হয়, তাহলে কন্যা সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
উল্লেখিত সবই প্রচলিত ধারণা । এবং আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ এাটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ
ছেলে সন্তানের উপকারিতা
একটা সময় ছিল যখন মেয়ে সন্তানকে পরিবারের বোঝা মনে করা হতো। মেয়েদের ছিলনা কোনো শিক্ষার ব্যবস্থা৷ তাদের থাকতে হতো সবসময় গৃহিণী হয়ে৷ তারপরে মেয়েদের বিয়ে দিতে গেলে মেয়ের বাবাকে দিতে হতো মোটা অংকের যৌতুক।
অন্যদিকে ছেলেদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি উল্টো। ছেলেরা শিক্ষিত হয়ে আয় রোজগার করত। পরিবারের খরচ বহন করত। তার উপরে ছেলেদের বিয়ে দিলে মা বাবা কনেপক্ষ থেকে পেত যৌতুক। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করেই মানুষ সব সময় ছেলে সন্তান কামনা করত। মেয়ে সন্তান হওয়াটাকে অনেকেই শাস্তি হিসেবে দেখতেন।
এবং ছেলে সন্তানকে সৌভাগ্য হিসেবে দেখতেন। কিন্তু সময় এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে৷ এখন ছেলেদের মতো মেয়েরাও স্বাবলম্বী হচ্ছে, হাল ধরছে পরিবারের। বরং এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরাই বেশি এগিয়ে। তাই ছেলে সন্তান বেশি উপকারী মেয়ে সন্তানের তুলনায় এমন ধারণা এখন বিরল।
যদিও দেশে যৌতুক প্রথার কারণে কিছু কিছু জায়গায় এখনও মেয়েদের নিচু দৃষ্টিতে দেখা হয় এবং ছেলে সন্তান থাকাকে গর্বের মনে করা হয়৷ আবার অনেকেই ধর্মের অজুহাতে মেয়েদের শিক্ষিত করতে চায় না। কিন্তু প্রকৃত অর্থে পৃথিবীর সকল ধর্মেই নারীদের সম্মানের কথা উল্লেখ আছে এবং জ্ঞান অর্জনের অধিকার ছেলেদের মতো মেয়েদেরও আছে এটি নিয়ে সব ধর্মেই বলা হয়েছে।
কিন্তু ধর্ম সম্পর্ক সঠিক জ্ঞান না থাকা এবং ভুল জ্ঞানের কারণে এখনো মানুষের এমন চিন্তাধারা প্রকাশ পায়। পরিশেষে ছেলে সন্তানের উপকারিতা নিয়ে কিছুই বলার নেই শুধু বলার আছে সন্তান ছেলে হোক কিংবা মেয়ে একমাত্র সুসন্তানই আপনার, আমার এবং জাতির উপকারে আসবে।
রিলেটেডঃ ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম
ছেলে সন্তান হওয়ার আমল
অনেকেই আছেন ছেলে সন্তান না হওয়ার জন্য সন্তানের মাকে দায়ী করেন। কিন্তু সন্তান কি হবে ছেলে না মেয়ে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারোই নেই।
কিন্তু তাও অনেকের ইচ্ছা থাকেন একটা পুত্র সন্তানের। তাদের উচিত আল্লাহর কাছে চাওয়া৷ আল্লাহ কখনো তার বান্দার সৎ ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেনা৷ আপনি তাহাজ্জুদের নামাজে দাড়িয়ে সিজদাহ্ই পড়ে আপনার রবকে পরম আকুতি করে আপনার মনের ইচ্ছাটি বলুন।
অবশ্যই আল্লাহ আপনার ইচ্ছা পূরণ করবে আর যদি আপনার দোয়াটি কবুল না হয় তাহলে হতাশ হবেন না। নিশ্চয়ই এটিই আপনার জন্য কল্যানকর ছিল৷ আল্লাহ তার বান্দার অকল্যান করেনা কখনোই। এছাড়া শায়খ আহমাদুল্লাহর নিচের ভিডিওতে বলা আমলগুলি করতে পারেন।
ছেলে সন্তান হওয়ার দোয়া
সন্তান আল্লাহ তায়ালার দেয়া আমাদের অন্য রকম নেয়ামত। পুত্র হোক আর কন্যা সন্তান যেটিই হোক, তারপরও আমরা যে কোন একজনকেই আশা করি। আল্লাহর কাছে একজনকেই চাই।
সেক্ষেত্রে অনেকেই আছেন যারা পুত্র সন্তান নিতে চান তাদের জন্য দেয়া হল হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর একটি দোয়া।
বৃদ্ধ বয়সে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করলেন সৎ পুত্র সন্তানের জন্য। আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করলেন। এবং তাঁকে নেক পুত্র সন্তান দান করলেন। যা বিস্তারিত এসেছে সুরা সফফাতে।
আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুসলিমার জন্য হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর পুত্রসন্তান লাভের এ আবেদনটি তুলে ধরেছেন। যাতে করো বান্দা এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সন্তান কামনা করতে পারে। দোয়াটি হলো-
বাংলা উচ্চারণ: রাব্বি হাবলি মিনাস সালিহিন।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০০)
বাংলা অর্থ: হে আমার লালন পালনকারী! আমাকে এক সৎপুত্র দান করুন।
এছাড়াও নেক সন্তান হওয়ার জন্যে আমাদের এই লেখাটি পড়তে পারেন। সন্তান লাভের দোয়া: সন্তান লাভের দোয়া ও আমল ২০২৩
শেষ কথা
সন্তান পুত্র হোক কিংবা কন্যা আপনাদের উচিত সব সময় সুসন্তান কামনা করা। তাও উল্লেখিত প্রচলিত কিছু লক্ষণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ নাকি মেয়ে হবে তাও বুঝতে পারবেন উপরের আলোচনা থেকে এবং ছেলে সন্তানের জন্য কি কি আমল করবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আশা করছি আপনার উপকারে আসবে।
যদি কোনো ভুল ত্রুটি থাকে তাহলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আমাদের এ বিষয়ে অবগত করবেন৷ ধন্যবাদ।
তো বন্ধুরা এই ছিলও পুত্র সন্তান হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি বা ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ সমূহ নিয়ে আমাদের আজকের বিস্তারিত আলোচনা। আজকের মতো এখানেই বিদায়, দেখা হবে আগামী লেখাতে।
রিলেটেডঃ ঠোঁট গোলাপি করার উপায়: ঠোঁট গোলাপি করার প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়
সচরাচর জিজ্ঞাসা
সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে কিভাবে বুঝব?
যদি আপনার বেশি কৌতুহল থাকে তাহলে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেখতে পারেন। সাধারণ ২০-২২ সপ্তাহের মধ্যে এটি প্রকাশ পায়। তাছাড়া আপনি চাইলে উল্লেখিত লক্ষণ গুলো দেখে বুঝতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে সেটি শতভাগ নিশ্চিত না।
কতমাসে বাচ্চার চোখ ফোটে?
সাধারণত ২৭ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভে বাচ্চারা চোখ খুলে এবং ৩১ সপ্তাহ থেকে উজ্জ্বল আলোতে সাড়া দিবে।
কোন সময়ে সহবাস করলে পুত্র সন্তান হবে?
কোন সময়ো সহবাস করলে পুত্র সন্তান হবে এই প্রশ্নের সঠিক কোনো উত্তর দেওয়া মুশকিল, তবে যখনই সহবাস করেন আপনাদের শরীর, মন স্থির থাকতে হবে এবং তখনই হবে সবথেকে আদর্শ সময় সহবাসের।