গর্ভবতী হওয়া নিঃসন্দেহে আনন্দের বিষয়। মা হওয়া পৃথিবীর সুন্দর অনুভূতি গুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু এখানে চিন্তার একটি বিষয় হচ্ছে সন্তান কিভাবে হবে। নরমাল ডেলিভারি হবে নাকি সেই সিজার অর্থাৎ কাটাকাটির ঝামেলায় যেতে হবে কিনা এই নিয়ে সকলের মধ্যে দুশ্চিন্তা বিরাজ করে ।
একসময় নরমাল ডেলিভারি ছিল সাধারণ একটি বিষয়। কিন্তু বর্তমান যুগে এসে অধিকাংশ গর্ভবতী মেয়েরা ব্যথা সহ্য করতে চায় না বলে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব হয়ে থাকে। কিন্তু একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে নরমাল ডেলিভারিতে মা ও সন্তান উভয়ে বেশি সুস্থ থাকে সিজারে ডেলিভারির তুলনায়।
শরীরে যদি তেমন কোন সমস্যা না থাকে তাহলে কিছু উপায় অবলম্বন করলেই স্বাভাবিক নিয়মে কাটা ছেঁড়া ছাড়াই সন্তান জন্ম দেওয়া যায়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কে, যা অবলম্বন করলে খুব সহজেই নরমাল ডেলিভারি করা সম্ভব:
নরমাল ডেলিভারি কি?
নরমাল ডেলিভারি হলো প্রসবের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যেখানে বাচ্চার জন্ম নারীর যোনিপথের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে হয়। এটি Vaginal delivery বা Natural Birth হিসাবেও অনেকে চিনে। গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের সমস্যা না থাকলে গর্ভবতী মহিলার স্বাভাবিক প্রসব হয়ে থাকে।
নরমাল ডেলিভারি তখনই সম্ভব হয় যখন শিশুর মাথা খুব সহজেই জরায়ুর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে। সাধারণত শিশুর দেহের অবস্থানের উপর এবং গ্রোথের উপর নির্ভর করে কোন উপায়ে ডেলিভারি হবে।
যদি গর্ভাবস্থায় শিশু উল্টা অবস্থায় থাকে তাহলে সাধারণত নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয় না। এছাড়াও শিশুর ওজন বেশি হলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
নরমাল ডেলিভারির উপকারিতা
১) ডেলিভারির পর অতি দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।
২) মা শিশুকে দুধ খাওয়াতে সক্ষম হন।
৩) নরমাল ডেলিভারিতে সিজারের ডেলিভারির মতন কাটার প্রয়োজন হয় না যার জন্য গর্ভবতী মহিলাকে প্রসবের পরে ব্যথা সহ্য করতে হয় না।
শিশুর জন্য নরমাল ডেলিভারির উপকারিতা
নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে শিশুটি তার মাকে সিজারিয়ান ডেলিভারির চেয়ে একটু আগে সমর্থন করতে সক্ষম হয়। খুব দ্রুত বুকের দুধ পায়। এতে করে শিশুর জন্ডিসের ঝুঁকি কমে যায়।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্যে কিছু সহজ উপায় আছে যেসব অবলম্বন করলে স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। চলুন তাহলে জেনে নিন সেগুলো কি কি।
১) সন্তান জন্মদান সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন:
সঠিক তথ্য সব সময় ভয় দূর করে। এইজন্য ডেলিভারি সম্পর্কে সব সময় সঠিক তথ্য জানতে চেষ্টা করুন। এটি গর্ভবতী মহিলাকে প্রসবের প্রক্রিয়াটির সম্পর্কে আরো স্পষ্ট ধারণা দিবে।
২) মানসিক চাপ মুক্ত থাকুন:
যারা স্বাভাবিক প্রসব করতে চান তাদের সব সময় গর্ভাবস্থায় চাপ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা উচিত। এইজন্য গর্ভবতী মহিলা চাইলে গান শুনতে পারেন, বই পড়তে পারেন, ধ্যান করতে পারেন।
৩) প্রিয়জনের সাথে থাকুন:
গর্ভবতী মহিলা যখন প্রিয়জনের সাথে থাকবে তখন সে মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আর মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকাই সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই গর্ভবতী মহিলার উচিত সবসময় প্রিয়জনের সাথে থাকা।
৪) নেতিবাচক জিনিস চিন্তা করবেন না:
সব সময় চেষ্টা করুন নেতিবাচক জিনিস থেকে দূরে থাকার। ডেলিভারি সম্পর্কে শোনার সকল নেতিবাচক কথাবার্তায় কখনো মনোযোগ দিবেন না। সব সময় মনে রাখবেন প্রতিটি মহিলার অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে। অতএব অন্যের খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে এই বলে যে আপনারও হবে এর কোন মানে নেই। এর জন্য অন্যের খারাপ অভিজ্ঞতা শুনে নিজের মধ্যে কখনো ভয় তৈরি করবেন না।
৫) সঠিক ডাক্তারের কাছে যান:
গর্ববতী মহিলার খুব সাবধানতার সাথে প্রসবের জন্য ডাক্তার বেছে উচিত। কারণ এই সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ খুবই জরুরী। এমন একজন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত যিনি গর্ভবতী মহিলার শরীরের সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিবে এবং স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা করবে।
৬) নিয়মিত নিজের শরীর ম্যাসাজ করুন:
গর্ভাবস্থার সপ্তম মাসের পর থেকে গর্ভবতী মহিলারা নিজের শরীরে মালিশ করবেন। এটি মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে সেই সাথে ডেলিভারিও সহজ করে।
৭) সাহায্যের জন্য একজন অভিজ্ঞ মিডওয়াইফ নিয়োগ করুন:
যে মহিলারা নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় খুঁজছেন তাদের জন্য অবশ্যই একজন মিডওয়াইফ রাখা জরুরি। এই ধরনের মিডওয়াইফদের স্বাভাবিক প্রসবের ভালো অভিজ্ঞতা থাকে।
এই সময় গর্ভবতী মহিলার জন্য তারা খুব ভালো সহায়ক হয়। শুধু স্বাভাবিক প্রসবেরই নয় শিশুর জন্মের পর শিশুর যত্ন নেওয়া সম্পর্কেও মিডওয়াইফরা খুব ভালো জানে।
৮) নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন:
গর্ভবতী মহিলাদের উচিত সবসময় নিজেকে হাইড্রেটেড রাখা। এই সময় তাদের উচিত প্রচুর পরিমাণে পানি বা জুস পান করা। প্রসব ব্যথার কারণে পানির অভাব হতে পারে তাই সব সময় অল্প অল্প করে পানি পান করতে থাকুন।
৯) উঠতে এবং বসতে শরীরের অবস্থানের যত্ন নিন:
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলার বসা থেকে শোয়া পর্যন্ত অবস্থান গর্ভের শিশুর উপর প্রভাব ফেলে। এই জন্য তাদের সব সময় শরীরেরকে সঠিক অবস্থানে রাখতে হবে।
১০) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি খুবই স্বাভাবিক কিন্তু এই সময়ে অতিরিক্ত ওজন বাড়ানো উচিত নয়। অতিরিক্ত ওজনের জন্য প্রসবের সময় বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। গর্ভবতী মহিলা যদি খুব মোটা হয় তাহলে বাচ্চা বের হতে অসুবিধা হয়।
১১) ব্যায়াম:
গর্ভাবস্থায় যদি গর্ভবতী মহিলারা নিয়মিত ব্যায়াম করে তাহলে স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই চিকিৎসকরা সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন নিয়মিত ব্যায়াম করার।
রিলেটেডঃ পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় । ২০২৩
স্বাভাবিক প্রসবের জন্য ব্যায়াম
গর্ভবতী মহিলাদের যদি কোন রোগ না থাকে তবে চিকিৎসকরা তাকে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করলে মা ও শিশু উভয় সুস্থ থাকে এছাড়াও স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। গর্ভবতী মহিলারা যেসব ব্যায়াম করতে পারে:
১) নিয়মিত সকাল সন্ধ্যা হাটুন।
২) সাঁতার কাটুন।
৩) সম্ভব হলে কিছুক্ষণ সাইকেল চালান।
৪) হালকা দৌড়ান।
৫) গর্ভাবস্থায় চাইলে ব্যায়ামের ক্লাসে যেতে পারেন।
যা করবেন না,
১) তলপেটে চাপ দেয় এরকম ভারউত্তোলনের ব্যায়াম করবেন না।
২) মার্শাল আর্ট, ফুটবল, বাস্কেটবল এমন খেলায় অংশগ্রহণ করবেন না।
৩) কোনদিন যদি ব্যায়াম করার ইচ্ছা না হয় শরীর ক্লান্ত লাগে তাহলে ওই দিন ব্যায়াম করবেন না।
৪) জ্বর ঠান্ডা ইত্যাদি আসলে ব্যায়াম করবেন না।
৫) অতিরিক্ত স্ট্রেচিং ব্যায়াম করবেন না।
৬) অতিরিক্ত সময় ব্যায়াম করবেন না এটি আপনাকে ক্লান্ত করে দিবে।
রিলেটেডঃ ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা এবং অপকারিতা
যে বিষয়গুলো স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বাড়ায়
এমন কিছু বিষয় আছে যে বিষয়গুলো স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। চলুন এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিয়:
১) গর্ভবতী মহিলা যদি গর্ভাবস্থায় শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকে।
২) শিশু ও গর্ভবতী মহিলার ওজন স্বাভাবিক থাকলে।
৩) গর্ভবতী মহিলার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, রক্তের সুগার ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে।
৪) গর্ভবতী মহিলা যদি কোন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় না ভুগে।
৫) গর্ভবতী মহিলার যদি আগেও স্বাভাবিক ভাবে প্রসব হয়ে থাকে।
৬) গর্ভবতী মহিলার কোন প্রকার গুরুতর শারীরিক রোগ না থাকলে।
রিলেটেডঃ গর্ভাবস্থায় সহবাস করার নিয়ম । ২০২৩
নরমাল ডেলিভারির লক্ষণ
কিছু লক্ষণ ও উপসর্গের মাধ্যমে বোঝা যায় যে স্বাভাবিক প্রসব হবে। সাধারণত ডেলিভারির চার সপ্তাহ আগে থেকেই গর্ভবতী মহিলার শরীরে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়। চলুন এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে নিই:
১) গর্ভধারণের ৩০ থেকে ৩৪ সপ্তাহের মধ্যে যদি বাচ্চার মাথা নিচের দিকে চলে আসে কিংবা শরীর নিচের দিকে নেমে যায় সে ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি হতে পারে। গর্ভের বাচ্চার এই অবস্থান কি বলা হয় সিফালিক।
২) যদি ভ্রূণের মাথা গর্ভবতী মহিলার যোনিপথে চাপ দেয় আর মহিলার যদি ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। তাহলে বুঝতে হবে এটা ভ্রূণের নিচে নেমে আসার লক্ষণ।
৩) ভ্রূণের নড়াচড়ার কারণে যদি গর্ভবতী মহিলার নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয় তবে এটা স্বাভাবিক প্রসবের লক্ষণ।
৪) প্রসবের সময় কাছাকাছি আশার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভবতী মহিলার মলদ্বারে বেশি আলগা হয়ে যায়। এর জন্য পাতলা মল অভিযোগ করতে পারে। এছাড়াও ঘন ঘন মলত্যাগ হতে পারে। কারণ পেলভিক অঞ্চলের নিচে বাচ্চার মাথা চাপ সৃষ্টি করে। এটাও স্বাভাবিক প্রসবের লক্ষণ।
৫) শরীরের কোন অংশে ব্যথা হতে পারে যেমন পিঠের নিম্ন অংশে কারণ গর্ভের বাচ্চা পিঠে নিম্ন অংশে চাপ দিতে থাকে। এবং এটিও নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ।
৬) শরীরে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে।
৭) স্তনে ফোলা ভাব দেখা দিতে পারি। সাধারণত প্রসবের সময় এগিয়ে আসলে স্তনে ফোলা ভাব দেখা দেয় তখন ভারি মনে হয়। যা নরমাল ডেলিভারি হওয়ার একটি লক্ষণ।
৮) স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি যোনি স্রাব হতে পারে। এবং রংয়ের কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে যেমন সাদা বা গোলাপি হতে পারে। অনেক সময় রক্ত মিশে থাকতে পারে। এটিও নরমাল ডেলিভারির নক্ষন।
কিভাবে নরমাল ডেলিভারি করা হয়?
নরমাল ডেলিভারির প্রক্রিয়াটি সাধারণত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত। চলুন এর বিস্তারিত জেনে নেই,
নরমাল ডেলিভারির প্রথম পর্যায়ে:
প্রথম পর্যায়ঃ
১) সুপ্ত প্রক্রিয়া:
এই প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী থাকে। ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত সার্ভিক্স খুলতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত প্রসবের এক সপ্তাহ আগে বা প্রসবের কয়েক ঘন্টা আগে থেকে শুরু হয়। একজন গর্ভবতী মহিলার মধ্যে এই সময়ে সংকোচনও হতে পারে।
এ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়া গর্ভবতী মহিলাদের জন্য টিপস:
১) নিজের যত্ন নিন ও যথেষ্ট আরাম করুন।
২) প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন এবং এর মাঝে নাড়তে থাকুন।
৩) সব সময় একজনকে সাথে রাখবেন একা থাকবেন না।
৪) হসপিটালে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিন।
৫) ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
২) সক্রিয় পদ্ধতি:
এই প্রক্রিয়ার সময় সার্ভিক্স ৩ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত খোলে। এই সময় সংকোচনের কারনে প্রচন্ড ব্যথা হয়।
এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যাওয়া গর্ভবতী মহিলাদের জন্য টিপস:
১)যদি সংকোচন তীব্র হতে শুরু করে তাহলে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
২)কাউকে দিয়ে কাঁধ এবং রুম ম্যাসেজ করুন এটি আপনাকে স্বস্তি দেবে। এই পরিস্থিতিতে সবচাইতে ভালো হয় যদি হাসপাতালে থাকতে পারেন। যাতে করে আপনার এবং ভ্রূণের হৃদস্পন্দন পরীক্ষা করা যায়।
৩) ট্রানজিশন প্রক্রিয়া:
এই প্রক্রিয়ায় সার্ভিক্স ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত খোলে। এই সময় ক্রমাগত সংকোচন ঘটতে থাকে এবং ব্যথাও প্রচুর বাড়তে থাকে।
এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া গর্ভবতী মহিলাদের জন্য টিপস:
১) যোনি থেকে যখন তরল আসবে তখন এর গন্ধ এবং রঙের বিবরণ এক জায়গায় নোট করুন।
২) স্বাভাবিক থাকবেন এবং শ্বাস – প্রশ্বাসের ব্যায়াম করন।
৩)আপনার এবং ভ্রূণের হৃদস্পন্দন পরীক্ষা করান।
দ্বিতীয় পর্যায়ঃ
এই সময়টা তে সার্ভিক্স পুরোপুরি খুলে এবং সংকোচনের গতি ত্বরান্বিত হয়। এই পর্যায়ে এসে শিশুর মাথা সম্পূর্ণ নিচে নামে। এই সময় গর্ভবতী নারীকে চিকিৎসকরা নিজেকে প্রেসার দিতে বলে। এতে করে সর্বপ্রথম শিশুর মাথা বের হয়ে আসবে এবং পরে চিকিৎসকরা শরীরের বাকি অংশ বের করে আনবে। এই সময়ের কিছু টিপস:
১) স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে থাকুন।
২) বাচ্চাকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যান।
তৃতীয় পর্যায়ঃ
বাচ্চা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার নাভি কেটে আলাদা করে দেন। এই পর্যায়ে গর্ভবতী নারীর জরায়ুতে উপস্থিত প্ল্যাসেন্টা বেরিয়ে আসে। শিশুর জন্ম নেয়ার পর থেকে প্ল্যাসেন্টা জরায়ুর দেয়াল থেকে আলাদা হতে থাকে। গর্ভবতী মহিলারা প্ল্যাসেন্টা যখন আলাদা হয় ওই সময় হালকা সংকোচন হয়। এই প্লাসেন্টা বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া প্রায় আধাঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। এর জন্য ডাক্তাররা গর্ভবতী নারীকে নিজেকে জোর করতে বলেন।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য কতক্ষণ সময় লাগে?
ডেলিভারির সময় গর্ভবতী মহিলার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। যদি গর্ভবতী মহিলার প্রথমবারের মতো স্বাভাবিক প্রসব হয় তবে এ প্রক্রিয়াটি ৭-৮ ঘন্টা পর্যন্ত সময় নিতে পারে। আর এটা যদি দ্বিতীয় প্রসব হয় তবে প্রক্রিয়াটি একটু কম সময় নিতে পারে।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য কি খাওয়া উচিত?
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য গর্ভবতী নারীদের খাদ্য তালিকায়, সবুজ শাকসবজি দুগ্ধজাত দ্রব্য, চরবিহীন মাংস, শুকনো ফল, ডিম, মৌসুমী ফল, লেবু এবং বেরি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এবং সারাদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত নিজেকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য।
রিলেটেডঃ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার, সবজি ও ফল ২০২৩
গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না?
অ্যালকোহল, সিগারেট ,কাঁচা ডিম ,উচ্চ পরিমাণে ক্যাফেইন, ক্রিম দুধ থেকে তৈরি পনির, কাঁচা মাংস, আইসক্রিম ,ফাস্টফুড ,কাঁচা পেঁপে, উচ্চ পারদের মাত্রাসহ মাছ ইত্যাদি গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত।
রিলেটেডঃ ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা, এবং খাওয়ার নিয়ম ২০২৩
নরমাল ডেলিভারি সম্ভব না কখন?
- জরায়ু ছোট থাকলে এবং বাচ্চার আকার বড় থাকলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয় না সাধারণত খাটো নারীদের জরায়ু ছোট থাকে।
- প্রথমবার গর্ভধারণের সময় অনেকেরই সঠিক জ্ঞান থাকেনা এতে করে নিজের এবং শিশুর ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তখন নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয় না।
- শরীরে পানির পরিমাণ কম থাকলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয় না।
- নরমাল ডেলিভারির জন্য সন্তানের দেহ নিচের দিকে এবং গর্ভফুল উপরের দিকে থাকা প্রয়োজন। যদি তার উল্টো হয় তবে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয় না।
পরিশেষে
বর্তমানে এই ব্যস্ত যুগে অনেকেই গর্ভকালীন সময়ে নিজের সঠিক যত্ন নিতে পারে না যার কারণে তাদের নরমাল ডেলিভারি হয় না অপারেশন করতে হয়। এতে করে প্রচুর রক্তপাত হয় আর ভবিষ্যতেও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
উপরের নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য করণীয় টিপসগুলি অনুসরণ করলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবণা অনেকাংশেই বেড়ে যাবে। তাই নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্যে উপরের নিয়ম গুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করুন, এবং মা ও সন্তান উভয়ই সুস্থ থাকুন।
তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকে আমাদের লেখা নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সহজ উপায় ও নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য করণীয় টিপস। যদি লেখাটা ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।