Skip to content

মুনাফিক কাকে বলে? মুনাফিকের লক্ষণ গুলো কি কি? | ২০২৪

মুনাফিক কাকে বলে

মুমিন ও মুনাফিক। দু’টি ভিন্ন পথের দুই পথিক। একজনের পথের শেষ ঠিকানা হলো, আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি ও চীরসুখের আবাসস্থল বেহেশত। অপরজনের পথের শেষ পরিণতি হলো, আল্লাহ্র গযব ও দোযখের ভয়াবহ শাস্তি। 

একজন খাঁটি মুমিন হিসেবে, আমার আক্বীদা-বিশ্বাস কেমন হওয়া দরকার, কি আমার করণীয়, কি বর্জনীয় তাও আমি জানিনা এবং জানার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করি না। যার দরুন মুখে আমি নিজেকে মুমিন বলে পরিচয় দিয়ে মুমিনের সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকি। 

কিন্তু আমার অজান্তেই আমি মুনাফিকসুলভ অসংখ্য কাজ করে থাকি। অথচ সে কাজগুলো একজন মুসলমান হিসেবে আমার জন্য কোন অবস্থাতেই শোভনীয় নয়। বিশেষ করে ঈমান ও আক্বীদার ক্ষেত্রে আমাদের অজ্ঞতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

তাই আমাদের সকালেরই মুমিন ও মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্য জানা উচিত, সেই সাথে জানা উচিত মুনাফিক কাকে বলে? মুনাফিকের সংজ্ঞা, মুনাফিকের লক্ষণ কী কী ইত্যাদি সম্পর্কে।

তাহলে চলুন দেরী না করে প্রথমে জেনে নেই মুনাফিক কাকে বলে।

মুনাফিক কাকে বলে

যে ব্যক্তি অন্তরে কুফর লুকিয়ে রেখে যবান দ্বারা ইসলাম প্রকাশ করে তাকে মুনাফিক বলে। (আল-মুনজিদ ১০৩৮ পৃঃ)

যুগে যুগে ইসলামের সবচেয়ে বড় ক্ষতি মুনাফিকদের দ্বারাই হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুনাফিক সম্প্রদায়ই সবচেয়ে বেশী কষ্ট দিয়েছে। কারণ কাফির সম্প্রদায় যেহেতু প্রকাশ্যে মুসলমানদের বিরোধিতা করতো, তাই তাদের অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকা সহজ ছিলো। 

পক্ষান্তরে মুনাফিক সম্প্রদায় মুসলমান পরিচয় দিয়ে মুসলমানদেরকে ধোঁকায় ফেলে তাদের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্তে লিপ্ত হতো।

মুনাফিকদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে।

“নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা রয়েছে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে । আর তোমরা তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী কখনও পাবে না। (সূরা নিসা ১৪৫ আয়াত)”

অর্থাৎ: দোযখের সবচেয়ে ভয়াবহ স্থানে মুনাফিকদেরকে রাখা হবে। তারা দুনিয়াতে আল্লাহ্ পাকের দ্বীন নিয়ে উপহাস এবং মুসলমানদেরকে সীমাহীন দুর্ভোগে নিক্ষেপ করার কারণে পরকালে সবচেয়ে কঠিন শাস্তিতে পতিত হবে।

মহানবী সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষ্য অনুযায়ী কিছু কাজ এমন আছে, যা কেবল মাত্র মুনাফিকদের বৈশিষ্টরূপে গণ্য হয়, কোন মুমিনের জন্য তা শোভনীয় নয়। 

অথচ অজ্ঞতার কারণে অনেক মুসলমান, খাঁটি মুমিনও নিজের অজান্তে তাতে লিপ্ত হয়ে যায়। এ সম্পর্কেই হাদীছ শরীফের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, আমার পরম শ্রদ্ধেয় উস্তায জাস্টিস মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উছমানী সাহেব (মুঃ আঃ) আল্লাহ্পাক আমাদের সবাইকে এ সকল হাদীছ শরীফের উপর যথাযথ আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

মুনাফিক

রিলেটেডঃ ইস্তেখারার নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজিলত 

মুনাফিকের লক্ষণ গুলো কি কি

হযরত আবু হুরাইরাহ (রঃ) বর্ণনা করেন যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের তিনটি নিদর্শন। (অর্থাৎ কোন মুসলমানের দ্বারা এমন কাজ সম্ভব নয়। 

যদি কারো মধ্যে এগুলো পাওয়া যায়, তাহলে মনে করতে হবে সে মুনাফিক।) আর তাহলোঃ

(১) যখন কথা বলে মিথ্যা বলে।

 (২) যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে।

 (৩) আর যখন তার নিকট কোন কিছু আমানত রাখা হয়, তখন সে (তার মধ্যে) খিয়ানত করে। 

কোন কোন বর্ণনায় একথাও আছে যে, যদিও সে নামায পড়ে, রোযা রাখে এবং একথার দাবী করে যে, সে মুসলমান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে মুসলমান নয়, কেননা মুসলমান হওয়ার জন্য যে সকল মৌলিক গুণাবলীর প্রয়োজন সেগুলো সে ছেড়ে বসে আছে।

এছাড়াও যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন সে একজন মুনাফিকঃ

  • মুনাফিকের অন্তর রুগ্ন  ও ব্যাধিগ্রস্ত: পবিত্র কোরাআনে কারীমে আল্লাহ তাওয়ালা বলেন, “তাদের অন্তরসমূহে রয়েছে ব্যাধি। অতঃপর আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। কারণ তারা মিথ্যা বলত”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১০]
  • মুনাফিকুদের অন্তরে অধিক লোভ লালসা: আল্লাহ তাওয়ালা বলেন, “হে নবী-পত্নিগণ, তোমরা অন্য কোনো নারীর মতো নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৩২] অর্থাৎ যে ব্যক্তির অন্তরে ঈমান দুর্বল থাকে, সে তার দুর্বলতার কারণে লোভী হয়ে থাকে। আর সে তার ঈমানের দুর্বলতার কারণে ইসলাম বিষয়ে সন্দেহ পোষণকারী একজন মুনাফিক। যার ফলে সে আল্লাহ তা’আলার দেওয়া বিধানকে গুরুত্বহীন মনে করে এবং হালকা করে দেখে। আর অন্যায় অশ্লীল কাজ করাকে কোনো অন্যায় মনে করে না।
  • মুনাফিকরা অহংকারী হয়:  “আর তাদেরকে যখন বলা হয় এস, আল্লাহর রাসূল তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তখন তারা তাদের মাথা নাড়ে। আর তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে, অহঙ্কারবশত বিমুখ হয়ে চলে যেতে।” [সূরা আল- মুনাফিকুন, আয়াত: ৫]
  • মুনাফিকদের চরিত্র হলো, আল্লাহ তা’আলার আয়াতসমূহের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা: “মুনাফিকরা ভয় করে যে, তাদের বিষয়ে এমন একটি সূরা অবতীর্ণ হবে, যা তাদের অন্তরের বিষয়গুলি জানিয়ে দেবে। বল, ‘তোমরা উপহাস করতে থাক। নিশ্চয় আল্লাহ বের করবেন, তোমরা যা ভয় করছ”। [সূরা আত- তাওবাহ, আয়াত: ৬৪]
  • মুমিনদের সাথে বিদ্রূপ: “আর যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এবং যখন গোপনে তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে আছি। আমরা তো কেবল উপহাসকারী’। আল্লাহ তাদের প্রতি উপহাস করেন এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্ত হয়ে ঘোরার অবকাশ দেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৪, ১৫]
  • মানুষকে আল্লাহর রাহে খরচ করা হতে বিরত রাখা: “তারাই বলে, যারা আল্লাহর রাসূলের কাছে আছে তোমরা তাদের জন্য খরচ করো না, যতক্ষণ না তারা সরে যায়। আর আসমানসমূহ ও যমিনের ধন-ভাণ্ডার তো আল্লাহরই, কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না। [সূরা আল মুনাফিকূন, আয়াত: ৭]
  • মুনাফিকদের মূর্খতা ও মুমিনদের মূর্খ বলে আখ্যায়িত করা: “আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা ঈমান আন যেমন লোকেরা ঈমান এনেছে’, তারা বলে, “আমরা কি ঈমান আনব যেমন নির্বোধরা ঈমান এনেছে’? জেনে রাখ, নিশ্চয় তারাই নির্বোধ; কিন্তু তারা জানে না”। [সূরা আল- বাকারা, আয়াত: ১৩]
  • কাফিরদের সাথে তাদের বন্ধুত্ব: মুনাফিকরা কাফিরদেরকে তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করত। মুমিনদের তারা কখনোই তাদের বন্ধু বানাত না। তারা মনে করত কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করলে তারা ইজ্জত সম্মানের অধিকারী হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “মুনাফিকদের সুসংবাদ দাও যে, নিশ্চয় তাদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। যারা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারা কি তাদের কাছে সম্মান চায়? অথচ যাবতীয় সম্মান আল্লাহর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩৮, ১৩৯]

রিলেটেডঃ আয়াতুল কুরসিঃ আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

মুনাফিকের সংজ্ঞা

মুনাফিকুন একটি আরবী শব্দ  (منافق) যার অর্থ যার অর্থ একজন প্রতারক বা “ভন্ড ধার্মিক” ব্যক্তি। যে গোপনে অন্তরে কুফরী বা ইসলামের প্রতি অবিশ্বাস লালন করে আবার  প্রকাশ্যে ইসলাম চর্চা করে তাকেই বলা হয় মুনাফিক। এধরনের প্রতারণাকে নিফাক বলে।

রিলেটেডঃ স্বপ্নে বিয়ে দেখলে কি হয়

নিফাক

নূন, ফা ও কাফ বর্ণগুলোর সমন্বয়ে গঠিত শব্দটি অভিধানে দু’টি মৌলিক ও বিশুদ্ধে অর্থে ব্যবহার হয়। প্রথম অর্থ দ্বারা কোনো কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়া ও দূরীভূত হওয়াকে বুঝায় আর দ্বিতীয় অর্থ দ্বারা কোনো কিছুকে গোপন করা ও আড়াল করাকে বুঝায়।

নিফাক শব্দটি ‘নাফাক’ শব্দ হতে নির্গত। ‘নাফাক’ “জমির অভ্যন্তরে বা ভূ-গর্ভের গর্ত যে গর্তে লুকানো যায়, গোপন থাকা যায়। আর নিফাককে নিফাক বলে নাম রাখা হয়েছে, কারণ মুনাফিকরা তাদের অন্তরে কুফুরীকে লুকিয়ে রাখে বা গোপন করে।

ইসলামী শরী’আতে নিফাকের অর্থ: নিজেকে ভালো বলে প্রকাশ করা আর অন্তরে খারাবী ও অন্যায়কে গোপন করা।

ইবনে জুরাইজ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুনাফিক বলা হয়, যার কথা তার কাজের বিপরীত, সে যা প্রকাশ করে অন্তর তার বিপরীত, তার অভ্যন্তর বাহির হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং তার প্রকাশ ভঙ্গি বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক। 

রিলেটেডঃ নারীরা স্বপ্নে সাপ দেখলে কি হয়

পরিশেষে

উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা মুনাফিকদের তৎপরতা ও নিফাকের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আমরা কিছুটা হলেও জানতে পারছি। নিফাক এমন একটি মারাত্মক ব্যাধি ও নিন্দনীয় চরিত্র, যা মানুষের জন্য খুবই ক্ষতি ও মারাত্মক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা নিফাকের গুণে গুণান্বিত তাদের গাদ্দার, খিয়ানত কারী, মিথ্যুক ও ফাজের বলে আখ্যায়িত করেছেন।

কারণ, একজন মুনাফিক তার ভিতরে যা আছে, সে তার বিপরীত জিনিসটিকে প্রকাশ করে। সে নিজেকে সত্যবাদী দাবী করলেও সে নিজেই জানে নিশ্চয় সে একজন মিথ্যুক। সে নিজেকে আমানতদার দাবী করে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে একজন খিয়ানত কারী। 

অনুরূপভাবে সে দাবি করে যে, সে প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী কিন্তু সত্যি হলো, সে একজন গাদ্দার। একজন মুনাফিক তার প্রতিপক্ষের লোকদের নানান ধরনের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকে, অথচ সে নিজেই ফাজের অশ্লীল ও অন্যায় কাজে লিপ্ত। 

মুনাফিকদের চরিত্রই হলো, ধোঁকা দেওয়া, প্রতারণা করা ও মিথ্যাচার করা। যদি কোনো মুসলিমের মধ্যে এ ধরনের কোনো চরিত্র পাওয়া যায়, তাহলে আশংকা হয় যে, তাকে বড় নিফাক- ঈমান হারা- আক্রান্ত করতে পারে। 

কারণ, নিফাকে আমলী যদিও এমন এক অপরাধ বা কবিরা গুনাহ যা বান্দাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না, কিন্তু যখন একজন বান্দার মধ্যে তা প্রগাঢ় হয়ে যায় বা গেঁথে বসে, তখন তার চরিত্র ধীরে ধীরে মিথ্যাচার, প্রতারণা ও ধোঁকা দেওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে থাকে।

 তারপর যখন তার চরিত্রের আরো অবনতি ঘটে তখন সে আল্লাহর মাখলুকের সাথে যে ধরনের আচরণ করে, তার প্রভুর সাথেও ঠিক একই ধরনের আচরণ করে। অতঃপর তার অন্তর থেকে ঈমান হরণ করা হয়, তার পরিবর্তে তাকে দেওয়া হয়ে নিফাক, আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি ও হুমকি। 

আল্লাহর নিকট আমাদের প্রার্থনা হলো, আল্লাহ তা’আলা যেন আমাদের অন্তরসমূহকে সংশোধন করে দেন। আমাদেরকে প্রকাশ্য ও গোপনীয় যাবতীয় ফিতনা হতে দূরে রাখেন। আমীন!

তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকের লেখা মুনাফিক কাকে বলে, এবং মুনাফিকের লক্ষণ গুলো কি কি, যদি মুনাফিক কাকে বলে লেখাটি ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার ও কমেন্ট করতে ভুলবেন না, আজকের মতো এখানেই বিদায়, দেখা হবে আগামী লেখাতে।

সবাই ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply